প্রেম এবং অপ্রেমের কাব্য
এ-এক প্রেমের শহর, এ-এক প্রেমের শহর, এখানকার বাতাস প্রেমের সৌরভ বয়ে আনে। হাজারো প্রেমের কলি…..
অন্ততঃ একটা কিছু দাও
হে সূর্য ,নিরন্ন নিঃসহায় আমাদের বাঁচাও ।
হয় দাও —এক কাপ লালচে চা’য়ের মতো মূল্যবান
রৌদ্রোজ্জ্বল সকাল—যাতে শীতের কবলে জড়োসড়ো প্রাণ
একটুখানি বাঁচার ভরসা পায় তপ্ত উষ্ণতায় ,
আমরা (তৃতীয় বিশ্বের ) ঘিঞ্জি বস্তির দরিদ্র মানুষ ,উপযুক্ত শীতবস্ত্র নাই ।
মুছে দাও এই অকাল মেঘলা দিন
বড়ো ভয়ানক কনকনে শীতের সঙীন ।
অথবা দাও—-একখণ্ড আধপোড়া রুটির মতো মূল্যবান
সোনালি ভবিষ্যতের ফরমান—
ফুটি-ফাটা মাটির পরিতৃপ্তির পরিচ্ছন্ন দিন ,
যাতে মৃত-প্রায় মাঠ মেতে উঠে প্রাণোচ্ছ্বল ফসলে রঙীন ।
আমরা প্রস্তুত বৃষ্টির জন্য আরো জাড় বুক পেতে নিতে ,
ওতে আছে তবু উদর-পূর্তির স্বপ্নের সুখ নিরন্ন পৃথিবীতে ।
আজ হিংসা-মত্ত দামামার হুমকিতে পৃথিবীটা জরোজরো ,
অস্তিত্ত্ব-বিপন্ন-করা সভ্যতার দ্বারে আমরা হয়েছি জড়ো
আমরা ধুঁকছি বুকে নিয়ে প্রাণ ধারণের ন্যূনতম প্রয়োজনের আকুতি ,
আমরা চাই না—-সম্পদ ও শক্তির অপচয়ে-চলা ধ্বংসের ভয়ংকর প্রস্তুতি ।
তাই,হে সূর্য,অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের উজ্জ্বল প্রতিশ্রুতি ছড়ানো
নিরাপদ শান্তির দিন আনো ,
সহ্য হয়না ঠাণ্ডা গুমোট —এতে মানুষের দুর্দশা বাড়ে আরো ;
আমাদের দুখ একমাত্র তুমিই ঘুচাতে পারো ।।
না,না ,তোমার ছুটি নেই , এখনো তোমার ফুরোয় নি দিন ।
হয়তো সামনে আসছে কোনো এক আরো কঠিন
দুঃসহ ভবিষ্যতের ফরমান : বিস্ফোরণোন্মুখ
জনসংখ্যার বিপদ বাড়বে অনেক , বাড়বে বেকার ,অস্বাস্থ্য,অসুখ ,
বাড়বে রাজনীতির ভুঁই-ফোড় স্তাবকের ভেক,
ক্ষমতা-লোলুপ পদস্খলিত বিবেক
ঘটাবে স্বাধিকারের প্রবক্তা মলোইসের ফাঁসি ,
আসবে অনেক ভূপালের রাত উনিশশো চুরাশি ,
দরিদ্র তৃতীয় বিশ্ব হবে এখনো অনেকবার
পশ্চিমে বাতিল সব ওষুধের বিশুদ্ধ বাজার ও পরীক্ষাগার ,
হয়তো বেজে উঠবে দিকে দিকে পরমাণু যুদ্ধের দামামা ,
এবং আজকের চেয়েও বহুগুণ দ্রুততালে উঠানামা
হবে মূল্যস্তর ,প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের চেয়েও ভয়ানক আকাল গড়াবে ;
যদি বাঁচে , হতভাগ্য জীবিত মানুষগুলো কী পরবে , খাবে ? কোথায় দাঁড়াবে ?
হয়তো দেখবে—হৃদয়ের কোথাও কোমল কোনো অনুভূতি নাই ,
আরো বেশী সবুজ বৃক্ষের দাক্ষিণ্য-দান কাটবে জীবিকার নির্মম কুঠার ;
আর তুমি— তুমি হবে সবচেয়ে বড়ো অসহায় ।
আজকের মতো দেখবে তখনো— বেকার ক্ষুধার্ত স্বাস্থ্যহীন জনতার
মিছিলের পুরোভাগে হেঁটে যায় শান্তির মুখোশধারী অর্থগৃধ্নু চিল ,
কিন্তু , কবিতার ছুটি নেই , কবিকে লিখতে হবে সমকালীন জীবনের সুখ-দুঃখ-সংগ্রামের নান্দনিক দলিল।
বাচ্চা বয়েসে একদা
বাপের মুখে শুনেছিলাম—
তার দাদুর বাপের বাপের তস্য বাপের একটা মস্ত
জমিদারি ছিল ,রাজতুল্য নাখরাজ ছিল ,
বিশাল খামারবাড়ি ছিল , গোলা-ভরা
ধান ছিল , মাছ-ভরা দিঘির মতো পুকুর ছিল ,
তাল-খেজুরের রস লাগানো বাগান ছিল , চারিদিকে
শালবন ছিল, অনেক অহল্যা জমি ছিল ,
অনেক ভোগদখল ছিল , খানসামা
লোক-লস্কর বরকন্দাজ ছিল । এমন্ কি
তিনি নিজে দেখেছেন—
এক পয়সায় এক ধামা চাল পাওয়া যেত
এবং অনেকেই
হপ্তায় একদিন খেটে পুরো হপ্তা বাড়ি ব’সে খেতো ।
অবশ্য তখন লোকসংখ্যা ছিল খুব কম ।
তারপর
আমার তস্যাতিতস্য দাদুর ছেলেরা সংখ্যায় বেজায়
বেড়ে যেতে লাগল ক্রমশঃ ,তাদের ছেলের
ছেলের ছেলের ছেলেরা বৃদ্ধি পেল অসম্ভব , তারা
মাথা গুঁজবার আর পেট চালাবার জন্য খুঁজে নিল
অনাবাদী জমি এবং এন্তার কেটে ফেলতে লাগলো বনানী সম্পদ ।
ততস্যদিগং ততস্য ছেলেরা আমরা এখন দ্রুত
বেড়ে যাচ্ছি দিনরাত ইঁদুরের মতো ,সরীসৃপ
আস্তানা খুঁজছি আর খাচ্ছি আস্তাকুঁড় ,
প্রতিটি গর্তেই হচ্ছে খেঁচামেচি ছুঁচোর কীত্তন ।
এভাবে চললে আর অল্প দিনেই
হয়তো আমরা পৃথিবীতে দাঁড়াবার
মতো যৎসামান্য জায়গাও পাবো না ।
তখন বাপদাদুর তস্যদাদুর বরপুত্র আমরা
নিজেরাই নিজেদের অস্তিত্ত্বের জন্য
কোন্ হ্যামলিনের বাঁশিঅলাকে ডাকবো ?
