করাচিতে নজরুল
করাচি বন্দরে এককালে গ্রিক-পারসিক-আরবীয় সওদাগরেরা নোঙ্গর করেছে; অনেক স্থাপত্য চিহ্ন আজো রয়ে গেছে; যা…..
পৃথিবীতে এসে আমরা সত্যি খুব বিরক্ত। নিজের কারণে নিজের উপর বিরক্ত। অন্যের কারণে অন্যের উপর বিরক্ত। অন্যের কারণে নিজের উপরেও বিরক্ত। আমাদের আছে স্বার্থ, ইচ্ছা, পছন্দ, দ্বেষ, প্রেম, ধর্ম, দিন, রাত, আরও কত কি! নানান বৈপরীত্যের মাঝে আমরা শুধু সুখটুকু নিয়ে পৃথিবীর উপরে বেঁচে থাকতে চাই। আমাদের সেই চাওয়া কখনও মিলে যায়, কখনও মেলে না। তবু আমরা পৃথিবীর উপরে বাঁচি।
আমাদের পায়ের নিচে ফুটন্ত লাভা। মাথার উপরে অনন্ত নীল হাহাকার। আমরা অসীম শূন্যতার মধ্যে আশায় বাঁচি। আশাহীনতার বিপরীতে দুরাশার ঝাণ্ডা তুলে ধরি। আমরা জন্ম আর মৃত্যুর মাঝখানে বসে অন্ধচোখে অমরত্ব খুঁজে ফিরি। আমরা পরস্পরের খাদ্য হয়ে বেঁচে থাকি। পৃথিবী আমাদের সেইভাবে বাঁচিয়ে রাখে। এখানে একজনের মৃত্যু আরেকজনের জীবনকে নিশ্চিত করে। এখানে স্বৈরাচার বেঁচে থাকে প্রতিবাদী মানুষের রক্তের বিনিময় মূল্যে। আবার কুশাসকের মৃত্যু-পতনেও বেঁচে যায় অগুনিত প্রাণ। এখানে হরিণ না মরলে বাঘ বাঁচে না। এখানে পিতা না মরলে পুত্র তার সম্পদে নিরঙ্কুশ অধিকার বুঝে পায় না। এখানে ব্যাঙ খাদ্য হয়ে বেঁচে থাকে বিষাক্ত সাপের রক্ত প্রবাহে।
এমন একটা পৃথিবীর বাঁকা পিঠের উপরে ঘর বানিয়ে বেঁচে থাকে মানুষ। ভালবাসার হাত ধরে রসাল স্বপ্ন দেখে। সে কি তবে আলাদা? সবার ভিতরে থেকেও আলাদা? পৃথিবী কি তাকে ভিন্ন আমেজে বানিয়েছিল? তা কী করে হয়? অগুনিত পশুপ্রাণ বলী হলে পরে তার পুণ্যের ঝুলি কিছুটা ভরে। দেব-দেবিরা আগে হাসতো মানুষের রক্তে। এখন হাসে পশুর রক্তে।
এই তো সেদিনের কথা, পাপুয়া নিউগিনির একটা আদিবাসী তাদের মৃত স্বজনদের মাংশ খেতো উৎসবের আনন্দে। মাত্র তিনযুগ আগের কথা, সিঙ্গাপূরের ছয় বন্ধু সহযোগী ব্যবসায়ী তাদের ষষ্ঠ বন্ধুকে জবাই করে তার মাংশ খেয়েছিল উৎসব করে, নিভৃতে। নিষ্ঠুরতা উদ্ধারে পুলিশের সময় লেগেছিল দশ বছর। পৃথিবীর কিছু প্রাণী এখনও ক্যনাবোলিক। আগামীতেও থাকবে। খাদ্যের প্রয়োজনে বা হিংসার যজ্ঞে তারাও মাঝেমধ্যে স্বজাতি নিধন করে, তবে এত ব্যপক মাত্রায় স্বজাতি নিধন শুধু মানুষই করে, করেছে ও আগামীতেও করবে, তার লক্ষণ স্পষ্ট। পাঁচ মিলিয়ন ইহুদী নিধন, এক মিলিয়ন এর্মেনীয়, তিন মিলিয়ন বাঙালী, সেসব মানুষই করেছে। মুক্তিযোদ্ধা মেরে, ভিন্নমতের মানুষ মেরে সে বন্দুকযুদ্ধের গল্প ছেদেছে।
