আমি জানতাম না চব্বিশের জুলাইটা এত দীর্ঘ হবে
আমি জানতাম না চব্বিশের জুলাইটা এত দীর্ঘ হবে, আমি জানতাম না, অগাস্টকেও রাহুর মত গ্রাস…..
মানুষের আলোর পাশে নিজস্ব ছায়া নিয়ে বসে থেকে থেকে, যখন লগ্নভ্রষ্ট হলো, সকলেই গলিতে ঢুকে ঠিকানা খুঁজে নিল, আমি থেকে গেলাম বড় রাস্তায়।
একটা মরিচ শুকোতে দেয়া কাঠবেড়ালি ছাদ, জং ধরা নেমপ্লেট, সদ্য রঙ করা অর্ধেক বাড়ি, খুঁজে নিল সবাই।
আমি থেকে গেলাম বড় রাস্তায়।
একটা কদমতলা, একটা সিনেমা হলের পরের বাড়ি, একটা ভাঙা কালভার্ট, খুঁজে নিল। মানুষের আলোর পাশ থেকে আমার ছায়া হারিয়ে গেছে। থেকে গেছি বড় রাস্তায়।
একটা নীল ঢপকল, একটা ডাক্তারবাড়ি, নতুন মসজিদ, সেবা হোমিওহল, খুঁজে নিয়ে সবাই ঢুকে পড়লো।
এদিকে মানুষের আলোর পাশ থেকে আমার ছায়া হারিয়ে গেছে।
পুরাতন বাজার, লালদালান, মজাপুকুরের ধার থেকে তোমরা আমাকে নিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখো।
তোমাদের কাঠেরপাল্লার জানালা খুলে একটু বাতাস নাও। ভাবো, আমি কোথায় আছি।
তোমাদের টানা বারান্দায় হেঁটে আসো, আমি কেমন আছি। লোহার ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে ভাবো, আমি বেঁচে আছি কি না।
আমাকে নিয়ে দুঃস্বপ্ন লিখো। আমি গিয়ে নিয়ে আসবো আমার প্রিয় ঠিকানা।
পৃথিবীর কোন শান্ত-গভীর জলের ঘর, আমার হলো না। তীব্র খাদের মতো ঘর, শূন্য হলেও কী অস্থির।
অন্যবাড়ির আলোর বিপরীতে আমাকে দেখা যায়। আমার চুল থেকে কপাল, নাক থেকে ঠোঁট নেমে গেছে। এমুহূর্তে সেকথা কেউ জানে না। আমার নিজেরই আঙুল জট পাকিয়ে আমার বুকের কাছে। সেকথা এমুহূর্তে কেউ জানে না।
ওবাড়ির নকশাকাটা বারান্দার চারধার, ছায়া হয়ে আমার মুখে চেপে বসেছে। আমার ঠোঁট নাক চোখ তাতে বাঁধা, এমুহূর্তে কেউ তা জানে না।
শেষ-বয়সের কাশি, শিশুর কান্না, রান্না, সমস্ত চিৎকার ছুটে ছুটে আমার দিকে আসে। চকমকি বেলুন, করতালি আর তীব্র চমকানো মুখ কেবলই আমার দিকে আসে। এসে এসে চমকে যায়।
আমার চোখ নাক ঠোঁট কেবলই ঢাকা পড়ে থাকে, উদোম ছায়ায়।
মৃত্যুকে দেখতে ঘুমের মতো। আর নির্বাসন এক মৌনব্রত!
আমের মঞ্জরী নিয়ে গানটা আমার বাবা গাইতো। তারপর যখনি মঞ্জরীতে গাছ ছেয়ে যেতো, বাবার গায়ের গন্ধ আমের মঞ্জরীর মতো হয়ে যেতো।
ছুটির দিনে আমার প্রতিরোধ ভেঙে আমাকে নিয়ে যাওয়া হতো বরফ দেয়া মাছের বাজারে। তারপর যখনি সেই ভেজা ভেজা মাছের বাজার, তখনি হলুদ বাতির নিচে আমার বাবা দাঁড়িয়ে থাকে।
বহুদিনের জমানো সমুদ্রের পাড়ে চাঁদ অথবা তারার আলোতে আমি আর বাবা কোন কথা বলি নি। তারপর যখনি সাগরে রাত হয়, আমরা বসে থাকি ভাড়া করা কাঠের বেঞ্চে।
আমার বয়স যখন সাতাশ, বৈশাখ মাসের কোন কোন রাতে ঝড় ওঠে। বিদ্যুৎ চমকায়। বাজ পড়ার শব্দে ছোটবেলার কোন কোন জানালার ঝাপসা কাঁচ দিয়ে আমার চোখের সামনে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে। ঝাপসা কাঁচের অপরপাশে আমার বাবা সবুজ হ্যারিকেন জ্বালায়। কেরোসিনের গন্ধ নিয়ে আমার বাবা আসে।
আমার বয়স যখন সাতাশ। আমাদের বাসায় কেউ গান গায় না। আমাদের বাসায় কারো তাল কাটে না। আমাদের বাসায় কোন সুর নাই। কথা নাই।
আমার বয়স তখন সাতাশ। আমি তখন মূক ও বধির। বহুদিনের জমানো পাহাড়ের খাদের অন্ধকারে আমি আর বাবা কোন কথা বলি না। আমরা দাঁড়িয়ে থাকি অমাবস্যা রাস্তায়।
আমি জানতাম না চব্বিশের জুলাইটা এত দীর্ঘ হবে, আমি জানতাম না, অগাস্টকেও রাহুর মত গ্রাস…..
অভিশাপ মেঘের ভেলায় নিঃশ্বাসে ক্লান্তির ছাপ সবুজের নীড়ে আপন ঠিকানার খোঁজ এক ফালি সুখের নেশায়…..
পাখি দম্পতি পাখি গিয়েছিল কতদূর বনে তা কারো নেই জানা। ঠোঁটে ধরা লাল টুকটুকে ফল…..
তারা যেমন বলে, চোখে ধুলো দিলে থেমে যাবে আমার কাব্যময়তা অথচ আমি প্রামান্য দলিলের নই…..