দীর্ঘশ্বাস
ভালো নেই ভালো নেই ধূসর সন্ধ্যা বিষণ্ন বিকেল, চারিপাশ ভালো নেই কফির কাপ পথের ধুলো…..
(নির্বাচিত অংশ)
পৃথিবীটা গোল ব্যভিচার
অঝোর বৃষ্টির মতো
গুলির শৃঙ্গারে বেঁচে আছে
সহস্র বন্দুক, রাইফেল
এল এম জি, পিস্তল;
নারী তার জিঘাংসা-টার্গেট।
একদিন মংডুর সকালবেলা
কাত-হওয়া রাত্রির আরাম ভেঙে
এই সত্যে জেগে ওঠে
তৈয়বা বেগম, গুল বাহার, ওনূরা, ফাতুলিরা
কেবল দেহের মধ্যে যাদের দরিয়া ছিলো
ভূতল দোলানো ঢেউ – সমুদ্র পসার
তারা কেউ মরে গেছে, কাঠের ডিঙিতে ছায়া ফেলে
ভেসে গেছে পতিত যৌবন।
‘সম্পন্ন কৃষক মাঝি মৎস্যজীবী বা ক্ষুদে দোকানদার
আছড়ে পড়েছে অন্য দেশের রাস্তায়।’
আমাদের প্রেম তত্ত্ব
নীতির অকার্যকর বিশুষ্ক ফানুস
তিল তিল গড়ে-ওঠা মায়াসরঞ্জাম
আহ্ ওহ্ জীবন্ত প্রস্বরে
ভরে তোলে বেদম আকাশ।
এক নদী মুত্যুকে আগলে রেখে বুকের ওপর
অভুক্ত পূর্ণিমা জ¦ালে উদ্বাস্তু শিবির।
‘বিষাক্ত অঙ্কুশ; বুনো বেত্রাঘাত উড়ো বেদনার।
খা-বদাহন! আন্তঃবিলাপে রক্তিম
সকল হৃদয় আজ আরাকান।
উত্থিত হাতের প্রতিবাদে
আরাম বিতর্কে ঢুলো ঢুলো আমাদের জাতিসঙ্ঘ
শয়ে শয়ে মৃত্যুকে ভাবলো
হাসির ফোয়ারা;
ভাবলো নিষ্পন্ন শান্তি এক কাপ চায়ের চুমুক।
সেদিন সংকল্প-সন্ধ্যা; সালিপ্রাং গ্রামের সিথান
আগুনে পুড়ছে; আর মংনি পাড়ার শিশুর পুঞ্জ
দূরে মাঠে খেলছিলো।
পাগলির বিলের উদাত্ত ঘাস কেবল দেখলো
অবোধ বিকেল জুড়ে ক্ষুধার্ত আর্মির দাপাদাপি।
আতঙ্ক, বুলেট আর রাজহাঁসঘেরা
হাহাকার দৌড়োচ্ছে; মুঠোয়
জীবনের সবটুকু অবলীলা।
পেরাংপুরুর এক দুর্লভ শিক্ষক
নীতি ও স্বপ্নস্থ লীলা থেকে দূরে এসে
জেনেছে নিষিদ্ধ শ্লোকঃ
রোহিঙ্গাপুস্তকে আত্মহত্যা লেখা নেই।
আছে জন্ম সুগভীর, বিশ^স্ত সংসার
গৃহের সংহতি আর পীড়ন সহ্যের ফুটনোট।
কোথায় আশ্রয়? কোন নীলিম বিশ^াসে
নিজের স্বদেশ থেকে বিতাড়ন সহ্য হবে তার?
