ঝরা শিউলি
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
‘না, না, একটু দেরি হবে ফিরতে… একটা মিটিং এ আমি, বনানীতে… ডিম? আচ্ছা, নিয়ে আসব। আর কিছু?… বাবুর প্রজেক্টের জন্য চার্ট পেপার? সেদিনই তো কিনলাম। আচ্ছা, ঠিক আছে…’ দেখা যায় না বলেই মিথ্যা বলতে হবে! কারণে অকারণে বানিয়ে কথা বলা। গ্রিনরোডে বসে বলছে বনানী!
ডাক্তারের চেম্বারে বসে অপেক্ষার ফাঁকে বই পড়ার চেষ্টা করছিলাম। পেতে রাখা চেয়াগুলো খুব সুন্দর, অন্যরকম। উপর থেকে পড়া আলো চেয়ারের ডিজাইনের ফাঁক গলে নিচে চমৎকার নকশা তৈরি করেছে। কথা শুনে পেপার মোড়ানো বইটা থেকে লোকটার দিকে তাকাতেই চোখাচোখি। কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই, বরং একটা হাসি দিল।
‘আমি সেদিন আসছিলাম। নয়তো ও আমার সাথে যেতে রাজি হচ্ছিল না। আমাকে চেনে না, ওর মতো একটা গাদধুকে কনভিন্স করা আমার দুই মিনিটের কাজ। ওর সারল্য আমাকে টানে, চারপাশের কূটবুদ্ধির মানুষ দেখতে দেখতে ক্লান্ত আমি এই টানেই ওর কাছে যাই।’ প্রথমবার তাকিয়েছিলাম এটা শুনেই, কী আত্মবিশ্বাস গলার স্বরে! আকর্ষণীয় থ্রোয়িং, কথার জাদু জানে, তবে একটু হড়বড় করে কথা বলে। মাথা ছোলা। হয়তো এটাই ফ্যাশন। বয়স ৪২/৪৫।
আমার সিরিয়াল ৫, সময় দিয়েছিল ৮:৩০। অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা চলে আসায় একটু আগেই পৌঁছে গিয়েছি। ভীড় নেই, কখনোই থাকে না। চারপাশের ভীড়ে অভ্যস্থ আমি এখানে কম মানুষে অবাক হই। চোখ গেল অপেক্ষমানদের দিকে। বাবাই হবেন, অল্পবয়সী মেয়েটা তার কাঁধে মাথা রেখে বসা। ঝড়ে মাঝে মাঝে গাছ ভেঙে পড়ে। অপোক্ত শিকড়ের ছোট গাছগুলো বড় গাছের গায়ে অসহায় হেলিয়ে পড়ে। প্রচণ্ড নির্ভরতার পরও অসহায়ত্বটুকু নজর কাড়ে। এ যেন তেমন। পাশে মধ্য পঞ্চাশের দুজন খুব ঘেঁষে বসা, হয়তো স্বামী-স্ত্রী। ডালে পাশাপাশি বসা দুটো নিঃশব্দ পাখির নৈকট্য যেমন ভালো লাগার আবেশ ছড়ায়, এরা যেন তাই। বোঝা যাচ্ছে না কার সমস্যা। আর একজন ঝকঝকে যুবক। বেশ ফিটফাট। চোখাচোখি হতেই অদ্ভুত বিষণ্ণ চোখ। বুকটা ধক করে উঠেছিল। কী গভীর কষ্ট চাহনিজুড়ে।
মানুষ দেখতে ভালো লাগে। বসার ভঙ্গি কিংবা হাঁটা দেখে মন বোঝার খেলা। পঞ্চাশছোঁয়া স্নিগ্ধ সাজগোজ করা আফসানাকে প্রথম দেখায় এত বিষণ্ণ লেগেছিল। অথচ বেশ হাসছিল, কাঠের চামচে আলতো করে আইসক্রিম খাওয়ার ভঙ্গিটাতে কেমন একটা আগলা ভাব। তারপর থেকে প্রায়ই কথা হয়, ওর না ছোঁয়া বিষণ্ণতা টানে। মনে হয় জাদুর কাঠি ছুইয়ে সুখী করে দেই। যদিও সুখ লুকানো থাকে জীবনে, জাদুতে নয়।
