প্রক্সি
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
অতনু,
হঠাৎ করেই দেশে এসেছিলাম। আমার অতি প্রিয় দুইজন মানুষের একজন, আমার সব’চে ভরসার জায়গা দাদু ভাই আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন। একমাত্র তুই ছাড়া এ জগতে আমাকে বোঝার আর কেউ রইলনা। দীর্ঘ দুইমাস পলাশপুরে বসে বসে ভাবলাম ফিরে যাব নাকি দেশেই থাকব। অবশেষে ফিরে যাবার সিদ্ধান্তটাই নিলাম। দেশে থাকলেই আমি প্রতিনিয়ত মোহগ্রস্থ হতে থাকব। তোর সাথে অনন্য একটা জীবন কাটানোর তীব্র মোহ তাড়া করছে আমাকে তখন থেকে, যখন তোকে খুঁজতে খুঁজতে তোর বাসায় উপস্থিত হয়ে জানলাম তুই এখনও একাই আছিস। অথচ কি চমৎকার মিথ্যে করে আমাকে লিখেছিলি তুই বিয়ে করেছিস। আজ আমি বুঝতে পাচ্ছি তোর এই মিথ্যে বলার কারণটা কি। আমাকে আশ্বস্ত করাতে চেয়েছিলি তুই ভাল আছিস, স্বাভাবিক আছিস এবং আমার সাথে তোর দূরত্ব তোর জীবনে কোন কষ্টের ছায়া ফেলতে পারেনি। আমাকে এই মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে তোর কি লাভ হলো বলতো? তুই তো চিরকাল বঞ্চিতই রয়ে গেলি। জীবনভর আমার স্মৃতি বহণ করার ভার তোকেই কেন নিতে হবে? কই আমিতো নিতে পারলামনা! নিজেকে ভীষণ স্বার্থপর আর প্রবঞ্চক মনে হচ্ছে আজ। আমি যখন তরুন ফরাসী অধ্যাপককে জীবনসঙ্গী করার সিদ্ধান্তটি চিঠিতে তোকে জানালাম, তুই তা এ্যাপ্রিসিয়েট করে লিখলি তোর গুরুজনদের পক্ষ থেকেও এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবং কনে দেখা প্রায় চুড়ান্ত। পরের চিঠিতে জানিয়েছিলি সবকিছু ঠিকঠাক আর অল্প দিনের মধ্যেই ব্যাপারটা ঘটে যাবে। এর পর থেকে তুই আমাকে চিঠি লেখাও ছেড়ে দিলি। আমি বেশক’টা চিঠি লেখার পরও উত্তর না পেয়ে আর তোকে লিখিনি। ভেবেছি ভাল আছিস।
ক’দিন আগে যখন তোর বাড়ী খুঁজে পেয়ে গেলাম তখন বুকের ভিতর এক চনমনে অনুভূতি কাজ করছিল, কতদিন পর তোকে দেখব। মনে মনে ভেবেছি তোর সঙ্গিনীটি নিশ্চয়ই খুব ভাল হবে-ঠিক তোর মতো, হয়ত একজন জুনিয়র অতনু এতদিনে এসে গেছে তোদের দুজনের মাঝে। তোর আজন্ম লালিত স্বপ্ন দিয়ে যাকে গড়ে তুলছিস। কিন্তু আমার সব ভাবনাকে মিছে প্রমাণ করে তোর এক খালামনি দরজা খুললেন। অতনুর বন্ধু, অনেকদিন পর বিদেশ থেকে এসেছি জেনে বেশ আদর অপ্যায়ণ করলেন। জানলাম তুই ছ’মাসের ট্রেনিংএ স্টেটস্ এ আছিস, ইতোমধ্যে পাঁচ মাস হয়ে গেছে। তিনি ছাড়া বাড়ীতে আর কাউকে না দেখে ভাবলাম সপরিবারেই গেছিস কিনা। পরক্ষণেই মনে হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক ট্রেনিংএ গেছে ছয় মাসের জন্য সে ক্ষেত্রে পরিবারের অন্য সদস্যদের না নেয়াই স্বাভাবিক। একবার ভাবলাম এ প্রসঙ্গটা এড়িয়ে যাব, কিন্তু তোকে নিয়ে আমার অনুসন্ধিৎসা দমন করতে পারলাম না। জানতে চাইলাম বাড়ীর অন্যরা কোথায়। তিনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে হয়ত ভেবে নিলেন কিছু তারপর বললেন, “তুমি তো মা অনেকদিন পর এলে তাই জানোনা, অতনু তো বিয়েই করেনি। কত করে বুঝিয়েছি, কিন্তু কে শোনে কার কথা। মাঝে মাঝে আমি এসে থাকি, রান্না করে দিই। ছয় মাস বাড়ীটা খালি পড়ে থাকবে, তাই আমাকে পাহারায় রেখে গেছে। নইলে তুমি এসে তো তালা ঝুলতে দেখতে।”
অতনু, তখন থেকে আমার ভেতরে যে যণ্ত্রণা শুরু হয়েছে, তা বোধকরি আমার বাকীটা জীবনে নিরসন হবেনা। আমার তরুন অধ্যাপক বন্ধু লুসান ফারনান্দ, হ্যা বন্ধুই বলব, কেননা আমরা নিজেদের স্বামী-স্ত্রী ভাবতে পারিনি কখনো, তোর আর আমার বন্ধুত্বের কথা, বিশেষ করে আমাদের জীবনে ঘটে যাওয়া সব গল্প শুনে মন্তব্য করেছিল, “তোমার বন্ধুটা জীবনে অনেক কষ্ট পাবে।” আমার সেদিন লুসানের উপর ভীষণ রাগ হয়েছিল। আজ কেন যেন লুসানের কথা গুলো মনে পড়ছে বার বার। তোর জীবনটা অনেক কষ্টে কাটবে তা সে জীবনে কখনো তোকে না দেখেই বলে ফেললো আর আমি তোর এত কাছের বন্ধু হয়েও কোন দিন বুঝতে পারলাম না যে তোর জীবনে কষ্টের কারণ কি কি হতে পারে!
