দৌড়
একবার এক দৌড় প্রতিযোগিতায় কেনিয়ার হয়ে দৌড়চ্ছিলেন আবেল মুতাই। খুবই ভালো দৌড়াচ্ছিলেন তিনি। সবাইকে পেছনে…..
খোঁচা খোঁচা দাড়ি শুভ্র বেশ ধারণ করলেও ইন্দ্রভুষণ স্কুলের বাংলার শিক্ষক মাইনুদ্দিন গাজী আদতে গড়পড়তা বাঙালি পুরুষের চেয়ে সমর্থই ছিলেন। পঞ্চান্ন বছরকে এখনো স্বাভাবিক মরণের বয়স বিবেচনা করা হয়না এই দেশে। অথচ পঞ্চান্ন না পেরুতেই জাগতিক আচারকে বিদায় জানিয়ে চির ঘুমের দেশে পাড়ি দিলেন তিনি। তার এই প্রস্থান এমনি চমক জাগানিয়া যে পাঁচ মিনিট হাঁটা দূরত্বে আলাদা বসত করে থাকা বড় ছেলে মিনহাজ পিতার আচানক অসুস্থতার খবরে বাড়িতে পৌঁছে পিতার নিথর দেহ দেখতে পায়। বৈশাখের এক সকাল বেলা মাথা ঘুরছে, শরীর কেমন করছে বলে জানিয়ে ভূপাতিত হয়ে পড়েন মাইনুদ্দিন গাজী এবং দুই মিনিটের মাথায় তার পরান পাখি মহাপ্রস্থানের দিকে ধাবিত হয়ে পড়ে। মাইনুদ্দিনের স্ত্রী শাহনাজ বেগম হতবিহবল হয়ে বড় ছেলে মিনহাজকে ফোনে বাপের ভূপাতিত হওয়ার খবর জানিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি আসতে বলে বারান্দায় এসে দেখেন নিজেকে তিন সন্তানের ভ্রূণ দান করা মাইনুদ্দিন অচিন দেশের যাত্রী হয়ে গেছেন। জড়ো হওয়া পড়শিরা বিলাপে ভেঙে পড়া শাহনাজ বেগমকে সামলাতে সামলাতে ঘরের পিছনে একটা পাখির ডাক শুনতে পায়। পাখিটিকে দেখা যায় না। এই রকম ডাকও নাকি আগে শুনেনি কেউ। অচিন পাখির এই ঘোর মিশ্রিত ডাক দীর্ঘদিন লোকেদের আলোচনায় দাপটের সহিত হাজির ছিল।
বড় ছেলে মিনহাজ উদ্দিন যখন দশ মিনিট বাদে এসে পৌছাল ততক্ষনে বারান্দায় সটান শুয়ে থাকা মাইনুদ্দিনের শরীর সাদা চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে। শিয়রে জ্বলছে আগরবাতি। ঘরের পিছন থেকে পাখিটির ডাক শোনা গেল আবার। পাখির ডাকের শানে নুযূল জানার চাইতে নিজের অপর ভাই এবং একমাত্র বোনকে পিতৃবিয়োগের সংবাদ জানানোই তার কাছে বেশী গুরুত্বপূর্ণ মনে হইল। ফোন কল শেষে দাফন কাফনের আয়োজনের বন্দোবস্ত করার জন্য পড়শির সাথে আলাপ শেষে পরলোকগত পিতার মুখোমুখি হয় সে। একমাত্র বোনের বিয়ে হয়ে যাওয়া এবং ছোট ভাইয়ের উপজেলা শহরে মেস জীবনের ফলে এই বাড়িটি ছিল মোটামুটি নিরুত্তাপ। তবে মিনহাজের স্ত্রী শালিমার সাথে শ্বাশুর শ্বাশুরির মিল মহব্বতের বালাই ছিল না। ক্রমাগত ক্যাচালে বিপর্যস্ত মিনহাজকে আলাদা বসবাসের সিদ্ধান্ত নিতে হয় বিয়ের দেড় বছরের মাথায়। বাড়ি থেকে অনতিদূরে রাস্তা সংলগ্ন নিজেদের জমিতে বাড়ি করে বসবাস শুরু করে আপাত পারিবারিক দোজখ হইতে বাঁচলেও তীব্র এক অপরাধবোধ গ্রাস করত তাকে। পিতামাতা বিচ্ছিন্ন জীবন তার কোন কালেই আকাঙ্ক্ষিত ছিল না। এক পড়শি এসে আরেক পড়শিকে দেখানোর জন্য লাশের মুখের দিক থেকে চাদর সরিয়ে নিলে মিনহাজ পিতার নিথর চেহারা দেখতে পায় প্রথম বারের মত। মিনহাজ ভাবে একবার যদি আলাদা বসবাসের অপরাধের জন্য মার্জনা চাইতে পারত সে। ঘরের পিছনে পাখিটি ডেকে উঠে আবার। মিনহাজ সরে আসে। ছোট ভাই কমলকে দেখা যাচ্ছে। ব্রিজ পার হয়ে মোটর সাইকেলে করে আসছে। তার বাড়ির সামনে দিয়েই। তখুনি তার মনে পড়ল শালিমার কথা। সে কি এসেছে ? সে কোন ভঙ্গিমায় আছে আজ?
