এক কাপ চা

তোরিফা নাজমিনা মণি
অনুবাদ, কবিতা
Bengali
এক কাপ চা

এক কাপ চা

তোমার চিঠি পেয়েছি।
কি প্রেমাত্মকভাবে আমাকে কিছু লেখার জন্য জিদ করেছো,
এবং এখানে আমি, গভীর নীরবতায় নিমজ্জিত!
আমি কথা বলি, আমি কাজ করি,
কিন্তু ভিতরে শূন্যতার প্লাবন।
সেখানে, সেখানে কোন আন্দোলন নেই।
এভাবে মনে হয় আমি একই সময় দুটো জীবন যাপন করে চলেছি।
কি নাটক!
কিন্তু সম্ভবত সকল জীবনই নাটক
এবং এটা সম্পর্কে সচেতন হলেই দ্বার খুলে যায়
এক অনন্য মুক্তির দিকে।
যা হলো
ক্রিয়ার মাঝে অক্রিয়া
গতির মাঝে স্তব্ধতা
অনিত্যের মাঝে নিত্য
–সেটাই সত্য
এবং সেটাই অস্তি।
প্রকৃত জীবন অনন্তকালের মাঝে আছে—
বাকি আর সবকিছু কেবল স্বপ্নের প্রবাহ।
আদতে এ জগত কেবল একটা স্বপ্ন
এবং এটা এই স্বপ্নের মাঝে থাকা বা
না থাকা নয়,
মানুষকে সেগুলো সম্পর্কে সজাগ হতে হবে।
এই জাগুরকতা থেকে, সবকিছু পরিবর্তন হয়।
কেন্দ্র স্থানান্তর হয়।
দেহ থেকে আত্মায় আসে।
এবং সেখানে কী আছে?
এটা বলা যেতে পারে না।
এটা কখনও বলা হয় নি
এবং কখনও বলা হবে না!
নিজে জানা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই।
মরণের মধ্য দিয়েই মৃতুকে জানা সম্ভব
এবং নিজের মাঝে গভীর ডুব দিয়েই কেবল সত্যকে
জানা সম্ভব।
ঈশ্বর তোমাকে এই সত্যে নিমগ্ন করুন!

ওশো

দুই.

প্রিয়—
ভালোবাসা।
আমি পূর্ণতায়।
অনেকদিন থেকে আমি লিখতে চাচ্ছি
কিন্তু নানাবিধ কাজ আমাকে নিবারণ করেছে।
আমার আশিস, তৎসত্ত্বেও, প্রতিদিন পাঠাই।
জীবন হলো সাধনা;
তুমি যত নিজেকে এতে জড়াবে
এটা তত স্বর্গীয় হয়ে উঠবে।
আঁধারের মাঝেই আলো লুকিয়ে থাকে,
সত্য গোপিত আছে,
এবং অন্বেষণের আনন্দের মধ্য দিয়ে এটা আসে।
আমি একজন ঋষির কথা মনে রাখিঃ
সত্য একটা সোনার ঢাকনার নিচে লুকানো আছে।
সোনার ঢাকনা যা সত্য লুকিয়ে রেখেছে তা আর কিছুই নয় আমাদের
মন।
মন আমাদের দমন করে রেখেছে;
আমরা মনময় হয়ে আছি,
মনের সাথে একাত্ম হয়ে আছি,
এ কারণে দুঃখযাতনা আসে,
দাসত্ববন্ধন এবং পুনর্জন্মের শৃঙ্খল।
এই সব কিছুর উপর ভেসে ওঠো।
সজাগ হও যে তুমি এসব থেকে স্বতন্ত্র—
ঐ নিঃসঙ্গ সিদ্ধি আনে,
ঐ নিঃসঙ্গ স্বাধীনতা
এবং জন্ম মৃত্যুর পরিসমাপ্তি।
আমাদের তাই হতে হবে প্রকৃতই আমরা যাঃ
এটাই হলো একমাত্র সাধনা।
কামনা বাসনার মাঝে জীবনযাপন করা নৈরাশ্যজনক
সেটা এই সাধনা আনে।
আকাংখা/কামনা সম্পর্কে সজাগ হও
এবং অনাসক্তি দেখা দিতে শুরু করবে।
এটাকে ঘটাতে হবে না,
এটা আসক্তির প্রতি সচেতনতার/জাগুরকতার ফলে স্বাভাবিকভাবে আসবে।
আমাদের প্রত্যককে এই আসক্তির প্রতি সজাগ হতে হবে,
এবং সচেতনতা ধরে রাখতে হবে!
কোনকিছু অসচেতনভাবে করা ঠিক হবে না।
যদি এটা স্মরণ থাকে
একদিন এক নতুন ধরণের বৈপ্লবিক পরিবর্তন জায়গা করে নেবে
আমাদের চৈতন্যে।
ঈশ্বর তোমায় সেই বৈপ্লবিক পরিবর্তনের দিকে পরিচালিত করছেন—
এটা আমি জানি।

