এক জ্যোৎস্না রাতে

এলান মালাকার
গল্প
Bengali
এক জ্যোৎস্না রাতে

এক জ্যোৎস্না রাতে

তিন চারিবার ডাকিবার পরেও পারুর কোন সাড়াশব্দ না পাইয়া, বিজু পাশ ফিরিয়া ঘুমাইতে চেষ্টা করিতে লাগিল। তাহার দুই
চক্ষু কেবল লাগিয়া আসিতেছিল, এমনই সময় তার নাভীমূলের নিচে একটি শীতল হাতের অঙ্গুলি সঞ্চালনে তাহার শরীর শিরশির
করিয়া উঠিল। পাশ ফিরিয়া বিজু পারুর মুখোমুখি হইলে, সে পারুর চোখ অন্ধকারে চকচক করিতে দেখিল। পারুর সাদা
দাঁতের এমন ছলনাময়ী হাঁসি, বিজুর বহু আগে থেকেই চেনা। আজ সাত বছরের অধিক তারা একসাথে সংসার করিতেছে। দুই
দুইটা সন্তান জন্ম দিবার পর হইতে পারুর যৌবনের নৈমিতিক তাগাদা খানিকটা নিস্তেজ হইয়া পড়িলেও, এমন ভরা পূর্নিমার
রাতে, পারু এমন পড়িয়া পড়িয়া শুধু ঘুমাইবে, তাহা বিজু কিছুতেই বিশ্বাস করিতে পারিতেছিলনা।
সহসাই বিজু পারুকে জাপ্টাইয়া ধরিয়া পিষিতে লাগিলে, এক ঝটকায় পারু তাহাকে সরাইয়া দিল। পাশে ঘুমানো পাঁচ বছরের
ছেলেটা ঘুমের ঘোরেই যেনো একবার পিটপিট করিয়া তাকাইয়া, আবার ঘুমের রাজ্যে হারাইয়া গেলো। পারু উঠিয়া দুই বছরের
কন্যাটিকে বাহিরে নিয়া প্রশ্রাব করাইয়া আবার বিছানায় শোয়াইয়া দিল। জ্বালাইয়া রাখা হারিকেন খানিকটা চেতাইয়া দিয়া,
পারু একটুকরা মিঠাগুড় মুখে পুড়িয়া এক ঢোক জল খাইলো। কি জানি কি কারণে, তথাপি শয্যাসঙ্গিনী হইবার পূর্বে এইরুপ
মিঠাই মুখে পুড়িয়া লইতে পারুর বহুদিনের অভ্যাস। বিজুর দিকে আড়চোখে তাকাইয়া দেখিল সে আগের মতই চিত হইয়া
শুইয়া থাকিয়া উর্ধপানে অপলক দৃষ্টিতে চাহিয়া রহিয়াছে, কেবল তাহার বুকের ছাতি খানিক বেশিবেশি উঠানামা করিতেছে।
বিজুর এইরুপ লক্ষনবিধি, পারুর ভালই জানা আছে। সে মুচকি হাসিয়া বিজুর দিয়ে পিছন ফিরিয়া, গতর হইতে ব্লাউজ
আর ছায়া খসাইয়া খালি শাড়িতে নিজেকে প্যাচাইয়া সন্তর্পণে উঠানে নামিয়া আসিল।
বিজুদের বাড়িটি সাতলা বিল, যাহা আজকাল শাপলার বিল বলিয়া ব্যাপকভাবে পরিচিত, তাহারই এক প্রান্তে,
আশেপাশে আধা মাইলের মধ্যে আর কোন ঘর বাড়ি নাই। বরষার মৌসুমে তাহাঁদের বাড়িটি যেন একটি বিচ্ছিন্ন
ছেঁড়া দ্বীপ। চারিদিকে শুধু শাপলার বিল তাহাদেরকে ঘিরিয়া রাখিয়াছে। দক্ষিনমুখী একখানা দো’চালা ঘর, এক
চিলতে উঠান, উঠানের অপরপ্রান্তে সারিসারি সুপারি গাছের বেষ্টনী। দখিনা নদীর হাওয়ায় সেই সকল গাছের
