ঝরা শিউলি
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
(উৎসর্গঃ আহমেদ, সেরীন, ও ফেসবুক বন্ধু কামু। যাদের উৎসাহে এই গল্প লেখায় হাতে খড়ি…)
গল্প লেখ। অল্প করে লেখ। আচ্ছা কিছু করতে গেলে অল্প করা যায়? বেশী কোনটা? আজকাল তাও বুঝিনা। ঝিম ধরে বসে আছে একটা পোড়া মন। মনের পাশে কাৎ হয়ে পড়ে আছে একটা মন্দির।
মন্দিরের ভিতরে কি আছে? কেউ জানে না। কবে? কোন কালে এই মন্দিরে কেউ ঢুকেছে, এ-কথা কারো মনে নেই। পাশে একটা ধনে পাতা আর শীতকালের সব্জির ক্ষেত। ক্ষেতের আলে একটা আম গাছ। সে গাছে একটা দড়িতে ঝোলানো দোলনা। যে বসে সেই পড়ে। তবু সবাই একবার করে বসে। কেউ খুঁজে দেখে না, কেন পড়ে? পড়ে। উঠে। যেন পড়াটাও খেলা। মনে … হয় …পড়াটাও একটা খেলা। বয়সহীন খেলা। পাশের পুকুরে ভরত বৌ চাল ধুয়ে মুখে জল দিয়ে মুখ ফেরাতেই দেখে মানিক তার দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে। বুকের আঁচল টানতে টানতে পরণের কাপড় খুলে যায় এমনই তার হাল। মনে মনে ভাবে আহা! এই রকম করে আর ছয় মাস আগে তাকাতে, তাহলে জীবনটা অন্য রকম হতো। মানিক পড়ে চিটাগং বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভরত তার খেলাবেলার বন্ধু। কই ডান্ডা, হা ডু-ডু, গোল্লা ছুট খেলে হাঁটু আলগা করে ফেলেছে দুই বন্ধু। কিন্তু জান আলগা হয় নি। বিয়ের দিন ভরত মন্ত্র না পড়ে মনে মনে পড়েছিল, যদি সে আর মানিক এক দিনেই বিয়ে করতে পারত।
এক সাথে বড়ো হয়ে আজ রাতে সে বাসর ঘরে যাবে। ঘর তো ঘর। সেটা বড় কথা না। কথা হলো, এই যে এক অপার রহস্যময় জগতের ভেতরে আজ তাকে গোল্লা নাকি হা ডু ডু কি খেলা খেলতে হবে কে জানে? ওই দিকে ভরতের হবু বৌ চোখের জলে নতুন গ্রহ বানিয়ে ঠিকুজী পড়ছে। যদি আজ মানিক তাকে বিয়ের কথা বলে সে এক্ষুনি এক কাপড়ে ছূটে যাবে। ঘরের দরকার নাই। ওইতো বেশী দূর তো না। মন্দিরেই থাকা যেত। মানিক মনে মনে ভাবছে, ভরত তুই কোনদিন এই মেয়েটাকে কষ্ট দিস না। আমি তারে যা দিতে পারি নাই, তাই দিয়ে তুই তারে ভরে রাখিস। সামনে পরীক্ষা। স্নাতোকোত্তর পরীক্ষায় ফার্ষ্ট ক্লাস না হলে মামাতো বোন টাকে হারাবে সে চিরদিনের জন্য। মামা তাকে অনেক আদর করে। কিন্তু বেইমান মন মানল না।
