করাচিতে নজরুল
করাচি বন্দরে এককালে গ্রিক-পারসিক-আরবীয় সওদাগরেরা নোঙ্গর করেছে; অনেক স্থাপত্য চিহ্ন আজো রয়ে গেছে; যা…..
নারী কি কোনো অযৌন প্রাণি? সম্প্রতি বাংলাদেশের কিছু নারীবাদীদের ব্যাখ্যায় অন্তত তাই মনে হয়। নারীদের শরীর নিয়ে কোন লেখা হলেই তা নিয়ে শুরু হয় কথা বলা। যেমন এবার বইমেলায় মারজুক রাসেলের কবিতার বই নিয়ে কথা হচ্ছে। তার কাব্যের ভাষা, নারীর শরীর নিয়ে তার বলা, যা কিনা নারী বিদ্বেষের জায়গা থেকে দেখছেন তারা। এ আলোচনায় আসার আগে বইমেলা প্রসঙ্গ আসি। আচ্ছা বইমেলায় বই বের হতে হবে, তবেই আলোচনা হবে, তবেই লেখক হবেন, এমন ন্যারেটিভটা কে দাঁড় করিয়েছে। বইমেলা আসলেই বইয়ের রিভিউয়ের মিছিল শুরু হয় মাধ্যমগুলিতে। সারাবছর খোঁজ নেই বইয়ের! তবে কি বই এখন মেলার খই-বাতাসা, মুড়ি-মোয়া। যা মেলা এলেই মনে পড়ে। সারাবছর পিৎজা-বার্গার বৈশাখ এলেই পান্তাভাত। আমাদের সাহিত্য কি পান্তাভাত? আশ্চর্য।
নারীবাদ আসলে কী। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীকে যে শক্তিহীন হিসাবে অবজ্ঞা করা হয় তা থেকে বের হওয়ার প্রবণতাই হলো নারীবাদ। এই নারীবাদ আজকের সৃষ্টি নয়। শক্তিময়ী দুর্গার কল্পনাও সেই নারীবাদেরই ফসল। বাংলাদেশের না বুঝে হয়ে উঠা নারীবাদীরা মনে করেন, তারাই বোধহয় নারীবাদের আবিষ্কারক। নারে ভাই, দুর্গতিনাশিনী দুর্গা নারীবাদেরই প্রতিমূর্তি। বিচারালয়ে চোখবাঁধা নারীর মূর্তিও তাই। প্রতিটি যুগেই মহাপুরুষেরা নারীকে সামাজিক ভাবে মানুষ হিসাবে প্রমানিত করতেই নারীকে প্রমোট করেছেন, প্রকাশ্য করেছেন, বলতে চেয়েছেন, নারীরাও মানুষ এবং কোনো ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়েও বেশি। অথচ আমাদের দেশের নারীবাদ মানেই পুরুষ সাজতে চাওয়া। পুরুষের সমান হওয়া। সে কারণেই আমি বারবার বলি, নারীদের মানুষ হতে। পুরুষ হতে নয়। কারণ পুরুষেরাও কখনো কখনো মানুষ হয় না।
আপনি একজন পুরুষ, কিন্তু আপনার সাহিত্যে নারীদের শরীর নিয়ে কথা বলা যাবে না, তাহলে সব অশুচি হয়ে যাবে। শুচিতার এই সংজ্ঞা কারা দিয়েছে। উত্তর, হালের নারীবাদীরা। মারজুক রাসেলের কবিতায় সাধারণ মানুষের কথ্য কিছু শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। ‘স্তন’ শব্দটি আমরা হরহামেশায় লেখার ক্ষেত্রে ব্যবহার করি। একে আমরা ভাষার ভদ্রতা হিসাবে আখ্যা দিই। এর ব্যতিক্রম হলেই অচ্ছ্যুৎ কিংবা নারীবিদ্বেষী। একজন রিকশাওয়ালার বয়ানে যদি আমি লিখতে যাই তবে? রিকশাওয়ালা শব্দ হিসাবে ‘স্তন’ ব্যবহার করে, নাকি বলে ‘দুধ’। আমাদের অঞ্চলে বলে ‘বুনি’। যদি রিকশাওয়ালার বয়ানেই লিখতে হয় তবে সৎ লেখক হিসাবে আমাকে ব্যবহার করতে হবে ‘দুধ’ অথবা ‘বুনি’। ‘স্তন’ এমন শব্দের বিকল্প কখনোই হতে পারে না। অথচ আমাদের আজব নারীবাদীরা এমন ব্যবহারকেই অপমান হিসাবে দেখছেন। পুরষতান্ত্রিক হিসাবে দেখছেন। আমাদের গ্রামীণ সমাজ বা একটা শ্রেণির নারীরাও ওই এক