পাতা পতপত করিয়া দুলিতে থাকে। উত্তরদিকে গত চার বছর আগে একটা পুকুর কাঁটা হইয়াছে। জ্যোৎস্না রাতে
তাহার কালো জল মৃদুমন্দ বাতাসে ওঠা ঢেউয়ে টলমল করে। পুকুরের চতুর্দিকে ফল-ফলাদির গাছ। শখ করিয়া
বিজু সেই পুকুরের ঘাট বাঁধাইয়া লইয়াছিল। পূবদিকে একফালি সবজির বাগান, তাহা পারু একাই সামলায়।
বাড়ির পশ্চিমে গোয়ালঘর আর হাঁস মুরগীর খোয়ার। স্বচ্ছলতা বিজু সংসারে উপচাইয়া না পড়িলেও, পারুর
কারিশমায় মাসিক কিস্তিতে কিছু টাকা গাঁয়ের সমিতিতে জমা পড়ে।
মিনিট খানেক পরে বিজু বিছানা ছাড়িয়া উঠিয়া, দরজার কপাট বাইরে হইতে টানিয়া উঠানে নামিয়া আসিলে
দেখিতে পাইল, পারু পিঠ উদাম করিয়া সুপারি বাগানে পাতিয়া রাখা বেঞ্চিতে বসিয়া আপন মনে গুনগুনাইতেছে
আর পা দোলাইতেছে। বিজু পা টিপিয়া টিপিয়া পারুর পিছনে দাড়াইলে সে তাহার লম্বা দুইখানি হাত পারুর
বগলের নিচ হইতে চালান করিয়া জাপ্টাইয়া ধরিল। পারু নিজেকে ছাড়াইয়া লইতে চেষ্টা করিলে, বিজু তাহাকে
পাজকালো করিয়া কোলে তুলিয়া উঠানে এমন করিয়া চক্কর দিতে থাকিল, যেন সে পারুকে পারিলে বাতাসে
ভাসাইয়া দেয়। এই সময় বিজু মাথা নোয়াইয়া পারুর কমলার মত দুইটি ঠোঁট নিজের দাঁতে মৃদু কাটিতে লাগিল।
পারুর মুখের ভিতর মিঠা গুড়ের স্বাদ পাইলে বিজুর জ্বিভ লকলক করিয়া পারুর মুখগহ্বরে সাপের মত লেহন
করিতে থাকিল। পারুর দম বন্ধ হইবার উপক্রম হইলে, সে ঠোঁটে ঠোঁটের এমন রতিকলায় ক্ষান্ত দিল। ইতিমধ্যে
পারুর বুকের কাপড় খসিয়া পড়িয়া উঠানে লুটাইতে লাগিল।
জ্যোৎস্নার আলোয় পারুর উন্মুক্ত সুঢোউল বক্ষে কাঁপন দেখিয়া, বিজু পারুকে বুকে জড়াইয়া পিষিয়া ফেলিতে
চাহিল। এমন উন্মাদনা কালে বিজু হোঁচট খাইবার উপক্রম হইলে পারুকে নিষ্কৃতি দেয়। বিজুর আলিঙ্গন হইতে
মুক্ত হইয়া, পারু পুকুর ঘাটের দিকে পা বাড়াইল। পথিমধ্যে কাঁটাঝোপে তাহার শাড়ির আঁচলখানি জড়াইয়া গেলে,
পারু তাহা ছাড়াইবার চেষ্টা না করিয়া, আপন গাত্র হইতে শাড়িখানি খসাইয়া, একটি কালো ছায়ার মতন হাঁটিয়া
আগাইয়া গেল। পুকুরের জলে পা ডুবাইয়া ঘাটে বসিয়া বিজুর জন্য অপেক্ষা করিতে লাগিল।
বিজু আর পারু উভয়েই কালো বর্ণের। বিজু সাড়ে ছয় ফিটের অধিক লম্বা, সাঁতারুর মত লিকলিকে শরীর,
