দীর্ঘশ্বাস
ভালো নেই ভালো নেই ধূসর সন্ধ্যা বিষণ্ন বিকেল, চারিপাশ ভালো নেই কফির কাপ পথের ধুলো…..
এবার একটা ইউটার্ন নেবো
একটা ঝরাপাতার গল্পে ঢুকে, প্রচন্ড বর্ষা হয়ে ফিরে আসবো বন্দের মাঠে—
অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে থাকবো ঘুড়িওড়ার দিকে!
ভেতরে অনেক ভীড়, এতোটাই যে নিজেকে দেখতে পাচ্ছি না আজকাল
একটা ইউটার্ন নিয়ে ছেড়ে যাবো মৌতাত
আমার তো বাম হাতে ঘড়ি
সময় দেখে শেষ করবো জগিং!
যে তার সময়কে দেখতে পারে
সে তার আত্মাকে দেখে, ঠিক কোথায় নিয়ে তাকে
বসিয়ে রাখা যায়, জানে!
তাঁতফুলে ভর্তি একটা চাদর গায়ে
নদীর ধারে হাঁটবো, সামনে কাশফুল থেকে সরে যাবে
শেষের বিকাল, সামনে মিলের শ্রমিক
ঘাম মুছতে মুছতে পেরিয়ে যাবে ওভারটাইম, পুত্রের আব্দার!
এই যে বারবার, একটা উন্মাদের মতো, ক্রমশঃ পাগলামি কিছু, বলে গেছি আমি, প্রেম ও প্রথার বিতর্ক—
আমাদের সমস্ত মাঠের স্মৃতিকে ধাওয়া করে সাকরাইন। আমাদের বুকের সামনে সে
অতীব সামান্য, বুকপকেট, আমাদের পৃথক রেখেছে দৃষ্টিকোণে, রণে ও বিস্মরণে!
এই যে মমতাখেয়ালে অযুত রাগিনী বাজে
মেঘে ও মজলিশে আজ, এখানে ভালোবাসা কই?
শুধুমাত্র চাহনীগুলি বিশ্লেষণেই বুঝবে তুমিও, সব;
সব-ই এখানে কর্পোরেট, কাঁচের সেট আপ!
যেদিকে সূর্যটা হেলছে ক্রমে
আর, কিশোরেরা মার্বেল ছোঁড়ে কোনো গর্তকে লক্ষ্য করে, মনে হয় সূর্য নিজেও নস্টালজিক!
আর, হেলে নেমে এসে, সেই গর্তে যেন-বা চাইছে গড়াতে!
এতসব নির্বাহী রোদ
ধারালো দাঁতে কামড়ে ধরেছে
জীবনপ্রণালী, মানুষের, শজারু-ভাল্লুক, সকল মেরুর!
ভালোবাসা কই, কইতে পারো?
মা’কে ফলো করে করে একটা অন্ধকার
সারারাত এইপাশে ফেরা আর অইপাশে মন;
অনুজের ঘরে কাঁদছে পুত্র, একটা নিঃসীম গান
এইসব দহ বেয়ে তলায়ে যেতেছে নাকি?
আমি আর স্বপ্নকে দিব না ডাক, ইশারা নিতান্ত-
ইভেন, আমারও, অতি সহজে অন্যকে বিশ্বাস করা তাড়নার গায়ে
তালা দিয়ে রাখতেছে মেয়ে!
আমি, মা’কে যত কাছে চাই, যত ধমকাই গ্লানিপার্পল; ততখানি দীর্ঘশ্বাসে
আর ক’টা দিন, ঘুরে-ফিরে যাবে নাকি ফুসফুস? সময় পাবে?
(উৎসর্গ কবি জুবিন ঘোষ, দন্ত্যন ইসলাম ও মিজান হাওলাদারকে)
একটা ভীষণ খারাপ সময়ের ভিতর দিয়ে যেতে যেতে ভাতশালিকের সাথে দেখা—
তার চোখে নাই গ্লানিবোধ কোনো, পালক-বোঝাই ইশারা সবুজ!