শব্দই ব্যবহার করে। তারাও বলে, ‘দুধ’ অথবা ‘বুনি’। এতে কোনো নারী বিদ্বেষ নেই রয়েছে সহজতা অথবা আঞ্চলিকতা। আমাদের মধ্যবিত্ত সমাজের কথাই বলি। কতজন আছেন যারা ‘নিতম্ব’ শব্দটি ব্যবহার করেন, কেউ করেন না। কারো তো শব্দটিই জানা নেই। সবাই বলেন, ‘পাছা’। সুতরাং মধ্যবিত্তের বয়ানে যদি নারীর পশ্চাতদেশের কথা বলতে হয় তবে ‘পাছা’ ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। আর এমন ব্যবহার কোনভাবেই নারীবিদ্বেষ নয় বরং উল্টোটা। ‘পাছা’ শব্দটি নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়, বলতে পারেন লিঙ্গ-নিরপেক্ষ শব্দ। ধর্ম-নিরপেক্ষ হিসাবে স্ব-ঘোষিত কতক মানুষও নিরপেক্ষতার প্রশ্নে এমন টার্ম ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে সেক্ষেত্রেরও অনেক কিছু সহজ হয়ে যাবে। শব্দের ক্ষেত্রে ‘নিতম্ব’ ব্যবহার হয় মূলত নারীর ক্ষেত্রে। ‘সোকল্ড’ ভদ্র সাহিত্যে এমনটাই হয়। সুতরাং ‘পাছা’কে বিদ্বেষ ভাবলে ভদ্র সাহিত্যটাই মূল নারী বিদ্বেষী হয়ে পড়ে। সে অর্থে আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতির খোল-নলচেটা পাল্টে ফেলতে হয়। সাথে পদাবলীটাও বর্জন করতে হয়।
অনেকে বলবেন, লেখার নিজস্ব কিছু ভাষা রয়েছে। হ্যাঁ, রয়েছে। কিন্তু আপনি যখন সাধারণ মানুষের বয়ানে যাবেন, তখন আপনাকে সাধারণ মানুষের ভাষাতেই কথা বলতে হবে, আপনাকে ‘ঘটি’ হলে চলবে না, আপনাকে ‘বাঙাল’ হতে হবে। ‘মাগী’ শব্দটা উঁচু তলার সমাজে অচল হলেও, নিচের সমাজে অর্থাৎ মাটিঘেষা সমাজে সচল। সেখানের নারীরাও অন্যের কথা বলতে গিয়ে ‘মাগী’ শব্দটার ব্যবহার করে। হতে পারে সেটা ঝগড়ায় বা কথকতায়। সুতরাং ‘মাগী’ শব্দের মধ্যেও কোনো নারীবিদ্বেষ নেই। ‘মেয়েরা কোন কাজের নয়’ এ কথা বলা যতটা নারীবিদ্বেষী তার উল্টো হলো, ‘ওই মাগী কামে যা’। এ কথা মেয়েরা যে কাজ-কর্মের উপযুক্ত তারই প্রমান। অবশ্য আমাদের দেশের লিপিস্টিক ঠাসা ঠোঁটের নারীবাদীরা এসব বুঝবেন না। তৃতীয়লিঙ্গসম পুরুষ নারীবাদীরাও নয়। না, আবার লাফ দিয়ে উঠবেন না। এখানে তৃতীয়লিঙ্গের মানুষদের ছোট করা হয়নি। বলা হয়েছে, তারা তৃতীয়লিঙ্গেরও হয়ে উঠতে পারেননি, সেই ব্যর্থতার কথা।
বেশ আগে একটা লিখা ছিলো আমার। সে লেখাতেও বলেছি এমন কথা। নারী দিবসকে ঘিরে আমাদের কিছু নারীবাদীর চালচিত্র নিয়ে ছিলো লেখাটি। নারীবাদ নিয়ে ‘বিপ্লবী বিক্ষোভ আর মানবন্ধনে’ লিপিস্টিক আর মেকাপ চর্চিত ঠোঁট-মুখের লাস্যময়ীদের সেলফি তোলা নিয়ে প্রশ্ন ছিলো সে লেখায়। যে কোনো প্রতিবাদ মন-মনন থেকে উঠে আসা কিনা তার প্রমান দেয় বডি ল্যাঙ্গুয়েজ। শরীরে ভাষাটাই প্রকৃত ভাষা। ঠোঁট আর জিহ্বা মিথ্যা বলে কিন্তু চোখ বা শরীর নয়। নারীবাদ তেমনি কোনো ঠোঁট বা জিহ্বার ভাষা নয়, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ। ভালোবাসাও প্রমান করে শারীরিক ভাষা, বিদ্বেষটাও।