সটান শুয়ে থাকা পিতা মাইনুদ্দিন কমলের কাছে ছিল এক আশ্চর্য পরশ পাথর। পিতার সংগ্রাম মুখর জীবন তাকে অনুপ্রাণিত করলেও পাঠ্য পুস্তকের ছকবাধা পড়াশোনায় সাফল্য না এলেও পিতা অখুশি ছিলেন না কোন কালে। এইচএসসি পাশের পরে প্রথাগত ডিগ্রী পাস কিংবা স্নাতকে ভর্তি হওয়ার বদলে ড্রাইভিং ভিসায় মধ্য প্রাচ্যর কোন দেশে যাওয়ার আগ্রহ দেখালে মাইনুদ্দিন আপত্তি করেন নি উল্টো বলেছিলেন তোকে যে ভাবেই হোক বিদেশ পাঠাবই। পিতার সাথে ঝাঁকি দেওয়ার মত কোন ঘটনা না থাকায় একমাত্র বোন শাহানার বিলাপে তার নজর যায়। এটি যে মরা বাড়ি তা শাহানার বিলাপের ধ্বনিই তা জিইয়ে রেখেছে।
বিলাপের সাথে সাথে শাহানার চোখে ভাসছে প্রাইমারী স্কুলে পড়াকালীন পিতার সাথে জেলা শহরে যাওয়ার স্মৃতি এবং পিতার এক অসহায় রুপ। তীব্র বুকের ব্যথার কারনে জেলা হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি ফেরার পথে শাসনগাছা এসে মাইনুদ্দিন যখন বুঝতে পারলেন সকাল থেকে কন্যা পিতা কারোরই কিছু খাওয়া হয়নি তখন মাঝারি মাপের একটা রেস্টুরেন্টে কন্যাকে নিয়ে প্রবেশ করলেন। যদিও ওষুধ এবং গাড়ি ভাড়া সহ অন্যান্য খরচ এবং মাসের পড়ন্ত বেলার কারনে মাইনুদ্দিনের পকেটের ভগ্ন দশা বহাল ছিল কিন্তু প্রাইমারিতে পড়ুয়া কন্যার পক্ষে পিতার দুরবস্থার কথা জানা সম্ভবপর ছিলনা বিধায় ভরদুপুরে মাইনুদ্দিন সিঙ্গারার কথা বললেও শাহানা কাচ্চি বিরিয়ানি খাওয়ার আবদার করে বসেছিল। পরাজিত মাইনুদ্দিন কিছু না বলে কেবল কন্যার মাথায় হাত রেখে পুনরায় সিঙ্গারায় মনোযোগ দেয়। শাহানা পিতার বিবর্ণ মুখ পাঠ করতে পারে ওই বয়সেই। পিতাকে ওই পরাজিতের বেশে দেখার এবং ফেলার গ্লানি সে বয়ে বেরিয়েছে অনেক দিন।শাহানা ভাবে যদি একবার পিতার কাছে বিরিয়ানির আবদারের জন্য মাফ চাইতে পারত সে। অচিন দেশের নাগরিক মাইনুদ্দিনের অবশ্য এসবে কিছুই আসে যায় না এখন।
অন্দরমহলে পড়শি বেষ্টিত শাহনাজ বেগমের চোখে ভাসছে তিন চার মাস আগের এক বর্ষণমুখর সকালবেলার স্মৃতি। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি শুভ্র বেশ ধারণ করলেও মাইনুদ্দিন রতিক্রিয়ায় দাপট দেখাতেন বেশ। শয্যায় মাইনুদ্দিন এক পরিপূর্ণ পুরুষ হিসেবেই আবির্ভূত ছিলেন সবসময়।দ্বিধা নেই শাহনাজ বেগমও উপভোগ করতেন মাইনুদ্দিনের এই সমর্থ আচরণ। চিরায়ত প্রথা মেনে নিশি সঙ্গমে তারা অভ্যস্ত থাকলেও বৃষ্টিস্নাত এক সকালবেলায় মাইনুদ্দিনের শরীর জেগে উঠে। আধো ঘুম আধো জাগরনে থাকা শাহনাজ বেগমকে তার শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় স্পর্শ করে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করলেও সকালবেলা এই সব ভীমরতির ইচ্ছা নাই জানিয়ে শাহনাজ বেগম তা নাকচ করে দেন নিমেষেই। বৃষ্টির দিনের রোমান্স চাপা রেখে চুপসে যান মাইনুদ্দিন। আজ শাহনাজ বেগমের মনে হচ্ছে দীর্ঘ রাত বিছানায় ঝড় তুলে রতি সুখ লাভকারী মাইনুদ্দিন এক সকালের অতৃপ্তি নিয়ে অন্য ভুবনের বাসিন্দা হয়ে গেলেন।
নিকটস্থ মাদ্রাসার এক দল কিশোর ছাত্র সুর করে কোরআন তেলাওয়াত করছে মাইনুদ্দিনের নিথর শরীরের পাশে বসে। ঘরের পিছনে সেই অচিন পাখিটি ডেকে উঠল আবার। মাইনুদ্দিনের রেখে যাওয়া প্রজন্মের অন্তর্গত গল্প শোনার জন্যই মনে হয় এতক্ষণ চুপ করে ছিল পাখিটি।
একবার এক দৌড় প্রতিযোগিতায় কেনিয়ার হয়ে দৌড়চ্ছিলেন আবেল মুতাই। খুবই ভালো দৌড়াচ্ছিলেন তিনি। সবাইকে পেছনে…..
সকালে উঠে মায়ের মমতামাখা মুড়ি ও লিকার চা খেতাম। তারপর দাদু বলতেন, এবার পড়তে বোস।…..
রোজকার সূর্য ওঠার মত বেলি ভোরে উঠে দরজায় সামনে জল দেয়,ঝাঁট দেয়, ফুল তোলে। তারপর…..
একটি সুপ্রতিষ্ঠিত কর্পোরেট অফিসের চাকরির ইন্টারভিউয়ে জটিল একটি প্রশ্ন করা হলো। প্রশ্নটি হচ্ছে –…..