ও ডাক্তার

তৌহিদ জামান
ছোটগল্প
Bengali
ও ডাক্তার

জিজ্ঞেস করি, ডাক্তার আর কতদিন লাগবে তোমার পাশ করে বের হতে?

বললে- অনেক সময়!

শুধোই, মাস, বছর- স্পেসিফিক করে বলো

: বলতে পারছি না, তবে এখনও বেশ সময়

ডাক্তার তুমি তো বজলু প্যাঁচান প্যাঁচাচ্ছো!

: বজলু কে? এই নাম তো আগে শুনিনি!

ওর নাম কীভাবে শুনবে! ওর সঙ্গে তো তোমার পরিচয়ই হয়নি। অবশ্য এটি তোমার সৌভাগ্য যে, তার সঙ্গে তোমার পরিচয় হয়নি।

: এখন তো আমার খুব আগ্রহ লাগছে, বজলুর পরিচয় জানার।

সে এক বিরাট কাহিনি; নির্মম ইতিহাস!

: এবার তো তুমিই প্যাঁচাচ্ছো!

হুমমম, শিখলি কই, দেখলাম যেখানে…

: আমার কিন্তু তর সইছে না, প্লিজ!

তার আগে বলো, দেশের কী অবস্থা? মানে করোনা ভাইরাসে নিয়ে তোমরা কী ভাবছো? সাধারণ মানুষ তোমাদের ডাক্তারি কঠিন ভাষা ব্যতীত সহজ-সরলে কীভাবে বুঝবে, কী করবে?

: করোনা নিয়ে তো তুমি বলবে! তুমি তো সাংবাদিক, দেশের মানুষ তোমাদের কথা শুনতে- জানতে চায়

আমাদের কথা না, আমরা তোমাদের কথা, প্রশাসনের কথা, রোগীর কথা, স্বজনদের কথা একটু অল্প পরিসরে গুছিয়ে উপস্থাপন করিমাত্র! কোথাও আমাদের কথা বলিনে…

: তর্ক করতে চাইনে, তুমি ইস্যু চেঞ্জ না করে আগের লাইনে ফিরে যাও-

মানে কী? আমি আবার কখন কী চেঞ্জ করলাম?

: দেখো, তুমি কিন্তু আমাকে ধৈর্যের পরীক্ষা নেবে না-

কী শুনতে চাও- বলো

: বজলু কী, কেন তুমি তার নাম আনলে আমাদের আলোচনায়?

আচ্ছা! শুরু করি-

তুমি তো জানো আমি প্রজেক্ট বেইজ কিছু কাজ করেছি কিছুকাল। তো আমাদের এক সহকর্মী ছিল, নাম বজলু।

একদিন, ঢাকা থেকে ডোনার এজেন্সির একজন এসেছিলেন। পরিচয়শেষে তিনি বজলুকে জানতে চাইলেন, ভাই আপনার বাসা কোথায়? বজলুর তাৎক্ষণিক জবাব- শহর থেকে ৫ মিনিটের পথ!

অনেক চেষ্টা করেও তিনি জানতে ব্যর্থ হন সে কোন এলাকার বাসিন্দা।

বলে রাখি, সেইসময় তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল- ৫ মিনিটের পথ তা কি হেঁটে, রিকশায়, সাইকেলে নাকি কোনও মোটরযানে। প্রত্যেকটি কথার বিপরীতে সে এক একটি করে উত্তর দেয়, কিন্তু শেষপর্যন্ত সবাই ব্যর্থ হয়!

যাহোক, অফিসের সবাই জানে বজলু সোজাসাপ্টা কোনও কথার জবাব দেয় না। কিন্তু নিজে এসে গল্প জমানোর চেষ্টা তার থাকেই।

দুপুরে খাবার শেষে অফিসে গেছি। আমার কাছে এসে বললো, আজ ১৫ টাকায় হেবি লাঞ্চ করলাম!