আমার তরুন অধ্যাপক লুসান আমাকে ভীষণ ভাবে আকৃষ্ট করেছিল। তোকে ছেড়ে এসে প্যারিসে যখন অচেনা-অজানা যায়গায় নিজেকে বড় অসহায় মনে হচ্ছিল তখন লুসান আমাকে অনেক আপন করে নিয়েছিল। তোর আর আমার সব কথাই আমি ওর সাথে শেয়ার করেছি। তোর রাজনৈতিক বিশ্বাস এবং চিন্তা-চেতনা নিয়ে ওর বেশ আগ্রহ ছিল। তোর সাথে আমি যে ভাবে মিশেছি তা যে বন্ধুত্বকে ছাড়িয়ে অনেক গভীরে প্রোথিত হয়ে আছে এবং যে সম্পর্কের কোন নির্দিষ্ট সঙগা নির্ধারণ করে দেয়া যায় না তা লুসানও আমাকে বলেছে। অথচ দেখ সে কখনো তোকে ঈর্ষা করেনি, যা আমার অনেক ভাল লেগেছিল। বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু নিয়ে ওর অনেক জিজ্ঞাসার জবাব দিয়েছি। জানিস, ও আমাকে তিরস্কার করে বলেছিল, “তোমরা তোমাদের গ্রেট লিডার-ফাদার অব দ্য নেশন কে হত্যা করেছ, জাতি হিসেবে তোমাদেরকে এর চরম মূ্ল্য দিতে হবে।” সেদিন আমি কান্না সংবরণ করতে পারিনি। বার বার তোর কথা মনে হচ্ছিল, তুই কেন পাশে নেই। অবশেষে লুসানই আমাকে সান্ত্বনা জানিয়েছে। তোর প্রায় সবগুলো ক্লাসে সরব উপিস্থিতি, তুখোড় ছাত্রনেতা হিসেবে বিশাল দায়িত্ব পালন, কবিতার মঞ্চে দুর্দান্ত উচ্চারণ তার পর ঠিক সময়ে মধুদা’র ক্যান্টিনে বসে আমাকে বিরামহীন সময় দেয়া, মাঝে মাঝে রিক্সায় ঘুরতে যাওয়া- সব কিছু তুই কিভাবে যে ম্যানেজ করতি সেই বিস্ময়কর গল্প লুসান বেশ আগ্রহ নিয়েই শুনতো। ইউনিভার্সিটির অনেকেই যে আমাদেরকে নিয়ে নানান সম্পর্কের কথা ভাবত, কেউ ভাবত আমরা ভাই-বোন, কেউ ভাবতো আমরা বন্ধু আবার কেউ ভাবতো আমরা প্রেমিক-প্রেমিকা। এই যে নানান রকম মীথ কিন্তু প্রকৃত সত্যটা কি তা কেউই জানতো না। আমরাও কি জানতাম? এই রহস্যের সম্পর্কটার একটা জুতসই সঙগা লুসান খুঁজে ফিরছিল দীর্ঘদিন ধরে, পারেনি।
সেদিন তোর খালামনি যখন জানতে চাইলেন আমি কি তোর বন্ধু ছিলাম, তখন এই প্রশ্নটা মাথায় এলো আমরা আসলে কি ছিলাম পরস্পরের। তুই বিয়ে করিসনি জেনে আমি অনেকটা হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম এই ভেবে যে, তুই কি করে একা এতটা পথ একলা চলেছিস! খালামনিকে জিজ্ঞেস করলাম ওর সময় কাটে কি করে খালামনি। বললেন অধ্যাপনা, রাজনীতি, লেখালেখি আর ছবি এঁকে। তিনি আমাকে হাত ধরে তোর ঘরে নিয়ে গেলেন তোর আঁকা ছবি দেখাতে, বললেন, তুমি ধীরে ধীরে দেখতে থাক আমি আসছি। আমি একে একে তোর ছবি গুলো দেখছিলাম, বিষয়বস্তু গুলো তোর জীবন দর্শণের সাথে মিলে যায়। কিছু দেখলাম প্রকৃতি আর নারী কেন্দ্রিক, কিছু স্কেচ, কিছু অয়েল পেইন্টিং। একটা জায়গায় এসে থমকে গেলাম, বেশ কটা ছবির অবয়ব আমার নিজের, সেগুলো ভিন্ন জায়গায় এক সাথে করে রেখেছিস। ইজেলে একটা ক্যানভাস সাঁটা সেখানে অসমাপ্ত আমার পেইন্টিং, একদম পরিস্কার, না বোঝার কোন কারণ নেই। তোর ক্যানভাসে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আমাকে খুঁজে পেলাম। আমার তখন চিৎকার করে কেঁদে ফেলার অবস্থা। খালামনি পিছনে এসে দাঁড়িয়েছেন। অসমাপ্ত ছবিটার দিকে তাকিয়ে বললেন ঐ ছবিটা অতনু অনেক দিন থেকেই আাঁকছে, কেন যে শেষ করতে পাচ্ছেনা। তিনি একবার খুব গভীর ভাবে আমার মুখের দিকে তাকালেন তার পর অসমাপ্ত ছবিটার দিকে। মনে হলো আমি তার কাছে ধরা পড়ে গেছি। ভাবলাম আমাকে এখুনি এখান থেকে বেরুতে হবে, নিজেকে আর ধরে রাখতে পাচ্ছিনা। বললাম, খালামনি আজ আমি আসি, একটু কাজ আছে। তিনি বললেন অতনু তো ফিরতে আরও একমাস, তুমি কতদিন থাকবে আর? বললাম, এখনো ঠিক করিনি তবে যাবার আগে হয়ত আপনার সাথে আর একবার দেখা হবে। তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বিদায় দিলেন। আমার সমস্ত শরীর তখন অসাড় হয়ে এসেছে, হাঁটতে গিয়ে পা টলে যাচ্ছে। প্রচন্ড ইচ্ছে হলো তার বুকের মধ্যে আছড়ে পড়ি, মনে হলো উনি আমার জন্ম জন্মান্তরের মা। সেই মা আর তার সন্তানকে আমি ঠকিয়েছি। আমি সেখান থেকে একরকম ছুটে বের হয়ে এলাম।
অতনু, আমার দুটো রাত যে কিভাবে কাটলো তোকে কি করে বর্ণনা দেব। আমি যে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছি। আমার নিজের আমি কে আমি চিনতে পাচ্ছিনা। একদিকে আমার সবথেকে বড় আশ্রয় দাদু ভাই আমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেলেন, আবার তোকে কেন্দ্র করে চরম মানসিক অস্থিরতা। অনেক ভেবে দেখলাম আমাকে পালাতেই হবে এখান থেকে, অন্তত তুই ফিরে আসার আগেই। কিন্তু এই চিঠিটা আমি রেখে যাব খালামনির কাছে।
