প্রক্সি
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
“মাম শোন, তাড়াতাড়ি ডেইলি নিডস গুলো কিনে রাখো। আমি চাল, ডাল, সয়াবিন, তেল, তিনকেজি পেঁয়াজ, আদা সব কিনে রেখেছি। পাঁচটা লাইটার, পনের প্যাক সিগারেট সব মজুত করেছি। তুমিও করো তাড়াতাড়ি।”
ফোনের ওধারে উত্তেজিত ছুটি। এমনিতেই ও ফাস্ট কথা বলে। টরাস, বুধের জাতক!
“হ্যাঁ কিনতে হবে, দেখি …”
গলার আলসেমি ধরে ফেলে ক্ষেপে যায়।
গল্পের অডিও শুনুন এখানে:
“তোমাদের এই বুড়ো-বুড়িদের নিয়ে পারা যায়না! যা ইচ্ছে করো, পরে বলতে আসবেনা একদম!”
জীবনে কাউকে ভয় পেতে হবে ভাবিনি! সুতোটায় একটা টান অনুভব করি।
“জানো এখানে দোকানে একটাই মাত্র হ্যান্ড স্যানিটাইজার পড়ে ছিল, তুলে এনেছি।”
“টিস্যুপেপার এনো…”
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই “সে এনে রেখেছি আগেই।”
হ্যাঁ তিন প্যাক স্টাফও স্কোর করেছি, আর বাইরে বেরোতে হবেনা। আগে যেমন বন্ধুদের বিলোতাম, এখন হবেনা, বলে দেবো।”
হাসি গোপন করে সায় দিলাম, হ্যাঁ, তো কতদিন চলবে কিছুতো বোঝা যাচ্ছেনা!
ও এই প্রথম একাএকা নিজেকে সামলাচ্ছে। যদিও কলেজলাইফ হোস্টেলে কেটেছে। তবু জব করতে এসে নিজেকে গুছিয়ে নিতে পারার চ্যালেঞ্জটা নিতে পেরে খুশি।
ছুটি এখন এক সাগরপাড়ের শহরে থাকে। একটা গ্লোবাল ভিলেজ, যেখানে কমিউনিজম মডেল ইমপ্লিমেন্টেড।
“কিউ, কিয়া হুয়া?”
“করোনা ভাইরাস ম্যাম”। রাজীব হাসে। ওর কাঠের সিগারেট ঘুমটিতে বসে।
“কিউ মজাক কর রাহেহো, লাইটার কো করোনা ভাইরাস, দেখ, দেখ এক দো তো মিল জায়েগি”। আমি আশাবাদী।
“ওহি তো বল রহি হুঁ ম্যম, লাইটার তো চীন সে অতি হ্যায় না?”
এবার হুস ফেরে। চীনের তো ফিফটি পার্সেন্ট প্রডাকশন বন্ধ।
তো লাইটার কেন, ওসিবিসহ অনেক কিছু হাওয়া। হাফ খালি। দেশলাই প্যাকেট ‘ভাগ্যিস’ পেয়ে যাওয়ায় উঠিয়ে নিলাম দুটো বড়ো।
এই যে একেই বলে পেটে লাথি পড়া! কাল ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের হাফ খালি দশা দেখে ভেবেছিলাম গাড়ি আসেনি হবে কোন কারণে।
আজ আরো ফাঁকা।
দোকানের ছেলেগুলোর মুখে মাস্ক, কাল ছিল না।
সফলের স্টলের ছেলেটা অভয় দিয়ে বললো যে ছয়মাস অ্যাটলিস্ট খাওয়ানোর মতো মজুদ নাকি আছে।
“সুবহেসে অটো চালা রাহে হো, টু হান্ড্রেডকা খুল্লা নেহি হোগা? দেখ দেখো…”
“কিয়া সুবহে সে ম্যাম, সওয়ারি কিধার, আপ হি পহেলা…”
আমাদের কথপোকথন হয়েছিল। বিকেল চারটে ছিল সময়!
