তদন্ত
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..
মেঘের পরের রূপটা ফুটিয়ে তুলেছিল গোধূলীর রামধনু। বাতাস থির হয়ে ছিল। গাছেদের দিকে তাকালে মনে হতো নিঝুম জপছে। দূরের ডাঙা থেকে কেউ একজন ফিরছিল। সম্ভবত রাখাল। কিন্তু তাড়া ছিল না। মেঠোর পাশের খালে ভেসালের উঠানামা দেখছিল-
কি মাছ পড়লো গো কাহা?
– ও পাশ থেকে মেছুয়া রা করলো না। ও কাহা- বড় কোন মাছ পড়লে কও, নিয়া যাই। নগদ টেহা দিমানি।
– মেছুয়া এবারও কোন রা না করে ভেসাল উঠাচ্ছে। এ পাশের মানুষটা কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিন্তু ভেসাল উঠানোর পর দেখা গেল, কিছু শামুক, আগাছা দু’চারটা ঝিনুক উঠে এসেছে, কোন মাছ নেই। মেছুয়া জোরে জোরে ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে ওগুলো আবার ফেলে দেয়। এ পাশের মানুষটি হাঁটতে থাকে আবার- অনেকটা তাইরে নাইরের ঢঙে।
পতনের চূড়ান্ত পর্যায়ে এখন গোধূলী। সন্ধ্যা তার সোনামুখী সুঁই দিয়ে রাতনকশি করবে বলে প্রস্তুতি নিচ্ছে। বেউড়বনের সমাবেত ঝিঁঝিঁর ডাকগুলো ধীরে ধীরে করুণ হয়ে উঠছে। আবার দু’চারটি করে জোনাক উড়তে শুরু করেছে। দূরের বিল থেকে কানাবগি, ডাহুক, আর মাছরাঙারা বনের দিকেই ছুটে আসছে। দীঘির ধারে সারি সারি তালগাছ- বাতাসে মৃদু শব্দ করছে তালের পাতারা। বাবুই বাসায় শোনা যাচ্ছে সন্ধ্যার শেষ কিচিরমিচির। এখনো দু’একটা চিল গুটিয়ে নেয়নি ডানা। মধ্যবিলে মাছধরা নৌকায় এখনো জ্বলে উঠেনি লণ্ঠনের আলো।
সন্ধ্যা আর একটু ভারি হলে শুরু হবে জাল ফেলা। তারপর রাতভর বসে থাকতে হবে। ফজরের আজানের ঠিক একটু আগেই উঠানো হবে জাল। খুব ভোরে ছুটতে হবে বাজারের উদ্দেশে। ভাল মাছ পেলে ডাক উঠবে। এখন মাছের বাজার চড়া। কেউ কেউ মাঝ পথ থেকেই মাছ কেনেন। তখন একটু ভাল দাম পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে আবার কিঞ্চিৎ সমস্যাও হয়, আড়তদার ভ্রু কুচকে থাকে, মুখে কিছু বলে না, কিন্তু পরের দিন মাছের দাম কম দেয়। এরকম সবার ক্ষেত্রেই হয়। তবু একটাই সুবিধা বিক্রির অপেক্ষায় এতগুলো মাছ নিয়ে বসে থাকতে হয় না। এরা আবার দলবেঁধে জাল পাতে, একটা দলে চার থেকে পাঁচজন থাকে। বিভিন্ন বয়সের হলেও সবার মধ্যে বন্ধুসুলভ আচরণই পরিলক্ষিত হয়। জিতেন সবার ছোট, ও খুব সুন্দর বাঁশি বাজাতে জানে। গানের গলাও বেশ।
কিসমত আলী সেই বিকেল থেকেই মাঠে বসে আছেন। বিড়বিড় করে কিছু একটা আওড়াচ্ছে।হতে পারে মেছুয়াদের জন্য কিছুটা দীর্ঘশ্বাস। অথবা, বাবুইদের প্রশংসাস্বরূপ দু’একটা বুলি। কিন্তু তার ভ্রুর দিকে তাকিয়ে এর কিছুই নির্ধারণ করা গেল না। কিছুক্ষণ পর পর ঘাড় ঘুরিয়ে এদিকসেদিক তাকাচ্ছেন। ঈষৎ অন্ধকারে পথে কাউকে দেখাও যাচ্ছে না। কারো সাড়াশব্দও পাওয়া যাচ্ছে না। বিরক্ত হচ্ছেন বোধকরি।
ইদানিং কেন যেন, কিসমত সাহেব খুব দ্রুত বিরক্ত হয়ে যান। কখনো সামান্য কিছু নিয়েই শুরু হয়ে যায় বাক-বিতণ্ডা। অথচ সে কখনো উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বা একঘেঁয়েমিতেও ভুগেন না। রাতে ভাল ঘুম হয়। দিনের অধিকাংশ সময় তার গ্রাম দেখে, গ্রামের মানুষের সাথে গল্প-গুজব করে কেটে যায়। যে কেউ প্রথম আলাপেই বলে দিতে পারবে- আপাদমস্তক সুখী একজন মানুষ। তিন বছর হল সে গ্রামের বাড়ী এসেছে এবং নিয়মিত থাকছে। একটি টর্চলাইট, শীতলপাটি, তোষক ও দূরবীক্ষণ যন্ত্র নিয়ে, একরকম হাঁপাতে হাঁপাতে দৌড়ে এল গেদু। বয়স বারো কিংবা তেরো হবে।
– এই নিন স্যার আপনার যন্ত্রটা।
– কিসমত আলী কিছু বলতে চেয়েও এভাবে হাঁপাতে দেখে চুপ হয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন-
– এত দেরি করলি কেন?
