‘করোনা’কালের কবিতা

দাউদ হায়দার
কবিতা
Bengali
‘করোনা’কালের কবিতা

দোহাই মা-কালী

বন্দিজীবন কাকে বলে অজানা নয়,
জেলে ছিলাম মাসের পর মাস।
একাকিত্বের প্রহার, নিষ্ঠুর শৃঙ্খল
যুগপৎ সন্ত্রাস আর বীভৎস ভাইরাস

আদ্যিকাল থেকে মানুষের আর্তনাদ,
ক্ষুধাব্যাধির যন্ত্রণা।
প্রহরে-প্রহরে মৃত্যু, কবর-শ্মশান

দোহাই মা-কালী, রক্তমাখা জিভ ব্যাদান করো না

 

আমার পতাকা

বলো হে ঈশ্বরীপাটনী, কী ভাবে তোমার সন্তান
বাঁচবে দুধেভাতে মুমূর্ষু বিশ্বদেশে?
যে-দিকে তাকাই তীক্ষ্ণ মৃত্যুবান।
বাঁচার সমস্ত পথ রুদ্ধ, বাঁচাও দুঃসহ বদ্ধ-পরিবেশে

জীবন নিমেশে উধাও, বাতাস বিষমাখা।
খাদ্যাভাব ঘরে-ঘরে, দূষিত পানীয়
জলের অতলে ক্রন্দন, মানুষ দিশেহারা। আমার পতাকা
বহনের কেউ থাকবে না হে স্বজন, প্রিয়?

 

দিনগুলো

আনা ইসলাম বললেন, “মানুষ বান্ধব নয় আর
দেখা সাক্ষাতেও ওজরআপত্তি, আত্মীয়কুল দূরে, এই যন্ত্রণার
অবসান কবে, কোন নিয়তি দুয়ারে, তল্লাটে?”

বললুম, “যে-পাপ হাড়েমজ্জায়-গাগতরে
কী করে ঢাকবে প্রকাশ্যে, গহ্বরে?

‘দিনগুলো হিসেব নিচ্ছে কড়ায়গণ্ডায়-পাল্লাতে’

 

আম্ফান

দুর্গত এলাকা, ধ্বংসস্তূপে মুখগুলি।
কখন কীভাবে শুরু, সবই বাহুল্য এখন

ছিল অশনি সংকেত, ছিল গগনময় গোধূলি
ছিল নিসর্গবিদ্বেষী রাজনীতিবিদ, মহাজন

যে-মানুষ কৃষকশ্রমিক, সমূলে নিশ্চিহ্ন আজ
দিগন্তবিস্তৃত শ্মশানকবর, শৃগালহায়েনাশকুন উধাও

যারা ছিল রাজাধিরাজ ডাকাত-বরকন্দাজ
কোথায় গিয়েছে, কোথায় তথাকথিত দেবতাও?

স্তরে-স্তরে

আজ বেঁচে আছি, কালকের কথা বলা অসম্ভব।
জীবে দয়া নেই আর, মায়ার জগতে শুধু শোক

প্রকৃতি মেতেছে প্রতিশোধে, ঘাটেবাটে নাচে মহামারী, শব।
কী করে এই দুর্যোগ? ছিন্নমস্তাও বলতে অপারগ

আসন্ন ধ্বংসের লীলা শূন্যের গহ্বরে?
কে পাতক কে শ্মশানযাত্রী অমানিশার কুটিল স্তরে-স্তরে?

আমরা

ঘরবন্দি, ক্রমশ কাহিল।
সবই বিষাদে আচ্ছন্ন।
এদেশে দুর্ভিক্ষ প্রতিদিন, শকুন ও চিল
চক্রাকারে, চেতনেঅচেতনে দুঃস্বপ্ন

আমরা বুভুক্ষু, আমরা সাহায্যপ্রার্থী
আমাদের চিৎকার, আমাদের ক্রন্দন
আমাদের কাতরতা-আর্তি
শুনছে না কেউ, অরণ্যে রোদন।

[এপ্রিল-মে ২০২০, বার্লিন, জার্মানি।]

 

দাউদ হায়দার। বিপ্লবী কবি। জন্ম বাংলাদেশের পাবনা জেলায়। ইসলামি মৌলবাদীদের হুমকী ও সরকারের মামলার কারণে তাঁকে ১৯৭৪ সালে দেশত্যাগ করানো হয়। বর্তমানে তিনি জার্মানিতে নির্বাসিত। প্রকাশিত বই: কাব্যগ্রন্থ: 'জন্মই আমার আজন্ম পাপ', প্রথম প্রকাশঃ নভেম্বর, ১৯৭৩, প্রকাশকঃ প্রগতি প্রকাশনী, ঢাকা। প্রচ্ছদ শিল্পীঃ...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..

ফ্রেম

ফ্রেম

দেবী না পরিণীতা রাতটা একা থাকে এবং নিঃসঙ্গ অন্ধকার মানে রাত; তাহলে অন্ধকার নিজেও একা…..