শরীর ব্যাপারটা অস্বীকার করার কোনো জো নেই। নারীদের সাথে বিছানা ভাগ করতে সব পুরুষই চায়। কেন চায়, এমন প্রশ্নের জবাব রয়েছে প্রকৃতির কাছে। যৌনতার আলাদা ধরণ সৃষ্টি করা মানুষের কাজ নয়। মানুষেরা তাদের নারী পুরুষ দুই ভাগে ভাগ করেনি, করেছে প্রকৃতি। সুতরাং পুরুষরা নারীদের বিছানায় চাবে তাদের ধরণে এবং নারীরা পুরুষদের চাবে তাদের মতো করে। চাওয়াটা একই তবে প্রকাশভঙ্গিটা আলাদা। এই চাওয়ার মধ্যে কোনো অস্বাভাবিকতা নেই। এই চাওয়ার লিখিত রূপটাও মারজুক রাসেল করবে তার মত। আবার কেউ কেউ করবে ঠাকুরীয় যুগের মতন। কিংবা পদাবলীর ভাষায়, ‘প্রতি অঙ্গ লাগি কাঁদে প্রতি অঙ্গ মোর।। হিয়ার পরশ লাগি হিয়া মোর কাঁদে। পরাণ পিরীতি লাগি থির নাহি বাঁধে।। সই কি আর বলিব। যে পুনি কর্যাছি মনে সেই সে করিব।।ধ্রু।। দেখিতে যে সুখ উঠে কি বলিব তা। দরশপরশ লাগি আউলাইছে গা।’ ভাষাকেই যদি নারীবিদ্বেষের পরিমাপক ধরা হয়, তবে ‘পদাবলী’র এমন ভাষা থেকে নারীবিদ্বেষী আর কি আছে!
যারা নারীবাদ বলতে নারীকে অযৌন প্রাণি বানাতে চান, নারীর শরীরকে অস্বীকার করেন তারা করতে পারেন। আবার যারা নারীর শরীরের স্বাধীনতাকেই নারীবাদ হিসাবে আখ্যায়িত করতে চান তারাও করতে পারেন। অনেকেইতো জরায়ুর স্বাধীনতাকেই নারীবাদ হিসাবে বোঝেন। তারাই আবার মারজুক রাসেলের উপর খেপে যান, ‘দুধ’, ‘চোদা’, ‘মাগী’ এসব শব্দের ব্যবহারের জন্য। নিজের ভেতর জমিয়ে রাখা দ্বন্দ্ব নিয়ে অন্যের দ্বন্দ্বের সমালোচনা করেন তারা। নিজের স্বরূপ যারা চিনেন না, নিজেদের চিন্তার দুর্বলতা যারা কাটিয়ে উঠতে পারেননি, তারা যখন নারী বা যেকোন ‘বাদ’ তথা ‘ইজম’ এর বিষয়ে কথা বলতে চান, তখন তার রূপ আরো বিকৃত হয়ে উঠে, স্ববিরোধী হয়ে উঠে।
নারীকে যৌন প্রাণি হিসাবে মেনে নেয়া মানেই ‘পতিতা’ বানানো নয়। বিপরীতে ‘জরায়ুর স্বাধীনতা’ চাওয়া মানেই নারীবাদ নয়। দুটো বক্তব্যই নারীবাদের বিরোধী। নারীবাদের কাজ নারীকে মানুষ বানানো, তার বা তার সাথে সম্মত যৌন কাজে বাধা প্রদান নয় বা তাকে উৎসাহ দেয়াও না। এ কথাগুলোই মাথামোটা কথিত নারীবাদীদের মাথায় ঢোকে না। একজন একবার বলেছিলেন, যৌনভুক পুরুষগুলো আর বিগতযৌবনা নারীরাই মূলত এদেশের কথিত নারীবাদী। তাদের মাথার মধ্যে যৌনতা থাকে বলেই, নারীবাদের মূল মেটারিয়াল তারা শরীরকেই ভাবেন। তাদের চিন্তা সেই শরীরকে কেন্দ্র করেই ঘুরপাক খায়। কখনো প্রতিবাদ করেন, কখনো বা সহযোগিতা। মূলত আজব আমাদের দেশের এই নারীবাদ ও কথিত নারীবাদীগণ।
করাচি বন্দরে এককালে গ্রিক-পারসিক-আরবীয় সওদাগরেরা নোঙ্গর করেছে; অনেক স্থাপত্য চিহ্ন আজো রয়ে গেছে; যা…..
তিনি বললেন, ভাষা হল ওষ্ঠের উপর সুধার মতো। আর বললেন, কবিতা যথেষ্ট স্বাদু, কিন্তু…..
রূপকথা পড়েছেন ছোট বেলায় অনেকে একথা আর বলা সন্দেহমুলক, প্রযুক্তির ব্যবহার জন্মের পর থেকে এখন …..
একটি পরাধীন দেশ আর তার বাসিন্দাদের মনে স্বাধীনতার আকুতি আমরা দেখেছিলাম ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে। এর…..