কেউটে ও ব্যাঙ

মানবেন্দ্র সাহা
কবিতা
Bengali
কেউটে ও ব্যাঙ

রোদবৃষ্টির বেলা

মালসাভর্তি রোদ্দুর নিয়ে এসেছি তোমার ছাদে। কাপড় মেলতে এসে ওভাবে থমকে দাঁড়ালে কেন? যেন কথাই ছিলোনা আসার! অথচ জানতেই তো একটা বদমতলব বাতাস এসে উড়িয়ে নিয়ে যাবে তোমার ক্লিপ না আঁটানো শাড়ি, আর আমার মাথার মধ্যে তখন ঘুরপাক খাবে বানানভুল একগুচ্ছ। চাইলেই একদৌড়ে গিয়ে ধরে ফেলতে পারি তোমার ভিজে আঁচল। কিন্ত এরম বানান ভুল নিয়ে কতটুকুনই বা দৌড়ানো যায় বলো, বরং উড়ছে উরুক, বরং এক ঝলক চোখ বুলিয়ে নিই মুঠোয় ভরা অশান্ত পদ্মপুকুরে।

ঝুপ করে একটা লাজুক বকুল কুঁড়ি এসে পড়ল আমার ডানদিকের চোখে। প্রথমটাই ভয় পেয়ে গেছি। তারপর আবার একটা, এবার বাম চোখে। পরপর বেশ কয়েকটা চুমুর মত গালের পাশ দিয়ে এসে কামড়ে ধরলো ঠোঁট। বরাবর আমি ভুল করি শব্দচয়নে। তাই হাবার মত চেয়েই রইলাম সেদিকে। খেয়াল করিনি বৃষ্টি নেমেছে কখন। যতক্ষণে হেঁচকা টানে কাছে ডাকলে, ততক্ষণে মালসা আমার ভিজে ডবডবে। মেখে নিলাম তখন শেষ রোদ্দুরটুকু দুজনে মিলে, আর তোমার ভিজে যাওয়া আঁচল থেকে ক্রমাগত গড়িয়ে পড়তে লাগল চঞ্চল শ্রাবণমাস। চিলেকোঠার সে আলোআঁধারিতে তখন দেখলাম অন্ত্যমিলের যে শব্দটা এতদিন ধরে খুঁজে পায়নি কোথাও, সেটি আসলে লেগে আছে তোমার ভিজে ঠোঁটের কোনে।

 

রেইনি ডে

আঙুলের পাশে প্রিয় ঋতুর ফল
বেশি বেলায় জলখাবারের উপর দিয়ে
তুমি আঁচল উড়িয়ে চলে যাও
আর ঘোলা হয়ে আসে নির্বান্ধব আকাশ
স্লিভলেস থেকে ক্রমশ ডাগর মেঘ বৃষ্টি হবে আজ
উল্টোদিকের ফ্ল্যাটে ভাড়াটে কোন্দল নিয়ে
বারান্দায় হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে ভিজে প্যান্টি
শহর আজ জলের নিচে
সারাদিন এফ এম চালিয়ে পেট ভরাতে ভরাতে
যেই ঠান্ডা আপেলে যেই কামড় দিয়েছি
ওমনি তুমি চুলের ঘাঁটি ধরে নাড়িয়ে দিলে
–কি হচ্ছে কি, লাগে না?
ও বাড়ির বারান্দায় হেসে লুটোপুটি ভিজে প্যান্টির
–ও মা কলেজ যাচ্ছি
কালো টপ আর শর্ট জিন্সের কিশোরী
ছপছপ করে জল ভেঙে এগিয়ে যায় জলের ভিতর
আর কড়াইতে ছ্যাঁক করে ফোড়ন পড়তেই
ফিক করে হেসে ফেলে ভিজে বারান্দা।

 

কেউটে ও ব্যাঙ

এইভাবে ঝরে যায় সকল অভিমান।
সারারাত ধরে বৃষ্টির সাথে যুঝতে যুঝতে
নিভৃতে নি:শব্দে ঝরে যায় কেশবীথি
ঝরে যায় ব্লাউজের হুক
ক্লান্ত হাতের উপর হলুদ বাবলাফুল পড়ে থাকে
ভিজে ডবডবে রাস্তায়
আমি বাসি বিছানায় হাত বুলিয়ে দিই
উঠে আসে একটা কোমরের বিছে
টুং করে শব্দ হয়
কালভার্টে ঢিল ছুড়ে দেয় দুরন্ত বালক
আর ভিজে ট্রেন আসে শিস দিতে দিতে
এইভাবে বুক খালি করে ঝরে যায় সকল অভিমান
ডানা ঝেড়ে জল থেকে উঠে আসে ঘুমভাঙা হাঁস
আর ফাতনা কেঁপে যায় জলে
টুপ টুপ করে ঝরে পড়া জল
বাতাবি গাছের নিচে ভেঙে যায় কাঁচের মত
আর সকল অভিমান ভুলে
ভিজে পাতার উপর দেখা করে আসে
কেউটে ও ব্যাঙ

 

গঙ্গা আরতি

রাত্রি কিশোরী হলে চাঁদের পাশে ফুটে ওঠে শিউলির রাত, আর আমার পাশে শুয়ে থাকে আলসেমি জড়ানো প্রিয় ধ্বনিটি। আমি ঘুমঘোর চোখে বঁড়শির ডগায় তখন চাঁদ নামিয়ে আনি পৃথিবীর বুকে। সারারাত জাহ্নবী সাজাই পূজারীর মত। সারারাত বুকের উপর শুয়ে শুয়ে ওম মাপি। ছাদহীন মশারির গায়ে অজস্র জোনাকি জ্বলে উঠলে তুমিও ছলকে ওঠো কিশোরীর মত। তখন অন্তহীন মন্ত্রোচ্চারণে আমার শান্ত শিকারায় সেজে ওঠে অজস্র আরতির দীপ। দপ করে জ্বলে ওঠে তোমার পরাগমধুর ঠোঁট। আমি কৃপাপ্রার্থী হয়ে নতজানু হই আর তুমি হাত বুলিয়ে দাও আমার কেশমূলে।

মানবেন্দ্র সাহা। কবি। জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গরাজ্যের বীরভুম জেলায়। কর্মসুত্রে কোলকাতা নিবাসী। অধ্যাপনার পাশাপাশি নিয়মিত কাব্যচর্চা করেন। প্রকাশিত বই: 'রাত্রির কথা ক্লান্তির কথা' (কাব্যগ্রন্থ)।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..