কবিতার অন্তর্নিহিত শক্তি

সোনিয়া কাদির
মুক্তগদ্য
Bengali
কবিতার অন্তর্নিহিত শক্তি

কবিতা না থাকলে কি জগতের সভ্যতা পিছিয়ে যেত ? জগতের কোনকিছু কি স্থবির হয়ে যেত ?

জয়উল্লাসে কবিতার পক্ষে দাঁড়াই । কবিতা অন্যকোন কলার হাতিয়ার নয়, বরং স্বয়ংসম্পূর্ণ, স্বরাট । কবিতা নৈতিক শিক্ষা , সমাজবদলের হাতিয়ার এমনকি কবিতাকে চেতনায় শান দেওয়ার পাথরখন্ড ও ভাবা হয় । কবিতা হলো স্বর্ণমুদ্রা, সে নিজেই মূল্যবান । ওকে গলিয়ে স্বর্ণমুদ্রার গায়ে মুদ্রিত রাজার মুখ কিংবা মূল্যমানের ছাপ উঠিয়ে ফেললেও তার দামের – বা মানের কোন হেরফের হয় না।

পৃথিবীর অনেককিছুর প্রয়োজনীয়তা প্রশ্নাতীত নয় ।

আকাশের রঙ মোহময় নীল না হয়ে , সাদা হলে ও আকাশ আকাশই থাকতো। পৃথিবীতে এত বর্ণীল ফুল আছে তারপরও কি প্রয়োজন ছিল গোলাপের এমন সুন্দর হয়ে অভিরাম ফুটে উঠার ? ময়ূরের বর্ণাঢ্য পেখম না থাকলে ও , প্রাণী জগতের এমন কোন ক্ষতি হত না ।

চোখ কানের তৃপ্তিদায়ক ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য শত আয়োজন থাকার পরও কবিতার মুগ্ধতায় ডুবে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে , সব দেশে এবং সব ভাষাতেই ।
কবিতার অন্তর্নিহিত শক্তির জোর আছে বলেই এমনটি সম্ভব।

কবিতা যে প্রবল শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে সংক্রমণের ক্ষমতা রাখে । পেশী শক্তির চাইতে কবিতা শক্তিশালী ও শানিত । একটি কবিতা তার সৌন্দর্যে তার মোহনীয় শক্তিতে পুরো বিশ্ববাসীর হৃদয়ের অর্গল খোলে অন্দরে ঢুকে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে তা আবারও টাটকা প্রমান করলেন ২২ বছর বয়সী মার্কিন কবি Amanda Gorman ,

২০১৭ সালে আমেরিকার প্রথম ন্যাশনাল ইয়ুথ পয়েট লরিয়েট ” আমান্ডা গোরম্যান ” আমেরিকার প্রেসিডেন্টদের শপথ অনুষ্ঠানে নিজের কবিতা পড়া সর্ব কনিষ্ঠ কবি ।

গোটা পৃথিবী যখন করোনায় বিপর্যস্ত । পৃথিবীর মোড়ল খ্যাত আমেরিকার গনতন্ত্র যখন রাহুর কবলে, ঐক্যে আর ঐক্যবদ্ধতার উপর যখন অনাকাঙ্ক্ষিত আঘাত পড়ছে ।

তখন সারা বিশ্বের মানুষের দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটেল হীলে , নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিসের শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানের দিকে ।

বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর নেতা, সমবেত অতিথি এবং মিডিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকা বিশ্ববাসীর মনে কবিতার সম্মোহনী শক্তিতে, সৌন্দর্যে আকস্মিক জ্বলে উঠলেন এক অল্প বয়সী কবি । নিজেকে যিনি পরিচয় দেন – দাসদের উত্তরসূরী, চর্মসার এক কৃষ্ণাঙ্গ মেয়ে হিসেবে ।

“The hill we climb”

৫ মিনিটের একটি কবিতায় অবাক , স্তব্ধ চারিদিক। পিনপতন নীরবতায় কবিতার প্রতিটি শব্দ, কবি গেঁথে দিলেন তাবৎ বিশ্ববাসীর হৃদয়ে ।

তার শব্দচয়ন , চমৎকার সব উপমা, তেজে বলিয়ান জোরালো দৃপ্ত উচ্চারণে অবাক, মুগ্ধ , তাবৎ দুনিয়াসহ প্রাক্তন – বতর্মান , প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট , ফাষ্ট লেডিরা সহ বিখ্যাত মার্কিন ব্রডকাষ্টার অভিনেত্রী অপরা উইনফ্রে ।

“যখন দিন আসে, আমরা নিজেদের কাছে প্রশ্ন রাখি
এই আবছা অন্ধকারে কোথায় খুঁজে পাবো আলো
সেই শক্তিকে দেখছি আমরা যা
ভাগাভাগি করার চেয়ে ছিন্নভিন্ন করে
দেবে আমার দেশকে
গণতন্ত্র বিলম্বিত হলে –
আমার দেশকে ধ্বংস করে দেবে
সেই প্রচেষ্টায় তারা সফল হয়েছিল প্রায়
কিন্তু গণতন্ত্র পর্যায়ক্রনিকভাবে বিলম্বিত হতে পারে
তাই বলে গণতন্ত্রকে
স্থায়ীভাবে পরাজিত করা যায় না”

বিশেষ সময়ে , বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য তার সে সুবিচারিক, সময়োচিত কবিতা। তিনি কবিতায় যে শব্দ ব্যবহার করেছেন তা সারা বিশ্বের মানুষের মনে আজ, আগামীকাল এবং ভবিষ্যতে ও অনুরণিত হতেই থাকবে ।

সোনিয়া কাদির। লেখক। জন্ম -১৯৫৬ সালের ১লা জানুয়ারি সিলেটের বিয়ানী বাজারে, বর্তমান নিবাস আমেরিকার নিউইয়র্কে। মিসেস কাদির নিউইয়র্কের সাহিত‍্য সংগঠন 'সাহিত্য একাডেমির' সাথে যুক্ত এবং তিনি সাহিত্য একাডেমি ব্রক্সস্ শাখার পরিচালক। প্রকাশিত বই: ১টি।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