চারপাশে জ্যাম, সমস্ত রীতিকে সাইড দিয়ে দিয়ে
সামনে আগায় স্মৃতি ও শ্লোগান!
চারপাশে হেডফোন, রক সাধে ম্যাডোনা—
তারই পাশে বসে থেকে সুদূরপ্রতীম গ্রাম
নিমেষমাত্র হারিয়ে যাচ্ছে দূরের দৃশ্যে একা!
এতোসব সবুজবীথিকা নাকি
গানে গানে করে নেয় গৃহনির্মাণ—
আর, ভোরের পহেলা শিস-ধরা ঠোঁট
কোন দিকে যেনো উড়ে চলে গেছে
ফেলে গেছে প্রমত্তা সুর, চেনো তাকে?
খুব ভালো করে
নিজের দিকেই চাইনি কখনো আমি, সে-কথা জানে মা! বাবাকে লুকিয়ে
ঘরে ঢুকি, যেনো, পোশাকে আটক চাপাকান্নার শব্দ না হয়!
সে-কথা জানে ববিতাও
যেনো হুল ছেড়ে গেছে মৌমাছি ত্বকে, ধীর চলাফেরা, টিনিটাস কানে!
এখন উনিশ সাল
মৃত্যুরহস্যের মতো ভারী একটা হৃদয়ে
রোপিত হলো আত্মসংবরণ!
এসব যে কেনো বলি? কেনো যে বাক্যব্যাধি, সমস্ত গোলাপে ছড়ায়? তার কিছু ব্যাখ্যা থাকা দরকার। কি করে বাগানে এলো, ছানিপড়া গ্লানির কোকিল!
এর ওপর মেঘের পর মেঘ, ধুলার পর ধুলা, টিবির জীবাণু, হাওয়ার কম্পাস এসে জমা হচ্ছে দিনকে দিন! যেনো এক কাঠের চশমা চোখে, ঘাড় তুলে বৃদ্ধ সৈনিক, দেখে পতাকার পৌরুষ। গান গায় শিশুরা, আর, এক বিজয় দিবস এসে মুখ ধোয় বিধবার চোখের পানিতে, যেনো তারা বৃষ্টিতে ভাসিয়ে দিচ্ছে বয়স্ক ভাতার কার্ড!
কেনোই বা বলছি এসব, কেনো সব মৃত নদী এসে ফোক ছেড়ে আশ্রয় নেয় মেটাল রকে, যেমন, তুমিও পিতার পাঁজর হতে বের করে আনছো তারার ছুরিটা, তাঁর চাওয়া ছিলো সামান্য পেনশন; তোমার বাড়িয়ে দেয়া হাতকেও, বারবার ফিরিয়ে দিচ্ছে ঠান্ডা চোখের অডিটরটি!
ছিন্ন কাঁথার নিচে, কাঁপছে চরাঞ্চল; এখানে মাঠের পর মাঠ জুড়ে খড়ের গন্ধ, আর এক রুগ্ন বাঁশিতে যেনো নিস্ফল বাজনা ওঠায় মহাকাশ, ঠাণ্ডা বাতাস! এর ভিতর বাইকে করে আসে শ্রমিক নেতারা, মৌজ করে, মৌন আলোয় তারা হাসে, গজদন্ত; গ্লেস মারে ত্রাণের জ্যাকেট, গায়ে!
দুই
এই যে লতিয়ে উঠছে ঘাস তার ডগার অহংকারে, বিস্ময় তাকে শান্ত করে, জলের বিস্মরণ থেকে জীবনকে উঁচিয়ে ধরে আছে মাছরাঙা, আকাশমনি গাছ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে-
কোলাহলে থেকে গেছে মেঘের গাঁথুনি যতো;
যেনো হাত পেতে দিয়ে বৃষ্টি জমানো হাতে!
যেনো প্রতিবেশী-ছাদ হতে রোদ এসে ঝলসে দিচ্ছে মুখ;
মৃত্যুও দূরবীন নাকি? দেখা যায় আয়ুর মধ্যমা?