ওশো

 

তিন.

প্রিয়—
শ্রদ্ধা।
তোমার চিঠি পেয়ে সত্যি খুব খুশি হয়েছি।
আজ পর্যন্ত আমি কখনও কিছু লিখি নি
কিন্তু এখানে একটা ধ্যানকেন্দ্র চালু হয়েছে
যেখানে কিছু বন্ধু পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে।
যেখানে আমি কিছু সুনির্দিষ্ট ফল পাচ্ছি
সেখানে প্রতিটি বিষয় নিয়ে আমার লেখার সম্ভাবনা আছে।
আমার নিজের উপর পরীক্ষা সম্পর্কে, আমি নিঃসংশয় এবং নিশ্চিত,
কিন্তু সেগুলোর উপকারিতা আমি অন্যদের মাঝেও পরীক্ষা করে দেখতে চাই।
আমি দর্শনের ঢংএ কিছু লিখতে চাই না,
আমার দৃষ্টিভঙ্গি বৈজ্ঞানিক।
আমি যোগ সম্পর্কে কিছু বলতে চাই
নির্দিষ্ট সাইকোলজিক্যাল
এবং প্যারা-সাইকোলজিক্যাল বিষয়ের উপর ভিত্তি করে গবেষণার কথা।
এ সম্পর্কে অনেক অলীক ধারণা প্রচলিত আছে
এবং সেগুলোকে খণ্ডিত করতে হবে।
একারণেও আমি এখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছি।
এটা আমার কাছে পরিষ্কার যে
এই কাজ কোন দলের প্রচার করার জন্য নয় বা কোন হেতু নেই।
যদি কখনও তুমি এখানে আসো তবে আমরা এ বিষয়ে আরো কথা বলতে পারবো।

ওশো

 

চার.

প্রিয়—
শ্রদ্ধা!
তোমার প্রেমময় চিঠির জন্য কৃতজ্ঞ।
তুমি ধ্যান করছো—এটা আনন্দের বিষয়।
ধ্যান থেকে কোন কিছু অর্জন করার ধারণাকে ত্যাগ করো,
কেবল স্বাভাবিকভাবে করে যাও;
যা ঘটার তা আপনা থেকেই ঘটবে।
একদিন, অনায়াসে, সবকিছু ঘটতে শুরু করবে
আপনা থেকেই।
প্রচেষ্টা ধ্যানের দিকে পরিচালিত করে না,
আসলে এটা একটা প্রতিবন্ধকতা।
প্রচেষ্টা, অভ্যাস, চর্চায়
চাপা উত্তেজনা/পীড়ন হয়।
এমনকি শান্তির প্রত্যাশাও,
অস্থিরতা আনে।
এই চাপা উত্তেজনাকে বিদেয় করতে হবে।
যত শীঘ্র সেটা ঘটবে
একটা ঐশ্বরিক প্রশান্তি বইতে আরম্ভ করবে।
ভাবা থাওঃ আমি এটা করছি;
বোঝ, তার বদলেঃ যা-আছে-তার হাতেই আমি ছেড়ে দিচ্ছি নিজেকে।
সমর্পণ করো,
নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করো,
যত শীঘ্র তুমি সেটা করো, শূন্যতা আসে।
শ্বাস-প্রশ্বাস এবং দেহ শিথিল হয়,
তুমি বলো।
মনের সাথেও এটা ঘটবে।
যখন মনের বিদায় হয়
তখন সেখানে কিসের উদয় হয় তা বর্ণনাতীত।
আমি জানি যে তোমাদের উভয়ের জন্য সেটা ঘটতে চলেছে।
কেবল কোন উদ্দেশ্য ছাড়া স্বাভাবিক থাকো।
শীঘ্রই আমি সেখানে যাবো,
সে পর্যন্ত, আমি তোমাকে যা করতে বলেছি
শান্তভাবে করে যাও।
সকলের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।
লিখ যখনই লিখতে ইচ্ছে করে।
আমি পরম প্রশান্তিতে, পূর্ণতায় আছি।

ওশো

 

পাঁচ.