“আরে তোমরা এখনো কাজে আসছো?”
চার-পাঁচজন ‘বাঙালি কাজের মেয়ে’র সাথে দেখা।
হ্যাঁ দিদি, কাল থেকে আর আসা লাগবিনা, ছুটি দিয়ে দিছে। বেশ খুশি, সবাই কলকলিয়ে ওঠে।
“ভালো, সাবধানে থেকো সব। জানো তো করোনা ভাইরাস…”
অনেক বাঙালি কাজের মেয়ের সাথেই আমার কথা হয়। এখানে আশি পার্সেন্ট বাঙালি মেয়ে। বেশিরভাগ ওপার বাঙলা থেকে আসা। যেমন বাঙলায়ই হোক কানে মধু ঢালে! এ পরবাসে।
“ওই কাপুরের বৌডা কি হারামী জানিসনা, শাউড়িডারে একদম দেখতি পারে না, ইচ্ছা করে ধরে দিই খুব!”
ওরা কাজের ফাঁকে ফাঁকে সময় আ্যডজাস্ট করতে আ্যপারটমেন্টের ভেতরেই গ্রুপে বসে গল্প করে সময় কাটায়।
পথ চলতি হঠাৎ এমন পিওর বাঙালিআনার নিদর্শন পেয়ে জোরে হেসে উঠি। ওরা নিশ্চিত ছিল ওদের ভাষা এখানে কেউ বুঝছেনা।
এবং তারপর থেকেই।
দলের মধ্যে শেফালী একটু বাচাল। “দিদি করুনাতো ভালো গো!”
আমি একটু রেগে যাই প্রথমে বা বোকামিতে, বুঝি আমার আরো কিছু বোঝানোর বাকি আছে, তো নতুন উদ্যমে ফিরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে “ভালো, কেন, কি করে? তোমাদের নিয়ে না…”
আমায় শেষ করতে না দিয়েই
“এই গত মাসেও আমার তিনদিনের পয়সা কেটেছে মিশ্রার বউ, পয়সা থাকলি কি হবে ছোটলোকগো। এবার পুরো পয়সা দেবে, কমিটি বলে দিছে”! শেফালী হাসে।
এরা সবাই ভালো আছে, স্বাবলম্বী হওয়ার আনন্দে।
সবিতা তার কাপড়ের থলে থেকে কিছু বের করে “এই কটা থানকুনি পাতা তুমি রাখো দিদি, আমার ঐ ছ’শো পঁয়ষট্টি নম্বর ভাবীজির জন্যে এনেছিলাম।”
এর পর আর কথা হয়না!
“আরে কেমন আছেন?” ওয়েলকামের ভঙ্গীতে।
সুইমিং পুলের পাশের চত্বর দিয়ে যাওয়ার পথে হঠাৎ যেন উদয় হলো শুভাশীষ। অনেকদিন পরে দেখা।
(না হাত বাড়ায় নি সে)
“হা হা হা, একদম, অনেকদিন পর দেখছি, হা হা হা “
আমি।
না বাইরে কেউ নেই, স্কুল ছুটি হলেও বাচ্চারা, বুড়োরা সব উধাও। মাঝে মাঝে মুখে মাস্ক লাগানো সাফাই কর্মী ও সিকিউরিটি গার্ড চলতে ফিরতে দেখা যাচ্ছে মাত্র।
শুভাশীষ এখন এই সোসাইটির সেক্রেটারি। অনেক ল্যাঙ লাথির ব্যাপার থাকে। তো এলেম লাগে। এখানে মোটামুটি সব বাঙালিরাই তাদের বোমকেশ বোকসীয়ো সহজাত গুণের কারণে সব বাঙালিকে চেনে। নজরেও রাখে! সে বোতলের বন্ধু হোক বা না হোক।
তো শুভাশীষ আমাকে দেখলেই বেশ স্মার্ট হয়ে ওঠে লক্ষ্য করেছি। আজ একটু বেশিই।
“জানেন আজ সিগারেটের দোকানে একজন সিগারেট নেওয়ার সময় ছেলেটাকে বলেছে, আমি নিজে তুলে নেবো, তুই হাত লাগাবি না, তো ছেলেটা বুঝতে পারেনি, ও হাত দিয়ে সিগারেট ধরেছে দেখে এক থাপ্পড় মেরে দিয়েছে! কি প্যানিকড হয়ে গেছে মানুষ!”
