দীর্ঘশ্বাস
ভালো নেই ভালো নেই ধূসর সন্ধ্যা বিষণ্ন বিকেল, চারিপাশ ভালো নেই কফির কাপ পথের ধুলো…..
এই যে বেদনারহিত সকাল
এই আলোময় দিনের শুরু
আমাকে আশা জাগায়
যে মানুষটা ভোরে উঠে উনুনে আগুন দেয়
চায়ের জল বসায় সারাদিনের মত
যে মাজাভাঙা বৃদ্ধা বেওয়া
কটা শাকপাতা নিয়ে সবজির ট্রেন ধরে
এরা সবাই আমার আশেপাশে ঘোরে
আমাকে জীবন দেখায়
চেটেপুটে খেয়ে নিই এই অনিঃশেষ
জীবনের দান
তারপর যখন সন্ধ্যা নামে রাত্রি
ক্লান্ত পাঁজরে দাঁড় টানে অভুক্ত মানুষ
ফুটপাত ভরে যায় অনালোকিত জ্যোৎস্নায়
আমার সভ্যতা তখন মুখ লুকোয় শতচ্ছিন্ন কাঁথায়…
আলোকিত অন্ধকার থেকে যে মেঘ উড়ে গেল
জোনাকি ডানা আর ফসফরাস তার খোঁজ রাখে?
তল্লাশি শুরু করতেই বৃষ্টিধারা নেমে এল;
প্রাচীন শ্যাওলারা উল্লাসময় জলরেখা মেখে
গভীর সমুদ্রের দিকে যেতেই
বৃদ্ধনাবিক তার জলযাত্রা সমাপ্ত করল।
সমর্পণ ছাড়া পর্যটন হয় না, তা বোধহয় কলম্বাস আর ওই বৃদ্ধনাবিক বুঝে গিয়েছিল। তাই সরাইখানায় বসে তারা একটা আধুনিক জাহাজের রূপরেখা নির্মাণ করতে চাইল, যা উন্নয়নশীল ভারতে গতি আনতে পারে ।
কলম্বাসের নাতির নাতনিকে ওই বৃদ্ধ নাবিক তার মাস্তুল-জীবনের গল্প শোনাতেই দিগভোলা হল লাইট হাউস। তারারা সরে গেল দূরে
কম্পাস দাঁড়িয়ে পড়ল স্থির।
অথৈ প্রলম্বিত এক দীর্ঘশ্বাস সুচারু বিন্যাস ফিরে পেল।
আমি তাকে ফেলে আসি, আমি শুধু ছুঁড়ে দিই জলে
সমস্ত ঘাট যেন ডেকে ওঠে তাহার চিৎকারে।
আমি যাকে ঠেলে দেব আমি তাকে নিরাশ্রয় করি
সে শুধু ভাসতেই থাকে, বিপন্নতা অসহায়ে ধরি…
আমি তো পাষাণ বড়, আমি হই নিষ্ঠুর সর্বাধিক
তাহার জীবন যেন তছনছ অনিবার্য হোক মর্মান্তিক।
আমি শোধ তুলে নিয়ে তাকে শুধু ছেড়ে দিই মাঠে
রিক্তশূন্য হাড়ভাঙা জীবনকে খুঁজে নিক পোড়াকাঠে।
হা-হা হি-হি করে অঙ্গারও সর্বাংশে জ্বলে ওঠে দেখি
আমার ক্রোধের অগ্নি সপ্রতিভ, নয় তা একমাত্র মেকি।
সন্ত্রস্ত হাওয়া স্নানজল সেরে নেয় ; বিভাজিকায়
অদম্য বিন্দু কোন সংকেত রাখার আগে
নিরুচ্চার ভদ্রতা পাশ কাটায় ;
উত্তপ্ত দুপুর সঙ্গমের ইচ্ছে নিয়ে পায়ে পায়ে হাঁটে ;
যদি কিছু করে বসে তুমি তাকে ধর্ষণ বোল না l
এই প্রলম্বিত আতপ্ত যাত্রাপথ, খাঁ-খাঁ দীর্ঘশ্বাস
হাতে নেয় আদিম প্রবৃত্তি কোণাকোণি মগ্নতায় ;
তৈমুর খানের হ্রেষা পথের বিস্তার মাপে
লুণ্ঠন বলাৎকার হিংসা নিয়ে অধিকার ঝাঁপায়
তুমি তাকে অন্যায্য বলতে পার, অনভিপ্রেত না।
যা কিছু বৈকল্য সব মানবিক ঘাড়ে ; ত্রস্ততায় হাঁটে
ফেউ রাত্রিজাগা পিপাসার কাছে আবর্তিত সময়
চাহিদাপূরণ করে অন্তর্গত লিপ্সায় ;
আবহমানের ক্লেদ সঙ্গ চায়, প্রজনন বাড়াতে চায়
তুমি তাকে ভেসেকটমি/লাইগেশনের মন্ত্র শিখিও না।
ভালো নেই ভালো নেই ধূসর সন্ধ্যা বিষণ্ন বিকেল, চারিপাশ ভালো নেই কফির কাপ পথের ধুলো…..
প্রেমের কবিতা যা কিছু পাষাণ, মনে হয় আঁশ বটিতে কুচি-কুচি করে কাটি পালানো ঘাতক সময়…..
তর্জমা স্নানে শুচি হবার পর বেকসুর সন্ধ্যাগুলো শুধুমাত্র নিজস্ব অন্ধকারের নিচে দোলনাচেয়ারে ছড়িয়ে বসা কিছুটা…..
হয়তো একদিন অস্তিত্বে খুঁজে আত্মপরিচয় নিভৃতে অপেক্ষার প্রহরে এ মন ভালোবাসার রূপালী আলোয় রাঙা মুখ…..