জানিস অতনু, তোর আর লুসানের মধ্যে অনেক মিল খুঁজে পাই। লুসান বেশ ভদ্র মার্জিত স্বভাবের মানুষ, ছবি আঁকতে ভালবাসতো। বাংলাদেশ থেকে এসেছি জেনে আমার প্রতি ওর আগ্রহ বেড়ে গেল। বলল, আমি তোমার দেশ, তোমাদের সংস্কৃতি আর মানুষ সম্পর্কে জানতে চাই। প্রতিদিন বিকেলে আমাদের বৈঠক চলত ফন্ট নটরডেম, প্লেস ডুফিন অথবা সেইন্ট জ্যাকস টাওয়ারের মতো চমৎকার সব জায়গায়, কফি খেতে খেতে আবার কখনোবা খোলা জায়গায় হাঁটতে হাঁটতে ওর জানার কৌতূহল মেটাতাম। আমি ওকে বাংলা শিখিয়েছি, সুন্দর বাংলা বলতে পারে। সেই সময় গুলোতে তোর প্রসঙ্গ চলে আসত বার বার। এই যে দীর্ঘ সময় একসাথে থাকতাম আমরা, লুসান কখনোই আমাকে স্পর্শ করেনি। অথচ আমার ধারণা ছিল অন্য রকম-ইউরোপিয়ানরা দুই-একটা ডেটের পরই বিছানা কেন্দ্রিক চিন্তা করে। মাঝে মাঝে বেশ রাত হয়ে যেত, রাতের খাবার সেরে লুসান আমাকে ডর্মে পৌঁছে দিত, তার পর মেট্রো ধরে উল্টো পথে অনেকটা দুর ওকে যেতে হতো। মনে হতো লুসান যেন তোর প্রক্সি দিচ্ছে।
সারা পৃথিবীতে যত চিত্রকর আছে সবার শিল্পকর্মের সাথে প্যারিসেই পরিচিত হওয়া যায়। লুসান আমাকে সব বিখ্যাত মিউজিয়াম ঘুরে দেখিয়েছে। প্রতিটা ছুটির দিনে সপ্তাহে দুই দিন আমরা মিউজিয়ামে যেতে শুরু করলাম। সবথেকে বেশী ঘুরেছি ল্যুভর মিউজিয়াম, পিকাসো ইন্টারন্যাশনাল আর প্যারিস মিউজিয়াম অব মর্ডাণ আর্ট-এ। আমার ইউনিভার্সিটি অব প্যারিস থেকে ল্যুভর মাত্র তিনটা মেট্রো স্টেশন পর। দীর্ঘ ছয় মাসেও দেখা শেষ করতে পারিনি। এক একটা বিখ্যাত শিল্পকর্মের সামনে দাঁড়িয়ে লুসান আমাকে নিরলস ভাবে বুঝিয়ে দিত ছবিটার প্রেক্ষাপট কি। প্যারিসে পড়তে এসে এটা যে আমার কত বড় পাওয়া তা তুই নিশ্চয়ই বুঝতে পাচ্ছিস। এর পর লুসান আমাকে প্রস্তাব দিল আমার পোট্রেট করবে। জানতে চাইল আমার আপত্তি আছে কিনা। আসলে লুসানের মতো বন্ধুর এমন প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিলনা। যেমনটা পারতামনা তোকেও ফেরাতে, যদি বলতিস কোন দিন। লুসানের ফ্ল্যাটে আমি নগ্ন মডেল হয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে আছি। লুসান গভীর মনযোগে তুলির আঁচড় কাটছে, আমি যে একজন যুবতী নগ্ন নারী ওর সামনে দৃশ্যমান তা যেন সে ভ্রুক্ষেপই করছে না। আমি ওর প্রফেশনালিজম দেখে সত্যি মুগ্ধ হয়ে গেলাম।
আঁকা শেষ হলে লুসান চোখে মুখে জল দিয়ে দু’কাপ কফি বানিয়ে এনে আমাকে ছবিটা দেখতে বললো, আমি ওর ছবি আঁকার হাত দেখে মুগ্ধ। বেশ কিছুটা সময় আমরা ছবিটা নিয়ে আলোচনা করলাম। এবার লুসান আমাকে বলল, তোমাকে একটা উপহার দিতে চাই। অমি সানন্দে রাজি হলে লুসান আমাকে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করলো, আমি দীর্ঘতম ফরাসী চুমুর স্বাদ অনুভব করলাম। এই প্রথম কেউ আমাকে এভাবে আদর করলো। অথচ কতগুলো বছর আমি তোর কাছে থেকেও এমন একটা উপহার পেলাম না। কতবার এমনটা কামনা করেছি, তুই বুঝতেই পারিসনি। লুসান নিতে জানে, তুই জানলি না। এই একটা চুমু দিয়ে লুসান আমার নারী সত্ত্বাকে জাগিয়ে দিল। আমার সমস্ত শরীরে তখন কামনার আগুন, আমি কি যেন এক স্বর্গীয় উন্মাদনায় কাঁপছি-সকল ইন্দ্রিয় অনুভুতি আমাকে উদভ্রান্ত করে তুললো। আমি লুসানের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম। পাগলের মতো ওকে আদরে আদরে উন্মাদ বানিয়ে দিলাম। লুসান আমাকে গভীর আবেগে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে বিছানায় নিয়ে গেল। প্রায় সারা রাত ধরে প্রথম নারীত্বের স্বাদ উপভোগ করলাম আমি সে রাতে। সকাল বেলা চোখ মেলে দেখি আমি তখনো লুসানের আলিঙ্গনে জড়িয়ে আছি। খোলা জানালা দিয়ে হালকা সূর্যরশ্মি প্রবেশ করছে, বাইরে সারি সারি পাইন গাছ, অচেনা কিছু পাখির কিচির মিচির শব্দ ভেসে আসছে। মনে হলো এমন সকাল বুঝি পৃথিবীতে আর একটিও আসেনি কিংবা আসবে না। লুসান ধীরে ধীরে চোখ মেলে আমাকে আলতো চুমু দিয়ে উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ থেকে আবৃত্তি করলোঃ
And vital feelings of delight
Shall rear her form to stately height,
Her virgin bosom swell;
Such thoughts to Lucy I will give
While she and I together live
Here in this happy dell
তুই বল অতনু, আমি কি কোন অন্যায় করেছি! আমার মধ্যে কোন পাপ বোধ জাগেনি এই ঘটনার জন্য। আমি যা করেছি তা তো প্রচন্ড আবেগে আপ্লুত হয়ে, তীব্র আকর্ষণ বোধে, স্বেচ্ছায় এবং বিষয়টা এক পাক্ষিকও ছিল না। বরং উভয়ের অংশগ্রহণ ছিল সমান ভাবে। আমি জানি তোর ভাবনাও আমার মতোই হবে। এর মাঝে তুই কোন অপরাধ খুঁজে পাবি না। এর পর কি হলো জানিস? দুদিন পর লুসান আমাকে বললো, “তুমি ইউরোপিয়ান হলে বলতাম, এসো আমরা একসাথে থাকি। কিন্তু আমি তোমাদের সামাজিক মূল্যবোধ সম্পর্কে জেনেছি বলে বলছি- তুমি কি আমায় বিয়ে করবে?” সেই মুহূর্তে আমার মনে হলো কেউ যেন এক সমুদ্র জল এনে আমাকে বলছে তুমি এর মাঝে নির্ভয়ে সাঁতার কাটো। কেন জানিনা আমার মনে হলো সম্মতি না দেয়ার কোন কারন আছে। বরং আমি লুসানের প্রতি কৃতজ্ঞ হলাম। ওকে বললাম, ক’টা দিন সময় দাও।