ও তাই, কি কাণ্ড, মাই গার্ড সব বললাম।
“কোন কেস কি এখানে কোথাও পাওয়া গেছে? “আমার কোয়ারি শুনছিলাম তো একটা…”
“শুনছিলাম তো একটা…”
শুভাশীষ একটু হোঁচট খায়।
এখন যে অনেক রিউমার রটবে এবং সাবধান থাকতে হবে। আর আমাদের যে অর্ধশিক্ষিতের দেশ, সেখানে কোন কনক্লুশনে আশা যাবেনা কনক্লুশনে আসলাম ও সহমত হলাম।
সাবধানে থাকবেন, বলা হলো। দু’সাইড থেকেই।
‘কি নামে সেভ করবো?”
“বলছিলাম কি, এই সময় ফোন নম্বর এক্সচেঞ্জ কি ভালো কথা?”
হো হো করে হেসে উঠলো শুভাশীষ, আশ্চর্য, ও আমার হিউমারটা বুঝলো!
“নন্দিনী ‘
অনেকদিন এই পার্কটাতে ঢোকা হয়না, যদিও মিস করি খুব। কয়েকদিন আগে ট্রাই করে সুবিধা হয়নি। ফুটবল ক্রিকেট খেলায় ব্যস্ত থাকে।
আজ একদম ফাঁকা। আমি আর অনেকখানি একান্ত সবুজ, নির্জনতা! যেন গিফটেড মোমেন্ট।
ঘরের ভেতর কেমন হাঁফ ধরে যায়। পড়া, মুভি দেখা, গান, ঝগড়া কিছুই পোষাচ্ছেনা!
না একদম একা যুধিষ্ঠির ভি হতে পারে নি।
তো একটা ব্রাউন রঙের কুকুর পাহারায় স্বদায়িত্বে।
হঠাৎ ওর চিৎকার করে ছুটে যাওয়ায় ধ্যান ফেরে।
পার্কে একটা হনুমান ঢুকেছে। তাকে তাড়া করেছে কুকুরটা।
হনুমানটা রেলিং এ উঠে পড়ে। একটু বসার চেষ্টা করে। আমি এগিয়ে যাই। ওর পায়ে কাটা দাগ, রক্ত লেগে, ঘাও আছে। বোঝা গেল অসুস্থ। কুকুরটা নিচে থেকে ঘেউ ঘেউ করে ভয় দেখানো অব্যাহত রাখলো।
সে কি ম্যায় হুঁ ডন জোশ! বেচারা হনুমান উল্টোদিকে নেমে চলে গেল।
কয়েক মুহূর্ত।
জানিনা, কেমন যেন মনে খারাপ হলো বেশ। হনুমানটা একলা জঙ্গল ছেড়ে শহরে কেন?
কুকুরটা কি করোনা ভাইরাসের নাম জানে, রূপ দার্শনিকতায় উপনীত হওয়ার প্রাকমুহূর্তে ছুটির ফোন।
“মাম কোথায় তুমি? একদম বাইরে যাবেনা কিন্তু।
আমি তোমার যা লাগবে গ্রোফারস বা বিগ বাস্কেটে অর্ডার করে দেব।
দাঁড়াও তোমায় ভিডিও কল করছি।”
“এই সোনা, আমি চায়ের জল বসিয়েছি, জাস্ট টু মিনিটস…”
প্রায় দৌড় শুরু করি, দেড়মিনিটে পৌঁছতে হবে…
ছুটি একটা সাগরপাড়ের শহরে থাকে।
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..