ভেতর থেকে একজন বের হতেই ৩ নাম্বারের ডাক পড়ল। মাথা ছোলা ভদ্রলোক উঠে গেলেন। আমি আবার বইয়ে ফিরলাম। কিন্তু সুরটা যেন জায়গামতো লাগছে না। বার বার মনোযোগ সরে যাচ্ছে, পড়ি পড়ি করেও মনে পড়ছে না। প্রায় ৩৫/৪০ মিনিট পর লোকটা বের হবার সাথে সাথে একটা ৩/৪ মিনিটের আটকে পড়া রিল চলতে শুরু করল। পরিষ্কার ছবি, ভাঙা ভাঙা কথা… ‘প্লিজ বুড়ি, চল… , আমি আর কোনোদিন তোর কাছে… চাইব না। আমি কিচ্ছু… একটুও জ্বালাব না তোকে, কেবল দুজন একসাথে দুটোদিন থাকব।’ ঘড়ির পেণ্ডুলামের মতো মেয়েটা মাথা নাড়ছে, ‘জীবনেও না, কোত্থাও যাব না; মরে গেলেও না…’ হঠাৎই লোকটা ঝট করে হাঁটু গেড়ে নিচে বসে পড়ল। দুই পা চেপে ধরে একই অনুনয় করতে থাকলে মেয়েটা বিব্রত হয়ে চারপাশে তাকানোর সময় চোখাচোখি হয়েছিল আমার সাথে। কী গভীর দৃষ্টি! জল আটকে আছে। যেকোনো সময় টুপ করে ঝরে পড়বে। বৃষ্টির পর পাতায় জমে থাকা ফোঁটা ফোঁটা পানি নাড়া পেলেই যেমন টুপটাপ ঝরে পড়ে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলছিল এমন, আমি উল্টোদিকের টেবিলে বসে স্যুপ খাচ্ছিলাম। কী করা উচিত ভাবতে ভাবতেই দেখি পাশের টেবিলের এক ভদ্রলোক উঠে ওদের টেবিলের কাছে গেলেন। কিছু বললেন, শুনতে পেলাম না। মেয়েটার মাথা নাড়া দেখে বুঝেছিলাম রিফিউজ করছে। লোকটা তখনও পায়ের কাছে অনড়। রাজি না করিয়ে উঠবে না। মেয়েটিও দৃঢ়বদ্ধ; কিছুতেই মানবে না। ওই ভদ্রলোক নিজের টেবিলে ফিরে গেলে আমি আর আগ বাড়াইনি। কিন্তু মেয়েটার সেই দৃষ্টি বহুদিন তাড়া করেছিল আমায়। ভেতরে ভেতরে রাগ হয়েছিল। কী এমন ব্যাপার যে এত অসহায়! ডাক্তারের রুম থেকে যেইমাত্র দরজা ঠেলে লোকটি বের হলো, আমার সেলুলয়েডের ফ্রেম স্থির হলো। পা চেপে অনুনয় করা সেই লোক! সেদিন মাথায় চুল ছিল, আজ টাক্লু। একটু আগে ফোনের আলাপচারিতা কী সেই মেয়েটিকে নিয়ে? কী ঘটেছিল সেদিন। উঠে গিয়ে কথা বলব কিনা ভাবতেই আমার দিকে হাসিমুখে তাকাল। নিজের অজান্তেই উঠে লোকটির পাশে গিয়ে বললাম, ‘ভাই, একটু কথা বলা যাবে?’ ‘জি অবশ্যই’। একটু অবাক সম্মতিতে। ৪ নং রোগী ঢুকেছে, আমি তারপর। হয়তো ২০/২৫ মিনিট সময় পাব। অন্যদের থেকে একটু দূরে পাশাপাশি বসলাম। ততক্ষণে নতুন আরেকজন রোগী এসে বসেছেন।
