ওয়াক্ত

মাসুম মুনাওয়ার
কবিতা
Bengali
ওয়াক্ত

ফজর

বকুল আমার মায়ের ডাকনাম। বকুল প্রিয় ফুললতিকা। বকুলের সাথে আমার গভীর সম্পর্ক। মায়ের সাথেও। অন্য সবার মতো আমিও মাকে ভালোবাসি, মাও আমাকে। বকুলের থেকে মা, নাকি মায়ের থেকে বকুল অধিক প্রিয় তুলনাটা ঠিক বুঝি না। মাঝে মাঝেই মাকে জড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করে। কাঁদি। দুঃখ শুকিয়ে যায়। জলফুল রেখে একটা বকুল হাতে বসে থাকি। এই ফুলটা আমার মায়ের মতই নীরব।

জোহর

মথুরা বনে গর্ভিণীর গায়ে শেষরাতে নেমে আসলো জ্বর। পরদিন সকালে দেখা গেলো জলগোটা। মা দেখে আঁতকে উঠলেন। বাবা দৌড়ে গেলেন কবিরাজ ডাকতে। প্রেমিক গেলেন জল আনতে। গর্ভিণীর নিদ গেল। গেল যৌবন। চোখ থেকে বেড়িয়ে এলো শৈত্যপ্রবাহ। পাড়া জুড়ে নামলো ওমের সকাল। তবুও মানুষগুলো দৌড়ায় চলন্ত ট্রেনের দিকে, যেখানে অবশিষ্ট নেই বসার স্থান।

আসর

মাটির শরীরে বেড়ে উঠেছে জলগোটা। নিকটবর্তী মানুষগুলো অবিশ্বাসে কাটাচ্ছে দিন। নিজের ভেতরে বেড়ে উঠছে জলবসন্ত। জলবনে বসে আছি। জলাতঙ্ক নেই। জন্মের পর মিয়াশি হুয়াম্মা কবিরাজ ডেকে গলায় তাবিজ ঝুলিয়ে দিলেন। সেই থেকে আমার কোনো অসুখ নেই। তাবিজ মার খুব অপছন্দ। বাবারও। আমি তাবিজ প্রিয় মানুষ। তোমারেও বেঁধে নেবো তাবিজের লাল সুতোয়, তারপর ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেবো একমাত্র জীবন।

মাগরিব

চোখ দেখে দেখেই রাত কাটিয়ে দিতে হয়। যার ভিতরে আছে প্রবহমান আগুন। আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়েছে জাপানি শেফার্ড। ততক্ষণে শীত নিয়ে দৌড়ে গেছে আলেয়া বানু। ঘুম নেই তারাদের নিকট। তারারাও আগুন পোহাতে গিয়ে জীবন দিয়েছে। একটা শীত তবু কাটিয়ে দিতে হয় চোখ দেখে দেখে। চোখের কোণে জমে উঠা কেতুর মুছতে গিয়ে গলার স্বর হারিয়েছে শীতের পাখি। আমরা তাই উল্লাস করি জীবনের। এখানে জীবন গাছেদের মতই মলিন অথবা সুন্দর।

এশা

আটকে থাকা রাত চোখের ভেতর ঘুমিয়ে আছে। বিষাদ গুনে গুনে যায় সময়। বসন্ত আসার পূর্বেই দিন লুকিয়েছে মুখের আড়ালে। চোখ দেখে তবু বসন্তের দাগ। ঝিলমিল তারা। মণির ভেতর নাচে যন্ত্রণার কবুতর। জবাই হবে কবুতরের ডানা। রসুন ও দেশি পেঁয়াজ। ঝাঁঝে পুড়ে যাক গাওয়া ঘি। গরুর মাংস দিয়ে ভাত খেয়ে তবেই ঘুমাতে যাব। কেউ কেউ বলে মাগীর পুত তোর কপালে ভাত নাই, তুই মুড়ি খা।

মাসুম মুনাওয়ার। কবি। জন্ম ১৭ ফাল্গুন ১৩৯৪, ১ মার্চ, ১৯৮৮, রাম জীবনপুর, মোহনগঞ্জ, নেত্রকোণা। প্রকাশিত বই: 'সূর্যকুসুম' (কাব্যগ্রন্থ, ২০১৬), 'জলবন' (কাব্যগ্রন্থ, ২০১৭), 'সূর্যোদয়ের দৃশ্যাবলী' (কাব্যগ্রন্থ, ২০১৯)

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..