মুখে সংশয়, হাসি প্রত্যয় ছেড়ে বেনোজলে ভাসে।
ঘূর্ণিকে বুকে নিয়ে বন্দরও চৌচির, অচেনা গানের মতো গুঞ্জরন
ভিজে যাচ্ছে একাকীত্বে, দৃশ্য থেকে মর্মকে পৃথক করে
দূরত্ববোধ, আর চোখে এক অতুল বিপন্নতা
কৃর্তিকে প্রশ্ন-কাতর করে, স্রোতমুখে পড়ে গিয়ে
ডাগর চাঁদের আলো ফেনায়িত, উৎসের দিকে ফিরে আসে ঘন্টাধ্বনি!
মগজে আয়াত বাজে হেমন্ত উচ্চারণে, মগজে মূর্দাফরাস তিরোহিতপ্রায়-
ত্রিদিক শূন্য করে মরুঝড় যেভাবে তাকায়, লঘু হয় ধুলা পেয়ে সাপের চলন মাঠে;
এদিকে বয়সভূগোলে যতিচিহ্নগুলি ম্যাড়মেড়ে হয়ে আছে, সবটাই মায়ার মলাট; দুলছে ক্রমশঃ
বুনো ফুল, শ্যামলী পাতার ভারে!
তিন
রোদ পেয়ে ছন্দে পড়ে গেছে রাই সরিষার পাতা, পাশে এক কাকতাড়ুয়ার হাসি
খুলে রাখে পাখালপ্রতিভা, অতদূর ভাবতে পারি না আর, যতটা বেঁকেছে ধনুক
বুকে ও বসন্তে!
যেনো এক মাথালের ভার
বইতে চেয়েছি একটা জীবন, স্নায়বিক আঁচড় টেনে
আঁকতে চেয়েছি জননীর প্রসব ব্যাথা, আমাকে চিহ্নিত করে
ভূগোলভর্তি রোদ প্রশ্নে কাতর, থৈ পেয়ে প্রখর পুকুরে
ডুবে যাওয়া খেলে শিশুর গ্রামার, এখানে ফলন জুড়ে
ধানের সুরভী!
অতদূর যাচ্ছি না আর, অথবা চিত্রবোঝাই মড়কলাগা মাটি
আমাকে বৃদ্ধ করে, নিরুত্তাপ করে, চূড়া ও চলন্ত গানেরা
মুখ ঢেকে বেরিয়ে যাচ্ছে, ছেড়ে যাচ্ছে লেখার টেবিল!
এমন যেনো, আকাশ থেকে ঝরছে হুলুস্থুল;
কি আসে যায়, এমন যেনো, বসন্ত ব্যাকুল!
হাত উঁচিয়ে ডাকছে শামুক, সঙ্গী-সাথীকে;
কি আসে যায়, অবিন্যাসে, উপেক্ষা-ত্রাসে!
এই যে ফাঁপর, নামছে বুকে; থামছে সিঁড়ির ধাপ—
প্রসঙ্গ ফুল, কাঠের পুতুল, হাওয়ার মনস্তাপ;
তখন গোলায়, ধানের ধুলায়, গা এলানো রোদ;
হাতার ভাজে, কুঁচকে গেছে খর্চা-পরিশোধ!
কি আসে যায় প্রশ্ন-জেরায়, টবের গাছে ফুল
এমন যেনো, মাথার ভিতর ফুটছে হুলুস্থুল!
ভালো নেই ভালো নেই ধূসর সন্ধ্যা বিষণ্ন বিকেল, চারিপাশ ভালো নেই কফির কাপ পথের ধুলো…..
প্রেমের কবিতা যা কিছু পাষাণ, মনে হয় আঁশ বটিতে কুচি-কুচি করে কাটি পালানো ঘাতক সময়…..
তর্জমা স্নানে শুচি হবার পর বেকসুর সন্ধ্যাগুলো শুধুমাত্র নিজস্ব অন্ধকারের নিচে দোলনাচেয়ারে ছড়িয়ে বসা কিছুটা…..
হয়তো একদিন অস্তিত্বে খুঁজে আত্মপরিচয় নিভৃতে অপেক্ষার প্রহরে এ মন ভালোবাসার রূপালী আলোয় রাঙা মুখ…..