উচ্চতার সহিত নিজের ওজন না মাপিলেও সে যথেষ্ট মানান সই। গায়ে একদম বাড়তি কোন চর্বি জমে নাই।
ওদিকে পারুর নিতম্ব গৃহস্ত বাড়ির ফুলিয়া ফাঁপিয়া থাকা খড়ের গাদার মত স্থুলকায়। তার উচ্চতা পাঁচ ফিটেরও
কম। বিজুর লম্বা লম্বা আংগুলে বারংবার নিষ্পেষিত হইবার পরেও, পারুর স্তনযুগল কচি লাউয়ের মত নরম

আর মসৃণ। অথচ তাহার কোমরের মাপ নিলে আশ্চর্য্যজনক ভাবে তাহা তিরিশের অধিক কোন মতেই হইবে না।
পারুর দেহখানি, বিজু মত এমন মরদ এর শৌর্য্য বীর্য নিঃশেষিত করিবার মত যথেষ্ট ক্ষমতা রাখে। কোন দিন
যে কে কার কাছে হার মানিবে, তা আগেভাগে বলা মুশকিল বটে। তাহারা নিজেদের শক্তি ক্ষয় করিয়া সুখের
দরিয়ায় ভাসিয়া যাইবার বাসনায় এমন এমন ভরা পুর্নিমার রাত্রিকালে আদিম রতিকলায় ডানা ঝাঁপটাইয়া কামের
আগুনে ঝাঁপ দেবার নিমিত্তে ছটফট করে।
জলে নামিবার কালে বিজু লুঙ্গি ছাড়িয়া একখানি গামছা কোমরে গুজিয়া পুকুর ঘাটে আসিয়া দাঁড়াইলে, পারু
আঁজলে জল ছিটাইয়া বিজুকে প্রলুব্ধ করিতে লাগিল। বিজু ঘাটের কয়েক ধাপ সিঁড়ির নিচে নামিয়া আসিয়া পারুর
মুখোমুখি দাঁড়াইল। একেতো তাদের উচ্চতায় বিস্তর ব্যাবধান, তার উপর যেহেতু বিজু উপরের সিঁড়িতে দাঁড়াইয়া
আর পারু নিচের সিঁড়িতে, তাহাতে পারুর ঘন নিঃশ্বাস বিজুর নাভিমূলে ধাক্কা দিতে থাকিলে, বিজু অস্থির হইয়া
উঠিল। পারুকে জাপ্টাইয়া ধরিয়ে গিয়া শূন্যকে আলিঙ্গন করিল।
কিছু বুঝিবার আগেই, পারু এক ঝটকায় বিজুর কোমর হইতে গামছা খসাইয়া পুকুরের কালো জলে ঝাঁপাইয়া
পড়িলে। বিজু ক্ষণকাল কিংকর্তব্যবিমুঢ় হইয়া পড়িলেও ভোদরের ন্যায় পারুর উপর ঝাঁপাইয়া পড়িয়া, তাহাকে জলেতে খান
কয়েক চুবানি দিয়া, মাঝ পুকুরের দিকে সাঁতরাইয়া পালাইলো।।
অষ্টাদশী কন্যার যৌবনের ন্যায় সাতলার বিলে এখন ভরা পূর্নিমা উপচাইয়া পড়িতেছে। বিজু দুই হাতে জল
ঠেলিয়া সরাইলে পুকুরে যে ছোট ছোট ঢেউ ওঠে তাহাতে জ্যোৎস্নার আলো ঢেউয়ে ঢেউয়ে ধাক্কা খাইয়া পারুর
সিক্ত মুখমন্ডলে প্রতিফলিত হইলে তাহা এক অপার্থিব অপ্সরীর রূপ ধারণ করিয়া বিজুর বুকের ধকধকানি
বাড়াইয়া তোলে। তুরুপের তাস এখন পারুর নিকট, সে জানে বিজু জলে নামিলে কেমন করিয়া মাতোয়ারা হইয়া
পড়ে। জলকেলিতে বিজুর যে বিশেষ দুর্বলতা রহিয়াছে, তাহা কাজে লাগাইয়া পারু জলের তলে লুকোচুরি খেলে।