– স্যার আজ হাটবার তো, তাই বাবার সাথে হাটে গিয়েছিলাম। গরুটি বিক্রি করে তবেই ফিরলাম। ক’দিন ধরে গরুটি কিচ্ছু খাচ্ছিল না। পেট ফুলেফেঁপে থাকতো। বাবায় খুব চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল- যখন পশুডাক্তারের চিকিৎসায়ও ভাল হচ্ছিল না।
– কী বলিস!
তাহলে আগামীকাল থেকে আমার আর দুধ ও দুধের সর খাওয়া হচ্ছে না?
– না স্যার। দুধেল গরু তো আছেই। বিক্রি হয়েছে ষাঁড় গরুটি।
– ও আচ্ছা।
কিসমত আলী অনেকটা অবাক হচ্ছেন। এই এক বছরে গেদু শুদ্ধভাবে কথা বলতে শিখে গেছে। স্যার, চাঁদতারা তো পুকুর ঘাটে বসেও দেখা যেত, এই মাঠে আসার কি দরকার ছিল? কিসমত আলী চোখ থেকে দূরবীক্ষণ যন্ত্রটা নামিয়ে ঘাড় ঘুরাতেই গেদু বলে উঠলো-
দুঃখিত স্যার- মাঝেমধ্যে ভুল হয়ে যায়। এখানে বস্, আর চুপ করে থাকবি। কিন্তু চুপ করে থাকার পাত্র গেদু নয়। কথা না বলে থাকাটা ওর চরিত্রের সাথে মেলে না। আর এজন্য কিসমত আলীর কাছাকাছি ওর থাকতে ইচ্ছে করে না। নিজেই সারাক্ষণ প্যাঁচাল পারতে চায়। আবার আমি কথা কইলেই দোষ- গেদু বিড়বিড় করে বলে। গেদু কিছু বললি?
– না স্যার।
শোন, রাতের আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্র দেখার আনন্দই আলাদা। তার ওপর কী সুনসান, শান্ত হয়ে আছে চারপাশ। আর ঝিরিঝিরি বাতাস গায়ের ওপর জাগিয়ে দিচ্ছে অন্যরকম সুখশিহরণ। এগুলো তুই বুঝবি না।
হু ঠিক ই বলছেন স্যার।
আমার বুঝোনেরও দরকার নাই। বিড়বিড় করে হয়তো এই কথাই বলছিল, গেদু। শোন, এখন যে নক্ষত্র দেখছি, এর নাম হল আলডেবারান।
সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই এটি পূর্ব দিগন্তের ঠিক উপরে দেখা যায়। গেদু পূর্ব দিকে তাকায়, অনেকগুলো নক্ষত্র দেখা যায়, কিন্তু কোনটার কথা বলছে সেটা ও বুঝতে পারে না। শুধু তার কথায় মাথা ঝাঁকায় আর হু হু করে। ভাল করে দ্যাখ- ওই যে আদমসুরত। মাঝে তিনটি তারা।
ডানদিকে তাকা, কী দেখেছিস?
– হ্যাঁ স্যার।
– আর বামে তাকালে দেখতে পারবি লুব্ধক। এটির উজ্জ্বলতা অনেক বেশী। এটি নীল। জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এটি খুব স্পষ্ট দেখা যায়। এক মগ চা ঢাল। গেদু কেটলি থেকে এক মগ চা ঢেলে দিয়ে কিছু বলবে মনে হচ্ছিল- তোর ইচ্ছে হলে পান করতে পারিস। সাথে বিস্কিট এনে থাকলে খেয়ে নে। গেদুর যে ইচ্ছে করছে না, তা নয়, স্যারের স্পেশাল চা বলে কথা। এর আগে একবার এক মগ চা পান করেছিল গেদু আর এই চায়ের স্বাদের গল্পটাও গেদু এ তল্লাটে ছড়িয়ে দিয়েছিল। স্যার-আর মগ নাই তো।
কিসমত আলী কিছু বলছে না দেখে, গেদু দ্বিতীয়বার বললো। ঠিক আছে, তুই এই পেয়ালা নে। গেদু মনে মনে এটাই আশা করছিল।
কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ হয়ে রইল।
হ্যাঁরে ষাঁড়টি কত বিক্রি হল?
