কান্না

ফিরোজ আখতার
অণুগল্প
Bengali
কান্না

সন্ধ্যে ছ’টার লালগোলা প্যাসেঞ্জার ধীরে ধীরে পলাশী স্টেশনে ঢুকছে । স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছোটছোট ঝুপড়ি দোকানগুলিতে হঠাৎ ব্যস্ততা লক্ষ্য করা গেলো । ট্রেনটা এখানে মিনিট দশেক দাঁড়াবে । পুরি-সব্জির দোকানের মালিক কমলদা মিনিট পাঁচেক আগে থেকেই পুরিগুলো ভাজতে শুরু করেছিল । বড়ো সরপোশে ঢিবি করে রাখা পুরিগুলো অবশ্য এই দশ মিনিটেই নিঃশেষ হয়ে যাবে । তিনটে করে পুরি আর সাথে এক হাতা আলু-ঘুঘনির সব্জি । তাই চেটেপুঁছে খাবে ট্রেনের প্যাসেঞ্জাররা দশ টাকা দিয়ে । তারপর পাশের মিত্তিরদার চায়ের দোকান থেকে গরম গরম চা, সাথে কেউ কেউ সিগারেটও ধরাবেন । মোট কথা, ট্রেনগুলো টাকা বহন করে নিয়ে আসে স্টেশনের ঝুপড়ি দোকান মালিকদের জন্য ।
ট্রেনটা থামতেই ধীরে ধীরে প্যাসেঞ্জাররা নেমে এদিক-ওদিক ছড়িয়েছিটিয়ে খেতে লাগলো । প্ল্যাটফর্মের এককোণায় আধোঅন্ধকারে বসেছিল দুটি মেয়ে । বয়স পঁচিশ থেকে তিরিশের মধ্যেই হবে দু’জনার । মলিন ও অপরিষ্কার শাড়ি পরনে আর একজনের কোলে একটা বছর দুয়েকের বাচ্চা । পাশেরজনের বয়স একটু কম । সে’ই বলে উঠল-

-‘কিরে, ট্রেন তো ছেড়ে দেবে একটু পরে, যাবি না বাতাসি ?’

-‘তু যা…’

-‘দে তোর বাচ্চাটা ’ ।

ঘুমোচ্ছিল বছর দুয়েকের বাচ্চাটি । টান পড়ায় হঠাৎ কেঁদে উঠলো । সেই সঙ্গে পাছায় একটা জোরসে চিমটি কাটল মেয়েটি । কান্নার জোর বেড়ে গেলো তাতে । দু’চোখেই পিঁচুটি ভর্তি আর নাক দিয়ে সর্দি গড়িয়ে পড়ছে । গায়ে পাতলা একটা জামা । পেটটা জল জমে ফুলে আছে, পাঁজরের সবকটা হাড় গোনা যাচ্ছে । এবার বাচ্চাটাকে নিয়ে ট্রেনের শেষপ্রান্ত থেকে শুরু করলো সে । প্রত্যেক জানলার পাশে গিয়ে নিঃশব্দে হাত পাতলো – বাচ্চাটা সমানভাবে কেঁদে যাচ্ছে । কেউ কেউ বিরক্তি আর ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিলো । আর কেউ কেউ দু’চার টাকা দিল । একটু পরেই সিগন্যাল হয়ে গেলো । প্যাসেঞ্জাররাও ট্রেনে উঠে যে যার জায়গা দখল করে বসে গেলো ।

-‘নে তোর ছেলেকে, চুপ করা । তোর ছেলেটা বাঁচবে না রে…’ ।

-‘কত হল’ ?

-‘দু’টাকা কম পঞ্চাশ । আজকের মত চলে যাবে, চল’ । বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে উঠে পড়লো বাতাসি । তারপর ধীরে ধীরে আধো অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে মিলিয়ে গেলো দুটি ছায়াশরীর । শুধু কান্নার কচি কন্ঠের ঢেউ প্ল্যাটফর্মের বাতাসে ধ্বনিত হতে লাগলো ।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

সস্তা

সস্তা

পরম প্রাপ্তি বাসস্টপেজেই  অতনুর বাড়ি। রাত বাড়লে বাসস্টপেজ একটা আমোদের জায়গা হয়ে যায়। অন্ধকারে শুয়ে…..