যাযাবর
যাযাবর যাযাবরদের ছোঁড়া কাঠে আগুনও অসংযত,ঝড় উঠে ইত্যবসরে কিছু লবণ দানাও জমা পড়েছে… উদ্বাস্তু রোমে…..
ঝাউপাতার বীথিবন দেখা হয়েছিল সেই কবে—তোমার মনে পরে? গ্রামীণ সভ্যতায় শহরায়ান দেখে ভুলেগেছ গ্রামের ডোবা নালা—?
কংক্রিট টাইলসের রূপায়নে ভুলেগেছ ছনে
বাঁধা বাড়ি-ঘর? তুমি শহুরে নারী—গ্রামীণ সভ্যতায় কেটেছে তোমার শৈশব।
মনে পরে তুমি আমি শাপলা ছিঁড়তাম মায়ের জন্য সালুন রাঁধতে! মহানন্দে ডেঁপ নিয়ে মেতে উঠতাম শিশুদের দল। একটাসময় শাপলা শালুকের ঢের ছিল আমাদের নদীতে—সে
সব কথা কী মনে পরছে মহুয়া?
তোমাদের কাছ থেকে নাকি শহুরে জীবন,
ভোগ বিলাসে কেড়ে নিয়েছে প্রকৃতির ঐশ্বর্য! তোমাদের চেতনায় বাঙালিপনা আসে
বছর ঘুরে বৈশাখে! গ্রামীণ সভ্যতা
ভুলেগেছ তোমরা নাগরিক আধুনিকায়নে—
শহরে গড়ে তুলো বৃদ্ধাশ্রম কিবা নির্বাসন।
তোমরা ভুলেগেছ গ্রামের ছেলে মেয়েরা
গড়ে তুলে মা বাবার লাগি ঢেউটিনে বাঁধা স্বর্গসুখের ঘর।
তুমি ভুলেগেছ মহুয়া আমি ছিলাম বাঁশিবাদক—? তোমার স্মৃতি চোখ জাগ্রত হয়নি
আমার বাঁশের বাঁশরি দ্যাখে? বলো তো
গিটার কী ছুঁতে পারে বাঁশের বাঁশরি?
পরিতাপের গ্লানি নিয়ে বেঁচে আছি
পরিতাপের গ্লানি নিয়ে বেঁচে আছি
মহুয়া বুক ভেদি যন্ত্রণা নিয়ে—
এ হৃদয়ে তৃষিত ঢেউ উঠে সুখ
সাধনার ; সুখ মুঠোভর্তি হয়
না ঝিনুকের মতো।
বলো, যে অন্তরে দাগ কেটেছ
ছলনার সুতো দিয়ে—এ অন্তরে
প্রলেপ এঁকে দেবে কী করে?
আঘাত
নির্জনে খুলে দাও মহুয়া—বেদনার কপাট। এ হৃদয় ধূসরিত আকাশের মতো ফ্যাকাসে হয়ে আছে মেঘ কান্নায়। বলো, অশ্রু
শুকিয়ে গেলে কান্নার স্রোত কী চোখে
তরঙ্গিত হয়?
পাঁজরের আঘাত সইতে পারিনা মহুয়া
জেনেছ কোনোদিন? ফুলের আঘাতে
কাঁদিয়ো না আর—ফুলকাঁটা বিদ্ধ করো
না মনে বারবার
আসক্তি
কবিতার মোড়ক ছিঁড়ে ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে গোধূলির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করে মহুয়া!
ব্রহ্মপুত্র তোমার জন্ম মাটি বলেই কী
আমার এত মায়ার জন্ম?
নদীর পাড়ে নগ্নপায়ে ভেজা মাটির তীব্র
ঘ্রাণে শৈশবে ফিরে যাই স্মৃতির
ডানায় ভর করে—
এই মাটি-জল, আলো-বাতাস যেন
আমার স্মৃতির অস্তিত্ব!
তবে কী আমি মিশেগেছি তোমার
অস্তিত্বে?
এসো প্রেমোত্তীর্ণ হই
মনের স্বচ্ছ স্ফটিক ভেঙে দিয়ে কতো
গড়াবে জীবন—? বলো মহুয়া যে
বন্ধন হয় ভেঙে দেবার মানসে
গড়া—সে বন্ধন প্রাচীরের মতো
দাঁড়িয়ে রবে কেমন করে!
ইতিহাসের ফুল বাগানে কাঁটার ঘা’য়ে
কতো প্রেমবন্ধন অকালেই ঝরে
পড়ে জানো তো?
বলো যে রিসতা অঙ্কুরিত হয় না
প্রেম বাগানে, ফোঁটায় না কোনো পুষ্প,
স্পর্শ করে না কোনো কুঁড়ি; সে
রিসতা কী কালজয়ী হতে পারে?