আমিই শুরু করলাম। ‘খুব চেনা লাগছে, কিন্তু মনে করতে পারছি না। আপনি মাসচারেক আগে গুলশানে একটা রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিলেন, একজন ভদ্রমহিলা ছিল আপনার সাথে।’
তরিৎ জবাব, ‘হতে পারে। রেস্টুরেন্টে তো যাওয়া হয়ই।’
ভাবছি বলব কী না সেদিনের কথা… তারচেয়ে পরিচিত হই, তারপর দেখা যাক। নাম, ধাম, পেশা জানা হলো। ফোনে কথা শুনে মনে হয়েছিল মার্কেটিং এ ভালো করবে এই লোক। আসলেই তাই। নামকরা একটা কোম্পানিতে মার্কেটিং এ আছেন। টুকটাক কথা হচ্ছে। আমার সিরিয়াল চলে আসায় বিদায় নিয়ে ঢুকে গেলাম। ভাবছিলাম একটু দেরি হলে মন্দ হতো না। অন্যদিন বসতে বিরক্ত লাগে যদিও।
চার বছরে ডাক্তারের সাথে বেশ সখ্য গড়ে উঠেছে। ভালোই লাগে গল্প করতে। যদিও ডাক্তারের ভাষ্য অনুযায়ী আমার এখন যেকোনো একজন কাউন্সিলার হলেই হয়। তবু আমি আসি দুই/তিন মাস পর পর। শুরু হয়েছিল রুবাইকে নিয়ে রুমকির চলে যাওয়ার পর। এত বেশি ডিপ্রেসড থাকতাম যে মা আসতে বললে অমান্য করিনি। উপকার পেয়েছিলাম। তারপর এটা আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আজও সেদিনের স্মৃতি তাড়া করে। উফফ্। পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন মানুষ চেনা আর জানা। রুমকিকে বুঝতে আমি বড্ড বেশি সময় নিয়েছিলাম। জীবনটা পুরাই আউলে গেল সেই ভুলে। আমার রুবাই… আমার সোনাবাচ্চাটা…
ডাক্তারের রুমে বসে আমি পুরো পৃথিবী থেকে আলাদা হয়ে ঢুকে পড়লাম আমার নিজের রাজত্বে। সব জায়গায় চূড়ান্ত সফল এই আমি ব্যর্থ আমার নিজের ফ্যামিলিতে। রুমকি আমাকে হাজার প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে চলে গেছে। আনন্দহীন ভুবনে আমি প্রাণখুলে হাসতে ভুলে গিয়েছি। একজন মানুষের ভুল সিদ্ধান্ত অন্যজনের জীবন কতটা এলোমেলো করে দিতে পারে, মানুষ তা মনে রাখে না।
বের হতেই দেখি উনি বসে আছেন। হাসিতে বুঝিয়ে দিলেন আমার অপেক্ষায়। মনে হলো আমার জানার চাইতে তার জানানোর আগ্রহ কম নয়। ‘চলেন, এদের ক্যাফেটেরিয়ায় বসি।’ ক্যাফেতে বসে ভালো লাগল। বেশ পরিষ্কার। দুটো চা বললাম। ‘আর কিছু?’ প্রশ্ন করতেই ভদ্রলোক মাথা নাড়লেন। কিছুক্ষণ চুপচাপ, আইস ব্রেক করবে কে। শুরু করলাম আমিই।
‘আপনি এখানে রেগুলার আসেন?’
‘আরে নাহ।’
‘আপনি?’ উনি জানতে চাইলেন।
‘আমি আসি চার বছরের বেশি। প্রথমদিকে প্রতি পনেরো দিনে, তারপর মাসে একদিন। তারপর দুইমাসে একবার। এখন না আসলেও চলে, তবু আসি। ডিপ্রেশন। আপনার?’