নির্বিচারে স্বজাতি হত্যা আর তার মাংশ খাওয়ার ভিতরে তেমন ভেদ দেখি না। পশুরা এই মাত্রার রক্তপিশাচ নয়। বন্ধ হোক পাপে-পূণ্যে, ভালবাসা প্রেমে, আনন্দ-অভিষেকে নির্বিচারে পশু হত্যা আর মানুষ হত্যার উৎসব। পাপের বোঝা আরও ভারী। আরও আছে সৃষ্টির সেরা মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের নমুনা। নিজের দেহজ সন্তানের নাম রাখতে গিয়েও সে জীবন নিয়ে নেয় দুয়েকটা পশুর। হারিয়ে যাওয়া পুরান বন্ধুকে বহুদিন পরে বুকে পেয়ে সে গভীর ভালবাসার অভিষেক করে আশপাশের কোন অবোধ পশুর রক্ত মাংসের রাশ উৎসবে।
কীর্তিমান মানুষের জীবন-গ্রন্থের অন্যমলাটে সভ্যতা আর মানবিকতার যে ম্লান ছবি ক্ষীণপ্রাণ নিয়ে পৈশাচিকতার দম্ভ-গর্বের ভয়ে সদা কম্পমান, তা দেখে নিরাশায় ভুগি। সেখানে আছে সভ্যতা আর অসভ্যতার পর্যায়ক্রমিক হারজিৎ। সেখানে একবার আসে অন্ধকার আরেকবার আসে আলো। এই ভাবে ধুকে বেঁচে মানব-ধর্ম ক্ষয় হতে হতে একসময় হয়তো ফিরে যাবে গুহা-দানবের হাতে। তাই মনে প্রশ্ন আসে- আর দশটা নির্বোধ পশুর মতন পৃথিবী কি আমাদের একই ছাঁচে ফেলে বানিয়েছে? আমাদের কি কোন উপায় আছে পৃথিবীকে নিজের মত করে, নিজেদের মতন করে বানিয়ে নেবার? সত্যদ্রষ্টা এক কবি বিন্দুমাত্র সময় ক্ষেপণ না করে জবাব দিল- আছে, উপায় আছে। মানুষই পারে একটা বুনো ফুলের দিকে তাকিয়ে সহজ হাসিটা হাসতে। মানুষই ফুলের দিকে তাকিয়ে, নারীর দিকে তাকিয়ে সহজ ভঙ্গিতে বলতে পারে, আহা কী সুন্দর! আর তখনই তো এই জটিল খাদ্যশৃঙ্খলে বন্দি পৃথিবীটা সুন্দর হয়ে উঠে।
মনের ভিতরে খুত খুত করে। কবির কথায় আমার মনের চিড়ে ভেজে না। উল্টে প্রশ্নে জর্জরিত করি স্বপ্নভুক কবিকে। কেন তবে পৃথিবীর একদিকে আঁধার, আরেকদিকে আলো, একদিকে দিন আরেকদিকে রাত? কেন তবে বাঁকার চেয়ে সোজা দুর্বল? নষ্টের চেয়ে স্রষ্টা ক্ষীণপ্রাণ? কবির মুখে রা নেই। অনেকক্ষণ মাথাটা নিচু করে রেখে কি জানি ভাবলো সে। শক্ত পাথরে খোদাই গান্ধার মূর্তির মতন চোখদুটো স্থির করে কবি বললেন- বুঝলে না, সবকিছু সময়। সময়ের হাতে সব। একদিন সব ঠিক হয়ে হয়ে যাবে।
আমি একজন জাত নিরাশাবাদী। কবির বলা শেষ বাক্যটার সাথে গলা মিলিয়ে বললাম- সব ঠিক হয়ে যাবে যেদিন, আমরা সেদিন বেঁচে থাকবো পরিত্যক্ত জংধরা খাদ্যশৃঙ্খলের প্রেতাত্মা হয়ে। তাই তো!
করাচি বন্দরে এককালে গ্রিক-পারসিক-আরবীয় সওদাগরেরা নোঙ্গর করেছে; অনেক স্থাপত্য চিহ্ন আজো রয়ে গেছে; যা…..
তিনি বললেন, ভাষা হল ওষ্ঠের উপর সুধার মতো। আর বললেন, কবিতা যথেষ্ট স্বাদু, কিন্তু…..
রূপকথা পড়েছেন ছোট বেলায় অনেকে একথা আর বলা সন্দেহমুলক, প্রযুক্তির ব্যবহার জন্মের পর থেকে এখন …..
একটি পরাধীন দেশ আর তার বাসিন্দাদের মনে স্বাধীনতার আকুতি আমরা দেখেছিলাম ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে। এর…..