একমুঠো মৃত্তিকা

চৈতালী মুখার্জী
কবিতা
Bengali
একমুঠো মৃত্তিকা

অস্তিত্ব

 

অস্তিত্ব প্রমাণের দায়ভার থেকে যায় |

প্রমাণ করতে হয় ভালবাসা বারবার |

হৃদয়ের আনাচে ,কানাচে জমে থাকা ধুলো ময়লা ,

ঝেড়ে ফেলতে হয় মাঝে মধ্যে |

ক্ষতস্থানগুলো ভরে দিতে হয় ,

ক্ষমার চুন সুড়কিতে ভালোবাসার প্লাস্টারে |

চারপাশের অহংকারের দেওয়ালগুলোর পায়ের কাছে ,

তোমার নিরহংকার বেঁচে থাকা সবুজ সবুজ |

পৃথিবীর দু ফোঁটা অক্সিজেন

মিশে যায় রক্তে

তোমার ভালবাসা প্রমাণ করতে হয় মাঝে ,মাঝে ||

 

কলমের খোঁচায়

কলমের একটা খোঁচায় আমি ঝড় ওঠাতে পারি |

কলমের খোঁচাতে আমি ভেঙে করতে পারি তছনছ |

কলমের আঘাতে জর্জরিত করে দেখতে পারি তোমার ক্ষত বিক্ষত চেহারা |

হাসতে পারি নৃশংস হাসি আড়াল থেকে |

কলমের এক আঘাতে আমি তোমার মুখোশটা ছিঁড়ে টুকড়ো ,টুকড়ো করে ,

ভাসিয়ে দিতে পারি বাতাসে |

কেড়ে নিতে পারি শৌর্য,সম্মান ,তোমার প্রতিষ্ঠা |

আমি বৃষ্টিতে ভিজিয়ে দিতে পারি বার ,বার তোমাকে

নিস্বঃঙ্গ কলমের আঁচড়ে |

কত সহস্র বর্ষের মরুভূমি চোখ ভরিয়ে দিতে পারি

অসীম জলধিতে |

আমি পারি ,ভীষণ ভাবে পারি অগণিত কলমের আঁচড়ে

তোমাকে ছিঁড়ে খুঁড়ে বিভৎস করে দিতে |

শুধু পারিনা তোমাকে ভালো না বেসে কলম ধরতে |

আর তাই কিচ্ছু করিনা ,কিচ্ছু করিনা |

প্রতি মুহূর্তে শুধু ক্ষত বিক্ষত করি নিজেকে

কলমের আঁচড়ে আঁচড়ে লিখে যাই

তোমার সুখের সংলাপ |

আর আমার ভালোবাসার প্রলাপ |

 

একমুঠো মৃত্তিকা

আমার অন্তঃ স্বত্বা যখন তোমাকে পেতে চায় নিবিড় করে

আমার অন্তরের নারী

রুদ্ধ দ্বার বিবেকের তাড়নায়।

আমার ভালোবাসা যখন

ছুঁয়ে যেতে যেতে

তোমাকে আপন করে পেতে চায় ।

আমার ভিতরের মানবী বারবার ব্রাত্য করে আমাকে।

বুঝিয়ে দেয় সীমারেখায

আমার দূরত্ব।

আমার ভালোবাসা যখন ঝড়ের বেগে দিশেহারা কেড়ে নিতে চায় তোমাকে ।

আমার অন্তরের শুদ্ধা চোখের জলে বলে

ভালো থাকো তুমি

তোমার ভালোবাসায় সুখী গৃহ কোণে ,

বটবৃক্ষের ছায়ায় তারাদের আলিঙ্গনে।

আমি দূরে ভালো বাসায় আশ্রিতা

প্রেমের আলিঙ্গনে।

সততশুদ্ধা।

তোমাকে চেয়ে সত্যের সন্ধানে।

আমি পরিপূর্ণ তোমার ছায়ায়,তোমার প্রেমে, তোমার ছড়িয়ে দেওয়া

দু একটা বৃষ্টি ফোঁটার সোঁদা গন্ধে

অসীম আকাশের চির বন্ধনে

একমুঠো মৃত্তিকা।

অন্তহীন

একটা সুন্দর সকালের পথ চেয়ে কেটে যায় অস্থির রাত |

উচু উঁচু পাহাড়ের গায়ে আলতো রোদের চুম্বনে

মিলন মেলা |

বাতাসে দীর্ঘশ্বাসে ঘুম ভাঙা প্রহরে

বিষন্ন শান্তি বার্তা |

সুখ বুঝি আধছোঁয়া !

আধঘুমে ভোর হয় |

ক্লান্ত বিষন্ন অবকাশ, শরীরে শরীর খোঁজে !

ছুটে চলে কীসের আশায় !

হয়তো কৃত্তিমতার বেড়াজাল টপকে ,

ঘন কুয়াশা আরও ঘনীভূত ছায়া ,

ঢেকে নেবে অন্তহীন |

 

রূপকথা

মাত্র কয়েকটা দিন আমি রূপকথা হয়েছিলাম |

আমি বাঁচতে ,বাঁচতে,

ভুলতে বসেছিলাম নিশ্চিত নিয়তি !

তোমার ঠোঁটের আগ্রাসী চুম্বনে খুঁজেছিলাম আমার মুক্তি |

পিঞ্জর ভাঙার লড়াই !

স্বপ্নের মত একটু একটু করে জীবনটাকে ভালবেসে

আমি গড়তে চেয়েছিলাম সখের পৃথিবী |

যে পৃথিবীতে পূর্ণতা !

যেখানে সমাজের পচা ,গলা গতে বাঁধা নিয়ম পাল্টে হয়

নুতন সংবিধান লেখা |

সমানাধিকার !

আমি পৃথিবীটা পাল্টে দিতে চেয়েছিলাম একটা ঝড় হয়ে |

আমি বৃষ্টি হয়ে সব ধুয়ে মুছে নুতন সকাল পেতে চেয়েছিলাম |

আমি সেঁকে নিতে চেয়েছিলাম আমার বেদনা ভরা টিস গুলো

তোমার চওড়া বুকের ওমে ,তোমার সবুজ উষ্ণতায় |

তারপর ,

আমার কথাটি ফুরোলো ,নটে গাছটি মুড়লো |

তবু আজও আমি সমুদ্র হয়ে একবুক তিতিক্ষা নিয়ে

আছড়ে পড়ি বারবার |

যদি আসো নদী হয়ে আবার কোনও রূপকথা রাতে ||

আমায় করো নিষ্পেষিত তোমার একবুক আবেগে !

কখনও কখনও কারো ,কারো জীবনে

সত্যি হয় রূপকথা |

চৈতালী মুখোপাধ্যায় (কণা )। কবি, বাচিক ও সংগীতশিল্পী। জন্ম ৩০ শে আগস্ট ১৯৬৬ ভারতের পশ্চিমবঙ্গরাজ্যের কলকাতা। বর্তমান নিবাস মহারাষ্ট্রের নাগপুর। প্রকাশিত বই: 'সুবেদিতা' (কাব্যগ্রন্থ, ২০১৯)।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