কুড়িয়ে নেওয়া

বিধান জানা
কবিতা
Bengali
কুড়িয়ে নেওয়া

অন্নপূর্ণা

তোমার হাতে একটুখানি স্নেহের আশ্বাস
অন্নপূর্ণার মত
স্টেশনের খোলা মাঠ ওপরে আকাশ
ভীষন শীতের রাতে
অবাঞ্ছিত শিশুদের ভিড়ে
ছায়াপথ শুয়ে থাকে জড়োসড়ো হয়ে
তুমি কাঠ কুটো জ্বেলে সযতনে
বকে দাও হিমেল বাতাসে
অরফ্যানেজের পাশে হেঁটে যেতে যেতে
জানালার গ্রিল ভেঙে
ঝুলে থাকা অপমৃত স্বপ্নের হাতে
গুঁজে দাও ঝরেপড়া ফুল
যে শিশুটি ডাস্টবিনে কাটিয়েছে রাত
যে শিশুটি খোলা আঁচে পুড়িয়েছে হাত
যে কিশোর খুঁজে ফেরে চাঁদের পাহাড়
যে বালিকা রক্তহীন ক্লান্ত অসাড়
তুমি বেড়ে দাও থালা ভরে
এক মুঠো আদরের ভাত
সমস্ত দেবতাকুল সমস্ত জান্নাত
ফুটে থাকে তারা হয়ে
আকাশের গায় সারারাত।

 

কুড়িয়ে নেওয়া

এ শূণ্যতার
কোন দিক নির্দেশ ছিলনা
পথিক বাতাসেরা আনমনে
খেলতে খেলতে চলে গেছে
অনেক অনেক দূরে
নুড়ি পাথরের মত সময়
পড়ে আছে জমাট বাঁধা
আমি তার পাশ থেকে
হেঁটে গেছি বার বার
তার উদাসী চোখ
আকাশের জানালায়
দিয়েছে মেলে সব অশ্রুভার
একান্ত সংলাপ
অনুচ্চারিত মন্ত্রের মত
ভূলুন্ঠিত হয়ে পড়ে আছে
আমি ঝরে পড়া শিউলির মত
ভেজা পায়ে সযত্নে কুড়োই
দিকভ্রান্ত এ শূণ্যতায় ।

 

ঘর বাড়ি

তুমি বললে এবার বাড়ি যান

বলো আমি কোন বাড়ি যাব
কোনটা আমার বাড়ি
যেখানে পোস্টম্যান খামে ভরে খবর আনে?

না কি ওড়নায় ঘাম মুছে চিঠি নাও যে বাসায়

বিকেলের শতরঞ্চি পেতে
খিলখিলিয়ে হেসে উঠলে সারা শরীর জুড়ে

সেটা কি আমার বাড়ি নয় ! নয় ঘর?

সেদিন তোমার শরীরটা খারাপ। ছিল কি?
আমি হাতটা নিয়ে বসে আছি সারাটা দিন ভর
ওই হাতে ছড়িয়ে ছিল ঘরের উত্তাপ

বাড়ি যাব আমি

তারপর
তোমার স্নিগ্ধ আঁচে পুড়ে যাব সমস্ত প্রহর ।

 

তস্কর

আকাশে খুঁজছো কাকে রাতে
চাঁদ খসে পড়ে আছে একা ফুটপাতে
পাথুরে বালিশ পেতে ডুবে যায় ঘুম
একা একা ভীষন নিঝুম
ঘুমের সাগরে সারা ঘর ভাসে
স্বপ্নেরা কাঁপে
বাসি হাসি সেঁকে নিও জ্যোৎস্নার তাপে
গহীন আঁধার রাতে
সিঁধ কেটে পরিচিত ঘরে
ফুটপাতে ক্ষনিকের তরে
বেহুঁশ নাইটি ঘনরাতে
হঠাৎ দুচোখ মেলে দেখে
চেনা দৃষ্টিপাত অপলকে
খোঁচা খোঁচা দাড়ি
ঠোঁটে ভাসে অপ্রস্তুত হাসি
তারপর অনাবিল ভালোবাসাবাসি

রাত পাহারার বাঁশি বেহায়ার মত মাঝ রাতে
বেজে ওঠে জোরে
তারারা চমকে ওঠে
খোঁচা দাড়ি মিশে যায় দূরে
নিঃশব্দে নিভৃতে
কবোষ্ণ আধপোড়া জ্যোৎস্না নিয়ে সাথে।

বিধান জানা। কবি। জন্ম ১৯৬৯, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার তমলুকে (বর্তমানে পূর্ব মেদিনীপুর)। পেশাগত জীবনে তিনি সরকারি চাকুরে। গত দশবছর ধরে কবিতা লিখছেন।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..