সুমনদা ও মাসির কথা
সুমনদা বললেন,আমরা চারজন বন্ধু ভবরঞ্জন,অসীম,তারকেশ্বর ও আমি দীঘা বেড়াতে গেলাম কলকাতার ধর্মতলা থেকে বাস…..
মালেক মোহাম্মদ কাঁধ থেকে কোদালটা নামিয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে সুনিপুণ লম্বালম্বি চারকোণা দাগ কাটল। তারপর কাদেরের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘নে, শুরু কর্।’
কাদের পাশে দাঁড়িয়ে দাগ দেয়া দেখছিল। মালেক মোহাম্মদের নির্দেশ শুনে মাটি থেকে নিজের কোদালটা তুলে নিল। চারকোণা দাগটার মাঝখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে কোদালটা মাথার ওপর তুলে গায়ের সব শক্তি এক করে মারল এক কোপ। কিন্তু মাটিতে বসল না কোপটা। উল্টো স্প্রিঙয়ের মতো তার দিকেই ছুটে যেন এল কোদালটা। যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে কোদাল। শক্তি দিয়েই কোদালকে প্রতিহত করতে হলো কাদেরকে। ভয় পেয়ে গেল কাদের।
ছুটে এল মালেক মোহাম্মদ, ‘আরে আরে করস্ কি! মাডি কাটস্ নাই জীবনে? এইটা খালি মাডি কাটার কাম না। এইটা কব্বর। উত্তরে মাথা থাকে, উত্তর দিকেত্তে শুরু করা লাগবে। এই দেখ্ এমনে…বিসমিল্লা’ বলে দাগের ওপর একটা কোপ দিল মালেক মোহাম্মদ। এবার ছিটকে এল না কোদাল, ফলার অর্ধেকটা আমূল বসে গেল মাটিতে।
চাড় দিয়ে মাটিটা তুলে মালেক মোহাম্মদ বলল, ‘শোন্, এইটা তো সাধারণ কাম না। এই কামে ভুল হইলে মাটিয়ে গোস্বা হয়।’
বুঝতে পেরেছে বোঝাতে মাথা ঝাঁকায় কাদের। কোদাল হাতে এগিয়ে যায় আবার।
মালেক মোহাম্মদ বলে, ‘অনেক কাম রে কাদের। তিনশ’ কব্বরের কনটাক্। মানুষও কম। থাকব কেমনে সব তো মরতেছে। তর ভাগে পড়ছে তিরিশ কব্বর। তেরো দিনে তিরিশ কব্বর কাটতে পারবি রে কাদের?
‘আল্লা ভরসা।’ বলে কোদাল তুলে নেয় কাদের।
মালেক মোহাম্মদ নিজের জায়গায় ফিরতে থাকে। কাদের উত্তরদিকের দাগ বরাবর কোপ দেয়। তারপর দাঁড়িয়ে পড়ে হঠাৎ। মালেক মোহাম্মদের উদ্দেশে বলে ওঠে, ‘আইচ্ছা মিয়াবাই, মাইনষে যেমনে মরতেছে, আমরা কি আর থাকুম তাইলে!’
মালেক মোহাম্মদ ঝুঁকে মরা আগাছা পরিষ্কার করছিল। কাদেরের কথা শুনে সোজা হয়ে দাঁড়াল। ঘাড় উঁচু করে একবার চাইল আকাশের দিকে, তারপর তাকাল কাদেরের দিকে। কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে বলল, ‘আমরা তো আল্লার কাম করতেছি। তার বান্দাদের তিনি ডাকছেন, আমরা হেই যাওনের রাস্তার মধ্যিখানের কাম করতেছি। যহন আমাদের ডাকবেন, আমাদেরেও চইলা যাওয়া লাগবে।’
কাদের যেন সন্তুষ্ট হয় না মালেক মোহাম্মদের কথায়। বলে, ‘মিয়াভাই, আমরা যখন মইরা যাব তহন কি আমাদেরেও এইসব কব্বরে মাডি দিব?’