প্রিয়—
প্রীতি রইল।
ঈশ্বরের কৃপায়
তোমারা নিজের ভিতরের আলোকে আবিস্কারের
চেষ্টা করছো।
সে আলো নিশ্চিতভাবে সেখানে আছে
এবং একবার যখন তার দেখা মিলবে জীবনের সকল আঁধার উধাও হবে।
প্রতিটি পদক্ষেপ ভিতরে নেবে
পরতের পর পরত আঁধারের আবরণ দূরে সরে যাবে
এক আলোর জগত উন্মোচিত হবে যার সবকিছু
নতুন।
এই অভিজ্ঞতা সকল দাসত্বে আবদ্ধ অবস্থা ছিন্ন করে দেবে—
এবং তারপর সেই অভিজ্ঞতা আসবে যা আগে কখনও
সেখানে ছিল না!
যা চিরকাল মুক্ত সেদিকে মুক্তি ঘটে!
তোমার অগ্রগতিতে আমি আনন্দিত।
অনেক আগে তোমার চিঠি পেয়েছি
ব্যস্ততার কারণে উত্তর দিতে দেরি হলো,
কিন্তু সব সময় তোমাদের কথা মনে থাকে,
বরাবর যারা এই আলোর তরে আকুল।
আমার শুভকামনা সদা তাদের তরে বয়ে চলে।
আমাদের চলনশীল থাকতে হবে।
অনেক সময় এ পথে একজন নিরুৎসাহী হয়ে উঠতে পারে
কিন্তু শেষ পর্যন্ত তৃষ্ণার্ত তীর্থযাত্রী
নির্ঝরের কাছে পৌঁছায়।
সত্যি বলতে কি, তৃষ্ণার পূর্বেই সেখানে জল ছিল।
সকলের প্রতি আমার আন্তরিক ভক্তি রইল।

ওশো

 

ছয়.

প্রিয়—
শ্রদ্ধা রইল।
আমি চলে এসেছি, কিন্তু তোমার চিঠি আমাকে অনুসরণ করে এখানে এসেছে।
এটা পেয়ে আমি খুশি হয়েছি।
আমি দেখছি জীবন পরমসুখপূর্ণ।
সাধারণভাবে, আমাদের সেটা দেখার চোখ নেই
সে কারণে আমরা এটা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি,
কিন্তু এই নিহারন/দৃশ্যতা সৃষ্টি করা যায়।
হয়ত এটা সৃষ্টি করা যেতে পারে এভাবে বলা ঠিক নয়;
ইতোমধ্যে এটা সেখানে আছে,
এটা কেবল চোখ মেলে দেখার বিষয়,
এবং তারপর—সবকিছু বদলে যায়।
ধ্যানে এটা অর্জন হয়।
ধ্যান মানে হলোঃ শান্তি/স্বস্তি; এই শূন্যতা সেখানে আছে কিন্তু চিন্তার প্রবাহ দ্বারা
অবগুণ্ঠিত হয়ে আছে।
যখনই চিন্তার বিরতি হয় তখন সেখানে তার উদয় হয়।
চিন্তা থেকে মুক্ত হওয়া খুব কঠিন মনে হয়
কিন্তু এটা খুব সহজ।
মনকে খুব চঞ্চল মনে হয়
কিন্তু এটাকে সহজেই স্থির করা যায়।
এই উৎকর্ষতার চাবি হলো সাক্ষী হওয়া।
তোমাকে সাক্ষী হতে হবে,
মনের পর্যবেক্ষক।
তোমাকে জাগ্রদবস্থায় দেখতে হবে,
কেবল দেখে যাও।
যে মুহূর্তে সাক্ষীভাবের সূচনা হয়,
ঠিক সেই মুহূর্তে একজন চিন্তামুক্ত হয়।
এটা পরমসুখের/সিদ্ধির পথ উন্মোচিত করে দেয়
এবং তারপর এই একই পৃথিবী সম্পূর্ণ এক নতুন পৃথিবীতে
রূপান্তরিত হয়ে যায়।
ধ্যান করে যাও।
ফল আসবে ধীরে।
এটা নিয়ে চিন্তিত হবে না,
তাদের আগমন নিশ্চিত।
সকলের প্রতি আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা রইল।

ওশো

 

সাত.