সেই সময়টা ছিল আমার জীবনের এক ক্রান্তি কাল। আমি আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম লুসানকেই বিয়ে করবো। কিন্তু তোকে আমি কি বলবো! তোর চেহারাটা বার বার আমার সামনে ভেসে উঠছিল আর আমি কেঁপে কেঁপে উঠছিলাম। দাদু ভাই কিংবা মামনিকে কি বলব? ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছি, এর পর থেকে দাদু ভাই আমাদের সব। সেই মুহূর্তে তোকে আমার বড় বেশী দরকার ছিল। অনেক ভেবে সিদ্ধান্তে আসলাম আমার এ যুদ্ধটা আমাকে একাই করতে হবে। আমার বিশ্বাস ছিল দাদু ভাই আমাকে বুঝবেন। একই সাথে তোকে আর দাদু ভাইকে লিখলাম। আমার কি পরম পাওয়া তোরা দু’জনেই সেদিন আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলি। তুই আমার সিদ্ধান্তকে কংগ্রাচুলেট করেছিলি আর দাদু ভাই মামনিকে ম্যানেজ করেছিলেন। দাদু মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন তার দিদি ভাই কখনো ভুল সিদ্ধান্ত নেবে না। এ রকম একজন মানুষের আদর-স্নেহ ক’জন পায় বল। তবে দাদুর একটু খটকা লেগেছিল, তার ধারণা ছিল তোর আর আমার সম্পর্কটা একদিন সফল পরিণতি পাবে। এজন্য তিনি লিখেছিলেন, অতনুকে জানিয়েছ? দাদু আমাদের দুজনকে নিয়ে যে ভাবতেন তা আমি নিশ্চিত হয়েছিলাম এয়ারপোর্টে, যেদিন আমি চলে এলাম।
আমার এই স্কলারশীপটা পাওয়ার পেছনে সবথেকে বেশী চেষ্টা ছিল তোর। অঁলিয়স ফ্রসেস, বৃটিশ কাউন্সিল আর ডিপার্টমেন্টের স্যারদের পিছে ঘুরে ঘুরে তুই এই অসম্ভব কাজটা সফল করে তুলেছিলি। সে সময় মাঝে মাঝে মনে হতো তুই কি কোন কারনে আমাকে দেশ থেকে তাড়াতে চাইছিস বা তোর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছিস! এতটা অকৃতজ্ঞ ভাবনা আমি ভাবি কি করে, তোর কি কোন কষ্ট হয়নি আমি দূরে চলে যাচ্ছি ভেবে! হয়েছে যে তা আমি অন্তত জানি। তুই নিজের জন্য এমন একটা চেষ্টা করলিনা কেন? আমরা তো একসাথেও যেতে পারতাম। আমার ফ্লাইটের দু’দিন আগে দাদু ভাই পলাশপুর থেকে আমাদের ঢাকার বাসায় এলেন তখন তুই ছিলি, দাদু তোকে যে কত ধন্যবাদ দিলেন আমার জন্য এতটা করেছিস বলে। তুই চলে যাবার সময় দাদু তোকে জিজ্ঞেস করলেন, “এয়ারপোর্টে আসছ তো অতনু?” তুই হ্যা কিংবা না কিছুই না বলে শুধু একটা কষ্টের হাসি উপহার দিয়ে চলে গেলি। তোর ঐ কষ্টের হাসিটার জন্য আমার সারা রাত ঘুম হয়নি, অনেক কেঁদেছিলাম। পরদিন দাদু হয়ত আমার ভেতরটা পড়তে পেরে আমাকে অনেক বুঝিয়েছিলেন, জীবনে চলতে গেলে কত কিছু ত্যাগ করতে হয়, তার জন্য কষ্ট পেতে হয়না, আপন জনদেরও ছেড়ে থাকতে হয়-এটাই জীবনের বৈশিষ্ট, যত বড় হবে তত দেখবে কষ্টের মাঝেও আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায়। এয়ারপোর্টে বোর্ডিং কার্ড নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম তোর জন্য, ভেবেছিলাম হয়ত আসবি। আমি অস্থির হয়ে চারদিক তাকাচ্ছিলাম। এক সময় আমার ফ্লাইটের যাত্রীদের ইমিগ্রেশন পার হতে এনাউন্স করতে লাগলো, তবুও তোর দেখা নেই। দাদু ভাই আমার মাথায় হাত রেখে বললেন, “অতনু আসবে না দিদি ভাই, তুমি এসো এবার।” আমি দাদুকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম। দাদু ভাই সান্ত্বনা দিয়ে আমাকে ভিতরে পাঠালেন। আমি পিছন ফিরে আর তাকাতে পারলাম না। মনে হলো তুই না এসে ভালই করেছিস। আমি হয়ত নিজেকে সামলাতে পারতাম না। দাদু তার গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে বুঝেছিলেন তোর আর আমার সম্পর্কটা আসলে কি। তুই যে আসবি না তা তিনি আগেই জানতেন।
সেবার যখন এলাম মামনির আকস্মিক চলে যাওযার পর, তখন তোর সাথে আমার দেখা হয়েছিল কিন্তু কথা হয়নি। আমার কাঁধে হাত রেখে বোবা উচ্চারণে শুধু সান্ত্বনা দিয়েছিলি। আমি তখন শোকে পাথর। ক’দিন পরেই ফাইনাল পেপার সাবমিশন তাই দাদু এক রকম জোর করেই আমাকে ফেরত পাঠালেন। আমি তখন তীর হারা সাগরে ভাসছি। লুসান আমাকে স্বাভাবিক করতে কিছুটা সহায়তা করেছে। ইউনিভার্সিটির কাজ শেষ করলাম। পি এইচ ডি ডিগ্রীটা পেয়ে গেলাম। লুসানই আমাকে একটা জব পেতে বেশ সহযোগিতা করলো। পি আর এর জন্য এ্যাপ্লাই করে রেখেছিলাম, সেটিও পেয়ে গেলাম। কিন্তু আমার পায়ের নীচ থেকে মাটি সরে যেতে লাগলো। হঠাৎ করে দেখলাম লুসান আমার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। কেমন যেন আনমনা হয়ে থাকে, আমাকে দেখেও দেখেনা, স্পর্শ করে না। আমি বেশ অবাক হয়ে জানতে চাইলাম কেন এমন করছে সে। লুসান জানালো, ক’দিন থেকেই সে ভাবছে আমাকে কথা গুলো বলবে আমার প্রতি ওর মুগ্ধতা কেটে গেছে, “কোন ভাবেই সে আর আগের মতো করে আমাকে নিয়ে ভাবতে পাচ্ছে না। এতে আমার কোন দোষ বা ভূমিকা নেই, সম্পূর্ণ ওর মনের ব্যাপার। এ অবস্থায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়াটাই দুজনের জন্য ভাল হবে।”
