আমি জানতাম না চব্বিশের জুলাইটা এত দীর্ঘ হবে
আমি জানতাম না চব্বিশের জুলাইটা এত দীর্ঘ হবে, আমি জানতাম না, অগাস্টকেও রাহুর মত গ্রাস…..
কবি ত্রিশাখ জলদাস, শক্তিশালী এই কবি এই সময়ের হলেও, কোন নির্দিষ্ট সময়েই তার কবিতাকে বাঁধা যায় না। কাব্যশৈলীর ব্যবহৃত স্বাভাবিক ধারাকে উপেক্ষা করে, ছন্দের দোলচাল, রুপক-উপমা এবং উৎপ্রেক্ষা সকলই তিনি ব্যবহার করেন একজন চিত্রশিল্পী যেভাবে একটি চিত্রকর্মকে ফুটিয়ে তুলতে বিভিন্ন মাধ্যমের রঙ, বিভিন্ন আকারের তুলি এবং চিত্রশৈলীর বিভিন্ন ধারা ব্যবহার করেন ঠিক সেভাবে। মূলত কবিতায় তিনি ছবি আঁকেন এবং তাঁর একেকটি কবিতা কবিতায় আঁকা একেকটি চিত্রকর্ম। এক কথায় বলতে গেলে তিনি ‘কবিতার চিত্রশিল্পী’। কবি ত্রিশাখ জলদাসের কবিতার একটি আলোচনায় কবি নজরুল হায়াত লিখেছিলেন,
“ত্রিশাখ অবলীলায় এতকাল ধরে বাংলা কবিতায় ব্যবহার্য বিষয় নির্ভরতা পরিত্যাগ করেছে। সে জায়গায় স্পর্শযোগ্যতা, একই কবিতায় বিচিত্রতর ভাব ও অনুভূতির উন্মোচন বিশেষ বৈশিষ্ট্য হিসেবেও যুক্ত করেছে।”
আপাত দুর্বোধ্য এই কবিতাগুলোর অদ্ভূত একটি ব্যপার হলো এগুলো যতো সময় যাচ্ছে এদের পাঠকপ্রিয়তা ততো বাড়ছে, ততোই পাঠক এই কবিতাগুলোর নতুন নতুন রঙ, ব্যঞ্জনা ও অর্থ উপলব্ধি করতে থাকবে। এই ‘চিত্রকর্ম’ উপভোগকালে এমনসব অজস্র আনোখা চিত্রকল্পের দেখা মেলে, বিষয়বস্তু ও প্রেক্ষাপট এবং বয়ানে আশ্চর্য এক ঘোর টেনে নিয়ে যায় কবিতার আরো গভীরে, অথচ অর্থোপলব্ধিতে সংযমী। ধীরে, অতি ধীরে পাঠককে তার কবিতা নিমজ্জিত করে এবং করেই রাখে।
কবি ত্রিশাখ জলদাসের সদ্যপ্রকাশিত তৃতীয় কবিতার বই ‘কালো মোহরের দানা’। কবিতাগ্রন্থটি বিভিন্ন কারণেই শুধু কবির তিনটি কবিতার বইয়ের মধ্যেই নয় সাম্প্রতিক সময়ে লেখা বাংলা কবিতার গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী একটি কাজ। আলোচনার শুরুতেই উল্লেখ্য যে বইটিতে ‘অনুচ্চ নদীর গান’ এবং ‘অন্ধ আয়ুষ্কাল’ শিরোনামে দুটি পর্ব বিভাগ রয়েছে। কবিতাগুলোর আঙ্গিক উপস্থাপন গদ্যধর্মী, কোথাও অমিল অক্ষরবৃত্ত। মূলত ছন্দের গাম্ভীর্যকে যথাসম্ভব পরিহার করে শব্দে শ্রুতিমাধুর্য নির্মাণ করার প্রবণতা এই কবিতাগুলোতে লক্ষণীয়। তো প্রথমে ‘অনুচ্চ নদীর গান’ শুনে আসা যাক।
