একটি মার্জার ও ক্ষুধা

শীলা বিশ্বাস
ধারামুক্ত কবিতা
Bengali
একটি মার্জার ও ক্ষুধা

একটি মার্জার ও ক্ষুধা

অবশেষে একটি মার্জার ডিঙাইয়া গেল আমার লেখা। আমার কবিতাগাড়ির কতটা বিপদ হইতে পারে তাহা দেখিবার জন্য আমিও উন্মুখ হইয়া আছি বহুকাল হইতে। একটি খতরনাক পরিবেশনার জন্য আমার মনন আমাকে বেপথে চালিত করে। ক্রমশ একটি দুর্ঘটনার দিকে একটি ঘাট হইতে আঘাটার দিকে অচেনা তড়িৎ চুম্বকীয় বলের দ্বারা আমি পরিচালিত হইতে লাগিলাম। আমার আজীবন শব্দ সঞ্চয় নিজেরাই যুক্ত ও বিযুক্ত হইতে আরম্ভ করিলে আমার চালিকা শক্তি ক্ষীণ হইয়া আসে। অদৃষ্টের উপর ছাড়িয়া দিলেও স্টিয়ারিং কোনোক্রমে তখনো হাতে। ভাবিয়া চলিতেছি যাহা এতদিন আমার কব্জির মোচড় দিয়া তুলিয়া আনিতাম কিংবা আছাড় মারিতাম তাহা আসলে আমার ছিল না।

দুই.

ক্রীড়াক্ষেত্রে লুকিয়ে থাকা অবয়বহীন খেলোয়াড় ও রেফারিরা হঠাৎ প্রকট ও দৃশ্যমান হইলে আমি ধস্ত ও প্রস্তর হইয়া গিয়াছিলাম। সচল গাড়ির অচল স্টিয়ারিং লইয়া কৃষ্ণ গহবর ডিঙাইয়া আরও একটি গহবরে আসিয়া উপস্থিত হইলাম। এই পাথর শরীর হইতে শব্দের বিচ্ছুরণ হইতে লাগিল। ক্রমশ শব্দেরা শব্দ করিতে শিখিল। ঝংকারের ডেসিবল ঘুরিয়া বেড়াইতে লাগিল ব্রহ্মাস্ত্র হইয়া। কালো হৃদয়ের মানুষ খুঁজিয়া বাহির করিয়া বারুদ বর্ষণ করিতে করিতে আরও একটি কৃষ্ণগহ্বরের দিকে চলিয়া গেল আমার যাবতীয় সঞ্চয় ।

তিন.

আমার শরীর পুনরায় প্রস্তর হইতে সজীব হইয়া উঠিল তখনি যখন এ যাবত চুপ করিয়া থাকা মার্জারটি মুখ ঘুরাইয়া স্তব্ধতাপূর্বক আমার কোলে আসিয়া বসিল। আমি তাহার মাথায় হাত রাখিতেই প্রিয় মার্জার মিউ শব্দে বুঝাইয়া দিল তাহাকে দীর্ঘ সময় অভুক্ত রাখিয়াছি। তাহার আহারের বন্দোবস্ত করিয়া ফিরিয়া আসিলাম লেখায়। পাঠ্যক্রমের বাহিরে চোখ রাখিলে হদয়-তন্তুগুলি অধীক জাগরুক হয়। শব্দরা কেবল শব্দরূপ পায় তাহা নহে স্রষ্টা হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া নিজের অস্তিত্ব প্রমাণ দেয়। নিজের অস্তিত্ব ও স্বাক্ষর রাখিবার সুদীর্ঘ প্রয়াসের কোন শর্টকাট থাকিতে পারে না। নিরন্তর আদান প্রদান তাহার চলনের একটি অঙ্গ ।

চার.

সকল প্রকার শিল্প ও কাজের জন্য ক্ষুধা একটি চাবি। আমাদের হৃদয়ের তালাটি ভাঙিবার প্রকরণ তারই কেবল জানা থাকে। ‘হা অন্ন’ আসলে পৃথিবীর যাবতীয় সফল বিপ্লবের স্লোগান। পাঠকগণ আসুন আজ হইতে আমরা আমাদের পাঠ্যক্রম বহির্ভূত ক্ষুধার সন্ধান করি। আমাদের ক্ষুধা বাড়াইবার প্রয়াস ও লালন করিবার যাবতীয় ইচ্ছাকে স্বাগত জানাই ।

শীলা বিশ্বাস। কবি। জন্ম ১৯৭২, ভারতের পশ্চিমবঙ্গরাজ্যের হাওড়ায়। লেখাপড়া করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে, স্নাতক। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের আয়কর বিভাগে কর্মরত। লেখালিখি তাঁর প্যাশন। তাঁর লেখার বিষয় মূলত কবিতা, অন্যান্য প্রচেষ্টা গল্প, প্রবন্ধ। সম্পাদনা করেন ত্রৈমাসিক ওয়েবম্যাগ 'এবং সইকথা'। প্রকাশিত বই: 'হেমিংটনের...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