শেষ পর্যন্ত ঘুরে ফিরে মামাত বোনের মনের বন্দরে সে নোঙর ফেললো। এমনই নোঙর না নড়ে না চড়ে। মনের জাহাজ সমুদ্রে ভাসবে? চট্টগ্রাম বন্দর পাশেই। দেখেও মন শেখে না কেনো? তার জন্য এখন এত লেখা পড়া করতে হয়। এমন সখের লুঙ্গি পরা ছাড়তে হলো। সখ করেও পুকুরে গোসল করতে পারে না। কলের জলে গোসল করে প্রেক্টিস করে। বারে! বিদেশ গেলে তো পুকুরটা সাথে নিয়ে যেতে পারমিশান দেবে না ইমিগ্রেশান। মনে মনে বড় একটা গালি দেয় নিজের মনকে। প্রেমে পড় এমন আজগুবি শর্তে কেউ প্রেমে পড়ে? কেউ জানে না কি মাছের কাঁটা সে গলায় নিয়ে ইন্টারন্যাশাল রিলেশান্সের বইগুলো মুখস্ত করে। যত না পড়া দেখে চোখে তার চেয়ে বেশী শর্তটা দেখে। বিদেশে যেতে হবে হায়ার স্টাডিজের জন্য। যেমন তেমন হলে চলবে না। কমনওয়েলথ স্কলারশীপ হতে হবে। আচ্ছা এরপর কি কোনদিন এই মন্দিরের পাশ দিয়ে সে হাঁটতে পারবে? টপ টপ কয়েক ফোঁটা গরম জল বুকের ভিতর ছ্যাঁত ছ্যাঁত আওয়াজ তুলে নেমে গেল নাভীমুলের দিকে। নাভীর উপর অই জলের এতো কেনো রাগ? না জানল মানিক না জানলো এই জগতের কেউ।
জানলো না ভরতের হবু বউ। আজ এই যে ঘাটে দাঁড়িয়ে মানিক তাকিয়ে আছে কার দিকে, সে না জানে মানিক না জানে মানিক জগতের আর কোন পক্ষীকুল। কি যাতনায় পুড়ে যাচ্ছে পাঁজরের ভেতর নরম চাদর। কিন্তু কেন পুড়ে যাচ্ছে? কি এমন ঘটল? মানিক তো ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েই স্নাতকোত্তর পাশ করল। তা হলে কি মানিকের স্কলারশীপ হয় নি? সে টা কি করে হয়?
মানিকের নম্বরের কাছাকাছি নম্বর তো কেউই পায়নি। তা হলে মানিক কেন পুড়ে খাক হচ্ছে? পুকুর ঘাট ছেড়ে মানিক ফিরে যায়, নিজের ঘরে।
বিছানার নীচ থেকে টেনে বের করে সে মুচড়ানো যৌবনহীন কাগজের টুকরা। ইচ্ছে করে একবার, অন্ততঃ একবার জোরে চিৎকার দিয়ে এই কাগজের খবরটা বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দেয়। শোনো মানুষ! মামাতো বোন এখন ময়ুরপংঙী ডানায় চড়ে উড়ে যাচ্ছে কোন দূর অজানায়। পেছনে রেখে গেছে শর্তের এক আবাল্য ভার। যার বোঝা মানিক আর নিতে পারছে না। ধীরে ধীরে পাজামা খুলে সেই সখের লুঙ্গিটা পরে নেয় মানিক। খুব জোরে শ্বাস নিয়ে আবার ছাড়ে। এইভাবে তিনবার করে মানিক বুকের সব ভার নামিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে উঠানে আসে। চারিদিকে দেখে। মা’কে একনজর দেখে। মনে মনে বলে, মা এবার তোমার সুখের দিন। আমি ক্যাম্ব্রীজে পৌঁছেই তোমার দরিদ্র্য দূরীকরণে সচেষ্ট হব। এটাই আমার প্রথম কাজ। সালাম নাও মা । মনে মনে সালাম দেয়। শর্ত পালন করতে গিয়ে কতদিন ধরে মাকে সালাম দেয়নি। আজ কেমন যেন লজ্জা করছে। থাক যাবার আগে দেব। আজ তো এমন কিছু ঘটে নি। কেবল মনের যে একটা হালে বলদ খালি গুতা মারত, পড় মানিক পড়। তোরে স্কলারশীপ পাইতে হবে। মানিক পড়ে পড়ে পড়ন্তবেলা বেলা হয়ে যায়। তবু শর্ত এক বিন্দু আপোষ করে না।