অতনু, এ কথা গুলো শোনার পর আমার অনুভূতি কেমন ছিল তা একমাত্র তুই বুঝতে পারবি। নিজেকে এত ছোট আর অপমানিত মনে হলো যা এ জীবনে কখনো হয়নি। তবে কোন রকম ভনিতা না করে সরাসরি সত্য কথাটা বলার জন্য লুসানকে মনে মনে ধন্যবাদ দিয়েছি। কোন রকম মুগ্ধতা কিংবা আকর্ষণ ছাড়া দুজন মানুষ কি করে একই ছাদের নীচে বসবাস করবে, সেটা এক ধরনের আত্ম-প্রবঞ্চণা নয় কি? বাঙ্গালীরা হয়ত নানা রকম বন্ধনের কারনে এভাবেও জীবন পার করতে পারে । কিন্তু ফরাসীরা এমনটা কেন করতে যাবে। একবার মনে হয়েছিল লুসান কি অন্য কোন নারীর প্রেমে পড়েছে, কিন্তু খতিয়ে দেখলাম তা নয়। মুগ্ধতা শেষ হলে একা থাকার অভ্যাস ওদের আছে, তার পর হয়ত অন্য কাউকে ভাল লাগলে তার সাথে থাকতে শুরু করবে। এটাই ওদের কালচার আর অমি সেই কালচারের নির্দোষ শিকারে পরিনত হলাম। আমার চারিদিক কেমন যেন শূন্য হয়ে গেল। মনে হলো যে জল এনে লুসান আমাকে নির্ভয়ে সাঁতার কাঁটতে বলেছিল, তার মাঝেই আমার সলিল সমাধি হয়ে গেল। আমি নির্বাক পাথরে পরিণত হলাম। অবশেষে একদিন এক এটর্নীর অফিসে ইমতিয়াজ আহমেদ এর একমাত্র কন্যা অপ্সরা ইমতিয়াজ আর লুসান ফারনান্দের আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ কার্যকর হয়ে গেল। অদিতি আর অনিন্দ্য সেখানে উপস্থিত ছিল। ওরা আমার দু’বছর আগে প্যারিসে এসেছে। ওদের দেখলে আমার তোর কথা মনে হয়। আমরা কি ওদের মতো এক সাথেই আসতে পারতাম না? দুজনে এলে আজ হয়ত আমার এমন পরিণতি হতো না। তুই আমার থেকে বেশী মেধাবী, রেজাল্টও ভাল। কিন্তু তোর রাজনীতির পোকা এসব কিছু ভাবতে দেয়নি। আমি তোর সে ভাবনাকে সম্মান করতাম বলে তোকে প্রভাবিত করতে চাইনি। অদিতি-অনিন্দ্য বন্ধুর মতো আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। ওরা আমাকে সাথে করে নিয়ে যেতে চাইল। কিন্তু আমার ভীষণ ভাবে একা থাকতে ইচ্ছে করছিল। তাই এভিনিউ আনাতোলেতে আমার নিজের ফ্ল্যাটে চলে এলাম। আমার বেডরুমের জানালা খুললেই চোখে পড়ে সেই বিখ্যাত সুউচ্চ স্থাপনা ইফেল টাওয়ার। যার বিশালত্বের কাছে নিজেকে নিতান্ত ক্ষুদ্র-অতি নগন্য মনে হতে থাকে।
আচ্ছা অতনু, তোর প্রতি যে অন্যায় আমি করেছি প্রকৃতি কি তার প্রতিদান আমায় ফিরিয়ে দিলো! এমনটা ভেবে আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল তোর জন্য। সারাটা বিকেল শুয়ে থেকে কখন রাতের এক প্রহর গড়িয়ে গেছে বুঝতে পারিনি। মাথাটা ঝিমঝিম করছিল, উঠে বাথরুমে গেলাম। আয়নার সামনে দাঁড়িযে নিজেকে দেখছি, দাদু ভাই নাম রেখেছিলেন অপ্সরা। আমি কি সেই অপ্সরা যার কাছে আসার জন্য এক সময় কতোনা তরুন কত রকম পাগলামি করেছে, শুধু আমার একটু প্রশ্রয় পেলেই কতজন যে প্রেম নিবেদন করতে প্রস্তুত ছিল। কিন্তু তোর মতো একজন ডাকসাইটে ছা্ত্র নেতার সাথে মিশতাম বলে সে রকম সাহস কেউ দেখাতে আসেনি। অথচ আজ বিদেশ বিভুঁইয়ে এসে এক ফরাসী যুবক আমার অহংটাকে মাটিতে মিশিয়ে দিল। এই প্রত্যাখ্যানের আপমান আমি কি করে সইব বল। আয়নার সামনে নিজেকে সম্পূর্ণ অনাবৃত করে দেখছি আর ধীরে ধীরে হাত বুলিয়ে যাচ্ছি নিজের ললাট-চিবুক-অধর-গ্রীবা। আমার সমস্ত সৌন্দর্যের প্রতিবিম্ব আমার চোখের সামনে, যার প্রতিটি ইঞ্চি জায়গায় তোর স্পর্শ লেগে থাকার কথা, আমার শিরা উপশিরায়, হৃৎপিন্ডের অলিতে গলিতে তোর অবাধ যাতায়াত সারাক্ষণ আমাকে সম্মোহিত করে রাখবার কথা। অথচ দেখ আজ আমার মন আর এই অপ্সরা শরীর যণ্ত্রণায় নীল হয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে। আমি অসহ্য যাতনায় কাঁপছি। এত তীব্র শীতেও শীতল জলের শাওয়ারের নীচে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বললাম, অ-ত-নু, তুই কি এখন এসে আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরবি, আমি তোর আগুন আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়ে এক সমুদ্র স্নান করে আমার মন ও শরীরের সকল পঙ্কিলতা দূর করে পুনরায় স্নিগ্ধ হবো, আসবি তুই?
