এক অভাগীর গল্প

স্থিতা সংস্থিতা
কবিতা
Bengali
এক অভাগীর গল্প

আবেগের কারিগরি

সে বড় নিপুণ শিল্পী,
আবেগও সে তৈরি করে নিখুঁত ভাবে।
আবেগ তার বড্ড দামী বটে,
তাই খরচ করে তা হিসেব করে।

আমি ততটাই বেহিসেবি,
অগোছালো উরণচন্ডী!
আবেগও আমার অপরিমিত,
তাই ঠকি বাড়ে বাড়ে।

একদিন সেও ছিল আমারই মত,
আবেগ ছিল তার অফুরন্ত,
সরল আবেগ তার হয়েছিল খেলো,
দেয়নি তার দাম, যাকে সে মন দিয়েছিল।

তারফল আজ ভোগ করছি আমি,
মন চাইলে, সে কপালে দেয় হামি।
কারণ আবেগ তার আজ বড্ড দামী,
খরচ করে সে হিসেব করে,
সে আজ বড় শিল্পী, সে আজ বড্ড নামী।

আমিও ঠকেছি অগুনতি বার,
তবু আবেগী আমার মন চির সংগ্রামী।
সে আবেগ খরচ করুক হিসেব করে,
আমি আবেগে তাকে জড়িয়ে দেব
আলোর মত করে।

এক অভাগীর গল্প

এক অভাগী দাঁড়িয়ে ছিল
রাজপথের ধারে, নদীর পাড়ে।
না ঝকঝকে চকচকে নয়,
ধুলোয় ভরা রাজপথ!
শুধু সাধারণ নয়, অতি সাধারণ অভাগী
খুঁজছিল মুক্তির পথ।
জীর্ণ বসনের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছিল
এক অনন্য অনন্ত যৌবন।
হঠাৎ উঠলো ঝড়!
ধুলো ঝড়ে পথ ধরে আসছিল
এক সুদর্শন সুপুরুষ,
ধাক্কা খেলো অভাগীর সাথে।
মুগ্ধ চোখে সে দেখলো অভাগীকে।
উপোষী যৌবন পেলো ঝর্ণার স্বাদ।
থামলো ঝড়, পথ হলো স্পষ্ট।
পক্ষীরাজ ঘোড়ায় চড়ে বসলো পুরুষ,
রাজকন্যার সন্ধানে চলে গেল সে ধুলো উড়িয়ে
পথের ধারেই ফেলে রেখে অভাগীকে।
মিলিয়ে গেল রাজপুত্র।
মিচকি হেসে বিদায় জানালো অভাগী তাকে।
অভাগী পিছন ফিরে নামলো নদীতে,
স্নান সেরে উঠলো যখন,
ঘাটের পারে দাঁড়িয়ে সখী দাসী সকল
নিয়ে হাতে স্বর্ণালঙ্কার, রেশমী বসন।
প্রিয় সখী বলল, দিলে না কেন আসল পরিচয়!
রানী বেশে অভাগী বলল, রাজ অহংকারে অন্ধ,
ভিখারী রাজার ভালবাসা নিষ্প্রয়োজন।
সখী বলল আবার, যদি সে আসে ফিরে নিজের ভুল!
অভাগী বলল, তবে তাকে ত্যাগ করতে হবে রাজ পরিচয়।
হতে হবে মলিন, আমার সাথে হতে হবে তাকে ধুলোয় বিলীন।

অন্ধকারের ঔজ্জ্বল্য

দিবস হোক বা জীবন,
উভয়ের শুরু ও শেষের সময় অন্ধকার।

প্রার্থনা হোক বা পরিতৃপ্তি,
উভয়ে ক্ষেত্রে চোখ বুজতে নামে অন্ধকার।

মেঘ হোক বা বৃষ্টি,
উভয়ের মিলনে আকাশ ঢাকে অন্ধকারে।

আদর হোক বা অভিমানের কান্না,
উভয়ে আবেগের প্রকাশ ঘটে অন্ধকারে।

অন্ধকার হোক বা নিঃস্বার্থ ভালবাসা,
উভয়েই থাকে টেকেন ফর গ্রান্টেডের দলে।

নববর্ষে সমস্ত বঞ্চিতকে করে বরণ,
অন্ধকারের উজ্জ্বলতা হোক সর্বজনীন।

তুমি বুঝে গেছ

তুমি বুঝে গেছ,
আমি ভালবাসি তোমায়।

তুমি বুঝে গেছ,
এই হৃদয় তোমার ডাকেই সাড়া দেয়।

তুমি বুঝে গেছ,
এই মন তোমার মন খুঁজে বেড়ায়।

তুমি বুঝে গেছ,
এই আমি স্বীকার করেছি তোমার বশ্যতা।

তুমি বুঝে গেছ,
যত দেবে ধাক্কা আমি আসতে চাইবো কাছে।

তুমি বুঝে গেছ,
তোমার অবহেলায় আমি বালিশ ভেজাই বোবা কান্নায়।

তুমি বুঝে গেছ,
আমি অপেক্ষায় থাকি তোমার একবার অবলোকনের।

তুমি বুঝে গেছ,
আমি চেয়ে থাকি মুঠোফোনের দিকে তোমার প্রতিবার্তার অপেক্ষায়।

তুমি বুঝে গেছ,
হাজার আঘাতেও আমি ভালবাসবো তোমায়।

তুমি বুঝে গেছ,
আমার দূর্বলতা, তাই ইচ্ছে ব্যথা দাও আমায়।

তুমি বুঝে গেছ,
আমার কাছে আঘাতের বিনিময় আবদার করা যায়।

তুমি বুঝে গেছ,
আমাকে বঞ্চিত করে আমার উপর অধিকার ফলানো যায়।

তুমি বুঝে গেছ,
আমার ভালবাসা, যাকে অপমান করা যায়।

শুধু তুমি বুঝতে পারোনা নিজেকে,
যে ঘৃণা দিয়ে ভালবাসছে আমায়।

স্থিতা সংস্থিতা। কবি। জন্ম ১৩ই ডিসেম্বর ১৯৮৪ সালের কলকাতায়। বর্তমানে সিনি চাইল্ড ইন নিড ইনস্টিটিউটটে প্রশিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত। প্রকাশিত বই: 'মন ছুঁতে চেয়ে' (কাব্যগ্রন্থ), 'শাওনে সিক্ত দুজনে' (কাব্যগ্রন্থ), 'ভার্জিনিটি' (গল্পগ্রন্থ) 'হৃদয় এক্সপ্রেস' (কাব্যগ্রন্থ), 'স্বয়ংসম্পূৰ্ণা' (প্রকাশিতব্য)।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..