ইমন কল্যাণ
পরিচ্ছেদ ৩ শীত শেষ হয়ে আসছে।রাঙ্গালীবাজনা ঢোকার মুখের রাস্তাগুলো পলাশ ফুলে ভরে গেছে।অথচ ঠান্ডাই।…..
পরিচ্ছেদ- ১
সুবীরেশ সেন। কবি। সদ্য নর্থবেঙ্গল এসেছে।এখানেই শহীদুলের সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা। শহীদুল বিএ পাশ ছেলে।রিসেন্টলি গাড়ি নিয়েছে।ট্যুরিস্টদের ঘুরিয়ে নিয়ে আসবে বিন্দু ঝালং লাভা এবং পরেরদিন রিশপ পৌঁছে দেবে।মালবাজার স্টেশনে নেমে বাসে করে চালসা এসেছে সে।এখান থেকে শহীদুল তাকে পিক করবে।জলপাইগুড়ি থেকে আসার কথা ইউনিভার্সিটির পুরোনো বন্ধু দেবত্তোম এর।এবারে সুবীরেশ এর কলিগ জহির রায়হানের আসার কথা ছিলো। ইচ্ছে ছিলো জহির নিজের মতো ঘুরবে।অথচ শেষ সময়ে ওর মেয়ের জ্বর বমি থাকায় কলিগ আসতে পারেনি।দেবোত্তমকেই কোম্পানি দিতে হবে।সুবীরেশ সেন দক্ষিণ বঙ্গে একটি কলেজে বেশ কিছুদিন হল জয়েন করেছেন ক্লার্ক হিসেবে।তবে ইতিমধ্যেই সে কবি হিসেবে নাম করে নিয়েছে।ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন সে লেখালেখি শুরু করে। বাংলা বাজারের কবিদের সঙ্গে তার বেশ ওঠাবসা আছে।রিসেন্টলি সে একটা সিক্রেট মিশনে এসেছে।একটা থ্রিলার লেখার রসদ নিতে।এখানকার বন জঙ্গল প্রকৃতি তাকে খুব টানে।ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে বেশ কয়েকবার দার্জিলিঙয়ে ঘোরাঘুরি করেছে।এবারে ডুয়ার্সের ঘোমটা খুলে সে নগ্ন নির্জন ডুয়ার্সের প্রকৃত স্বরূপ উদঘাটন করতে চায়।
দেবোত্তম মেসেজ করেছে।আসছি।পাঁচ মিনিট।নেট অন থাকায় মেসেজ দেখলেও সিন দেখায়।অথচ বাইরের দেশ থেকেও বন্ধু অনুরাগীদের ফোন আসে বলে সুবীরেশ চাইলেও নেট অফ করে রাখতে পারেনা।কলেজ থেকে দুদিন ছুটি নিয়েছে।পঁচিশে ডিসেম্বর যখন পার্ক সার্কাসে ক্রিসমাস উদযাপিত হবে সেসময় রিশপের তুষারস্নাত পরিবেশে অলৌকিক ফিল টুকু নিতে চায়।কিভাবে সে শুরু করবে তার নতুন থ্রিলার?
জামাকাপড় ভালোই গুছিয়ে নিয়েছে।দেবোত্তম নর্থবেঙ্গলের ছেলে সে আগেই জানিয়েছে রিশপে বরফ পড়ছে।খুব সাবধান।জ্যাকেট মাফলার হুডি সব যেন নিয়ে আসে।রাতে মিডল বার্থে তার ঠান্ডা লাগেনি বটে কিন্তু মালদা বিহারের দিকটায় ঠান্ডা হাওয়া ঢুকে পড়ছিল জানালার ফাঁক দিয়ে।এমনিতে ট্রেনে তার ঘুম খুব ভালো হয়না।আপার বার্থে এক সুন্দরী মেয়ে নিজের মনে হেডফোন লাগিয়ে মোবাইল চালিয়ে যাচ্ছিল।রাত হতেই ফিসফিস কথা বলার আওয়াজ কানে আসছিল।নিচে মেয়েটার বৃদ্ধ বাবার নাকের ডাকে ঘুম পালিয়ে যাওয়ার অবস্থা।