– ষাট হাজার।
বাহ! তাহলে তো তোদের কষ্ট এবার অনেকটাই কমে যাবে রে।
– না স্যার। গরু তো আমার বাবা বর্গা নিয়েছিল।যদি কোন দূর্ঘটনা ঘটে, সেজন্যই তো তাড়াহুড়ো করে বিক্রি করা হল।
যখন নিয়েছিল তখন ছিল বাছুর। বাছুরটির দাম ধরা হইছিল পঁচিশ হাজার টাকা। এই পঁচিশ হাজার দেওয়ার পর যা বাকি ছিল তা দুইভাগ করে একভাগ আমরা পাইছি আরেকভাগ গরুর আসল মালিক নিয়ে নিয়েছে। আমরা পাইছি সতেরো হাজার। বাবায় বলছে এই টাকা দিয়া আর একটা বাছুর কিনবে।
– ও তাই নাকি?
– হু।
ক্রমে গভীর হচ্ছে রাত। গেদু বার বার হাই তুলছে।
একসময় তোষকের এক পাশে গেদু ঘুমিয়ে গেল। গেদুর খুব ঠাণ্ডা লাগছে। গত পরশু পুকুরে গোসল করছিল, দীর্ঘক্ষণ। পুকুরের পানি একটু শীতল। তার কারণ পুকুরভরা কচুরিপানা। আর চারপাশে বড় বড় গাছ। যার জন্য রোদের আলো খুব একটা পায় না পুকুরটি।
যখন নাক ডাকা শুরু হল, কিসমত আলী কয়েকবার ডাকার পরও কোন সাড়া পেল না। কিসমত আলীও বিছানো তোষকে দেহ এলিয়ে দিয়ে দুই ছেলের কথা, নাতি-নাতনীদের কথা ভাবতে লাগলেন।
হঠাৎএকটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে, আবার আকাশের দিকে তাকালেন।
স্ত্রী গত হয়েছে আজ বিশবছর হল। একরকম চ্যালেঞ্জ নিয়েই ছেলে দুটোকে মানুষ করেছেন। বড় ছেলে সিভিল ইঞ্জিয়ারিংয়ে এমএসসি করে আমেরিকাতেই থেকে যায় নাগরিকত্ব নিয়ে। ছোট ছেলে স্থাপত্য বিদ্যার ছাত্র- পড়াশোনার পাশাপাশি জবও করছে। সবসময়ই তাকে ব্যস্ত থাকতে হয় প্রজেক্ট নিয়ে। কিসমত আলীর এখন আর তেমন রাত জাগা হয় না। আগে জাগতেন খুব। শুক্লপক্ষে। রাত জাগলেই গভীর রাতে কুলসুমের ছায়া এসে গল্প জুড়ে দিত। সুখদুঃখের। অনেকদিন যাবত কুলসুমের ছায়াটিও আসছে না। আজকাল ছায়াটির জন্য কিসমত আলীর অপেক্ষা প্রবল হচ্ছে। ফজরের আজান হচ্ছে। কিসমত আলী গেদুকে ডাকছেন।
– গেদু উঠ্ উঠ্ ভোর হয়ে যাচ্ছে। রাত জাগার পরও যেহেতু ক্লান্তি অনুভূত হলো না, তাই বিছানায় গড়াগড়ি করে একরকম বিরক্ত হয়েই উঠে পড়লেন কিসমত আলী। পানি ফোটানো ছিল। গোসল সেরে লাইব্রেরির উদ্দেশে বেরিয়ে গেলেন। একটাসময় সাহিত্যের প্রতি তার ঝোঁক ছিল। এমন অনেক রাত বই পড়ে কাটিয়ে দিয়েছেন। বই পড়া বাদ দিয়েছেন দশ কি বারো বছর যাবত।