“একটি হিমগৃহে সমাহিত করেছি তোমাকে
আর নিজেকে বিস্তৃত করেছি অগ্নিময় রোদে।
এই হিমঘর এই অগ্নিময় রোদ
এরা পরস্পর বিরোধী।
বস্তুত এর চেয়ে উত্তম শোকপ্রস্তাব আমার জানা নেই।”
(নিহত মাছের জন্য)
ক্ষুদ্র এই কবিতাটি যদি ধরে নিই গভীর যতনে আত্মস্থিত সম্পর্কের করুণ নিয়তি, তবে এর চেয়ে উত্তম চিত্রকর্ম আর হতে পারে না। এভাবেই কবি তার প্রতিটি কবিতায় স্তব্ধতা ও রহস্যময়তার আড়ালে লুকিয়ে রেখেছেন অনেক অব্যক্ত সম্পন্ন শব্দ ও নিহিত ব্যঞ্জনাকে। মৌন ধ্যানে কিংবা স্মৃতিকাতর নিঝুম হিল্লোলে তন্ময় কবি নির্মাণ করেছেন ইন্দ্রিয়নির্ভর সংবেদী কবিতার অবয়ব। আলো অন্ধকারের ঐন্দ্রজালিক মায়ায়, গহন চেতনার মন্দ্রাভাষে, অনুভবী সংবেদনার নিভৃতে স্পর্শকাতর একেকটি কবিতায় চিত্রিত হয় সম্পর্ক, স্মৃতি, আত্মদহন, জগত-সংসারের ইত্যকার টানাপোড়েন সমেত কবির মনোজাগতিক আশ্চর্য প্রতিবিম্ব।
যেমন- ‘হাল্কা হলুদ পাতাগুলো‘ কবিতাটিতে চিত্রিত জীবন সায়াহ্নে স্মৃতির রোমন্থন। পুরনো ক্ষত বা আত্মদহন কবিকে এখনো দগ্ধ করে বলেই তিনি কবিতায় উচ্চারণ করেন-
“স্মৃতিচিহ্নের উপড় শুয়ে আছে ডটগুলো,
আমি নগ্ন করে দেখি ক্লেদ ও কান্না…”
এবং জীবনের পড়ন্তবেলায় এই তপ্ত বর্তমান তাকে আরো নিষ্ক্রিয় করে যেনো ‘একটি বরফ চাঁইয়ের ভেতর ডুবিয়ে দেয়’। আবার ‘ঘর’ কবিতাটিতে আসা যাক।
“ঘরের ভেতর ঘর খুলে বসে আছি।
সদর অন্দর আলাদা করে খোলা…”
হয়তো এই ‘ঘরের ভেতর ঘর‘ কবির মনের গহীনে প্রোথিত অন্য এক মন, যা তার নিজের কাছেই এক রহস্যময় গোলকধাঁধা এবং কবিতায় উল্লেখিত ‘বিরুদ্ধ শিবির’ হচ্ছে সেই সমাজবাস্তবতা যা ক্রমশ তার নিজের থেকে নিজেকেই বিচ্যূত করেছে। এভাবেই তিনি মনোজগতের সুক্ষাতিসুক্ষ অলিগলির ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভাবদর্শনকে চিত্রার্পিত করেছেন তার প্রতিটি কবিতায়, একজন প্রাজ্ঞ বিদগ্ধ শিল্পীর মতো। সমাজের হাজারো অবরুদ্ধতা ও বিরুদ্ধতায় মানুষের সমর্পণ তার ক্ষয়ে যাওয়া সৃষ্টিশীলতাকে নিয়ে যায় অতল অন্ধকারে। তাই কবি ‘আবর্তিত সময়’- কবিতায় উচ্চারণ করেন- “সমর্পিত মানুষেরা ক্ষয় ডেকে আনে; আর অন্ধকার স্পর্শহীন”। এই অসাধারণ কবিতাংশটির কথাই ধরা যাক-
“একটি চঞ্চুহীন পাখি