তারপরও সে এক্সাইটেড।
কি হবে থ্রিলারের নাম?কিভাবে শুরু হবে?সিগারেটটা ধরাতে ধরাতে ছাব্বিশের এক ছোকরা এসে জিজ্ঞেস করে,দাদা আপনি সুবীরেশ সেন?দেবোত্তম দা এসে যাচ্ছে আপনি সিগারেট শেষ করে আসুন।পেট্রোল ভরে নিই।
ট্রেনে বাড়ি ফিরছিল সাফিনা।বাবার সঙ্গে। বাবা কলকাতায় এসেছিল পেনশনের ব্যাপারে এজি ভবনে।ওখান থেকে বোলপুরের টিকিট করাই ছিলো।ডুয়ার্সের মেয়ে সাফিনা।শান্তিনিকেতনে মিউজিক নিয়ে মাস্টার্সে পড়ছে।ফেরার পথে বোলপুরেই বাবার কামরায় উঠে পড়ে। কয়েকজন বন্ধু এসে ট্রেনে তুলে দেয়।অসুবিধা হয়নি কোনো। শিয়ালদহ থেকে দুজনের টিকিট।সাফিনার বোর্ডিং ছিলো বোলপুর।
ট্রেনে উঠেই দেখে এক চশমাপরা যুবক তার আপার বার্থে দিব্যি ঘুমোচ্ছে।ভদ্রলোককে ডেকে দেওয়ায় মনে হল অসন্তুষ্টই হয়েছে।কাচা ঘুম ভেঙে চশমা খুঁজে চোখে দিল ভদ্রলোক। প্রথমে সাফিনাকে দেখতেই পায়নি।এত দিনকানা নাকি?হাসি পাচ্ছিল।যদিও তখন প্রায় রাত দশটা।আগেই খেয়ে নিয়েছিল হস্টেলে।তাই ট্রেনে খাওয়ার পাঁট নেই।বাবার সঙ্গে টুকিটাকি কথা বলে নিয়েই বাঙ্কে ঊঠে মইদুলকে ফোন করেছিল।ফিরছি রে পাগলা।স্টেশনে আসিস না আবার।
কেন যাবো?মইদুল জবাব দেয়।
আমাকে রিসিভ করবিনা?
করব।তবে পরেরদিন।
বাবা আছে। আসতে হবেনা।
কি খেলে?
রুটি।এখানে তো রুটি ছাড়া কিছু নেই।হসপিটালে থাকলে তো এরকমই।মেল ওয়ার্ডে ডিউটি করার পরে রাতে আর দোকান খোলা থাকেনা।মাসিকে সকালেই বলে দিতে হয় কি রান্না হবে না হবে।
আগামীকাল বাড়ি ফিরবি না?
তোর জন্যই ফিরতে হবে।
আচ্ছা।
তুই অন্য জব খুঁজে নে না প্লিজ। আমার মনে হচ্ছে বাড়ি ফিরে কিছু অঘটন হবে।বাবার মুখচোখ অন্যরকম। কি জানি কি হয়।তোর ওই মেল নার্সের চাকরিটা ছেড়ে অন্যকিছু করলে হয়না?
হয়।
কি হয়?রূঢ় শোনায় সাফিনার গলা।
মইদুল কিছুক্ষণ ভেবে বলে,কি হবে?আরে আমিতো ভালোই বেতন পাই।বেসরকারি নার্সিংহোমে এর থেকে বেশি পাওয়ার নেই।সংসার কি তোর বাবা করবে?আমি নাহয় একা জব করলাম না।তুই গান শেখাবি বাচ্চাদের।ব্যাস হয়ে গেল।
দেখ মইদুল আমার মনে হয় বিশ্বরূপদা বাবাকে আমাদের হোটেলে একসাথে রাত কাটানোর ঘটনাটা বলে দিয়েছে।
বলুক। তাতে কি?
বাবা আমার বিয়ে দেবে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে।
আমি কি করব?
কি করব মানে তুই আমাকে বিয়ে করবিনা?
আমার বোন আছে ইমন।ওর বিয়ে না দিয়ে আমি কি করে বিয়ে করি?
