কাগজের চোখ ও নীল পেরেক

এ কে এম আব্দুল্লাহ
ধারামুক্ত কবিতা
Bengali
কাগজের চোখ ও নীল পেরেক

কাগজের চোখ ও নীল পেরেক

মাঝে মাঝে কয়েক পঙক্তি ভালোবাসা— এটিএম থেকে ওঠে আসে আমার বুকপকেটে। আর তুমি জড়িয়ে রাখো আমাকে- তোমার বুকের উত্তাপমেশিনে।
যেখানে, দেওয়ালহিটারের উষ্ণতা বিলীন হয়ে যায়। আর আমাদের মুখ থেকে ঝরে পড়া লালায়— ওড়তে থাকে নতুন নোটের গন্ধ।
এরপর টেবিলের ওপর রাখা চেকবই থেকে ওঠে আসে লক্ষ লক্ষ মৌমাছি। আমাদের ঘিরে ধরে ফুলের মতো।আমারা লাল— হলুদ আর গোলাপি হতে থাকি।
এভাবে রাত শেষ হয়ে যায়। আর চামড়ার ভাঁজ করা পকেটকোষে পড়ে থাকে— মেয়াদ উত্তির্ণ কিছু পুরুকাগজের ফলক।

বাজেয়াপ্তজীবন ও মুদ্রিত স্ক্রিপ্ট

জিহবা নড়ে ওঠলে— জমিন রুপান্তরিত হতে থাকে চপিংবোর্ডে।সন্ধ্যা শেষে ফুলকপির মতো সেদ্ধ হতে থাকে মাথার কোষ— উনুনের জলে।তখন ইশারায় কিছু হাত উড়ে ফুলে ফুলে।অন্ধকার বাগানের গলি দিয়ে চোখ থেকে নেমে যায় ধারালো কিরিচ।
এরপর, পুকুরপারের নারকেল তলার শোক ভেঙ্গে— একদিন আমার মা-ও দাঁড়াবেন বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতায়। কথাগুলো কেউ মাইকিং করে বলে গেলে— আমাদের ফটিকের পুরোনো দেওয়াল থেকে ছুটে আসে —
টিকটিকির আওয়াজ। ঠিক ঠিক…
অত:পর, শতাব্দীর সিলিং ভেঙ্গে— চাল ছাড়া হাঁড়ির সেদ্ধ ধোঁয়ায়— ঢেকে যায় মায়ের ব্যাকুল মুখ।
আর আমি সেই শব্দের খুঁজে— শ্লোগান ভেঙ্গে আজও দেওয়ালের পাশে কান পেতে বসে রই। হাতে নিয়ে জীবনের কঙ্কর।

 

ব্যরিকেড ভেঙ্গে নামে যে বীজ

খেতের গলি দিয়ে চলে গেলে সূর্যদানা—জমিনের শরীর ঘষে নেমে আসে সন্ধ্যা।পৃথিবীর তলপেট নড়ে ওঠে। আর আমরা ভুলে যাই কান্নার স্বাদ এবং পবিত্রতা ঘুমিয়ে গেলে মৃত বালিশে। তুমি আমার বুকে মাথা রেখে হও স্বপ্নীল।
এরপর,তোমার নাভির পাশে কান পাতি। শুনি— শিশুর নিরাপদ হাসির ধ্বনি।আমি পুর্বপুরুষের পথে জমা ধুলো সরিয়ে তোমার চোখের দিকে তাকাই।দেখি— পৃথিবীর গলি ঘুঁজি আলোকিত করে আসছে আমাদের সন্তান। আর কমলাপুর রেলস্টেশন ছেয়ে যাচ্ছে কালিজিরা ঘ্রাণ।
এখন প্রতিটি রুপালী রাতে টের পাই— নিজেদের ভেতর জ্বলে ওঠছে নিজস্ব আগুন।

 

একটি ঘোরগ্রস্থ সময়ের ফটোকপি

আজকাল মধ্যমাসেই পকেট থেকে নেমে যায় পথের গন্তব্য।আর মাছবাজার পানিতে ডুবে যায়। আমাদের কিচিনের ছাদ থেকে টিপ টিপ করে ঝরে পেরেশানি। আমাদের উনুনে পুড়ে লোক দেখানো সভ্যতার চামড়া। আর আমরা লোডশেডিং এর মতো, হাতে হাত ধরে ধরে সাঁতার কাটি রাতের জলে।
আমরা ডাইনিং টেবিলে ধারহীন নাইফ দিয়ে সার্প করে দিই বাচ্চাদের কাঠপেন্সিল; ভিতর থেকে অঙ্কিত করলে হৃদয়ের স্ক্যাচ; পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে কেউ উল্টো করে ধরে ক্যানভাস। আমাদের মাথায় ভুমিকম্প হয়। আর আমাদের মুখ দিয়ে বের হতে থাকে সময়ের ফটোকপি।
অতপর রাত গভীর হলে অনেকেই আমাদের ঘিরে ধরে। শকুনেরমত ঠোঁটে ফিস ফিস করে আমাদের চরিত্র বিক্রির পরামর্শ দেয়। আর আমরা পুনরায় আত্মহত্যা করি।

সাদা কাপড়ে মোড়া নগ্ন পাঁজর

করোটি থেকে নেমে যাচ্ছে আলো। আর অন্ধকার তুলে রেখে চোখে; সংসারের সিঁড়ি ভেঙ্গে, হেঁটে হেঁটে যায় বুকের পাটাতন।
এরপর, বাজারের ব্যাগ থেকে পড়ে গেলে বাবার পকেট; মায়ের চোখে জ্বলে ওঠে উনুন। মধ্যাহ্নের শ্লোগানগুলো সেদ্ধ করে রাতের জীর্ণ হাত। পেটের ক্ষুধা তুলে রেখে কথার গোলায়; আমরা হাকিয়ে যাই- ভোরের পঙ্খিরাজ।
আমাদের চোখে জল, বুকে জল,ঘরে জল। তবুও এই জল ছুঁতে পারেনা আমার পঙ্খিরাজের খুর।
চৈত্রের ফাটা জমিনে, শামুকের শুকনো খোলসের মতো আটকে যাচ্ছে আয়ুর নাও। আর মায়ার গুন টানতে টানতে ক্লান্ত দেহ। এখন নিশ্বাসগুলো ক্যেমেরা ফ্লাসে চমকায়, স্যেত- স্যেতে বৈঠা কাঠের মতো।
আর চোখের পুষ্টিহীন দৃষ্টিতে বৃদ্ধ সংসারগুলো, আজও ভোরের কুলা থেকে কুড়োয় সময়ের কঙ্কর।

এ কে এম আব্দুল্লাহ। লেখক। জন্ম বাংলাদেশে, বর্তমান নিবাস যুক্তরাজ্যের লন্ডন। প্রকাশিত বই: 'ক্ষুধা ও সৌন্দর্য' (উপন্যাস)। এছাড়া সম্পাদনা করেছেন অণুগল্প সঙ্কলন 'শব্দবিন্দু'। ড.শ্যাম সুন্দর মেমোরিয়াল ট্রাস্ট, ভারত থেকে পেয়েছেন 'গোল্ড মেডেল এওয়ার্ড'।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