জানি, আমার বোবা কন্ঠস্বর তোর কাছে পৌঁছেনি। এ ঘটনা তোকে জানিয়ে তোর কষ্টটাও বাড়াতে চাইনি। কিন্তু আমার দাদু ভাইকে তো জানাতেই হবে। তিনি ছাড়া আমার কষ্টের ভাগ বিতরণ করার মতো আমার তো কেউ নেই আর। আমি জানি আমার চিঠিটা পেয়ে তার মনের অবস্থা কি হয়েছিল। কিন্তু আমি যাতে ভেঙ্গে না পড়ি এজন্য তিনি আমাকে লিখেছিলেন, “জীবন বড়ই অমূল্য সম্পদ, তোমাকে সান্ত্বনা দেবার মতো মানসিক জোর আমার নেই, মনে করো এটা তোমার দেখা একটা দুঃস্বপ্ন মাত্র আর সেই দুঃস্বপ্নটাকে অতিক্রম তোমাকে করতেই হবে। শুধু বলবো, তুমি অন্তত জীবনের কাছে হেরে বসে থেকো না দিদি ভাই।” দাদু ভাইয়ের এই অমূল্য বানী আজও আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে অতনু। আমি তার কাছ থেকেই শক্তি পাই। এই মহান মানুষটা তার জীবনে সবথেকে বড় কষ্টটা সহ্য করেছেন-পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ, হ্যা আমার বাবার লাশ কাঁধে নিতে হয়েছে তাকে, দাদীমাকেও নিতে হয়েছে। সারাটা জীবন নিঃসঙ্গ থেকে মানুষের কাজ করে গেলেন। অথচ দেখ আমরা কেমন স্বার্থপরের মতো যার যার নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকলাম।
দাদু একজন জাদরেল পন্ডিত মানুষ। ব্রিটিশের রাজত্বে ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজীতে এম এ করেছেন। ব্রিটিশ রাজের অনেক বড় কর্মকর্তা হতে পারতেন। ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে যোগ দিতে পারতেন। তা না করে তোর মতো স্বদেশ স্বদেশ করে ইংরেজদের গোলামী প্রত্যাখ্যান করে পলাশপুরেই থেকে গেলেন। পলাশপুরের মানুষ তাকে দেবতুল্য করে রেখেছিল। একজন মানুষ কি করে আলো ছড়াতে পারে তার নজির দাদু দেখিয়ে গেলেন তার দীর্ঘ জীবন ধরে। তোকে বলেছিলাম, পলাশপুরে কেউ কলহে লিপ্ত হয়না, চুরি কিংবা ডাকাতির কোন দৃষ্টান্ত নেই। যেখানে ইউনিয়ন পরিষদে মানুষ কখনো ভোট দিতে যায় না। দাদু যাদের মনোনয়ন দেবেন তারা বরাবরই বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হয়ে যান, তাদের বিরুদ্ধে কেউ কখনো প্রতিদ্বন্দিতা করতে দাঁড়ায় না। কি এক মায়ার খেলায় দাদু সব মানুষকে অতি আপন করে নিয়েছিলেন। সেই মানুষটা পলাশপুর শুধু নয় আশপাশের কত গ্রামকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে দাদীমা, বাবা আর মামনির পাশে আমাদের পারিবারিক গোরস্থানে তার অতি প্রিয় ময়ূরাক্ষী নদীর কোল ঘেঁষে চির নিদ্রায় শায়িত হলেন।
তোর মনে আছে অতনু, তোকে একবার পলাশপুরে নিয়ে গেলাম। প্যারিসে যাবার কিছু দিন আগে সেটা ছিল আমার এক ধরনের পাগলামী। মামনিকে বললাম পলাশপুরে যেতে ইচ্ছে করছে। মামনির তখন কলেজে পরীক্ষা চলছে, কোন ভাবেই তার পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু আমি জিদ ধরে বসলাম। অগত্যা মামনি বললেন তাহলে অতনুকে নিয়ে যাও। ওর সাথে কথা বলে দেখ কাল যেতে পারে কিনা। আমার গাড়ীটা নিয়ে যাও, ড্রাইভারকে ছেড়ে দিও, পরদিন গিয়ে আবার নিয়ে আসবে। মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি, আমি যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলাম। মনে মনে তো সেটাই চাচ্ছিলাম। তোর আর রাজী না হয়ে উপায় আছে? ঠিক হলো পর দিন ড্রাইভার চাচা মামনিকে কলেজে রেখে এসে আমাকে নিয়ে যাবে। মামনি বের হতেই আমি নিজেকে সাজাতে বসে গেলাম। আগুন রংয়ের একটা শাড়ী পড়লাম, ম্যাচিং ব্লাউজ, ঠোঁটে লিপস্টিক, কপালে লাল টিপ। হ্যা, নিজেকে এখন অপ্সরাই মনে হচ্ছে। সেটা ছিল মে মাস। আমি জানি তখন আমাদের কৃষ্ণচূড়ার বাগানটা লালে লালে আগুন হয়ে আছে। সেখানেই তোকে নিয়ে যাওয়ার প্রচন্ড ইচ্ছে আমার। কৃষ্ণচূড়ার লালের সাথে আগুন সাজে সজ্জিত অপ্সরাকে দেখে তোর কি ইচ্ছে করে তা দেখার জন্যই আমার এই খেলাটা ছিল সেদিন। ড্রাইভার চাচা আসতেই বেরিয়ে পড়লাম, পথে তোকে তুলে নিলাম। ঢাকা থেকে উদয়পুর দু’ঘন্টার পথ। এর পর পলাশপুরের দিকে রাস্তাটা নেমে গেছে। পথে আমাদের অতি প্রিয় ময়ূরাক্ষী নদী। নদীর উপর ব্রীজটা হওয়ার আগে আমরা খেয়া নৌকায় পার হয়ে বাকী পথ রিক্সায় বা পায়ে হেঁটে যেতাম।