‘আমি প্রথম আসি মাসতিনেক আগে। একজনকে খুশি করতে।’ বলেই মুচকি একটা হাসি দিলেন ইকবাল সাহেব।
‘খুশি করতে? অবাক প্রশ্ন করি।’
‘আমার গার্ল ফ্রেন্ডের ধারণা, আমার কোনো একটা সমস্যা আছে। ওই জোর করেছিল আসতে। সেদিন রাজি হওয়া ছাড়া আমার উপায় ছিল না। তাই আসা। দুজন একসাথেই এসেছিলাম। এক কলিগের কাছ থেকে এই ডাক্তারের ঠিকানা পেয়েছিল। ভাবলাম কী আর হবে। ওর গাঁজাখুরি ভাবনা মিথ্যা প্রমাণ হলে সাইজ করা যাবে।’
‘আপনি সিঙ্গেল?’ জানতে চাইলাম আমি।
‘না। আমার দুই মেয়ে। বড়টা ক্লাস সেভেন, ছোটটা ফোর এ পড়ে। বাচ্চারা খুব ব্রিলিয়ান্ট। বড় মেয়ে পর পর তিন বছর ওর ক্লাসে প্রথম, সব সেকশন মিলিয়ে। আমিও এই জীবনে যা করব ভেবেছি, ব্যর্থ হইনি কখনও। তবে মূল্যায়ন না হওয়ায় যেখানে থাকা উচিত ছিল, সেখানে পৌঁছাতে পারিনি। আমার ওয়াইফ গান করে, জবও করে। ওর গান লোকে বেশ পছন্দ করে।’
‘গার্ল ফ্রেন্ড আছে তারপরও!’
ইকবাল সাহেবের হাসিটা বেশ। হেসে জবাব দিলেন, ‘ছয়মাসের বেশি আমার কারো সাথে রিলেশনশিপ লাস্টিং করে না। কিন্তু এইবার যে আছে, আমি চাই তার সাথে অনেকদূর যেতে। অন্যরকম লাগছে, ভীষণ ভালো লাগা। যদিও এরই মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়েছে।’
‘আপনার বউ, মেয়েরা… ‘ কথা শেষ করা হয় না আমার।
‘আরে ভাই, ওদের জন্যই তো ছয়মাসের বেশি হয় না। বউ এমন হইচই শুরু করে টের পাওয়ার পর। আর কেমনে কেমনে মেয়েগুলোর পাত্তা জোগাড় করে এমন ঝাড়ি দেয় যে ওরা আর আমার সাথে যোগাযোগ রাখতে চায় না। এইবারও একই ঘটনা। অথচ এই মেয়েটা অন্যরকম। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, প্রচুর সময় ব্যয় করে এরে আমার বাগে আনতে হয়েছে। আর ওই যে আপনাকে বলেছি, আমি কোনো কাজ করব মনে করলে করেই ছাড়ি। ও-ও ছিল আমার চ্যালেঞ্জ। কিন্তু ইচ্ছামতো সাইজ করতে পারিনি। বোঝেন না, জিএফ এর কথায় সাইকিয়াট্রিস্ট এর কাছে পর্যন্ত আসতে হলো! কঠিন চিজ ভাই।’
‘কঠিন কেন?’ প্রশ্ন করি।
‘দেখলে বোঝা যায় না। কিন্তু ভীষণ রিজিড, হার্ড নাট। ভাঙে না সহজে। পুরোনো যুগের চিন্তাধারা নিয়ে চলে। মাঝে মাঝে ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছা করে। আমাকে সে বিএফ বলেও মানে না। তারপর একদিন এমন প্যাঁচে ফেলেছি… ছোটার উপায় নাই।’
খুব জানতে ইচ্ছা করছিল কী সেই প্যাঁচ। প্রথমদিনেই বেশি হয়ে যাবে ভেবে আর জিজ্ঞেস করা হলো না। রাতও হয়েছে। বিদায়ের আগে ফোন নাম্বারটা দিলাম, অফিসের দিকে এলে নক করতে। ভদ্রলোকও তারটা দিলেন।