বিজু তাহাকে ধরিতে আসিলেই, সে ডুব দিয়া দূরে সরিয়া যায়। বিজু সাঁতার কাটিয়া নিকটে আসিলে, সে
আবার ডুব দিয়া পালাইয়া যায়। পারু পালাইয়া গেলেও তাহার ঘন কালো চুলের গোছা পুকুরের জলে দৃশ্যমান,
আর বিজু তাহা অনুসরণ করিয়া পারুকে খুঁজিয়া লয়।
ইতিমধ্যে কোথা হইতে এক খন্ড কালো মেঘ আসিয়া গোল থালার মত চাঁদটাকে গ্রাস করিলে, পুকুরের জলে
তাহার ছায়া নামিয়া আসে। পাড় ঘেঁষিয়া দাঁড়াইয়া থাকা বৃক্ষরাজির ছায়া পুকুরের জলে পড়িলে পাড়ের কিনারায়
ঘুটঘুটে অন্ধকার নামিয়া আসে। পারুর গা কেমন ছমছম করে। মাঝ পুকুর হইতে সাঁতরাইয়া সে ঘাটের সিঁড়িতে
বুক সমান জলে দাঁড়ায়। নিজের উন্নত বক্ষযুগল দলন করিতে থাকে। ওদিকে বিজু ততক্ষণ মাঝ পুকুরের
ভোঁদরের ন্যায় নানান কসরত দেখাইতে ব্যাস্ত। বিজু নগ্ন দেহে জলের উপর ভাসিয়া থাকিয়া এইরুপ কসরত
দেখিয়া পারু হেঁসে লুটোপুটি খায়।
হঠাৎ করিয়া বিজু মাঝ পুকুর হইতে নাই হইয়া গেলে পারু ভীতসন্ত্রস্ত হয়। একদমে ডুব সাঁতার দিয়া বিজু ভুস
করিয়া একরাশ বুদবুদ ছাড়িয়া পারুর নাভিমূলের নিচে সুড়সুড়ি দেয়। তাহাকে কোলে তুলিয়া লইয়া কোমর
অব্দি নামাইয়া নিয়া আসে। পারুর দেহের উর্ধভাগ জলে উপর ভাসিতে থাকিলে, সে তাহার দুই পা দিয়া বিজুর
কোমর জড়াইয়া ধরে। জলের উপর ভাসমান দুই নর আর নারীর দেহ ততক্ষণে তাহাঁদের ভর সামলাইয়া
মধ্যাকর্ষণকে বিদ্রুপ করে। পারুর ভাসমান স্তনযুগল জলে নৃত্য করিতে থাকিলে, বিজুর কোমর দুলানি তাতে সঙ্গত
দেয়।
আকাশ হইতে সেই একখন্ড কালো মেঘ ইতিমধ্যে মিলিয়া গেলে, পুকুরের কালো জল আবারও চকমক করিতে
থাকে। স্বর্গ হইতে দেব দেবী নামিয়া আসিয়া, এমন ভর পুর্নিমায় পারু আর বিজুর জলকেলি দেখিতে দেখিতে
শব্দহীন করতালি দেয়, বেহালায় সুর তোলে আর আকাশ হইতে মেঘরাজকে হটাইয়া দেয়। তারা দেবরাজের কাছে
বর প্রার্থনা করে, এমন চন্দ্রিমা রাত যেন ভোরের আলোয় সহসা মিলিয়া না যায়। কামদেব আর তার স্ত্রী রতি
এর তন্দ্রা ভংগ হইলে, তাহারা পারু আর বিজুর এমন জলকেলি দেখিয়া, তাহাঁদের উপদেবতা যেরুপ কোকিল,
পারাবত, ভ্রমরের দল আর মলয় বাতাসকে ডাকিয়া আনিয়া হোলিকা উৎসবে মহুয়া সেবনে যৌন উন্মাদনায় লিপ্ত
হয়। স্বর্গে এক্ষণে মৃদঙ্গ বাজিয়া ওঠে আর তাহাতে ভূতলে কম্পন অনুভূত হয়।