আজ মানিক মুক্ত। মামাতো বোন তার স্বামীর কাঁধে মাথা রেখে আজ আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছে। মানিক কি যেন ভাবতে গিয়েই মনকে ফিরিয়ে নেয় মন্দিরের দিকে। আহ! আজ আমি মন্দিরে ঘুমাব। মানিক এক গ্লাস জল ঢক ঢক করে গলায় ঢেলে মন্দিরে গিয়ে ঢোকে। মন্দিরে কেন ঘুমাবে? কারণ এই মন্দিরে মানিক আর ভরতের বৌ বাল্যবেলার বৌ-জামাই খেলত। মানিক তারে আদরে সোহাগে গদ গদ হয়ে কুলফী বৌ বলে ডাকত। কেন এই নামে ডাকত? তাও জানে না। ভালো লাগত ডাকতে। সেই যে কত রোমাঞ্ছকর স্মৃতি। মানিক মনে করেই শিহরিত হয়। মনে মনে তার কুলফী বৌকে ডাকে। আয় আয় আমার কলিজায় আয় পাখী। তোরে নরম কম্বলে জড়ায়ে আজ রাতে আমি গাঙ্গের পানি মন্দিরে ছিটাই। ভরতের কথা মনে হতেই নিজে নিজে কান ধরে। দোস্ত মাফ করে দিস। তুই জানিস না। মন্দির জানে। কি খেলায় আমরা মন্দিরের মাকড়াসাদের আনন্দ দিয়েছি। এখন সে তোর। আমার কোন দাবি নাই। মনের তো কোন মামলা খাওয়ার ভয় নাই। যা পারে ভাবে। না ভাবায়। কে জানে? এই সব কথা ভাবত ভাবতেই মানিক গিয়ে ঢোকে পুরোনো সেই জীর্ণ পরিত্যক্ত মন্দিরে। এখানে কোথায় শোবে? সেই স্যাঁত স্যাঁত পাকা বসার জায়গাটায় এখন বড় বড় আগাছা।
হাত দিয়ে টেনে টেনে তুলে অই আগাছা দিয়ে বিছানা সাজায়। আর মনে মনে ডাকে, আয় কুলফী বৌ, কোলের মধ্যে আয়। মানিক জানে না কোন কুলফী বৌ সুড় সুড় করে উঠে এসেছে তার কোলের উপরে। পরদিন পর্যন্ত কোন জায়গায় মানিকের খোঁজ না পেয়ে ভরত বৌ ছুটে গেছে মন্দিরে। ভরত আম গাছের নীচে থেকে দেখে বৌ দৌড়ে গেছে মন্দিরের দিকে। সেও পিছনে পিছনে দৌড়ে গেছে। কেবল একটা চিক্কুর শুনল ভরত,”আমারে নিয়া যাও সাথে”। তারে নিতেই যেন সে কাল বিকালের কুলফী বৌ উৎ পেতে ছিল। স্মৃতির মন্দিরে পুজার বেদী সাজিয়ে দিল মুহুর্তে। দুই আত্মা এক ভিসাতেই উড়ে গেল ক্যাম্ব্রীজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভরত শুধু কাঁদতে কাঁদতে কইলো, দোস্ত তুই চাইলেই তো বৌডারে তোরে এমনিতেই দিয়া দিতাম। এমন জানের মামলায় নিতে হইত না। আমি তোর কুলফী বৌরে একরত্তির জন্য ছুইয়া দেখি নাই দোস্ত। বাসর ঘরে যখন সে কইছিল, এই মন্দিরে তোগো সোহাগ খেলার কথা। আমি বৌরে কথা দিছিলাম। তুই চাকরী পাইলে সুযোগ মত তারে আমি তোর কাছে পৌঁছাইয়া দিমু। তুই এমন করে ক্যান নিলি আমার থ্যাইকা? সেদিন আশ পাশের মানুষ মানিকের জন্য কাঁদে নাই। কেঁদেছে ভরতের পাগল হবার দৃশ্য দেখে।