পৃথিবীর মধ্যপথ থেকে সরে যাচ্ছে…
আমরা মুলত রক্তবীজের ভেতর বাস করি।”
(কালবেলা)
আবর্তিত সময়ের পরম্পরায় পৃথিবীর বুকে আমরা যে মুলত আমাদের অতীতকে সামনে নিয়ে এগোই আমাদের রক্তপ্রবাহে, এমন উপলব্দিই চিত্রিত হয়েছে তার ‘কালবেলা’ কবিতায়। আর ‘সমান্তরাল’-কবিতায় সেই একই পৃথিবীর নির্ণীত গন্তব্যের আভাস, যার শেষ স্তবকে উচ্চারিত হয়েছে “হন্তারক সময়ের স্রোতে ক্রমাগত ক্ষয়ে যাচ্ছে ক্রুশবিদ্ধ কাল”। ‘মুহূর্ত কাল’ কবিতায় দেখা যায় জীবনকে তিনি আঁকেন ‘ভঙ্গুর বৃত্তের মতো’, যার শুরু কিংবা শেষ বিন্দুকে কখনওই নির্ণয় করা যায় না। একইসাথে কবি বর্তমান সমাজ বাস্তবতাকে সুদক্ষ শিল্পীর মতোই চিত্রিত করেছেন ‘বোধ’, ‘এলিজি’সহ আরো কিছু কবিতায়। বুদ্ধিমান মানুষেরা আজ মুখোশে আবৃত কুশলী খেলোয়ার আর ‘জীবন এক প্রসারিত জুয়ার টেবিল’ এই নিদারুণ সত্য উচ্চারণের মাধ্যমে ‘খেলা’ কবিতাটিকে এই বইয়ের খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও এসময়ের প্রতিনিধিত্বকারী একটি কবিতা মনে হয়েছে। বলা যায় এ পর্বের অধিকাংশ কবিতাগুলোতে পৃথিবীর বস্তু ও অবস্তুগত পারস্পারিক সম্পর্কের যে চিত্রসমূহ অঙ্কিত হয়েছে, তা স্মৃতিকাতরতা ও নৈরাশ্যে মোহাবিষ্ট।
তেমনি, উপলব্দিগত আত্মদর্শনের সাথে সাথে তার কবিতার ক্যানভাসে ব্যবহৃত ভাষাশৈলী ও অলংকার নিগূঢ় অর্থবহ বিমূর্ত ক্ষুদ্রচিত্রসমুহ সমানভাবে সম্মোহিত করে পাঠককে। তার কবিতায় ব্যবহৃত রুপক, উপমা, উৎপ্রেক্ষার উপস্থাপন অন্য কবিদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। চিরচেনা প্রকৃতির জল-নদী-আগুন-হাওয়া-পাহাড়-বন-দুপুর-সন্ধ্যা কিংবা চিরজানা নারীকে তার কবিতায় ভিন্নভাবে পাওয়া যায়। অচেনা এক জগতে কখনও বর্ণিল স্বপনাভিলাষী কুহক রচনায়, কখনও গভীর চেতনার ইঙ্গিতময় আভাষে পরাবাস্তব ক্যানভাসে তার কবিতার একেকটি পংক্তি হয়ে ওঠে ঘোরলাগা অসামান্য চিত্রকলা! যেমন-
• “পাহাড়ের গ্রীবা থেকে তুলে আনি পাখি” (অপেক্ষা)
• “প্রণয় একটি ক্ষিপ্ত ঘোড়সওয়ার, উল্টে যাচ্ছে দ্বিতীয় চাঁদের পিঠে।” (ছিন্নপাঠ)
• “ছায়া ভেঙে গড়িয়ে পড়ছে জল,
একটি নোয়ানো বিকেল
স্খলিত স্বপ্নের ভেতর শুয়ে আছে।” (অনুক্ত কাল)• “পথে যেতে যেতে কী এক অদ্ভূত মানুষের সাথে দেখা!