পার্থিক সুখের এমন জোয়ারে স্বর্গরাজ্যে যৌনতা ছড়াইয়া পড়িবার উদাহরণ কেবলমাত্র সাতলা বিলের এই ছেঁড়া
দ্বীপে কোন এক ভরা পুর্নিমায় পারু আর বিজুর দেহগত ছলাকলায় সম্ভবপর হইয়া ওঠে। স্বর্গ লুন্ঠিত হয়
ধরাধামের এরূপ রতি ক্রিয়ায়। এমন নিশুতি রাতে যৌনতার সেতু পাড়ি দিয়া স্বর্গের দেব দেবীরা সাতলার বিলে
শাপলার মত প্রস্ফুটিত হইয়া নিজেকে মেলিয়া ধরে।
দেবালায়ে এত কিছু ঘটিতে থাকিলেও পারু কিংবা বিজু এর কিছুই টের পাইল না। তথাপি সহসাই পুকুরে জলে
ধুপধাপ করিয়া পরপর দুইটি পাকা তাল খসিয়া পড়িলে, তাহারা একে অপরের নিকট হইতে বিচ্ছিন্ন হয়। সম্বিৎ
ফিরিয়া পাইলে পারু ধীর পদক্ষেপে ঘাটের সিঁড়ির টপকাইয়া জল হইতে উঠিয়া পড়ে। বিজুর পড়িয়া থাকা
গামছাখানি তুলিয়া সে মাঝ পুকুরে ছুঁড়িয়া ফেলিয়া দৌড়াইয়া বাড়ির পথ ধরে। ওদিকে খানিক শ্রান্ত হইয়া বিজু
অলস ভঙ্গিতে পুকুরের জলে সাঁতার কাটিয়া নিজের ইজ্জত তুলিয়া আনে।
তাহলে আজ কি এই পর্যন্তই? কামদেব কি এই আসরেই বিদায় লইবে? আদৌ নয়। পুর্নিমার চাঁদ এখন অব্দি মধ্য
গগনে, কামসূত্রের অনেক কলা এখন অব্দি পূরণ হইবার বাকী। আজ একাদশী কিংবা পঞ্চমীর রাত নয়, ভরা
পুর্নিমার উন্মাদনা।
উঠানের দক্ষিণে যেইখানটায় বিলের জল ছুইছুই, সেইখানে এক অতি পুরাতন হিজল গাছ বিলের জলের উপর
ঝুলিয়া পড়িয়াছে। তার শাখা প্রশাখাতেও যেন এখন ভরা যৌবন। থরেথরে হিজল ফুল ফুটিয়া চারিদিকে তার
সৌরভ মৌ মৌ করিয়া ছড়াইয়া দিতেছে। পরিপক্ক ফুলগুলি টুপটাপ করিয়া বিলের জলে অবিরত ঝরিয়া পরিতেছে।
সেইখানেই বিজুদের একখানা ডিঙ্গি নৌকা বাঁধা রহিয়াছে। নৌকার উপরও হিজল ফুল ঝরিয়া পড়িয়া পাটতনে
ফুলশয্যা রচনা করিয়াছে। হিজল এমনই এক ফুল যার স্পর্শ পাইলেই যেন সমস্ত শরীর শিরশিরিয়া ওঠে। হিজল
ফুলের মালা গাত্রে ধারণ করিলে তাহার বন্য সৌরভ এক প্রকার মাদকতা ছড়ায়। মাটিতে পড়িয়া থাকা হিজল
ফুল পায়ে মাড়াইলে, পায়ের নিচ হইতে এক প্রকার শিহরণ মস্তিকে ঢেউ তোলে। সে ঢেউ কামের, মাদকতার,
উদ্দিপনার। সেইরুপ হিজল ফুল পায়ে মাড়াইয়া পারু নৌকার গলৌতে চড়িয়া বসে।
পুকুরের জলে স্নাত হইয়া বিজুর কামোদ্দিপনা মাথাচাড়া দিয়া উঠিলে যে বাড়িময় পারুকে খুঁজিতে থাকে। ইতিমধ্যে
পারু কল্কিতে গঞ্জিকা সাজাইয়া তার উপর জ্বলন্ত কয়লা বসাইয়া ফুঁ দিতে দিতে গুনগুনিয়া নিশুতি রাতের গান