কত রকমের মানুষ! সুখী সংসারের সাইনবোর্ড টানিয়ে চলে, পাশাপাশি বার বার জিএফ, বিএফ পালটায়। কোনো রকম লুকোছাপা না করেই তা সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষের সাথে শেয়ার করে। আজকাল এটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে যেন, একজনে তৃপ্ত নয়। জাহাজে বাস করেও নৌকা নিয়ে ভাসতে চায় অন্য কোথাও।
বাসায় ফিরে শাওয়ার, খাওয়া সেরে বারান্দায় আমি। দক্ষিণমুখি ফ্ল্যাটটা বড্ড প্রিয় এই জায়গাটার টানে। বহুদূর পর্যন্ত খোলা মোটামুটি তিনপাশ থেকে অনেকটা দেখতে পাওয়া যায়। মাথার উপরে আকাশটা খুব কাছের। ঘরে লিও’র প্যান ফ্লুট বাজছে। কিছু কিছু জানালায় আলো, ভীষণ নিশ্চুপ চারপাশ। এই রকম কিছু রাতে রুবাইকে ছুঁয়ে থাকতে ইচ্ছে করে, বুকে পুরে রাখতে ইচ্ছে করে। আমার জান, কলিজাটা আমার কাছ থেকে দূরে। প্রাণহীন জীবন বয়ে বেড়াচ্ছি। ‘বাবা দাবো, বাবা দাবো’ রেকর্ডটা বাজে মাথার ভেতর, মিউজিক ছাপিয়ে। আহ্!
এরমধ্যেই চোখে ভেসে উঠল সেই মহিলার ছবি। কী গভীর বিষণ্নতা! যদি জানতে পারতাম। কিন্তু ‘কোথায় পাব তারে’? এমন না ছোঁয়া, না জানা কত কত গল্প রয়ে গেছে!
পরের কয়েকটা দিন কাটল বেশ ব্যস্ততায়। একটা প্রেজেন্টেশন ছিল, মাথায় আর কিছুই ছিল না। অফিসের কাজে জুনিয়র কলিগকে পাঠিয়েছিলাম পুরানা পল্টন। ওর অংশ শেষে আমার পার্ট। অ্যাপয়েনমেন্ট আফটার লাঞ্চ। ভালোই হলো। দুটো সুবিধা- অফিসের কাজ গুছিয়ে বের হওয়া যাবে, ওখানে কাজ সেরে আর গুলশান ফিরতে হবে না। বেশ অনেক্ষণ কথাবার্তার পর মিশন সাকসেসফুল। বের হবার আগে ভাবলাম ওয়াশরুমটা ঘুরে যাই। সাব্বির ভাইকে বলতেই পিওন ডেকে দিলেন। হেঁটে যাচ্ছি। ওদিকে দাঁড়িয়ে কথা বলা মানুষটিকে দেখে মনে হলো চেনা। স্মৃতির সাথে যুদ্ধ জয়ে মনে পড়ল- সেই মেয়েটি। সাধারণত একবার দেখে কাউকে মনে রাখতে পারি না, এর বেলায় হয়তো ওর দৃষ্টির কারণেই মনে আছে। ভালো লাগায় ভরে উঠল মন। যা হয় ভালোর জন্য হয় কিংবা মন থেকে খুব করে কিছু চাইলে পাওয়া যায়- বহু ব্যবহৃত বাণীর সত্যতা খুঁজে পেয়ে আমি যারপরনাই খুশি। মেয়েটির সাথে কেন যেন কথা বলার প্রবল একটা ইচ্ছা হয়েছিল সেদিন ইকবালের সাথে কথা হবার পর থেকে। কিন্তু যা বর্ণনা শুনেছি, এ তো হার্ড নাট। ইকবাল না চাইতেই ঝাঁপি খুলে দিয়েছিল, এর দরজায় নক করলে আবার পুলিশে খবর দিবে না তো! ভাবতে ভাবতেই ওয়াশরুমে ঢুকতেই মন ভালো হয়ে গেল। ঝকঝকে। আমার মাথা ২৮০ কিলোমিটার বেগে কাজ করা শুরু করল। অনেক ভুলে যাওয়া কথা কিংবা কাজ মনে পড়ে এখানে ঢুকলে। হয়তো এই বন্ধ দরজার চৌখুপিতে বাইরের আমি’র সাথে ভেতর আমি ছাড়া আর কেউ থাকে না বলে। মনে মনে প্ল্যান ঠিক করে নিলাম।
সাব্বির ভাইয়ের রুমে এসে দু একটা কথার পরই জিজ্ঞেস করলাম, ‘ভাই, কলাপাতা সবুজ শাড়ি পরা ভদ্রমহিলা কোন সাইড দেখেন এখানে?’