আমার পাশে বসে তুই কি যেন ভাবছিস মনে হলো। আমার সাজের বাহার দেখে তুই কোন মন্তব্য করলিনা কেন বুঝতে পারিনি। ময়ূরাক্ষীর উপর ব্রীজটা এলে আমি গাড়ীটা দাঁড় করাতে বললাম। আমি তখন আনন্দে আটখানা। তোকে বললাম এই দেখ এই আমাদের ময়ূরাক্ষী, কি সুন্দর স্নিগ্ধ জল, দু’ধারে কত কত গাছ-পালা ঘর বাড়ী। ছবির মতো পরিচ্ছন্ন একটা গ্রাম। ব্রীজের উপর থেকে ডান দিকে প্রায় এক মাইল দূরে আমার দাদু বাড়ীর নারকেল আর কৃষ্ণচূড়ার বাগান দেখা যায়, তোকে দেখালাম। তুই ময়ূরাক্ষী ব্রীজের উপর দাঁড়িয়ে প্রাণভরে শ্বাস নিয়ে বললি, “কি চমৎকার একটা গ্রাম দেখালি, কতদিন এমন সাজানো প্রকৃতি দেখা হয়না।” ব্রীজটা পার হয়ে ডানে বাঁক নিয়ে গাছ-গাছালিতে ঢাকা মেঠো পথে আমরা দাদু বাড়ী পৌঁছলাম। দাদু সবে স্নান সেরে বই নিয়ে বসেছেন। গাড়ীর শব্দে বেরিয়ে এসে “দিদি ভাই” বলে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। বললাম, দাদু এই সেই অতনু যার কথা তুমি সহস্রবার শুনেছ, আজ দেখা হলো। দাদু ভাই তোকেও জড়িয়ে ধরলেন। দাদুর পাইক পেয়াদারা সব ছুটলো কেউ পুকুরে জাল ফেলতে, কেউ কচি ডাব পাড়তে, কেউবা মুরগী ধরতে। চা পর্ব শেষ করেই তোকে নিয়ে ছুটলাম আমার সেই কৃষ্ণচূড়ার বাগানে, যেখানে যেতেই তোকে নিয়ে আসা। সবগুলো গাছ ফুলে ফুলে পুরো বাগানটাকে রাঙিয়ে তুলেছে, কি যে এক প্রাণহরা অপূর্ব দৃশ্য। তুই একটু লাফিয়ে উঠে ডাল ধরে কিছু ফুল পেড়ে বললি, “খোপাটা বড্ড খালি খালি লাগছে, আয় পূর্ণ করে দেই। আমি খোপাটা এগিয়ে দিলাম, তুই ফুল গুলো গুজে দিলি। এমন ভাল লাগার অনুভূতি আমার জীবনে আর কখনো আসেনি। ডালপালা ভেদ করে আসা স্বল্প রোদে অপ্সরার শরীরের আগুন রং আর কৃষ্ণচূড়ার লালের আগুন তোর চিত্তে কতটা দোলা দিয়েছিল অতনু, তুই কি প্রাণভরে আমাকে দেখছিলি নাকি তোর চোখ লজ্জায় অবনত হয়েছিল? আমি বার বার মনে মনে চাইছিলাম তুই আজ অন্তত আমাকে একটা কিছু বল। এখানে, এই ত্রিমুখী আলোর সঙ্গমে আমাকে জড়িয়ে ধরে তীব্র এক চুম্বন এঁকে আমাকে সারা জীবনের জন্য নিজের করে নিতে ইচ্ছে করছে না তোর? কেন তুই আমাকে জোর করে বলছিস না, “প্যারিসে গিয়ে তোর কাজ নেই, এখানেই-এই অতনুর বাহুডোরে বন্দী হয়ে থাক।” কথা গুলো বলার মতো এমন যাদুকরী প্রকৃতির মায়ার পরিবেশ আর কোথায় পাবি অতনু? তুই একবার বললেই আমি আমার সব কিছু ছেড়ে শুধুই তোর কাছে থেকে যেতাম। আমার চিত্তে তখন সাগরের সুবিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে বার বার কিন্তু তুই যেন স্থির-শান্ত। ধীরে ধীরে তোর দিকে তাকিয়ে দেখলাম তুই আনমনা, কি ভাবছিলিরে-কেউ কি তোকে দিব্যি দিয়ে মুনি-ঋষী হতে বলেছিল, কেন পারলিনা একবার আমায় আলিঙ্গনে আবদ্ধ করতে?
আমার ভীষণ লজ্জা লেগেছিল এই ভেবে যে, কেন তোর কাছ থেকে জোর করে কিছু আদায় করার চেষ্টা করছি। বিকেলে আমাদের বাড়ীর ঘাট খেকে নৌকায় চাপলাম তিনজনে। পড়ন্ত বিকেলে মায়াময়, স্নিগ্ধ ময়ূরাক্ষীর বুকে ভাসতে কি যে আনন্দ হচ্ছিল। দেখলাম তুইও আহ্লাদে আটখানা। তোকে আনন্দ দিতে পেরেছি ভেবে আমার মন ভাল হয়ে গেল।
দাদু ভাই শেলী’র কবিতা শোনালেনঃ
The fountain mingle with the river,
An the river with the ocen;
The winds of heaven mix fovever,
With a sweet emotion;
Nothing in the world is single;
Why not I with thine?
শেষ লাইনে দাদুর কন্ঠ বেশ ভারী হয়ে এলো। Why not I with thine? কেন আমি তোমার সাথে না। দাদু আমাদের সাহচর্যেও তার একাকীত্বের যন্ত্রনা ঢেকে রাখতে পারলেন না। আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল। দাদু বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি বললেন, “দিদি ভাই, এসো আমরা কোরাস গাই- আনন্দ ধারা বহিছে ভুবনে….। দাদুর সাথে আমরা সমস্বরে গাইলাম, তিনি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে গেলেন। দূরে ময়ূরাক্ষীর বুকে লাল সূর্যটা টুপ করে ডুবে গেল।
তুই জানতিনা যে আমরা রাতে থাকব। তাই এক কাপড়ে গিয়েছিলি। অবশ্য আমি ইচ্ছে করেই তোকে বলিনি। তোর জন্য রাতে ঘুমানোর পোশাক নিয়ে গিয়েছিলাম আমার ব্যাগে, আমার একটা ট্রাউজার আর একটু ঢিলেঢালা একটা টি-শার্ট, দেখে অবশ্য লেডিস টি-শার্ট বলে বোঝা যায় না। বাধ্য হয়েই তোকে পড়তে হলো যদিও আমার উপর একটু চটেছিলি আর আমি হাসছিলাম। আসলে আমি চাচ্ছিলাম তোকে আমার কাপড় পড়াতে। সকাল বেলা আমি স্নান সেরে তোকে ডাকতে গেলাম, তুই তখনো ঘুমে অচেতন, গায়ে আমার কাপড়, তা দেখে আমার শরীরের ধমনী গুলো শির শির করে উঠল। অদ্ভুত এক ধরণের শিহরণ অনুভব করলাম। আলতো করে মাথায় হাত রাখতেই তুই জেগে অবাক বিস্ময়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলি। আমি তখন সদ্যস্নাতা অপ্সরা, ভেজা চুলে টাওয়েল প্যাচানো, হালকা টি-শার্ট আর ট্রাউজার পড়ে আছি। আমি বললাম অমন করে কি দেখছিস? তুই লজ্জা পেয়ে বললি, “ভাবছিলাম স্বপ্ন দেখছি কি না।” আমার মনে হলো কেন তোকে বলতে গেলাম, আরও কিছুটা সময় না হয় তোর অপ্সরার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকতি। বললাম, “ফ্রেশ হয়ে নে, দাদুর সাথে নাস্তা সেরেই আমরা বেরিয়ে পড়ব।”