ধরে। সেই গানের সুর খুঁজিয়া বিজু নৌকায় উঠিয়া বসিলে, পারু গঞ্জিকার কল্কি বাড়াইয়া দেয়। বিজু স্বযতনে
কল্কি মুষ্টিবদ্ধ করিয়া তিন চারিটি দম একেবারে বুকের ভিতর টানিয়া লয়। সমস্ত ধুঁয়া পিঞ্জর ঘুরিয়া নসিকা
হইয়া বাহির হইতে চাহিলে, বিজু তাহা দেবালয়ের উদ্দেশ্যে চ্যালেঞ্জ স্বরূপ ছড়াইয়া দিয়া মুচকি হাঁসে। ক্ষনিককাল
সেখানে হিজল ফুলের গন্ধ মিলিয়া যাইয়া গঞ্জিকার গন্ধ বাতাসকে ভারী করিয়া তোলে। অতঃপর বিজু গঞ্জিকার
কল্কি পারুর দিকে বাড়াইয়া দিলে, পুর্বেকার অভ্যাস মত সে শাড়ির আঁচলে কল্কি জড়াইয়া নিজেও দুই টান দেয়।
ক্ষনকাল পরে কামদেব তাহাঁদের প্রতি কামের তীর ছুঁড়িয়া দিলে, বিজু হিজল গাছে জড়াইয়া রাখা রশির বাঁধন
খুলিয়া দিয়া সাতলার বিলে নৌকা ভাসায়। বিলের জলে তাহাঁদের নৌকা ভাসিবার মাত্র, ভরা পুর্নিমায় তাদের
আসল অভিসার এর সুচনা হয়।
যেহেতু তাহাঁদের বাড়িটি বিলের জলে একেবারেই বিচ্ছিন্ন, এক অপার স্বাধীন আর বেপরোয়া রাত্রি যাপন তাহাঁদের
মজ্জাগত। সমস্তটা বিলেই তাহাঁদের রাজ্য, এখানে প্রবেশাধিকার সীমিত। এই স্বাধীনতা তাহারা উপভোগ করে,
অপচয়ও করে বৈকি, কিন্তু কিছুতেই ভ্রূক্ষেপ করে না। এমন ভরা পুর্নিমার রাত্রিকালে তাহারা যে বেপরোয়া হইয়া
ওঠে, যুগলের গঞ্জিকা সেবন তাহা বরং উস্কাইয়া দেয়। দেহের ভিতর অগ্নি স্ফুলিঙ্গ ঝলসাইয়া ওঠে। বিজলি
চমকের ন্যায় তাহারা একে অপরকে ঝলসাইয়া দিবার গোপন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। শুক্রাণু গতিশীল হয় আর ডিম্বাণু
তাহার ক্ষেত্র প্রসারিত করে। মানব আর মানবীর এইরুপ স্খলনের অভিপ্রায়ে আদিমতায় মাতিয়া ওঠে।
খানিকক্ষণ আগাইলে বিলের মধ্যে একফালি যায়গা একেবারে স্বচ্ছ পরিষ্কার, কোন প্রকার গুল্মলতা কিংবা শাপলা
শালুক নাই। জলের গভিরতাও খানিকটা বেশী। এইখানে বিজু নৌকার গতি শ্লথ করে। এতক্ষণে পুর্নিমার চাঁদ
খানিকটা পশ্চিমে হেলিয়া পড়িলেও তাহার যৌনদ্দিপনা মোটেই স্থিমিত হইয়া পড়ে নাই। গঞ্জিকার দম সামলাইয়া
লইতে না লইতে, মেঘরাজ দেবতাকুলের প্রতি রুষ্ট হইয়া গর্জিয়া ওঠে। নিজদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হইয়া বিজলি
চমকাইয়া তারা বিলের জলে আছড়াইয়া পরে। মেঘেদের দল এদিক ওদিক ছুটিয়া বেড়াইয়া বিলের জলে বাতাসের