প্রসন্ন হত্যার দিনে
মোরগ ঝুঁটির মতো লাল অভিঘাত
তাকেও পোড়ায়;
জীবন-লঙ্ঘিত জ্ঞান
মিশেছে রক্তের ডামাডোলে:
গলা-কাটা নীরস্ত্র শহীদ শত শত
শ্রীমন্ত তন্দ্রায় খুব সামনে উদোম;
এইসব ভুলণ্ঠিত মাটির পুতুল
কাড়ি কাড়ি বিধ্বস্ত অতীত, স্বপ্ন আর
অনাথ কবর ফেলে গেলে
কোথায় যিশুর ত্যাগ?
জলাঞ্জলি ফুল ও অনন্ত রক্ত-বীণায় বাজবে?
সে-ও কি দৌড়ায়? সেই দুর্লভ প্রজ্ঞার
নিপীড়িত রক্তের পোষক?
অনঙ্গ বিলাপ, রুক্ষ রঙ্গন অথবা
আত্মস্থ মৃত্যুর অভিশাপে
ত্রস্ত অধিকার ভুলে যেতে হয়;
তখন জীবন মানে পায়ের হিসাব।
কয়লা চেতন আগুনের দিন
নিঃশেষ হবে না আর? প্রসঙ্গ বিলীন হবে নিষ্ফল সংলাপে?
রাতের নৈ:শব্দ্যে
ব্যাঙ ডাকে
টিনের চালে ঝিরি ঝিরি বর্ষার সিগন্যাল
আকাশ ভাঙলে পরে
প্রথম যৌবন-ভাঙা সঙ্গমের মতো
সাঁতরাবো,
গুমোট মেঘের মতো শুয়ে আছো কেন?
পেলব সমুদ্র হও।
শরীর মন্থনে জল পড়ে;
পাতা, তুমি কেন নড়বে না আজ?
বিনীত আমিও বলি, দাও সর্পসংহারের আকুল মন্ত্রণা; বুকভরা সব নিহিত কাঁটার উপশম। বৃক্ষের সুশান্ত মনোবীজ নিজের ভেতরে নিয়ে দেখলাম, সেখানেও রয়েছে কোটর; ছায়া শুধু নয়, দুর্লভ শঙ্কার হাতছানি। কখনো হরিৎ পাতা একটি বিছার জন্য খাদ্য সমরূপ; আলো দেখলে পতঙ্গ মৃত্যু মনে পড়ে। তাহলে কোটর,আলো, পাতা আসলে দংশন? কু-লিত ফণার বিহিত? ছোবল-শস্যের কাছে চিরদিন মাথা নত মানুষের?
অমোঘ ওঝার মতো আমি শুধু বশ-করা একটি রাত্রিকে কামনা করেছি রোজ নির্মেদ সময়ে জার জার প্রার্থনায়। ও স্বাতী নক্ষত্র, সৌর সৃষ্টিকে তাহলে বলো আমাকে ভিজাক
লাল বেদেনীর মতো- যে আমাকে শেখাবে কুহক, রক্তখঞ্জরের মতো ঢুকে যাবে ভেতরে আমার- প্রমোদ পদ্মিনী হয়ে প্রতিদিন আমূল বর্ষায়। বাসনা মন্দির খুলে দিলে কখন সফল হয় শৃঙ্গার? মধুর উপাসনা?
ভালো নেই ভালো নেই ধূসর সন্ধ্যা বিষণ্ন বিকেল, চারিপাশ ভালো নেই কফির কাপ পথের ধুলো…..
প্রেমের কবিতা যা কিছু পাষাণ, মনে হয় আঁশ বটিতে কুচি-কুচি করে কাটি পালানো ঘাতক সময়…..
তর্জমা স্নানে শুচি হবার পর বেকসুর সন্ধ্যাগুলো শুধুমাত্র নিজস্ব অন্ধকারের নিচে দোলনাচেয়ারে ছড়িয়ে বসা কিছুটা…..
হয়তো একদিন অস্তিত্বে খুঁজে আত্মপরিচয় নিভৃতে অপেক্ষার প্রহরে এ মন ভালোবাসার রূপালী আলোয় রাঙা মুখ…..