ওদিকে আমেরিকায় পার্ক চেস্টারের অত্যাধুনিক ফ্ল্যাটে ঢুকেই মামাতো বোন তার স্বামীকে বলে, এবার আমার কথাটা তোমাকে শুনতেই হবে। এবার মামাতো বোনের বিদেশী স্বামী উপেক্ষা করবার কোন পথ পেলো না। মামাতো বোনের এই স্বামী তার বাবার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু। কয়েক ঘন্টার নোটিশে বিয়ে দিয়ে দেয় । কারণ বাবার ভাটির গাঙে নাইয়া এখন পড়ন্ত বেলার দিকে। ব্যবসার বুকে যৌবনপুরী আমদানি রফতানির হাঁকডাক নেই। এইটুকু সময়ে মেয়ের বিয়ে না দিতে পারলে “বিজিনেস কারখানাওয়ালা’র মেয়েকে এমন জৌলুসে বিয়ে দেয়া যাবে না। তাই বিদেশী জামাইকে অই “বিজিনেস কারখানাওয়ালা’ আগে থেকেই সাবধান করে দিয়েছিল মেয়ের ব্যপারে। তবু তার মন চিন চিন করে উঠলো। স্বামী দু’জনের জন্য দুই কাপ চা করে আরাম করে লাভ সোফায় বসে তাকিয়ে থাকে নতুন বৌ-এর দীর্ঘ প্লেইন জার্নিতে শ্রান্ত মুখের দিকে। মুগ্ধ আবেশে চোখ বুজে আসে।
এমন রূপ! একি মানবী নাকি বাঙালী। আমাদেরকে সাদা চামড়া বলে। কিন্তু এই রুপ কই দেখি নাতো? তার সব ধ্যান ভঙ্গ করে মামাতো বোন বলে, লিসেন জিম, আই নো ইউ স্যাংক ইন্টূ মাই বিউটি ওসেন। বাট টেলিং ইউ দি ট্রুথ, দিস বিউটি ইস বীন এডোর্ন্ড ফর এ ক্রেজী লাভার। আই এম সো সরি। আই মাস্ট সে, ইউ ডু বিজিনেস ইউথ ড্যাডি। আই সুইমড এ ফুল চ্যানেল অফ কন্ডিশান টু প্রিপেয়ার হিম ফর মী। নাউ হিয়ার আই এম। জাস্ট ক্যান নট …জীম তার সদ্য বিবাহিত বাঙালি স্ত্রীর মুখের দিকে তাকায়। বাট ডিড নট সে এ ওয়ার্ড। হাত দিয়ে দেখিয়ে দিল তার সাজানো প্রথম রাতের ঘরে দিকে। সে আজ রাতের মত বিশ্রাম নিতে পারে। মাঝ রাতেই মামাতো বোন বেরিয়ে পড়ে জীমের ঘর থেকে, কাঁধে শুধু একটা ব্যাগ নিয়ে মুক্তির আস্বাদে গেয়ে ওঠে “ইন দা মিডল অফ নাইট”।আর বুকের ভেতর শর্ত সঙ্গমে বাঁশী বেজে ওঠে, “মানিক আমি আসছি”…
মানিক কে শুইয়ে দিল কবরে। আর ভরতের বৌকে চিতায় তুলে ভরত থেইয়া থেইয়া নাচছে আর গোঁ গোঁ করে বলছে, বৌডা তো তোর লাইগাই রাইখা দিছিলাম। চাকরী পাইলেই তো দিয়া আসতাম। হায় ভরত।হায় মামাতো বোন। কি হতো? এই মন্দির সেদি্ন এইখানে না থাকলে? মন্দির গুলো এমনি জীর্ণ হয়ে বেঁচে থাকে। আর মনগুলো অকালেই… তালপাতার বাঁশি শুনে কোথায় চলে যায়!
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
শেষ থেকে শুরু। আমি রজকিনী রামী,ধোপার বংশে জন্ম আমার।ঘাটে সখিদের সঙ্গে কাপড় কাচি। একাজটা আমি…..
মালঞ্চার পথে ভোরবেলা। সূর্য সবে উঠছিল। বৈশালী দূর থেকে দেখতে পেল,বুনিয়াদপুর বাসস্ট্যান্ডে বালুরঘাটের দিকে মুখ…..
আমার বাবা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন লড়াকু মনের মানুষ।শত অভাব অভিযোগেও তাকে কোনোদিন ভেঙ্গে…..