আজ কি মনে করে যেন পড়তে ইচ্ছে হল। কলেজে ঢুকতেই শিক্ষকদের সাথে কুশলবিনিময় করে, লাইব্রেরির ভেতরে ঢুকলেন এবং আশ্চর্য হলেন লাইব্রেরির দুর্দশা দেখে। লাইব্রেরির বিভিন্ন জায়গায় মাকড়সা জাল বুনে রেখেছে। টেবিল-চেয়ার একরকম ধূলিতে ঢেকে আছে। বইয়ের তাকগুলো দেখে বেশ রাগান্বিত হয়ে প্রিন্সিপালের রুমে গেলেন। অনেকটা ক্ষোভ ঝাড়লেন। এবং প্রিন্সিপাল যে লাইব্রেরিতে ভুলেও ঢুঁ মারেন না, তা বুঝতে পারলেন। ইতোমধ্যে প্রিন্সিপাল দপ্তরীকে ডেকে সব পরিস্কার করালেন। প্রিন্সিপাল জানালেন, কলেজ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণেই এমনটি হয়েছে। কিসমত আলী জানতে চাইলেন কেন বন্ধ ছিল। আপনাকে তো জানানো হয়েছিল বিস্তারিত। কিসমত আলী ভাবনায় পড়ে গেলেন। কী বিষয় জানানো হয়েছিল ঠিক মনে করতে পারলেন না। ইদানিং কোনকিছুই তাঁর তেমন মনে থাকে না।
আমাদের বাংলার প্রফেসর জনাব ওয়াদুদ এখনো সুস্থ হয়ে উঠেন নি। উনি সুস্থ হলেই বিষয়টা ক্লিয়ার হবে। আচ্ছা, আমি ঠিক মনে করতে পারছি না। প্লিজ, আবার একটু বলুন। প্রিন্সিপাল অবাক হয়ে গেলেন। এত বড় একটি বিষয় উনার মনে নেই!
আমাদের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে বাইরের কিছু ছেলেপুলে ঢুকে পড়ে।
তখন যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, সেই ঘটনাই।
– ও হ্যাঁ মনে পড়েছে।
তারপর, মেয়েটির কোন-খবর পাওয়া গেছে?
-না। এখন পর্যন্ত সেরকম কোন সংবাদ পাইনি। তবে তদন্ত হচ্ছে। এখানকার পুলিশও বিষয়টি নিয়ে বেশ তৎপর। খুব শীঘ্র হয়তো কোন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসবে। আপনি যদি স্যার একবার থানায় যেতেন, তাহলে ওরা আরও আগ্রহ দেখাত এ ব্যাপারে। কয়েকদিন যাবত আপনার কথাই ভাবছিলাম। কিন্তু যাব যাব করেও আর যাওয়া হচ্ছিল না। তাছাড়া সেভাবে সময় করে উঠতে পারি নি।
না- ঠিক আছে। আমি একবার ওয়াদুদ সাহেবকে দেখতে যাব।
থানার ওসির সাথেও কথা বলে দেখবো- উনারা কতদূর এগোলেন।
আজ উঠছি। কিসমত আলীকে কিছুটা চিন্তিত দেখাচ্ছে, ভাবছিলেন আজ ডাক্তারের কাছে যাবেন না।
তবু কী ভেবে যে এলেন, সেটাই বসে বসে ভাবছেন।
এদিকে সন্ধ্যা হয়ে আসছে। এখান থেকে কিসমত আলীর বাগানবাড়ী পৌছোতে দু’ঘণ্টা লাগবে। আজ এখানে রোগীর সংখ্যাও অধিক। সিরিয়াল মেইন্টেইন করতে গেলে অনেক রাত হয়ে যাবে। তাছাড়া ডাক্তার সাহেবও অনেক ব্যস্ত। বন্ধু মানুষ যদিও…
কিসমত সাহেব থানা হয়ে বাগানবাড়ী ফিরে এলেন। এসেই ছোট ছেলে নিলয়কে দেখে চমকে গেলেন।
-তুমি?
-এই তো বিকেলে এলাম।
-তোমার শরীর কেমন?
হ্যাঁ ভাল। এই ভাল বলাটা নিলয়ের তেমন পছন্দ হলো না।
-কোথায় গিয়েছিলে? গাড়ি নিয়ে যাওনি কেন?