হাতের তালুতে তিনি নদী ও পাহাড় এঁকেছেন।
পাহাড়ের গন্ধ নিয়ে আমি নদীর গভীরে ডুবে যাই।” (ভ্রমণ)
কবিতাগুলোর আরেকটি বিশেষ দিক হলো- উপমার যৎসামান্য ব্যবহার, বরং অসামান্য সব চিত্রকল্পের সংযোগে অংকিত হয়েছে গভীর দর্শনগত বিমূর্ত কাব্যচিত্র। তাই কোন নির্দিষ্ট শব্দ, শব্দবন্ধ বা পঙক্তির বিচ্ছিন্ন উপস্থাপনের মাধ্যমে কোন একক পূর্ণাঙ্গ ভাবার্থ তুলে ধরা দুরূহ; বরং এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ কবিতার আস্বাদনই যথার্থ বলে বিবেচিত।
‘কালো মোহরের দানা’-র দ্বিতীয় পর্ব ‘অন্ধ আয়ুষ্কাল’ দশটি কবিতার একটি সিরিজ। গল্পের হাল্কা আভাষে কবিতাগুলোর বিশেষ অনুষঙ্গ নারী ও নদী, যা অন্যার্থে প্রকৃতি। দেহতত্ত্বগত দর্শনের ভাবার্থে ইন্দ্রিয় উৎকীর্ণ ধ্বনি ও বর্ণে, একাধিক রঙ ও স্পর্শে যেন ছবির পর ছবি গেঁথে চলেছে এই কবিতাগুলো। বলা যায় ‘অন্ধ আয়ুষ্কাল’- এ চিত্রিত হয়েছে অবদমন এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতার সঙ্গে কবির মনোজগতজুড়ে উৎপাদিত ক্রমাগত বিরোধ, কখনও পারিপার্শ্ব এবং অন্তর্জগতের মধ্যে সমন্বয় খোঁজার চেষ্টা, কখনও আত্মজিজ্ঞাসা ও বহুমাত্রিক আত্মবিশ্লেষনের মাধ্যমে সত্তার আত্মোপলব্ধি। যেমন প্রথম কবিতাটির কথাই ধরা যাক, সেখানে কৃষ্ণার সাথে কবির কথোপকথনের মাধ্যমে চিত্রিত হয়েছে মানুষের মনোজাগতিক বিচিত্রতাই যে পারস্পারিক নৈকট্যের অনুঘটক এমন এক বোধ। মূলত অন্ধ আয়ুষ্কালের কৃষ্ণা, মালতী, অনুরাধা, সুদীপ্তা, বীণা, সুরবালা, উদিতা, সুমিত্রা, অনসূয়া নাম্নি চরিত্রগুলোই এই কবিতাগুলোর আধার ও আধেয়। এই নারীরা কবি জীবনানন্দের কবিতার সুদর্শনা, সুরঞ্জনা, সুচেতনা, সুজাতা, শ্যামলীদের মতো নয়; বরং ‘বনলতাসেন’ কবিতায় ‘বনলতাসেন’ চরিত্রটি যেমন কবিমানসের নিগুঢ় অর্থবাহী মৌলিক চৈতন্যের উৎকাঙখা বীজ; অন্ধ আয়ুষ্কালের নারীরাও ঠিক তেমন। আর এই কাব্যচিত্রসমূহের মূলে ঋতুবাহী জীবনচক্রের প্রধানতম অন্বেষা সম্পূর্ণতা, যেখানে প্রোথিত থাকে বিচিত্র ভ্রমন, গন্তব্যকে ছাড়িয়ে যার ব্যপ্তি। মূলত ‘অন্ধ আয়ুষ্কাল’ পরিত্যক্ত আয়ুর খোলসে বিছিয়ে থাকা সময়ের ফসিল।
সিরিজের দ্বিতীয় কবিতায় যেমন চিত্রিত হয়েছে মানুষের অন্বেষারত মনের সেই অদ্ভূত কৌতুহল যা অপর মনের দূর্বোধ্যতাকে অতিক্রান্ত করতে সদা তৎপর থাকে।
“আমি যে নদীটির উপর বাস করি,
ভাবলাম… তার উৎসমূলে যাবো;
এর গুপ্ত মন্ত্রটি আমার দরকার”।
এই পঙক্তিগুলো কবির এমন আকাঙ্ক্ষাই ব্যক্ত করেছে। তৃতীয় কবিতায় কবি প্রাপ্ত নিয়তিকে দুহাতে আঁকড়ে ধরে অলব্ধ আকাঙ্ক্ষামূলে প্রোথিত চির আকুতিকে প্রণতি জানান আর নিজেকে নিভৃত করে উচ্চারণ করেন-