প্রিয়…
ভালোবাসা জেনো।
তোমার চিঠি পাওয়ার পর অনেক দিন চলে গেছে।
আমি খুশি যে তুমি শান্তির আকাঙ্ক্ষা করছো—
কিন্তু এই ধারণা বাদ দাও যে তুমি সে পথ থেকে পিছিয়ে আছো।
কেউ পিছিয়ে নেই।
এটা কেবল ঘুরে দাঁড়াবার বিষয়—
এবং বিন্ধু সিন্ধুতে পরিণত হয়।
আসলে বিন্ধুই সিন্ধু
কিন্তু বিন্ধু সেটা জানে না—
সেটাই একমাত্র বিচ্ছেদ।
ধ্যানের শূন্যতার মাঝে সেই বিচ্ছেদও
ঘুচে যায়।
ধ্যান হলো জীবনের সাধনার কেন্দ্র।
চিন্তা প্রক্রিয়া মন্থর হয়ে যাবে
এবং সে স্থলে শান্তি ও শূন্যতা নেমে আসবে।
যখন চিন্তা বিলুপ্ত হবে
তখন দ্রষ্টা, সাক্ষী দৃশ্যমান হবে
এবং অসচেতনতার জটিলতা অন্তর্হিত হবে।
এই জটিলতার কারণ হলো দাসত্ববন্ধন।
শুরুতে এটা পাথরের মত কঠিন মনে হবে
কিন্তু যে সাধক ধৈর্য্য সহকারে অনুশীলন করবে
একদিন দেখবে যে এটা কেবল একটা স্বপ্ন ছিল,
একটা বাতাসের ফুঁৎকার।
কামনা করি তোমার ধ্যানের বীজ
সমাধীর ফুলে প্রস্ফুটিত হয়ে উঠুক!
সকলের প্রতি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা রইল।
সাক্ষাতে আরো কথা হবে।

ওশো

 

আট.

প্রিয়…
আমার শ্রদ্ধা জেন।
আমার স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে সারা মে মাসেঃ বম্বে, কলকাতা, জয়পুরের
সকল কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে।
আমি জেনে খুশি হয়েছি যে তুমি সমাধি যোগ
অনুশীলন করছো।
ফলাফল নিয়ে চিন্তা করো না, কেবল অনুশীলন
করে যাও।
একদিন ফল পাবেই নিশ্চিত—ধীরে ধীরে নয়
কিন্তু অকস্মাৎ, অনায়াসে, একজনের অজান্তে, এটা ঘটে।
এক মুহূর্তের মাঝে বিস্ময়করভাবে জীবন
ভিন্নরকম হয়ে যায়!
এই মুহূর্তে আমি ভগবান মহাবীরকে নিয়ে কিছু লিখছি না।
কিন্তু তুমি যদি লিখতে প্ররোচিত করো তবে সেটা ভিন্ন কথা!
এখানে সবকিছু ভালো চলছে।

ওশো

 

নয়.

