পাঠ প্রতিক্রিয়া ‘আমার সপ্তাহান্তেরা’- ইসরাত জাহান
উপায়ন “রাত জেগে বই পড়ার একটা আলাদা ভালোলাগা আছে। চারিদিকে চুপচাপ আর নৈঃশব্দ্যের ভিড়ে বইয়ের…..
মারদাঙ্গা চলচ্চিত্রের দর্শক ছবি দেখতে যায়; কোন চিন্তা না করে রেসলিং দেখার মতো আনন্দ পেতে। সম্প্রতি নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া “এক্সট্র্যাকশান” ছবিটির খবর পেলাম ফেসবুকেই। ফেসবুকে মার-দাঙ্গা ছবিটি নিয়ে মার-দাঙ্গা আলোচনা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে গত রাতে নেটফ্লিক্সে ছবিটি দেখে ফেললাম। মার-দাঙ্গার ছবিতে প্রথম বিশ মিনিটের মাঝেই মারপিট দেখে দর্শকের টিকেটের পয়সা উশুল হয়ে গেলে; ওটা সফল ছবি। সেদিক থেকে “এক্সট্র্যাকশান” নিঃসন্দেহে সফল ছবি।
ফেসবুকে যে কোন বিষয়ে বিতর্ক আমাকে আকৃষ্ট করে। সাধারণতঃ আর্ট ফিল্ম নিয়ে চলচ্চিত্র-আলোচনা হয়। কিন্তু একশান ছবি নিয়ে এই প্রথম চলচ্চিত্র আলোচনা চোখে পড়লো।
এর কারণ ছবিটির পটভূমি ঢাকা; আমাদের প্রিয় শহর। এক্সট্র্যাকশান ছবির পরিচালক স্যাম হারগেভ তার চোখে দেখা ঢাকাকে চিত্রায়িত করেছেন। এই ছবির কিছু দৃশ্য ঢাকার সঙ্গে মিল আছে এমন ভারতীয় শহরে চিত্রায়িত হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় মাদক-ব্যবসাকে কেন্দ্র করে যে পাতাল-জগত গড়ে ওঠে; তা দেখতে একই রকম। রাস্তায় যে ভিক্ষুকদের সঙ্গে দেখা হয়; এরা সে পাতাল জগতেরই বাসিন্দা; তাদের আলাদা রাজা থাকে। তাকে ডন বলা হয়। কিশোর-গ্যাংগুলো থেকেই সাহস আর আনুগত্যের পরীক্ষা দিয়ে ডনের প্রকৃত সহমত ভাই হলে; সেখান থেকে বেরিয়ে আসে পরের প্রজন্মের ডন।
এই সমান্তরাল পাতাল-জগতটি সম্পর্কে মানুষ সাধারণতঃ কিছুই জানতে পারে না। ফলে চলচ্চিত্রে তা দেখে আঁতকে ওঠে। এক্সট্র্যাকশান ছবিতে ভারতের এক মাদক সম্রাটের ছেলেকে অপহরণ করে নিয়ে আসে বাংলাদেশের এক মাদক সম্রাট। ভারতের মাদক সম্রাট মহাজন জেলে যাওয়ায় তার ছেলেটিকে পিতার ছায়া দিয়েছে একজন সাবেক এলিট ফোর্স সদস্য সাজু। মহাজন সাজুকে নির্দেশ দেয়, তার ছেলেটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসতে। আবার পেশাদার খুনি নিক খান তার সহকর্মী টাইলার রেইক নামের দুর্ধর্ষ হিটম্যানকে দায়িত্ব দেয় ঢাকায় গিয়ে জুনিয়র মহাজনকে উদ্ধার করার জন্য।
রেইক ঢাকার মাদক সম্রাট আমির আসিফের লোকেদের সঙ্গে মারপিট করে; জুনিয়র মহাজনকে উদ্ধার করে ফেলে ছবির প্রথম বিশ মিনিটেই। “দর্শকের পয়সা উশুল হবার পর” জুনিয়র মহাজনকে হেলিকপ্টারে করে “এক্সট্র্যাক্ট” করা বা নিরাপদে তুলে নিয়ে যাবার পথটিকে জটিল করে তোলে ড্রাগ লর্ড আসিফের “কিশোর গ্যাং” আর তার পে’রোলে থাকা এক এলিট ফোর্স কর্মকর্তার লেলিয়ে দেয়া আইন-শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর লোকেরা। এর মাঝে আবার ভারত থেকে আসা সাজু হিটম্যান রেইক-কে জুনিয়র মহাজন উদ্ধারের যে টাকা দিতে হবে সে টাকা বাঁচাতে বাচ্চাটিকে ছিনিয়ে নিতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।
