প্রক্সি
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
গভীর রাতে দরজায় টোকা পড়ে। দরজা খুলতেই ধড়মড় করে ঢুকে পড়ে পুলিশের একটি দল। এক পুলিশ খবরের কাগজের ছবির সঙ্গে মিলিয়ে বলে, এইডাই এইডাই আসামি।
আসামির স্ত্রী ডুকরে কেঁদে ওঠে, আমার স্বামী আসামি না স্যার। সে সারাদিন নানান খবরের কাগজ দেইখা সড়ক দুর্ঘটনায় কয়জন মারা গেলো কয়জন আহত হইলো সেই হিসাব নিকাশ করে। আমি তারে নিষেধ করছিলাম। সে কয়, এই মানুষগুলির হিসাব-নিকাশ হারাইরা যাইবো। অন্তত কয়জন মানুষ মরলো তার একটা হিসাব থাকা দরকার। আপনারা কী তারে এই জীবন- মরণের সর্বনাশা অংক কষার অপরাধে ধরতে আসছেন! মাফ কইরা দেন স্যার। আমি কথা দিতেছি; সে আর কোনদিন এই অংক কষবে না।
পুলিশ ধমক দেয়, না না ব্যাপার সেইডা না। অন্য অপরাধ করছে সে।
আসামির স্ত্রী বলে, তাইলে কী স্যার তার মাথায় টুপি আর দাড়ি দেইখা জঙ্গি বইলা ধরতে আসছেন। সে জঙ্গি না স্যার। আমিই তারে বলছি, বয়স হইলো অহন মুরুব্বিগো মতোন একটু দাড়ি রাখো; কতদিন আর ছেলে-ছোকরা হইয়া ঘুরবা! তার জঙ্গি হওয়ার সাহস নাই স্যার; সে কারো জীবন নিতে চায় না; বরং এই যে প্রত্যেকদিন রোড এক্সিডেন্টে এতো মানুষ মরে; সেইডা কমাইতে কী সব যাত্রী কল্যাণ সমিতি-টমিতি করে। কয়দিন হইলো খবরের কাগজে তার ছবি আসছে সমিতির মিটিং-এ, এইসব যাত্রীর মৃত্যু নিয়া কথা কওনের সময়। সেইডাই কী অপরাধ হইলো স্যার!
পুলিশ টিটকারি দেয়, আরে নাহ; তোমার স্বামী চান্দাবাজ। তার বিরুদ্ধে চান্দাবাজির মামলা হইছে।
স্ত্রী এবার আর্তনাদ করে ওঠে, আপনারা চান্দাবাজি কইরা খান বইলা কী সবাইরেই চান্দাবাজ ভাবেন! তার কাছে কেউ দুইডা টাকাও পায় না। আমগো দুইডা ভাত-কাপড়ের জন্যে কারো কাছে হাত পাতনের দরকার পড়ে না।
পুলিশ এবার রেগে গিয়ে বলে, তোমার স্বামীরে নিয়া গেলাম। একদম চুপ; কোন কথা কইবা না।
স্ত্রী হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে, আপনারা কী হ্যারে গুম করবেন! হ্যারে গুম করলেই কী রোড এক্সিডেন্ট থাইমা যাইবো!
আসামিকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ চলে যায়। আসামির স্ত্রী আর কাঁদে না। শুধু সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করে, পুলিশ যেন তাকে গুম না করে; অন্তত আদালতে তোলে। কারাগারে থাকলেও মানুষটা বেঁচে থাকুক। আজকাল বাসায় থাকা আর কারাগারে থাকা একই কথা। শুধু বেঁচে থাকাটাই সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ।
আসামির স্ত্রী পরদিন আদালতে গিয়ে দেখে সৃষ্টিকর্তার একজন দূত আসামির পক্ষে ওকালতি করতে এসেছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তার সিগেরেটে পোড়া দুটি ঠোঁট নড়িয়ে দাঁতের মাড়ি দাপিয়ে বলে, আসামির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের হয়েছে। তাকে পুলিশ রিমান্ডে দেবার আবেদন জানাই।
আসামির পক্ষের আইনজীবী বলেন, এই নামের অসংখ্য লোক থাকতে পারে। মামলায় এই আসামির ঠিকানাটাও উল্লেখ করা হয়নি। তাছাড়া বাদিও এই আসামিকে চেনে না। তাহলে কী ভূত এসে চাঁদা চেয়েছিলো!
মহামান্য আদালত বলেন, আপনি যদি আসামির মুক্তির জন্য চাপাচাপি করেন; আদালত ভীষণই বিব্রত হবে। আদালত বিব্রত হওয়া মানে অনির্দিষ্টকালের জেল। আপনি কী সেটা চান! তার চেয়ে রিমান্ডে দেয়া যাক। পুলিশ প্রয়োজনীয় তথ্য বের করে নিশ্চিত হোক।
আসামি পক্ষের আইনজীবী দীর্ঘশ্বাস ফেলে, স্বগতোক্তির মতো বলেন, বিব্রত আদালত বৃক্ষে আজকাল বাম্পার রিমান্ডের বাতাবি লেবু ফলছে।
আদালত জিজ্ঞেস করে, কিছু কী বললেন!
