কয়েকটি পৃষ্ঠা

পুলক বড়ুয়া
কবিতা
Bengali
কয়েকটি পৃষ্ঠা

রণতরী

তুমি কেন গঙ্গাপাড়ে চিতাকাঠ হতে চাও—
সর্বাঙ্গে আগুন জ্বেলে
পুড়ে যাবে বলে
আমাকে পোড়াবে বলে
একি গঙ্গাজলে অগ্নিময়ী আত্মবিসর্জন
নিজেও পুড়বে
আমাকেও করবে নিঃশেষ
আমি কী তোমার চিতার আগুন হব
আগুন কী আগুনকে দাহ করে

তার আগে, গঙ্গাস্নানে নাইতে নামবে মেঘমালা
তার আগে, মেঘল্লার দামিনী হয়ে ছিন্নভিন্ন
করবে জলের জটিলতা
সাদাকালো ঋতুর উড়িয়ে
উত্তরীয় নগ্ন
ললিত বন্ধনে বল্লমে করবে বিদ্ধ

সবকিছু ভেঙেচুরে আজ
স্পর্দা-ফণা—অক্টোপাস-স্বপ্ন
উন্মাদ বিষের
উন্মত্ত সোয়ারী রণতরী জলপরি

দর্পচূর্ণ করবে ভাঙবে
আপন দর্পণ অথবা ফেলবে মুছে
নেপথ্য-পারদ
সটান আসবে উঠে অপর বাস্তব
নিজেই নিজের মুখোমুখি হবে : বাসি
প্রতিচ্ছবি থেকে ঘুরে
দাঁড়াবে বেরিয়ে পড়বে জীবন্ত আত্মপ্রতিকৃতি

তুমি নাকি তুমি
তার অন্তর্গত জল-স্থল-অন্তরীক্ষ উন্মোচন
উদ্বোধন, ত্রিমাত্রিক দ্বারোদ্ঘাটন


চিতাকাঠ

শুধু একজন প্রতীক্ষাকাতর
সর্বক্ষণ অপেক্ষা করছে
নিত্য জাগ্রত, প্রস্তুত
সাঁজোয়া যানের মতোন প্রস্তুত

এখানে আসতে বাধা নেই
এখানে সবাই আসে, আসতেই হয়
পাসপোর্ট-ভিসাহীন, টিকেটবিহীন
অনুমতিহীন
নিশ্চিন্ত, নিশ্চিত

শেষ ডাক
শেষ খাম
অন্ত ও অনন্ত

শুধু একজন
উষ্ণ বাতাবরণে জড়াবে
তীব্র আলিঙ্গনে সহমরণে সপ্রাণ
হবে শেষসঙ্গী শেষমিতা চিতাকাঠ

স্তব্দকন্ঠ-কালো ব্যাজের মতোন তার
অঙ্গার-অক্ষরগুলি জমে
এপিটাফ হয়ে বুকে সেঁটে
থাকবে গোপন
নিঃশ্বাসে-প্রশ্বাসে
দহন-দরজা ফাঁক করে

এখানে পাপ ও পূণ্য নেই
সবই সবাই সমান সমান কিনা
শেষ সেই বিচারের ভার তার নয়

শ্মশানে থাকে না কিছু
শ্মশানে থাকে না কেউ
শ্মশানে কখনো কেউ করে না প্রতীক্ষা
করতে জানে না
মৃত্যু ও জীবিত থাকে কিছুক্ষণ
সে তখন সকরুণ দাহচাপা প্রাণ পায়—

শাশ্বত শ্মশান চিরশূন্য

শুধু একজনই পূর্ণ
অপেক্ষা করতে জানে, থাকে—চিতাকাঠ


কথন-চামচ

ইচ্ছেটাকে বন্দি কোরো না
তাকে তুমি মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত কোরো না
তাকে তুমি হাজতে ঢোকাতে পার
তাকে তুমি রিমান্ডে রাখতে পার
জেরা কোরো
সে জবানবন্দি দেবে

সে তো আর ফেরারী না
তাকে গুম-খুন—ক্রসফায়ার কোরো না
তার বিপরীতে ভিত্তিহীন
অভিযোগ গঠন কোরো না
সে তোমাকে ভালোবাসে, পিরিতি কী পাপ—
ভালোবাসা অপরাধ নয়
কিন্তু, আমার কাছে সে দাগী
আসামি, তোমার কাছে যত না—তার চে’
একটু অধিক
যেহেতু, সে এখনও একথা
তোমাকে স্বচ্ছন্দে বলতে শেখেনি
অথবা সহজে বলতে পারেনি
যেহেতু, সে এখনও একথা
তোমাকে বলতে ব্যর্থ
আমি চাই সে বলুক, বলতে পারুক
স্বীকার করুক তার অপরাধবোধ

তার কথার-কপোত ওষ্ঠ গলে
অধর-আধার-পানপাত্র ভরা
অধর-আধার-পানপাত্র চুঁইয়ে পড়ে
লেলিহান লিপি
উষ্ণ শব্দমালা

তাকে প্রশান্ত করুক

ইচ্ছেমতোন চুমুকে তুলে নিক
ইচ্ছেমতোন চুমুতে ভরে নিক
চুম্বন করুক মুখে পুরে চুষে নিক
মুখোমুখি প্রিয় কথন-চামচ


যাপিত জীবন

রোদ্দুর এনেছে দৃশ্যাবলী, জীবনের লেনদেন হাওয়া
আলো-অন্ধকারে চাওয়া-পাওয়া
অন্তিমে অনন্ত আশ্রয়-আশ্রম ডাকে
শাশ্বত-আহ্বান
শূন্যতা-অসীম

মধ্যিখানে শুধু তোমাকে পেয়েছি
তোমাকে জেনেছি

পুণ্য তা, পূর্ণতা ।

পুলক বড়ুয়া। কবি। জন্ম বাংলাদেশের চট্টগ্রামে। লেখাপড়া করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রকাশিত গ্রন্থ: ‘ওই পূর্বে রাঙা সূর্যে’, এবং ‘পাঠেরা খেলছে মাঠে’।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..