চুপ করে থাকি। কিন্তু ও বান্দা থামার নয়। হোটেলে কীভাবে গেল, রাস্তায় কার কার সাথে দেখা হলো… ইত্যাদি।

না পেরে জিজ্ঞেস করি, কী খাইলি মাত্র ১৫ টাকায়, তাও ভরপুর?

সে চুপ করে থাকে। খানিকক্ষণ পর জবাব দেয়, হোটেলে তো মাছ, মাংস, ডাল, সবজি সবই ছিল!

তুই কী দিয়ে খাইলি? খাইছি- বেশ আয়েশ করেই…

আমিও ইস্তফা দেই আলোচনায়!

আরেকদিন দেখি, অফিসের বস খুবই উত্তেজিত। বেশ গালাগাল করছেন বজলুকে।

কাহিনি জানতে বসের রুমে ঢুকি। আমাকে দেখে তিনি বেশ উত্তেজিত!

: দেখছো, এই … টার কাণ্ড?

আমি হা করে তাকিয়ে থাকি। মনের মধ্যে হিসেবে নিকেশ করি। কী এমন ঘটলো। বজলু বসের সামনে বসে, মাথানিচু কিন্তু মুখে কোনও দুঃখের অভিব্যক্তি নেই।

আমি জিজ্ঞাসুদৃষ্টিতে বসের দিকে চাই-

তিনি বলেন, আমি ওরে জিজ্ঞেস করি ব্যাংকে এখন কেমন ইন্টারেস্ট দিচ্ছে। সে আমারে কয়, ব্যাংকে টাকা রাখার কোনও দরকার নেই। কারণ জিজ্ঞেস করলে বলে, ব্যাংকের চেয়ে পোস্টাপিসে বেশি ইন্টারেস্ট দিচ্ছে। আগ্রহী হই পোস্টাপিসের ব্যাপারে।

তাকে জিজ্ঞেস করি- পোস্টাপিসের ইন্টারেস্ট কত? সে কয়- আমার কিছু টাকা আছে পোস্টাপিসে।

যতবার জিজ্ঞেস করি, ইন্টারেস্টের পরিমাণ, সে কী কয় জানো?

আমি বুঝতে পারি, বস আজকে কী ধরা খাইছেন! বজলুর জীবন চলে যাবে, কিন্তু তার কাঙ্ক্ষিত প্রশ্নের জবাব বস কখনোই পাবেন না। সত্যিই তাই!

বস বলেন, আমি কই- বজলু পোস্টাপিসের ইন্টারেস্ট শতকরা কত?

ও জবাব দেয়- ব্যাংকের চেয়ে বেশি

কত বেশি?

ও বলে, ভালোয়

কতো ভালো?

যা দেয় , তা একেবারে কম না। আমার তো চলে যাচ্ছে

তোমার চলে যাচ্ছে ভাল কথা, কিন্তু কত টাকা দেয়- সেটি তো বলবে

যা দেয়, কোনও ব্যাংক তা দেয় না…

তাইলে বোঝো ওই বদমাশটা কত বেশি শয়তান- বস গজগজ করতে থাকেন। আমি নিজের হাসিটা কোনোভাবে লুকিয়ে বসের রুম থেকে বের হয়ে যাই!

এবার ডাক্তার আমায় জিজ্ঞাসা করে, আমার সাথে বজলুর মিল পাইছো?

শুধু তোমার সাথে না, চিকিৎসাসেবা ও সেগুলো ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত সবার সঙ্গে মিল খুঁজে পাচ্ছি। কেউই স্পেসিফিক ইনফরমেশন দিচ্ছেন না। আমরাও অসহায়…

তৌহিদ জামান। লেখক ও সাংবাদিক। জন্ম, বাংলাদেশের যশোর জেলায় ১৯৭১ সালের ১৯ এপ্রিল। পড়াশুনো সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর। সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত রয়েছেন প্রায় ২০ বছর। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থায় প্রকল্পভিত্তিক কাজ করেছেন। ছাত্রাবস্থায় প্রগতিশীল বাম ছাত্র সংগঠনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