প্রিয়…
ভালোবাসা।
এখানে আসার পথে তোমার চিঠি পড়েছি।
এটা আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।
যদি তোমার জীবনের যথার্থতা জানার আকাঙ্ক্ষা প্রবল হয়
তাহলে আজ তুমি যার আকাঙ্ক্ষা করছো
তা একদিন অর্জিত হবে।
যেভাবে নদী সাগরকে খুঁজে বের করে
তেমন মানুষ চাইলে সত্যকে খুঁজে বের করতে পারে।
কোন শিখর, কোন পাহাড় তাকে রুখতে পারে না,
সত্যি বলতে কি, এই চ্যালেঞ্জ মানুষের রোমাঞ্চবোধকে
জাগ্রত করে দেয়।
প্রত্যকের মাঝে সত্য লুকিয়ে আছে।
নদীকে সাগর খুঁজে নিতে হয়
কিন্তু আমাদের সাগর আমাদের ভিতরে আছে—
এটা বিস্ময়কর যে তবুও অনেকে এই সাগরবিনে
তৃষ্ণার্ত হয়ে আছে।
আসলে তারা সত্যি এটা চায় না।
যীশুর একটা কথা আছেঃ প্রার্থনা করো এবং তোমাদের
তা দেওয়া হবে।
কিন্তু যদি তুমি না চাও, তবে সেটা কার দোষ?
ঈশ্বর প্রাপ্তির চেয়ে উত্তম আর কোন কিছু
হতে পারে না।
আমাদের কেবল আকাঙ্ক্ষা করতে হবে, আর কিছু নয়।
আকাঙ্ক্ষা যত প্রবল থেকে প্রবলতর হবে
ব্যক্তির অহং তত বিলীয়মান হবে।
একটা সীমার নাগাল পাওয়া যাবে
বাস্পীভবনের মুহূর্তে পৌঁছাবে,
যেখানে সন্ধানরত ব্যক্তি সম্পূর্ণরূপে অন্তর্হিত হবে
কেবল কাঙ্ক্ষিত বিষয় রয়ে যাবে।
এটাই হলো অভীষ্টসিদ্ধির প্রকৃত মুহূর্ত।
যেখানে ‘আমি’ থাকে না সেখানে সত্য থাকে—
এই অভিজ্ঞতাই একমাত্র ঐশ্বরিক অভিজ্ঞতা।
অহং এর অনুপস্থিতই হলো ঈশ্বরের উপস্থিতি।
তোমাদের সকলের প্রতি আমার শুভেচ্ছা রইল।

 

দশ.

শ্রদ্ধা।
আমি যখন তোমার চিঠির অপেক্ষা করছিলাম তখন সেটা এলো।
আমি সত্যিই চাই যে তোমার জীবন আলোই ভরে উঠুক,
তুমি ঈশ্বরের কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে পারো।
ঈশর এবং আলোর অবস্থান কাছাকাছি,
এটা কেবল ব্যক্তির নয়ন মেলে দেখার বিষয়
এবং তখন যা আমাদেরই তা আমাদের হয়ে যায়।
এটা অক্ষিপক্ষ এবং অক্ষি এই দুইয়ের মধ্যে দূরত্বের
পার্থক্য—
এবং সম্ভবব ততটাও নয়;
আমরা সব সময় নয়ন মেলে রয়েছি কিন্তু কেবল দেখতে পাই না।
একটা প্রাচীন গল্প আছেঃ
একটা মাছ সাগরের অনেক গল্প শুনেছিল।
মাছটি সাগরের জন্য অস্থির হয়ে উঠল
সুতরাং সে একদিন মাছের রানীকে জিজ্ঞেস করলঃ
এই সাগর কি এবং এটা কোথায় আছে?
মাছের রানী বিস্মিত হলো। সে বললঃ
সাগর? কেন, তুমি তো এই সাগরের মাঝেই আছো!
ঠিক এই মুহূর্তে তোমার অস্তিত্ব, তোমার জীবন,
এই সাগরের মাঝেই বিরাজিত।
এটা তোমার মাঝেই আছে
সাগরই তোমার সব,
কিন্তু সাগরের জন্য, তুমি কিছুই না।
এই বিশেষ কারণে
মাছ সাগরকে দেখতে পায় নি!
এবং এই বিশেষ কারণে
আমরা ঈশ্বরকে খুঁজে পাই না।
কিন্তু তাঁকে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে—
শূন্য হয়ে।
এই শূন্যতার হালে আমরা তাঁর সাথে মিলিত হই
এই জন্য যে ঈশ্বর হলেন শূন্যতা।
আমি পরম সুখাবস্থায় আছি,
বা বলতে পারি—
পরম সুখাবস্থাই বিরাজিত এবং আমি নেই!

তোরিফা নাজমিনা মণি। লেখক, অনুবাদক ও শিক্ষক। জন্ম ও বেড়ে ওঠা মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার সীমান্তবর্তী তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামে। প্রিয় বিষয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, ভ্রমণ, কবিতা। পেশা শিক্ষকতা।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..