জানিস অতনু, সেই টি-শার্ট আর ট্রাউজার এখনও আমার কাছে ঠিক সে ভাবেই আছে। ওগুলো আমার কাছে অমূল্য সম্পদ। আমি মাঝে মাঝে বের করে তোর শরীরের ঘ্রাণ নেই। তোর প্রতিটা জন্মদিনে গায়ে দিই, মনে হয় তুই আমাকে জড়িয়ে ধরেছিস। আজ মনে হয় এই পাগলামি গুলো যদি সেদিন না করতাম তবে তোর স্পর্শটুকু পেতাম কি করে। এই যে আজ এত কথা তোকে লিখছি, আমার যে নিজেকে কতটা হালকা লাগছে আর কি যে ভাল লাগছে তা তোকে কি করে বোঝাবো। তোর কাছে আমি অনেক কৃতজ্ঞ যে তোর বাসায় খালামনিকে রেখে গিয়েছিস। নয়ত আমার এই অজস্র ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দুঃখ কিংবা সুখানুভূতি যা আমার ভিতরে পুঞ্জীভূত হয়ে ছিল এত দিন, তা তোর কাছে না বলাই থেকে যেত আজীবন। এত দিন পর পলাশপুরে এসে স্মৃতি তাড়িত হয়ে শুধুই তোর কথা মনে এসেছে বার বার । তাই তোকে খুঁজে পেতে মরিয়া হয়ে শেষ পর্যন্ত ঠিকানা পেলাম, কিন্ত তোকে পেলাম না। হয়ত সেটাই ভাল হলো। তোর সাথে হয়ত আর দেখা হবে না কখনো। কিন্তু যোগসূত্রটা ছিন্ন করতে আমার ভীষণ কষ্ট হবে রে, তাই আমাদের হাজার মাইল ব্যবধানের সেতুবন্ধন হিসেবে আমার ই-মেইল আইডিটা চিঠির সাথে তোকে দিয়ে গেলাম।
পলাশপুরে দাদুর বিশাল সাম্রাজ্য ট্রাস্টে রূপান্তরিত হয়েছে। দাদুর প্রতিষ্ঠিত পাঠাগার, স্কুল আর কলেজ এই ট্রাস্টের আওতায় থাকবে, বাড়ীটা হবে একাধারে অফিস আর অনাথ শিক্ষার্থীদের হোষ্টেল। আমার জন্য দোতলায় দুটো রুম থাকবে। দাদু চলে যাবার আগেই সব ব্যবস্থা করে দিয়ে গেছেন। আমাকে করেছেন ট্রাস্টের প্রধান। আমার অনুপস্থিতিতে একজন ম্যানেজার সে দায়িত্ব পালন করবেন। ভাবছি আমাদের ঢাকার র্যাংকিন স্ট্রীটের বাড়ীটাও ট্রাস্টকে দিয়ে দেব। আমার মনে হয় তুই যদি এই ট্রাস্টের দায়িত্বটা নিতি তবে সব থেকে ভাল হতো। তোর মতো ভাল কাজ আর কেউ করতে পারবে বলে আমি মনে করিনা। হয়ত বলবি আমি কেন দায়িত্বটা পালন না করে পালিয়ে যাচ্ছি। তোকে সত্যি কথাটা বলি- আমারও ভীষণ লোভ হচ্ছে পলাশপুরে থেকে যেতে। বিশাল এক সম্মান আর গুরু দায়িত্ব দাদু আমাকে দিয়ে গেলেন। পলাশপুর আমার শেকড়ের ঠিকানা, তাকে অস্বীকার করবো কি করে! কিন্তু সেখানকার এত গুলো সহজ সরল মানুষের কাছে গ্লানিকর অতীত জীবনটা প্রকাশ করতে ভীষণ কষ্ট হবে আমার, যে গ্লানি আমার একান্ত নিজের তা নিজেই বহন করতে চাই। তাছাড়া তোর সামনে দাঁড়াবার মতো যথেষ্ট মনোবল আমার আর অবশিষ্ট নেই। ক্ষনিকের মোহে একজনকে জীবন সঙ্গী করে যে অন্যায় আমি তোর সাথে করেছি তার প্রায়শ্চিত্ত যে আমাকেই করতে হবে। নিজেকে আমি ক্ষমা করি কি করে বল? তাই তোর সাথে অনন্য জীবন কাটাবার তীব্র ইচ্ছেটাকে গলা টিপে হত্যা করে ফিরেই গেলাম।
এত আয়োজন করে যে স্বপ্নের শহর প্যারিসে গেলাম সেখানেও আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এখন। সে শহর আমাকে যা দিয়েছে তার থেকে কেড়ে নিয়েছে অনেক বেশী-তা হলো তুই। আমাকে সর্বস্বান্ত করা সেই শহরে আমি থাকি কি করে বল? কানাডার দুটো ভার্সিটিতে এ্যাপ্লাই করেছিলাম, একটা টরোন্টো তে আর একটা এডমন্টন-আলবার্টায়। দু’জায়গা থেকেই ডাক এসেছে। টরোন্টো আমি প্রেফার করছিনা কেননা সেখানে অজস্র বাঙ্গালীর বসবাস। আমি এখন অহেতুক কৌতূহল দেখানো মানুষদের এড়িয়ে চলতে চাই। সিদ্ধান্ত নিয়েছি কনকর্ডিয়া ইউনিভার্সিটি অব এডমন্টন-এ জয়েন করব। শান্ত নিরিবিলি একটা পরিচ্ছন্ন শহর, বাঙ্গালীর সংখ্যা নিতান্তই কম বলে আমার ধারণা। গত বছর ফল সিজনে ওদের আমন্ত্রণে গেস্ট টিচার হিসেবে গিয়ে তিন মাস থেকেছি। ইউনিভার্সিটির লোকজন, পরিবেশ, বিশেষ করে শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমার অনেক ভাল লেগেছে। এডমিষ্টন স্ট্রীট এপার্টমেন্ট-এ আমার থাকার ব্যবস্থা ছিল। দীর্ঘ রাস্তার পাশে সারি সারি এক রকম গাছ দেখেছি, নাম “আরবান ক্যানোপি”। দেখতে ঠিক আমাদের কৃষ্ণচূড়ার মতো নয়, রক্ত রাঙা ফুলও হয়না। সেই গাছের সাথে আমার জীবনের সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছি। ফল সিজনে সবুজ পাতা গুলো রঙ্গীন হয়ে ওঠে তার পর বিবর্ণ হয়ে ধীরে ধীরে ঝরে পড়তে থাকে। এই যে রাঙা পাতা গুলো বিবর্ণ হয়ে ধীরে ধীরে ঝরে যাচ্ছে এ যেন আমারই বিবর্ণ জীবনের প্রতিচ্ছবি। আরবান ক্যানোপি আমাকে পলাশপুরের কৃষ্ণচূড়ার মাদকতা কোনদিনও দিতে পারবেনা জেনেও আমি সেখানেই যাব। সেখানে আমার প্রাণের ময়ূরাক্ষী নদী নেই। আছে ছোট্ট একটা শান্ত গাঢ় নীল জলরাশির কার্লটন লেক। অনন্ত যৌবনা ময়ূরাক্ষীর কুলু-কুলু ধ্বনির প্রেমময় অনুভব কার্লটন লেক আমাকে কোনদিনও দিতে পারবেনা জেনেও আমি সেখানেই যাব। পড়ন্ত বিকেলে আরবান ক্যানোপি’র ছায়ায় তারই বিবর্ণ ঝরা পাতার উপর দীর্ঘ পথ আমি নির্জনে একাকী হাঁটবো। যদি কখনো ক্লান্ত পথিকের মতো মাঝ পথে বসে পড়ি, তুই কি এসে আমার হাত ধরে বলবি,“ চলো পথিক, বাকিটা পথ আমরা একসাথে হেঁটে যাই?”
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..