-থানায় গিয়েছিলাম।তুমি জানো না, গ্রামের সব রাস্তাঘাট গাড়ীর উপযোগী নয়।
-থানায়! নিলয় কিছুটা অবাক হল।
-না। এমনি। ওই কলেজে নাকি একটু ঝামেলা হয়েছিল তাই একটু ওসির সাথে কথা বলে এলাম।
-ও আচ্ছা। বাবা একটা সারপ্রাইজ আছে, বলেই ল্যাবটপ অন করে বিশাল এপার্টমেন্টের এলিভেশনটা দেখালো। জানো বাবা- এই ডিজাইনটা চিপ আর্কিটেক্ট স্যার অনেক পছন্দ করেছেন। তাছাড়া জুরিবোর্ডও এই ডিজাইনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কিসমত আলি বাহারি রঙের কম্বিনেশন দেখছেন এবং ফ্লাটগুলোকে কেমন উজ্জীবিত মনে হচ্ছে। সন্তানদের সাফল্যে পিতামাতারা যেভাবে আনন্দিত হোন কিসমত আলীর মুখ দেখে তেমনটা মনে হলো না।
-কি তুমি খুশি হওনি।
-হ্যাঁ অনেক খুশি হয়েছি বাবা।
-আগামী রবিবার ফ্লাইট। অফিস থেকে অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছি। ওখানে অনেকটা সময় থাকতে হবে। স্যার আমাকেই সিলেক্ট করেছেন।
কিসমত আলীর বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠলো কিন্তু চেহারায় তা প্রকাশ পেলো না।
-ঠিক আছে-যাও। নীলাদ্রির সাথে দেখা করো। ওকে বলো এই ঈদটা যেন গ্রামে করে। সবাইকে নিয়ে যেন চলে আসে।
-ওকে। বলবো। আমি আর দেরি করছি না বাবা। এখনি বেরোতে পারলে ভাল হয়। ঢাকায় পৌছাতে আবার অনেক রাত হয়ে যাবে। ওখানেও অনেকটা কাজ আছে। কিসমত আলী জানেন, থাকতে বললেও কোন লাভ হবে না। তবুও জিগ্যেস করলেন-
রাত করেই যাবে?
– যেতে হবে বাবা। বলেই সালাম করে বেরিয়ে পড়লো নিলয়। গাড়ি নিয়ে এসেছে, নিজেই ড্রাইভ করবে।
তাই কিসমত আলীও বলে দিলেন সাবধানে চালাইতে। কিসমত সাহেবের ডাক্তার বন্ধু কিছুদিন পূর্বে আমেরিকা গিয়েছিল। কয়েকবোতল ব্রান্ডি নিয়ে এসেছেন কিসমত আলীর জন্য। আজ কয়েক গ্লাস গিলে নিলেন। অন্যদিনের তুলনায় আজ দু’গ্লাস বেশিই খেলেন। পুরো শরীরটা চেয়ারের ওপর ছেড়ে দিলেন। চোখ টলছে। আজ অমাবস্যা। অনেকটা রাত হয়েছে।
এমনসময় সাধারণত শিয়ালের ডাকাডাকি শোনা যায়। কিন্ত আজ কোন শেয়ালের ডাক শোনা যাচ্ছে না। এমনকী গাছ থেকে পাতা ঝরারও কোন শব্দ কানে আসছে না। ডাল থেকে ডালে যে পেঁচাটি নড়েচড়ে বসতো তারও আজ কোন সাড়া নেই। কিছুটা আশ্চর্য হলেন কিসমত আলী। চারপাশ নীরব, ঝিঁঝিরা ঘুমিয়ে গেছে। বাইরে দু’একটা জোনাকের ওড়াওড়ি। হঠাৎ গেদুর কণ্ঠ শোনা গেল।
-না। স্যার ঘুমিয়ে আছেন। আপনি আগামীকাল সকালে আসুন।
কিসমত আলী চমকে গেলেন।
গেদু কে এসেছে? কে? কে? ওপাশ থেকে কোন উত্তর এলো না।
কিসমত আলী নিজেই দরজা খুলে দিলেন।
বাইরে তাকালেন এবং চোখটা ডলা দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন কে আপনি?
-আমি ডাক্তার কুলসুম। আপনার বন্ধু ডাক্তার শফিক আমাকে পাঠালেন।
-ও আচ্ছা। আসুন ভিতুরে আসুন।
কিসমত আলীর টাইমকন্যা জানিয়ে দিচ্ছেন-
রাত দশটা। অথচ কিসমত আলী মেনে নিতে পারছেন না। উনি বলছেন এখন রাত দুটো।
-আপনার হাতে ঘড়ি আছে? কিসমত সাহেব জানতে চাইলেন।
-জ্বী আছে, তবে ঘড়িটি নষ্ট।
-নষ্ট! তো হাতে রাখছেন কেন? খুলে ফেলুন। কিছুটা জোরেই বললেন কিসমত আলী।
-ঘড়িটা আমার খুব পছন্দের তাই। দুশো বছর পূর্বের এই ঘড়ি।
কিসমত আলী কি যেন ভাবছেন। ভাবনার মধ্য দিয়ে কেউ একজন আওয়াজ দিচ্ছেন- কন্ঠটি পরিচিত, কণ্ঠটি পরিচিত।
কণ্ঠটি কিসমত আলীর পরিচিত মনে হল।
কিন্তু কার কণ্ঠের সাথে মিল আছে, তা নিশ্চিত হতে পারলেন না।
একঘণ্টা হয়ে গেল বিদ্যুৎ নেই। কিসমত আলী ঘড়ির দিকে তাকালেন।
টাইমকন্যার নাভি বরাবর হাতির যে মাথাটা বসানো সেটা হলুদ থেকে নীল হয়ে গেছে। ডান চোখটি ছিল ঘণ্টার কাঁটা আর বাম চোখটি ছিল মিনিটের কাঁটা কিন্তু এখন তা উলটে গেছে। যে শূরটি ছিল সেকেন্ডের কাঁটা সেটাও উলটো ঘুরছে এবং শূর জুড়ে যে সবুজ বাতি জ্বলত সেখানে এখন ভয়ানক লাল জ্বলছে। আর টাইমকন্যার দাঁত থেকে একরকম আলো বেরোচ্ছে যা নির্ণয় করা যাচ্ছে না।
-আচ্ছা আপনার কি মনে হয় এখন রাত দশটা?