যতোদিন এই দেহটায় প্রাণ আছে—আছে বল
জীবিকার পরিশ্রমে অনায়াস সক্রিয় সচল
ততোদিন আমরা বইবো মোট , টানবো পাথর
ঠেলবো লাঙল ঠেলাগাড়ি, খাটবো ঠিকা, দাদন
কাটবো মাটি,বাঁধবো সড়ক ; খুঁজে পেতে গ্রাসাচ্ছাদন
ফেলবো মাথার ঘাম পায়ে চিরকাল রোদে জলে জাড়ে উদোম গতর ।
আমরা তো গ্রীষ্ম বর্ষা জাড় হাড়-ভাঙা মেহনত
ক’রে চালাই এ জীবনের দিন,আর সভ্যতার অবিরাম গতি ।
আমাদের ভাগ্যে তবু সমাজের নীচু-চোখ দৃষ্টির লানত
এসে জুটে চিরকাল, যেমন পুরুষ দ্যাখে নারীকে অসতী ।
মাঝে মাঝে নেতাদের আহ্বানে মিছিলে যাই,স্লোগান উঠাই,
জমা দিই দফাওয়াড়ী দাবির তালিকা,
কিংবা কখনো পোড়াই শোষকের কুশপুত্তলিকা;
তারপর–আগের মতোই যে যার খোরাক জুটাই ।
ভাঙা চুলো,ফুটো হাঁড়ি,শানকি ,ক’পটে কাঁথা—এই আমাদের সব ।
আর আজীবন স্বপ্ন ঘিরে রয় : উষ্ণ সাদা ভাতের সৌরভ ।
অঘ্রাণেও হাভাতের শূণ্য পেট করে শুধু স্বপ্নকে বিদ্রূপ ।
দ্যাখো আমাদের প্রতিরূপ :
ষ্টেশনের পাটাতনে পরিশ্রান্ত ঘুমানো নিঃসাড়
রঙ-চটা লাল কুর্তা-পরা কুলি ,নগর-ভাগাড়
হাত্ড়ে-হন্যে-হওয়া কদাকার জীবিত কঙ্কাল
প্রেতাত্মার কপি মানুষ,আবাল্য অনলস খাটনে বেহাল
অভুক্ত চৈত্র-বেকার দিন-মজুর তোরাব,গাঁর শেষে ভাঙা-ঘর লক্ষ্মণ মিস্তিরি
নিজের ঘরটা যার ভালমতো ছাওয়ার সামর্থ্য হয়না কোনোদিন
অবশেষে সকলের পরিণতি শুধু সহায় সম্বলহীন
সমাজের গলগ্রহ অথর্ব ভিখিরি ।
কিছু কিছু দুরাশার শব্দ শুনি কখনো সখনো —
অনুদান ,পেনশন ,অনুরূপ আরো কিছু ; তারপর আর কোনো
সাড়া নাই কোনো দিক থেকে ;সমস্ত তলিয়ে যায় ;
দিন যায়, ভোট হয়, রাজা হয়, রাজা বদলায়,
আর চলে আমাদের উপর দিয়েই পুরাতন নিয়মের যাঁতাকল ।
যতোদিন এই দেহটায় প্রাণ আছে—আছে বল
আমরা তো বাঁচবার ন্যূনতম চাল তেল নুন সালুন আটার
জন্য ব’য়ে যাই বলদের মতো জীবনের দুর্বহ জোয়াল ,
তারপর ,আমাদের অস্তিত্ত্ব তবে কি — জঙলা নির্জন নিস্পন্দ ভয়াল
পলেস্তারা খ’সে-পড়া পরিত্যক্ত রেলের কোয়ার্টার ?
এ-এক প্রেমের শহর, এ-এক প্রেমের শহর, এখানকার বাতাস প্রেমের সৌরভ বয়ে আনে। হাজারো প্রেমের কলি…..
পতাকায় মিশে যায় ফেলানির নাম উড়তে থাকে কাঁটাতারে; মানুষের মনে জমে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ বিকল্প মেঘের…..
প্রেমিক হয়তোবা তাকে আমি গড়তে পারতাম তার বুকের ভিতর এপাশ থেকে ওপাশে উল্টে নতুন একটা…..
চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..