সমুদ্র-যাত্রা
সমুদ্রের লোনা হাওয়া আরও লবণাক্ত হলো
তোমার শরীরের নুনে
পলিমাটি আরও উর্বর হলো
তোমার প্রেমের আগুনে-প্লাবনে
আলো-হাওয়া-অন্ধকারের সঙ্গমে
ঝাউবীথিগুলো এই
সুযোগে তোমাকে দেখে নিল আরবার
আরেকবার চোখ কচলে পৃথিবীর দীর্ঘতম
—কী সুন্দর, গরিব অথচ গরবিনী সৈকতে
কক্সবাজারের আবহাওয়া পাল্টে গেল কী গেল না
কেউ দেখলো না, কেউ-বা তোমাকে, কেউ-বা
অন্য কিছু : তবে তাতে কারো যায় আসে না
সাগরের ঢেউগুলি উঠে এল
তোমার পায়ের নগ্ন নখ থেকে মুক্তবেণীর
খোলা হাওয়ায়—ওহ্,
বেআব্রু-বেসামাল হওয়ার আগে
হরণ করলো বারিধি-বাতাবরণ
তোমার দেহের অলিতে গলিতে
ভাঁজে ভাঁজে খাঁজে খাঁজে
গহন গাঙচিলের কান্না
আনাগোনা
নির্জন-নিঃসঙ্গ তোয়ালে চুমুক দেয়, তুলে নেয়
চুল ও ত্বকের অন্তিম আশ্রয়
শেষবিন্দুটুকু
প্রতি অঙ্গে অঙ্গে গোঙায় গহীন
গোপন বাস পাটভাঙা সুতোসুখ,
শরীরী তাঁতের প্রলেপ— সুখবাস-সহবাস :
প্যান্টের পকেটে, শার্টের পকেটে ওই
জড়জীবন—হোটেল-মোটেল-রেস্তোরাঁ
নৃত্যপটিয়সী আঙুলের চঞ্চল লীলা-মুদ্রা
আশমানী সোয়ারী রাতগুলি দিনগুলি
দুনিয়া দেখে না পৃথিবী জানে না
এক ছায়ামানব এক ছায়ামানবী
কালজ চেতন সীমার বাহিরে
স্থানবোধবৃত্তের বহিঃনোঙরে
আধারের কূল-উপকূল-সীমানা উপচে
দূরপাল্লার দীর্ঘ সমুদ্র-যাত্রায় !
রূপসাগরে ডুব সাঁতারে
তোমাকে পেলে বা আমাকেই পেলে তুমি
বেশ তো তোমার হাতেখড়ি হব, বাল্যশিক্ষা হব
প্রাথমিক পাঠ হব
নূপুরের মতোন তোমার পায়ের ঘুঙুর হব
তোমার শিখন হব
তোমার বুকের গহনে গহীনে
আমাকে ডুবিয়ে রেখ
আমি ডুব সাঁতারে তোমার রূপসাগরে নামব
সাদা কাগজে, খাতার ‘পরে—ক্যানভাসে
আমাদের সাজাব, গড়ব
কাটাকুটি করব, ছিঁড়ব
নবীন উপমা, প্রতীকে, রূপকে, বাকপ্রতিমায়
উৎপ্রেক্ষায়, জড়িয়ে ধরব
যৌথ ওষ্ঠে তুলে নেব
শব্দের পরাগ কথার চরণ মৌতাত থাকবে
লেগে কাঁচা অঙ্গে
আমাদের কোরাস কোথায়
থামবে, কিছুতে জানি না, আমরা জানতে চাই না
বর্ণমালা, শব্দমালা, পঙ্ক্তিমালা—করোটি-কুন্তলে
গলে, হাতে ও কোমরে, চরণে জড়াব—
তোমাকে পরাব !
শ্রেষ্ঠ উদযাপন
একটি বারুদ
শলাকার মতো আমি এক
বিধ্বস্ত-অনল,
কৃষ্ণাঙ্গ-অঙ্গার ।
মৌন-মগ্ন চেরাগী-ছাতার নিচে, নির্গ্রন্থ আমাকে,
এক চাটি আলো দাও ।
উপায়-তরীতে উঠাও আমাকে গুরু;
নিকষ আঁধারে ভিজে যাচ্ছি,
অন্ধকারে জবুথবু ।
তুমি মুনি । আমি শুনি । তুমি
ঋষি । আমি শিখি । দিবানিশি।
আমাকে এঁকেছি আউলাঝাউলা আঁধার-অক্ষরে—
যুগলাঙ্গ নশ্বর-বাঁধন টুঁটে
আউলিয়া-আলোয় নিমগ্ন
শাশ্বত সাধনে ।
তুমি যোগ আমি যোগী : দ্বৈতাদ্বৈত, এ অনঙ্গঅঙ্গ—
একটি রেখায় একটি প্রভায় একটি শিখায়
সৃজনের শ্রেষ্ঠ উদযাপন—উৎসব-মেলা হোক !
মহাযুদ্ধ
যুদ্ধ যুদ্ধ
তীব্র যুদ্ধ
মৃদু যুদ্ধ
স্নায়ু যুদ্ধ
যুদ্ধ তোমার সনে
যুদ্ধ আমার সনে
যুদ্ধ সবার সনে
যুদ্ধ মহাযুদ্ধ
যুদ্ধ দিকে দিকে
যুদ্ধ অনিমিখে
যুদ্ধ পলকে
যুদ্ধ ঝলকে
যুদ্ধ দ্যুলোকে
যুদ্ধ ভ্যুলোকে
যুদ্ধ যুদ্ধ
সবাই ক্রুদ্ধ—
আমরা রুদ্ধ;
এসো হে বুদ্ধ
এসো না শুদ্ধ
ওগো বিশুদ্ধ
কর প্রলুব্ধ—
অতুল মুগ্ধ—
হব না ক্ষুব্ধ,
হব বিমুগ্ধ !