এসো মহুয়া প্রেমে কালজয়ী
না হয়ে অন্তত প্রেমোত্তীর্ণ হই
তোমার প্রেমাকাশে
ডাব-চাঁদ মেঘলা আকাশে জ্যোৎস্না ছড়ায়—আমার কবিতার রাতে।
চাঁদের আলো দক্ষিণের জানালা গলে তোমার অবয়ব মেলে ধরে আমার
দৃষ্টিতে—তোমার তিলমাখা
চিবুক শাণিত করে জ্যোৎস্না!
চাঁদ মাদকতা ছড়ায় মেঘের ফাঁকে,
আমি খুঁজি তোমাকে—মেঘ লুকায় চাঁদের আড়ালে! যেন মেঘ-চাঁদের লুকোচুরি। মেঘ-চাঁদ দেখে
মনে হয় মেঘেদের ভিড়ে চাঁদ হয়ে
জ্বলো তুমি মহুয়া আমার ললাটে।
রাত দ্বিপ্রহর। চাঁদ নিভে আসে
ক্রমশ—মেঘেদের ভেসে চলাতে।
আমিও ভেসে চলি মেঘ হয়ে
—তোমার প্রেমাকাশে।
তুমি আমার দেহ-সত্তায় হয়েছ আসীন
তোমার রূপমূল ভেদ করেছি—নগ্ন দৃষ্টিতে। কী মধুরূপে গেঁথে আছে
তোমার নিমীলিত চুলে খোঁপার
সৌন্দর্য। যেন রূপক শব্দে জমে
আছ তুমি তোমার অন্তমূলে।
তোমার হরিণী চোখে চোখ রেখে
হয়েছি তোমার প্রেমিক দিওয়ানা—
শত শব্দে ছুঁয়ে যায় মন তোমার
রূপময়তায়। কী অপূর্ব তুমি!
আমার হৃদয়ে বসতি হোক তোমার—
মনঘরে হোক তোমার ঠিকানা।
তোমার সৌন্দর্যের মাদকতায় আমি হয়েগেছি লীন!
মহুয়া
তুমি আমার দেহ-সত্তায় হয়েছ আসীন।
পাথর মানবী
তুমি কথার খঞ্জরে বুকে বিঁধেছ তীক্ষ্ণ তীরের ফলা—
তোমার ধারাল জিভ ফালি ফালি করে দেয় আমার অস্তিত্ব—?
তোমার গোলাপ ঠোঁটে বিষ-কাঁটার রক্তজমাট হাসি মুহূর্তে ঘর্মাক্ত করে দেয় আমার লোমকূপ!
তোমার ভ্রুকুঞ্চিত নেত্রপাত শিহরণ জাগায় আমার সত্তা জুড়ে!
মহুয়া যখন তুমি অত্যুক্তির পাণ্ডুলিপি খসড়া করো যাতনার বিষ কামড়ে
তখন মনে হয় নারী বশ পৃথিবীর
পাহাড়সম লোহার দূর্গ জয়ের মতো
প্রেমতো ছিল উনিশ শতকে
ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে বসে বসে দেখি সূর্য ডুবে রেখে যায় অস্ত চিহ্ন। আমি রক্তিম আকাশে—ব্রহ্মপুত্র নদীঘেঁষা দেখি তোমার বাড়ি! অপরাহ্নে তোমার স্মৃতি গলে গলে মিশে যায় কচুরিফুলে। দূর্বাঘাসে চেয়ে থাকে
আমার শৈশব। পানকৌড়ি চেয়ে
রয়—অতীতের চোখ রেখে চোখ রাঙিয়ে। শরতের মহিমায় দৃষ্টি
ফেলি শত স্মৃতির জমানো ধূসরিত
নদীঘাট। শঙ্খচিলের ফেরারি দৃষ্টি
বলে দেয় বেদনার নীল নীল কাব্য।
দাঁড়কাক বলে যায়—আধুনিকায়নে
দস্যু জেলে মৎস্যের চোখ ফেলে
রেখে যায় লাল লাল কর্কটের মুখে।
নদী পাড়ে আমায় দেখে বয়োবৃদ্ধ মাঝি বলেন—নীলে মুড়ানো দুঃখের আখ্যান। আমি তোমার প্রেমপত্র ভুলে যাই
মহুয়া মাঝির নদীকেন্দ্রিক প্রেম চিঠি
শোনে! প্রেমতো ছিল উনিশ শতকে।
যাযাবর যাযাবরদের ছোঁড়া কাঠে আগুনও অসংযত,ঝড় উঠে ইত্যবসরে কিছু লবণ দানাও জমা পড়েছে… উদ্বাস্তু রোমে…..
কবি গো ওওও,আর যত গুণীজন কি দিয়ে পূজি তোমাদের চরণ আমি যে অভাগা জানি না…..
আমি জানতাম না চব্বিশের জুলাইটা এত দীর্ঘ হবে, আমি জানতাম না, অগাস্টকেও রাহুর মত গ্রাস…..
অভিশাপ মেঘের ভেলায় নিঃশ্বাসে ক্লান্তির ছাপ সবুজের নীড়ে আপন ঠিকানার খোঁজ এক ফালি সুখের নেশায়…..