তাহলে ফোনটা রাখ।ফালতু। ডিসগাস্টিং।
ফোনটা অফ করে রাখে সাফিনা মানে ইমন।ইমন সাফিনার ডাক নাম।বাড়ি আর পাড়াপ্রতিবেশি ছাড়া কেউই আর তাকে ইমন বলে ডাকেনা।বিশ্বভারতীর বন্ধুরা ওর ডাকনাম জানেইনা।
সাফিনা চিন্তান্বিত হয়।কিছু করার নেই।এদিকে পিরিয়ডের টাইম পেরিয়ে যাচ্ছে।ভয়টা তিনদিন থেকে হচ্ছে।এখানে ঈদের পরেরদিন আসার কথা ছিলো। অথচ সে একদিন শিলিগুড়িতে রাত কাটিয়ে এসেছে প্রেমিকের সঙ্গে। এখন মনে হচ্ছে অযথা ঝুঁকি নিয়েছে। মইদুল তাকে ঠকাবে ভাবতে পারেনি!বাবা লোয়ার বার্থে শুয়েছিল ফলে কিছুই শুনতে পায়নি।তবে ওই চশমাপরা মিডলবার্থের ছেলেটা শুনলেও শুনতে পারে অবশ্য তাতে কিছু যায় আসেনা।দেখেই মনে হয় মাছেভাতে বাঙালি।কলকাতার বাইরে কোথাও গেছে কিনা সন্দেহ আছে সাফিনার।লোকটা বার বার জল খাচ্ছিল।উঠে বাথরুম গেছে হয়তো দু’তিনবার।লোকটাকে দেখলেই কেমন কবি কবি মনে হয়। কোথায় যেন দেখেছে লোকটাকে অথচ মনে করতে পারেনা।
সকালে ট্রেন যখন নিউ আলিপুরদুয়ারে দাঁড়াল তখন বাবার মুখে বিজয়ীর হাসি।কিছু একটা যে লুকোচ্ছে বোঝাই যাচ্ছে।কিন্তু কি সেটা?মইদুলের ঘটনাটা জেনে গেলে বাবা কি এতটা প্রসন্ন হত?মনে হয়না।
কি ভাবছ বাবা?
কিছুনা।
ব্যাগটা ওজন আছে আমাকে দাও।
লাগেজটা নিজের হাতে তুলে নেয় সাফিনা।
বজলুল মিঁয়া মনে মনে হাসে।এখনো তার মেয়ে তার কথায় চলে। এবারে যা হবার হবে।এসপার নয় উসপার।ইনশাআল্লাহ।ছেলে সে দেখেই রেখেছে।হাইস্কুলের টিচার।অন্তত রেজিস্ট্রি করেই মেয়েকে শান্তিনিকেতনে পাঠাবে।এমএ ফাইনাল এক্সাম এইতো আর দু’মাস।
সারারাত ডিউটিতে জেগেছিল মইদুল।সাফিনার মোবাইল স্যুইচ অফ বলছে।মেয়েটা পুরো পাগলী।গত ইদে সে ওর খোলা বুকে হাত রেখে বলেছে আমার সবটুকু তোমাকে দিলাম। সামলে রাখতে পারবেতো?
ভাবলেই গা গরম হয়ে যায় মইদুলের।নিজেকে স্থির রাখা যায়না।শরীর বেয়াদবি শুরু করে। এখানে থাকাও আজাবের চেয়ে কম নয়।চোখ খুলে রাখতে হয়।ভিজিটে ডাক্তার এলে সাসপেন্ডও করতে পারে।বের করে দিতেও পারে,সেই ওনার। কিছু করার নেই।মইদুল ইদানীং ভাবছে বাড়ি ফিরে ওষুধ বিক্রির দোকান দেবে।প্রয়োজনীয় লাইসেন্স নাহয় ভাড়া নেবে।টাকা ফেললে কিনা হয়?ফ্যালো কড়ি মাখো তেল।ঠোঁটে খৈনি দিতে দিতে সে আরেকবার ট্রাই করে। না সেই স্যুইচ অফই।
কমোডে বসেও সে বেশ কয়েকবার ট্রাই করেছে।যা’হোক। দুপুরে খেয়ে সে এবার বাবলিকে কল দেবে।বাবলি ছোটবেলার বন্ধু সাফিনার, দুজনের বাড়িই কামাখ্যাগুড়ি।মইদুলের বাড়ি অবশ্য গ্রামের দিকে।বাবলির কাজিনও হয় মইদুল।একসময় বাবলি মইদুলকে চেয়েছিল।কিন্তু মইদুল সাফিনাতে মুগ্ধ হওয়ায় সেটা বাস্তব হয়ে ওঠেনি।অনেক সময় মইদুলের মনে হয় বাবলি ডাবল এজেন্ট নয়তো? এই মেয়েটাই হয়তো ডোবাবে!
পরিচ্ছেদ ৩ শীত শেষ হয়ে আসছে।রাঙ্গালীবাজনা ঢোকার মুখের রাস্তাগুলো পলাশ ফুলে ভরে গেছে।অথচ ঠান্ডাই।…..
দ্বিতীয় পর্ব মইদুল সারারাত এপাশ ওপাশ করেছে।রাতে মনে হয়েছিল প্রেসার বেড়েছে। হাইপ্রেসার আছে ওর বাবারও।বাড়ি…..
পর্ব – চার ঘরের দক্ষিণ প্রান্তে মাটির উপর খড় বিছিয়ে দেয়া হয়েছে। খড়ের উপর মোস্তাগের…..
পর্ব – দুই আগের পর্ব পড়ুন এখানে >>>>>> সপ্তাহ ঘুরে হাটবার এলো। প্রতি বুধবার বিকেলে…..