“বীণাকে বলেছি আহা এ কেবলই অনুরাগ
পূজার অর্ঘ্যতে আজ ফুটে থাক কৃষ্ণার আকাশ।”
আবার এ সিরিজের পঞ্চম কবিতার সুদীপ্তা হচ্ছে সেই মুগ্ধ মুহূর্তসমুহ যা তাকে না চাইলেও ঘোরগ্রস্থ করে বারবার, যদিও তিনি জানেন সেসব এখন কেবলই বিগত স্মৃতি। ষষ্ঠ কবিতাটিকে সুরিয়ালিস্ট ধারার শিল্পী সালভাদর দালির চিত্রকর্মের সাথে তুলনা করলে কোন অত্যুক্তি হবে না হয়তো। এ যেন এক অনভিপ্রেত ঐন্দ্রজালিক স্বপ্নযাত্রা, যার শেষাংশে চারটি রঙের খেলায় নির্ণিত হয় অমোঘ চির জীবন্দর্শন। কবিতাগুলো পড়তে গিয়ে কখনও মনে হয়েছে এই লোকসমাজে আদতে কবি হয়তো কখনোই পারেননি নিজেকে মেলে ধরতে; কেবল তাল মিলিয়ে অস্তিত্বের আভাষ দিয়ে যাওয়া এবং হয়তো সমস্ত জাগতিক সম্পর্কের ভেতরে থেকেও কবির নিজেকে মনে হয়- ‘সমস্তরাত একা একা শুয়ে থাকা এক রেলের ইঞ্জিন’।
“সম্পর্ক একটি অন্তর্বাহী স্রোত,
অনূঢ়া জলের গভীরে শুয়ে থাকে।”
সিরিজের অষ্টম কবিতার এই নিগুঢ় অর্থবাহী পংক্তিদ্বয় পাঠককে সম্পর্কের এক অশ্রুতপূর্ব অনুধাবনে আন্দোলিত করে। এখানে এমন সম্পর্ক চিত্রায়িত হয়েছে যা সংবেদী আত্মার গহীনে স্থিত; জীবননদীর বাঁক বদলে নবধারা দৃশ্যমান হলেও এ সম্পর্ক ‘অন্তর্বাহী স্রোত’-এর মতোই চির বহমান!
‘অন্ধ আয়ুষ্কাল’ পর্বটিতে একটা তাড়াহুড়োর চাঞ্চল্য লক্ষ করা গেছে, মনে হয়েছে এই শক্তিমান কবি এই পর্বটিকে শেষ না করেই হুট করে থেমে গিয়েছেন বা সিরিজটি অসমাপ্ত। আরেকটি বিষয় হলো সিরিজটির সর্বশেষ ‘নাভি’ কবিতাটিকেও মনে হচ্ছে সম্পূর্ন দলছুট এবং খানিকটা যেনো সিরিজটির সাথে জোর করে জুড়ে দেয়া, যদিও এটা কবির ব্যক্তিগত স্বাধীনতা।
পরিশেষে বলা যায়, সম্পূর্ণ কবিতাগ্রন্থটিই সুগভীর জীবনবোধ ও অব্যক্ত আত্মভ্রমণের এক আশ্চর্য সম্মোহনী চিত্রশালা। ‘কালো মোহরের দানা’ কবিতাগ্রন্থটি নিয়ে এই নাতিদীর্ঘ আলোচনা লেখাটি একজন পাঠক হিসেবে, একজন সামান্য কবিতাকর্মী হিসেবে আমার দায়িত্ব বলেই তাগিদ অনুভব করেছি। কারণ, আমার মনে করি সংখ্যায় যতই স্বল্প হোক না কেন, কবি ত্রিশাখ জলদাসের এই কবিতাসমূহ এসময়ের সাহিত্যচর্চার ইতিহাসে সুস্পষ্ট উজ্জ্বল জায়গা নিয়ে থাকবে।
সম্পাদনা: জোবায়েন সন্ধি
আমি জানতাম না চব্বিশের জুলাইটা এত দীর্ঘ হবে, আমি জানতাম না, অগাস্টকেও রাহুর মত গ্রাস…..
অভিশাপ মেঘের ভেলায় নিঃশ্বাসে ক্লান্তির ছাপ সবুজের নীড়ে আপন ঠিকানার খোঁজ এক ফালি সুখের নেশায়…..
পাখি দম্পতি পাখি গিয়েছিল কতদূর বনে তা কারো নেই জানা। ঠোঁটে ধরা লাল টুকটুকে ফল…..
তারা যেমন বলে, চোখে ধুলো দিলে থেমে যাবে আমার কাব্যময়তা অথচ আমি প্রামান্য দলিলের নই…..