ধাক্কা দিয়া ছলাৎ ছলাৎ কম্পন তোলে, তাহাতে তাহাঁদের নৌকা মৃদু দুলিয়া ওঠে।

কল্কিতে মাত্র দুই দম দিতেই পারুর শরীর শিথিল হইয়া আসে, তাহার অস্থিমজ্জা পৃথিবীর সমস্ত ভর সামলাইয়া
লইবার জন্য তাহার স্থূলকায় নিতম্ব নৌকার পাটাতনে লেপটাইয়া পড়ে। দুই পা ছড়াইয়া চিত হইয়া শুইয়া পড়িয়া
গগনমুখি হইলে, আকাশে সমস্ত তারা যেন উল্কা পাতের মত তাহার চক্ষু পানে ছুটিয়া আসিতে থাকে। নৌকা
দুলিতেছে কি দুলিতেছেনা, পারুর জগৎ দুলিতে থাকে। বিজু পুরুষ, সেয়ানা মরদ, নৌকার লগি চালাইয়া সে
অভ্যস্ত। সে জানে পারুকে পরাস্ত করিতে হইলে, নিজেকে জাগ্রত রাখিতে হইবে। গত পূর্ণিমায় সে পারুর নিকট
পরাস্ত হইয়াছে, এইবার নিজের পুরুষত্বকে জাহির করিবার পালা।
বার দুইয়েক লগিতে খোঁচা দিয়া বিজু নৌকাটি খানিকটা আগাইয়া নিল। সহসাই বিদ্যুৎ চমকাইল, বাতাস বাড়িল,
নৌকা দুলিয়া উঠিল। ততক্ষণে পারুর দেহ নিজের নিয়ন্ত্রণ হারাইল। বিজু লগির আগায় খোঁচা দিয়া পারুর
বুকের কাপড় সরাইয়া দিলে, শাড়ীর আঁচল বিলের জলে লুটাইয়া পড়িল। পারুর উন্মক্ত স্তনযুগল এর উপর দুই
এক ফোঁটা বৃষ্টির জল গড়াইয়া পড়িলে তাহা কাঁপিয়া উঠিল, বিজুর লম্বা লম্বা আগুলের লেহন পাইবার জন্য
পারুর স্তন স্ফীত হইয়া কাঁপিতে থাকিল। পারুর পায়ের পাতা শীতল হইয়া উঠিল, তাহার কেবলই মনে হইতে
থাকিল, একটি অজগর সাপ তাহার পা বাহিয়া ক্রমশ উপরে উঠিয়া আসিতেছে। এইরুপ কল্পনা করিতেই পারুর
সমস্ত শরীর ঝলসাইতে লাগিল। ভাটির স্রোতের ন্যায় তাহার যোনীমুখ বিজুর লগির খোঁচার জন্য কাতরাইতে
লাগিল। সমস্ত নিস্তব্ধতা ভাঙ্গিয়া পারুর মুখ হইতে শ্লিৎকার উঠিলে, বিজু বিলের মধ্যে লগি শক্ত করিয়া পুঁতিয়া
তাহা নৌকার রশির সহিত বাঁধিয়া লইল।
পারু আর বিজু একে অপরের নিকট সমর্পিত হইয়া, এমন করিয়া স্বইচ্ছায় নিষ্পেষিত, নিঃশেষিত হইবার তীব্র
বাসনায় আলিঙ্গনবদ্ধ হয়। বিজুর গোঁফ বেষ্টিত পুরুষ্ট ঠোঁট দুইটি পারুর স্পর্শকাতর যায়গা গুলিতে চুম্বনে চুম্বনে
ভরিয়া তুলিলে পারুর শ্লিৎকার দুর্বোধ্য গোঙ্গানির মত শোনা যায়। পারুর গতরে জোয়ারের ঢেউ উঠিলে, দক্ষ
মাঝির ন্যায় লগি ঠেলিয়া বিজু কাল্পনিক এক নদীর মোহনায় তাহাঁদের অভিসারের নৌকা ভাসাইয়া লইয়া যায়।