-না।
-তবে কি আমার ঘড়িটিও নষ্ট হয়ে গেল!
-আপনার ওটা কি সত্যি ঘড়ি? আমার কিন্তু তা মনে হচ্ছে না।
-হ্যাঁ এটা অনেক দামি ঘড়ি আর এটা তৈরি করতে অনেক ডলার খরচ হয়েছে। সময়ও লেগেছে দশ বছর।
-কি বলেন!
-হ্যাঁ।আপনি কি জন টেলরের ঘড়ি সম্পর্কে কিছু জানেন?
-না।
-কর্পাস কৃষ্টি কলেজে পড়তেন জনটেলর।
উনি উনার আবিষ্কৃত ঘড়িটি তাই কর্পাস কৃষ্টি কলেজকেই উপহার দিয়েছিলেন। একবার আমরা তিন বন্ধু আমন্ত্রণ পেলাম। এক সেমিনারে উপস্থিত থাকার জন্য। তখন ঘড়িটি দেখেছিলাম। আর আমরাও তিন বন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে আমরাও একটি ঘড়ি বানাবো। ঘড়ির ডিজাইনটা আমারই করা।
-ও আচ্ছা। তা ওই পুতুলের নাভির মধ্যে হাতির মাথা, শুঁড় কেন?
-এই শুঁড় সেকেন্ড এর খাজগুলো বসানোর কাজ করে।
-ও আচ্ছা। তা ঘড়িটি কীভাবে চলে?
-ইলেক্ট্রিক মটর। প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে কিসমত আলী বললেন- চা হবে?
-হ্যাঁ মন্দ হয় না।
কেটলি থেকে ঢেলে যখন হাত বাড়িয়ে দিতে যাচ্ছিলেন তখন বিদ্যুৎ চমকালো। আর এতে
যতটুকু ডাক্তার কুলসুমের মুখ দেখা গেল, তাতে নিশ্চিত হতে পারলেন না কিসমত আলী। চায়ে চুমুক দিয়ে কিসমত আলী বললেন-
ইদানি আমার ঘুম কম হচ্ছে। স্লিপিংপিল খেয়েও কাজ হচ্ছে না।
-আপনি কি কোন কিছু নিয়ে চিন্তিত থাকেন? কখনো কি দুঃখবোধ করেন?
বা কাউকে মনে করে বিষন্নতায় ভুগেন?
-ঠিক তেমন কিছু না। তবে আমার স্ত্রীকে খুব মিস করি। কয়েক মাস আগেও এরকম মিস করতাম না। কারণ তার সাথে মাঝেমাঝে গভীর রাতে কথা হতো। এখন আর কথা হয় না। এমনকী তিনি আর আসেন না।
-আপনার কি ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, শ্বাসকষ্ট, ক্যানসার, স্ট্রোক, হৃদরাগ, এ জাতীয় দীর্ঘমেয়াদী কোন রোগ আছে।
-না। আমি এখনো অনেকটা ইয়াং এবং সম্পূর্ণ সুস্থ বোধ করি। কিন্তু ইদানি ঘুম নিয়ে একটু চিন্তিত। কিন্তু এখন চিন্তা হচ্ছে আমার ঘড়িটি নিয়ে।
-আচ্ছা। আপনি শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করুন। যেমন- কাপড় ধোয়া, বাগান পরিস্কার করা অথবা পুকুরে মাছ ধরা। একসপ্তাহ পর আমি আবার আসবো। টাইমকন্যা আবারও সময় জানিয়ে দিচ্ছেন-
কিসমত সাহেব, এখন রাত তিনটা, জানালা বন্ধ করুন।
কিসমত সাহেব জানালা বন্ধ করতে গেলেন কিন্তু বাতাসের তীব্রতায় তা করতে পারলেন না। দশমিনিট ধরে গেদু ডাকাডাকি করছে কিন্তু কিসমত আলির কোন সাড়া নেই। টাইমকন্যাও কিসমত সাহেবকে ডেকে যাচ্ছেন কিন্তু কিসমত সাহেবের সাড়া নেই।
অনেক ডাকাডাকির পর কিসমত সাহেবের ঘুম ভাঙল। উনি উঠেই দেখলেন টাইমকন্যা ডেকে যাচ্ছে। উনি সুইচ অফ করে দিলেন। বাইরে থেকেও ডাক শুনতে পাচ্ছেন। উনি টাইমকন্যার হাতে চাপ দিতেই দরজা খুলে গেল। গেদু ভিতরে এসে দেখে স্যার উঠেছেন।
-স্যার, বেলা কত হল দেখেছেন? আপনি তো এত বেলা করে কখনো উঠেন না।
-আজ অনেক দিন পর ভাল ঘুম হলরে গেদু। কিসমত সাহেব হাই তুলে বললেন।
-মা, চা রেডি করেছে। আনবো?