‘হ, কই আর দিব, মাইনষে মাইনষে ফারাক তো খালি দুইন্যায়। নইলে দেখ সকলে আহেও ল্যাংটা যায়ও ল্যাংটা। আবার কব্বরেরও কোনও বড়লোক গরিব নাই।’ বলে একটা দার্শনিক ভাব উদয় হয় মালেক মোহাম্মদের মনে। দৃষ্টিকে প্রসারিত করে দূরে তাকিয়ে থাকে সে।
‘মিয়াবাই, একটা কথা…’, একটু ইতস্তত করে বলে কাদের।
‘ক কাদের’, বলে মালেক মোহাম্মদ।
কাদের বলে, ‘মিয়াবাই, এইটা আমার পরথম খুদা কব্বর, আমি মইরা গেলে আমারে এই কব্বরটায় মাডি দিয়ো।’
‘দুরো ফাজিল।’ প্রশ্রয়ের হাসি হাসে মালেক মোহাম্মদ। তারপর বলে, ‘আজাইরা কথা থুইয়া অ্যালা কাম শুরু কর্, সময় কইলাম কম।’
দুই
এক মাস পর। দুজন লোক স্ট্রেচারে লাশ নিয়ে গোরস্তানে ঢুকেছে। লোক দুজনের আপাদমস্তক অদ্ভুতরকম এক পোশাকে ঢাকা। গামছা দিয়ে মুখ বাঁধা মালেক মোহাম্মদ তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে আসছে। নির্দিষ্ট কবরটার কাছে এসে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় মালেক। লোক দুজন কবরের লম্বালম্বি পাশে দাঁড়ায়, তারপর খুব সাবধানে কাত করে স্ট্রেচারটা। স্ট্রেচারে থাকা লাশটা গড়িয়ে পড়ে কবরে। তারা হাত তুলে মালেক মোহাম্মদকে ঈশারায় মাটি ভরাট করতে বলে।
মাথা ঝাঁকায় মালেক মোহাম্মদ। মোনাজাতে দু হাত তোলে। বিড়বিড় করে দোয়া পড়ে। তারপর কোদাল তুলে নেয় হাতে। এক কোদাল মাটি কবরে ফেলে বিড়বিড় করে বলে, ‘অনেক নেকি করছিলি রে কাদের! দ্যাশের এই মড়কের কালেও তোর শ্যাষ ইচ্ছা পূরণ অইলো। নিজের পরথম খুদা কব্বর পাইলি। অ্যালা শান্তিতে ঘুমা।’ বলেই কাশতে থাকে মালেক মোহাম্মদ।
‘ভাগ্যিস কবর খোঁড়ার কাজ শুরু করবার সময় গোরস্তানের পেছন দিক থেকে আরম্ভ করেছিল, নয়ত এই কবরটা ফাঁকা থাকবার কথা নয়।’ কাশির দমকে কবরে মাটি ফেলতে ফেলতে ভাবে মালেক মোহাম্মদ। তার এখন নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে খুব।
সুমনদা বললেন,আমরা চারজন বন্ধু ভবরঞ্জন,অসীম,তারকেশ্বর ও আমি দীঘা বেড়াতে গেলাম কলকাতার ধর্মতলা থেকে বাস…..
গোয়েন্দা সুমন বাবু শুধু গোয়েন্দা নন। তিনি একাধারে বিজ্ঞানী,গোয়েন্দা বিচক্ষণ ব্যক্তি।তিনি বিভিন্ন বিষয়ে আপডেট সংবাদ…..
মফিজ সাহেব বসে আছেন। অভি মনে মনে ভাবে হয়তো তিনি বড় ধরনের কোনো সমস্যার…..
অসীম ও মাসির কথা সুমনদা বললেন,আমরা চারজন বন্ধু চিনু, ভব,অসীম,তারকেশ্বর ও আমি দীঘা বেড়াতে গেলাম…..