‘ফাইনান্স এ আছে। কেন ভাই?’ এতক্ষণের চূড়ান্ত প্রফেশনাল সাব্বির ভাইয়ের গলায় স্নেহ ঝরে পড়ে।
‘না চেনা চেনা লাগছিল। কী নাম উনার?’
‘অনুভা।’ সাব্বির ভাই ছোট করে উত্তর দিয়ে তাকিয়ে থাকেন।
বুঝে যাই, মহিলার ব্যাপারে উনি বেশ প্রটেক্টিভ। প্রথম দেখা আমার সাথে এর বেশি বলারও নেই।
বললাম, ‘আসলে কোথায় দেখেছি মনে করতে পারছি না। উনি কি মিরপুরের দিকে থাকেন?’
সাব্বির ভাই জানান, ‘জি। ভীষণ কাজের। খুব কোঅপারেটিভ। এবং সাহসী।’
ভালো লাগে শুনে। আড়ালে বস যখন এভাবে প্রশংসা করেন, তখন তার গুণাবলী নিয়ে প্রশ্ন থাকে না।
হঠাৎই উনি বলেন, ‘ডাকি, পরিচিত হয়ে যান।’
মেঘ না চাইতেই জল! আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে।
ইন্টারকমে সাব্বির ভাই ‘একটু রুমে আসবেন?’ ডাকলে অনুভা দরজায় নক করে ঢোকে। পরিচয় করিয়ে দেন। বেশ কিছুদিন আমরা একসাথে কাজ করব জানার পর অনুভা প্রজেক্ট নিয়ে দুএকটা প্রশ্ন করে।
ভালো লাগে অনুভাকে। নিজের কাছে অবাক লাগে। ওর গল্পটা ভীষণ জানতে ইচ্ছা করছে। আস্থা অর্জন ছাড়া সম্ভব নয়। তার জন্য সময় প্রয়োজন। সেটা কী করে… মনে মনে হাল ছাড়ি না। সবুরে মেওয়া ফলে। অপেক্ষা করলে সময় বা সুযোগ আসবেই। আমাকে তাড়া করা অনুভা’র দৃষ্টির গল্পটা জানার জন্য একটু অপেক্ষা করা যেতেই পারে…
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
শেষ থেকে শুরু। আমি রজকিনী রামী,ধোপার বংশে জন্ম আমার।ঘাটে সখিদের সঙ্গে কাপড় কাচি। একাজটা আমি…..
মালঞ্চার পথে ভোরবেলা। সূর্য সবে উঠছিল। বৈশালী দূর থেকে দেখতে পেল,বুনিয়াদপুর বাসস্ট্যান্ডে বালুরঘাটের দিকে মুখ…..
আমার বাবা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন লড়াকু মনের মানুষ।শত অভাব অভিযোগেও তাকে কোনোদিন ভেঙ্গে…..