-না। এখন আর চা নয়। নাস্তা খাবো। একটু লাইব্রেরিতে যেতে হবে।
ড্রাইভারকে বল গাড়ি রেডি রাখতে। কথা বলতে বলতে, ডাক্তার শফিককে ফোন দিলেন।
-হ্যালো, হ্যাঁ, কেমন আছো? তোমার ওখানে গতকাল গিয়েছিলাম।
তুমি ব্যস্ত থাকাতে সাক্ষাৎ করিনি। আচ্ছা, তোমার মেডিক্যাল কলেজে কি কুলসুম নামে কোন ডাক্তার আছেন?
-আমি খোঁজ নিয়ে জানাচ্ছি। তুমি কি আজ আসবে নাকি?
-দেখি, সময় হয় কি না।
-ওকে, আমি একটু ব্যস্ত আছি বন্ধু। পরে কথা বলছি।
কিসমত সাহেব বেরোনোর সময় খেয়াল করলেন গেদু তার পেটে চাপ দিয়ে বসে আছে।
-কি হয়েছে গেদু?
-পেটে ব্যথা করছে।
-বেশি ব্যথা হলে ফার্মেসি থেকে ঔষধ নিয়ে আসিস।
কিসমত সাহেবের গাড়ি নিয়ে লাইব্রেরিতে যেতে ঘণ্টাখানেক সময় লাগলো। এই এলাকাতে একটিই কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়।
এটির প্রতিষ্ঠাতা কিসমত সাহেব। কিন্তু উনি তেমন এখানে আসেন না। যখন শ্যামলীর বাড়িতে থাকতেন, বছরে দু’একবার আসতেন।
উনি এলেই আগে লাইব্রেরিতে যেতেন। বই পড়ার মানসিকতা তৈরি করার জন্য লাইব্রেরি করেছেন। নিয়মিত বই কিনেও দিচ্ছেন তবুও লাইব্রেরিটিকে জমজমাট করে তুলতে পারেননি। তেমন কাউকে বই পড়ার জন্যও লাইব্রেরিতে দেখা যায় না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে কেউ বাড়িতে নিয়েও বই পড়ে না। মাঝে মাঝে দু’একজন আসে, পড়ার নামে আড্ডা দিয়ে চলে যায়। আজ লাইব্রেরিতে প্রবেশ করেই বিস্মিত হলেন কিসমত আলী। একটা মেয়ে শুধু বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টাছে। কিসমত সাহেব কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখলেন।
-আপনার নাম কি?
মেয়েটি কিছুটা চমকে উঠে দাঁড়ায়। কিসমত সাহেব লক্ষ করলেন মেয়েটির মন খারাপ।
-কী বই পড়তে ভাল লাগছে না?
নাকি ভাল বই খুঁজে পাচ্ছেন না?
-আসলে আজ কিছুই ভাল লাগছে না। ভেবেছিলাম এখানে এলে ভাল লাগবে। আপনার নাম কি?
-আমি ডাক্তার কুলসুম। শফিক মেডিক্যাল কলেজে পড়ছি।
কিসমত সাহেব একটু হলেও ধাক্কা খেলেন। হেলোসিনেশন-বিষয়টি নিয়ে কিছুক্ষণ ভাবলেন।
কিন্তু তার ভেতর সেরকম কোন লক্ষণ খুঁজে পেলেন না।
-কি নাম বললেন?
-কুলসুম।
-ও আচ্ছা। শফিক আমার বন্ধু মানুষ।
এর মধ্যে প্রিন্সিপাল সাহেব এলেন। চলুন আমার রুমে। কিসমত সাহেব প্রিন্সিপালের রুমে বসে আছেন। কোন একটা বিষয় নিয়ে ভাবছেন।
নিরবতা ভেঙে বললেন- স্যার, মেয়েটির লাশ পাওয়া গেছে।
কিসমত সাহেব মাথা নিচু করে ভাবছেন। স্যার, স্যার কি শুনছেন!