এরপর রিমান্ড মঞ্জুর হলে আসামি নিয়ে পুলিশ বেশ হাস্যজ্জ্বল মুখে খলবল করতে করতে চলে যায়।
সাংবাদিকরা যে থানার পুলিশ এই আসামিকে গ্রেফতার করেছে, সে থানার ওসিকে জিজ্ঞেস করে, এই লোকটা যাত্রী কল্যাণ সংস্থার লোক বলেই তাকে জোর করে ধরে রিমান্ডে নিলেন!
ওসি বলে, ডিসি স্যার এ বিষয়ে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করেছেন।
মামলার বাদির কাছে যায় সাংবাদিক। বাদি বলে, তাকে বেশ তাড়াহুড়ার মধ্যে কাগজে সই করিয়ে নিয়েছে শ্রমিক কল্যাণ সমিতির নেতারা। ফলে সে আসামিকে চেনে না। তবে না চিনলেও যেহেতু আসামির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ; নিশ্চয়ই সে চাঁদা চেয়েছে; তাড়াহুড়ার মধ্যে চাঁদা চাওয়ায় তাকে চেনা সম্ভব হয় নি।
সাংবাদিক চলে গেলে বাদির স্ত্রী বাদির জামার কলার চেপে ধরে, মিথ্যা মামলার বাদি হইছো তুমি; তোমার উচিত আসামির কাছে মাফ চাওয়া। নাইলে আল্লাহ মাফ করবে না তোমাকে।
বাদি কাঁচুমাচু করে বলে, দোজাহানের মালিক আল্লাহ থাকেন সাত আসমানের ওপরে; আর শাজাহানের মালিক শ্রমিক কল্যাণ সমিতি থাকে সামনে-পিছে-বুকের উপর বইসা। কী করুম কও!
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসামির ছবি দেখে একজন বিদগ্ধ অসাম্প্রদায়িক উন্নয়নজীবী বলে, আসামির চেহারা তো অবিকল ওসামা বিন লাদেনের মতো।
উন্নয়নের সহমত ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ের চড়াচার্য বলে, হয়তো পাকি-প্রেমী। আই এস আই-এর পয়সা খেয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বাড়িয়ে বলে মিডিয়ার সামনে। এ আর কিছুই না; নির্বাচন সামনে রেখে সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্র। এসব বিষ দাঁত ভেঙ্গে দিতে হবে।
দেশপ্রেমে হৃদি সরসিজ থর থর কম্পন তুলে আরেকজন এসে বলে, এই যাত্রী কল্যাণ সমিতি শুনলাম প্রধানমন্ত্রীর কাছে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর প্রতিবাদে স্মারকলিপি দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের পরিবেশ তৈরী করতে চাচ্ছিলো।
আসামি পুলিশ রিমান্ডে নানা প্রশ্নে জর্জরিত হয়। পুলিশ তাকে বলে, যহন দেখলি আমরা ঐসব নোবেল বিজয়ীদের বিবৃতিরে পাত্তা না দিয়া তিমি মাছরে রিমান্ডে নিতেছি; ঘুষি দিয়া সেলিব্রেটিগিরি ছুটাইতেছি; তুই একটা খইলসা মাছ এতো সাহস কই থিকা পাস! ক তোরে এই সাহস কে দিছে, বিএনপি নাকি জামাত, বামাতি নাকি যুক্তফ্রন্ট, পাকিস্তান নাকি আম্রিকা!
হঠাত কোত্থেকে যেন সাহস এসে ভর করে আসামির বুকে। সে খুব শান্তভাবে উত্তর দেয়, এই সাহস আমারে আমার বিবেক দিছে। প্রত্যেকদিন গড়ে ১৫ জন মানুষ মারা যায় সড়ক ব্যবস্থাপনার অবহেলায়। আমি এর প্রতিবাদ করছি। আমার বিবেকের কাছে আমি পরিষ্কার আছি। আপনারা যা খুশি করেন।
পুলিশ হাতে একটা রিভলভার হাতে নিয়ে সেটিতে পেলব আঙ্গুল বুলিয়ে বলে, মুচলেকাতে সই কর; স্বীকার কর যে তুই চাঁদাবাজ।
আসামি পুলিশের চোখে চোখ রেখে বলে, তার চাইতে আপনি এক কাজ করেন ভাই; আপনার রিভলবারে যত গুলি আছে; আমার বুকে খরচ করেন। ছোট-বড় যত রকম কারাগার আছে; সেইখান থিকা আমারে মুক্তি দেন।
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..