মোহনায় আসিয়া নদীর স্রোত যেমন ক্রমশ তীব্রতর হয়, উথাল পাথাল ঢেউ উঠিয়া নদীর ঘোলা জল যেইরুপ
সাগরের নোনা জলের সহিত মিলিয়া মিশিয়া একাকার হইয়া যায়, সেইরুপ পারু আর বিজুর শরীরের সমস্ত
উত্তেজনার পারদ শীর্ষে উঠিলে, তাহা স্খলিত হইয়া একে অন্যতে দ্রবীভূত হয়।
অতঃপর তাহাঁদের উষ্ণ শ্বাসপ্রশ্বাস একে অপরের মুখমন্ডলে আছড়াইয়া পড়িলে, বিজু তার পুরুষ্ট ঠোঁট দুইটি পরম
তৃপ্তিতে পারুর কোমল ঠোঁট দুইটিকে মাখনের মত লেহন করিতে থাকে। সহসা শীতল বাতাস উঠিলে, বিজু পারুর
উপর হইতে নামিয়া পাশে চিত হইয়া শুইয়া পড়ে। বিলের নিস্তব্ধতার মাঝে দুইটি নরনারীর শ্বাসপ্রশ্বাস পরাস্ত
করিয়া পরাস্ত হইয়া এক প্রকার পরমান্দের শ্রান্তি খুঁজিয়া বেড়ায়। তাহাঁদের নিজ নিজ মস্তিস্ক ঘাম ঝরাইয়া
কামোদ্দিপনার যে সংকেত এতক্ষণ শরীরের ধমনিকে উত্তেজিত করিয়া তুলিতেছিল, সেই উত্তেজনা সফলকাম হইবার
পরে, তাহদের মস্তিকের ভিতর এখন আরাম নামক একপ্রকার সুখানুভুতি হিজল ফুলের মত গন্ধ ছড়াইতেছে।
প্রকৃতির সন্তানেরা, উন্মুক্ত প্রকৃতির মাঝে এমন দুঃসাহসিক আদিমতায় মাতিয়া উঠিলে, হতবিহ্বল হইয়া শুধু কালের
সাক্ষী হওয়া ছাড়া আর কি বা করিবার থাকে। দেব দেবীরা স্তম্ভিত হইয়া অপলক দৃশটিতে এইরূপ প্রেমলীলা
অবলোকন করিতে থাকিলে, আগামী ভোরকে ঠেলিয়া জগৎ এ পাঠাইতে সত্য সত্যিই সেদিন খানিক বিলম্ব হয়।
এতে দেবরাজ রুষ্ট হইলে, পবন ঝড়ের বেগে ধাবিত হইয়া, বিলের জলে ভাসিয়া থাকা শাপলা পাতা ওলট পালট
করিয়া দেয়। তাহাঁদের নৌকাটি দিকভ্রান্তের মত বিলের জলে ঘুরিতে থাকে। বিশাল এক কালো মেঘ আসিয়া
পশ্চিমে হেলিয়া পড়া পুর্নিমার চাঁদ আর নতুন ভোরের পূর্বাভাসকে গ্রাস করিয়া সমস্ত আকাশটাকে কালো চাদরে
ঢাকিয়া দিলে চারিদিকে মধ্যরাতের ন্যায় আবার অন্ধকার নামিয়া আসে। নৌকার পাটাতনে বড় বড় বৃষ্টির
ফোঁটা ক্রমশ বাড়িতে থাকিলে, বিজু লগি ঠেলিয়া বাড়ির পথ ধরে আর পারু গুনগুনিয়া একটা প্রেমের গান ধরে।
চাঁদনী পসর রাইতে যেনো
আবার হয় মিলন,
আমায় তুমি ছাইরো না মাঝি
তুমিই আমার জীবন।।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

বালির বেহালা

বালির বেহালা

বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..

তদন্ত

তদন্ত

  এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..