রেইক বাধ্য হয়ে তার ঢাকায় বসবাসকারী বন্ধু আরেক পেশাদার খুনী গ্যাসপারের সাহায্য নেয়। এলিট ফোর্স ঢাকা লক ডাউন করে দেয়ায়; অপেক্ষা করতে হয়; পরবর্তী সুযোগের জন্য। এর মধ্যে গ্যাসপারও বিক্রি হয়ে যায় আসিফের টাকার কাছে। জুনিয়র মহাজনকে খুন করার চেষ্টা করে সে। রেইক আর গ্যাসপারের মারপিটের সময় জুনিয়র মহাজন গুলি করে গ্যাসপারকে হত্যা করে। রেইক সাজুকে ফোন করে জুনিয়র মহাজনকে “এক্সট্র্যাক্ট” করার ক্ষেত্রে সাহায্য চায়।
এলিট ফোর্সের সঙ্গে গোলাগুলিতে সাজু মারা গেলেও রেইক লড়তে থাকে এলিট ফোর্সের বিরুদ্ধে। রেইকের সহকর্মী নিক খান এসে পড়ে জুনিয়র মহাজনকে এক্সট্র্যাক্ট করতে। এলিট ফোর্সকে লড়াইয়ে হারিয়ে রেইক তার কাজ শেষ করে আনলেও; ঢাকার মাদক সম্রাটের কিশোর গ্যাং-এর পিচ্চি তানভীরের গুলি লাগার পর রেইক ব্রিজ থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে হারিয়ে যায়। জুনিয়র মহাজন উদ্ধারের কয়েকমাস পর নিক খান গুলি করে হত্যার করে ঢাকার মাদক সম্রাট আসিফকে। আর জুনিয়র মহাজন সুইমিংপুলে ডুব-সাঁতার দিয়ে ওঠার সময়; খুব সম্ভব রেইকের দাঁড়িয়ে থাকার ঝাপসা একটি দৃশ্য দেখা যায়। একশান ছবির নায়কেরা সাধারণত অমরই হয়।
এ ছবিতে ঢাকায় ক্যাসিনো ও এসকর্টদের কয়েক ঝলক রয়েছে। পাতাল-জগতে এগুলো থাকে। কিছুকাল আগে পাতাল ফুঁড়ে এসব দৃশ্য মূলধারার মিডিয়ায়ও এসে গিয়েছিলো। এই ছবিতে ঢাকাকে মলিন দেখিয়েছে; এমন অভিযোগ অনেক দর্শকের। ঢাকায় পর্যটনে আসা বিদেশিদের চোখে এই ঢাকারই আনন্দময় ছবি চোখে পড়েছে। এক্সট্র্যাকশান যেহেতু আন্ডার-ওয়ার্ল্ড নিয়ে তৈরি; আর পাতাল-জগত দরিদ্র মানুষদের নিয়ে সাম্রাজ্য গড়ে; সুতরাং পরিচালক স্যাম হারগ্রেভ দেখেছেন সেই পোস্ট-নিওরিয়ালিজমের স্টাইলে। ফলে ঢাকার গরিবিটাই বেশি উঠে এসেছে। দক্ষিণ এশিয়ার মেগাসিটি কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই, করাচি’র ওপরের জগত আর পাতাল জগতের পার্থক্যটা এমনই।
সহজ-সরল নাগরিকের চোখে ভি আই পি রোড, কিছু এলিট ক্লাব, কিছু পশ রেস্টুরেন্ট, কিছু এপার্টমেন্ট আর আলিশান বাড়ির যে সেলফি জগত; ঐটাই একমাত্র জগত। ফলে “এক্সট্র্যাকশান” ছবির ঢাকা তাদের
কাছে হয়তো অচেনা। খোদ যুক্তরাষ্ট্রেও সেলফি জগত আর পাতালজগতের পার্থক্যটা এরকমই। হলিউড সেগুলো নিখুঁতভাবে দেখায়।
ঢাকার ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে দুর্বলতা এ ছবিতে খুবই প্রকট। ঐ একটাই সমালোচনার জায়গা।
উপায়ন “রাত জেগে বই পড়ার একটা আলাদা ভালোলাগা আছে। চারিদিকে চুপচাপ আর নৈঃশব্দ্যের ভিড়ে বইয়ের…..
রুমী, খৈয়াম, হাফিজের কয়েক শতাব্দী পর এলেন গালিব। মির্জা গালিব। এত দিতে সুরাপাত্র ও…..
টমাস মান (Tomas Mann) – এর বুদেনব্রুক (Buddenbrooks) বইটি মূল জার্মান ভাষায় পড়ার পর কিছুটা…..
ইংরেজি ভার্সান এখানে >>> Welcome to the Pataquerical Night Show (Last Episode) পূর্ববর্তী পর্ব এখানে>>>…..