-ও হ্যাঁ বলুন। মেয়েটির লাশ পাওয়া গেছে
-কোন মেয়েটি?
-সেদিন যে মেয়েটির কথা বললাম, সেই মেয়েটির। মেয়েটির নাম কুলসুম। আমাদের কলেজেরই প্রাক্তন ছাত্রী। ভর্তি হয়েছিল শফিক মেডিকেল কলেজে। নবীন বরণ অনুষ্ঠানে এসেছিল। মেয়েটি গানও গাইতো খুব ভাল। কিসমত সাহেব আবারও ভাবলেন- আমি কি হেলোসিনেশনের সাথে আছি! সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে বললেন, না।
– ও আচ্ছা, ওর বাবা-মা কি খবরটি পেয়েছেন?
-ওর বাবা-মা, দুজনই দেশের বাইরে। লাশ ডোমঘরে নিয়ে গেছে। ওর বাবা-মায়ের সাথে যোগাযোগের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিসমত সাহেব কেন যেন উঠে দাঁড়ালেন। এখানে থাকতে উনার একটুও ভাল লাগছে না। লাইব্রেরিতে গেলেন কিন্তু ডাক্তার কুলসুম নামের মেয়েটিকে দেখলেন না। ডাক্তার শফিককে ফোন দিলেন। শফিক জানালেন, কুলসুম নামের কোন মেয়ে উনার মেডিক্যালে নেই। কিসমত সাহেব সরাসরি বাগানবাড়ি চলে এলেন। বসার রুমে ঢুকেই দেখতে পেলেন, লাইব্রেরির সেই মেয়েটি। ডাক্তার কুলসুম। গেদুকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। গেদুর মাকেও না।
আপনি এখানে?
-হ্যাঁ এলাম। উনি এবার লক্ষ করলেন। মেয়েটিকে ঠিক নিলয়ের মায়ের মতো দেখা যাচ্ছে। নিলয়ের মা এই বয়সে ঠিক এমনটাই ছিলেন।
কিসমত সাহেব এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন। বাইরে কান্নার আওয়াজ হচ্ছে। গেদুর মা কাঁদতে কাঁদতে আসছে।
কিসমত সাহেব বেরিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, কাঁদছো কেন? কি হয়েছে?
-স্যার, গো গেদুর অবস্থা খুব খারাপ। ওরে নাকি ইমার্জেন্সি ঢাকা নিয়া যাইতে অইব। অনেক টাকাও নাকি লাগবো।
আমি এহন কি করমু। এত টেহা কই পাইমু।
-আচ্ছা, আচ্ছা। তুমি কেঁদো না। আমি দেখছি কি করা যায়।
কিসমত সাহেব ঢাকা মেডিকেল কলেজে ফোন করে দিলেন আর ড্রাইভারকে বলে দিলেন গাড়ি নিয়ে গেদুর মায়ের সাথে যাওয়ার জন্য।
কিসমত সাহেব পূনরায় বসার ঘরে গেলেন। ওখানে আর মেয়েটিকে দেখা গেলনা। এবার কিসমত সাহেব নিশ্চিত হলেন, এটাই হেলোসিনেশন। কিসমত সাহেব খুব সুন্দর দোতারা বাজাতে জানেন।
দশবছর হয়ে গেছে উনি দোতারাটা হাতে তোলেননি। আজ কি মনে করে যেন হাতে নিলেন। সন্ধ্যার অনেকটা অংশ চেষ্টা করে একটা সুর উঠালেন। যে সুরটি তার ভিতরে চাপা ছিল। যা ভোলার জন্য তিনি সবসময় আনন্দে থাকার চেষ্টা করতেন। কিসমত সাহেব আর একটা ব্রাণ্ডির বোতল বের করলেন। কোথা থেকে যেনো ভেসে এল গ্রামোফোনের সুর-
শুঁয়া উড়িল, উড়িল, উড়িল রে…
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..
কবিশেখর কালিদাস রায়ের চাঁদ সদাগর কবিতার একটা পংক্তি ছিল, ‘মানুষই দেবতা গড়ে, তাহারই কৃপার পরে,…..
গুলশান এক থেকে দুইয়ের দিকে যাওয়ার পথে চৌরাস্তার পঞ্চাশ গজ দক্ষিণে পঁচিশতলা আর্কেডিয়া টাওয়ারের তেরতলায়…..
রবি স্কুলে এসে প্রথমে সই করতে যায় হেডমাস্টারমশাই এর ঘরে।হেডমাস্টারমশাই বললেন,রবি আমি আজ একটু কাজে…..