ক্যাপটেন শ্যাম ও পোষা ভূত

সুদীপ ঘোষাল
গল্প
Bengali
ক্যাপটেন শ্যাম ও পোষা ভূত

আমার বন্ধু মিলু আজ কলকাতা থেকে ফিরেছে। ফিরে প্রথমেই আমার সঙ্গে দেখা। আমি বললাম, মিলু কেমন আছিস। মিলু বললো, ভালো আছি তুই কেমন আছিস
আমি বললাম ভালো আছি তবে… কথাটা বলতে না দিয়ে মিলু আমাকে বলল জানিস আশীষের সঙ্গে দেখা। গল্প করতে করতে এলাম।আমার শোনার আগ্রহ বেড়ে গেল প্রথমে আমি বললাম আশীষ কি বলল
-সকলের খবর নিল বাদাম খেলাম। তুই খেয়েছিস কিন্তু আশীষ খেয়েছে কি না? আশীষ না খেয়ে পকেটে রাখল, বললো পরে খাবো।
-আর কি বলল আশীষ
মিলি বলল, সে বলল ভেলোরে গেছিলাম আমার হার্টের অবস্থা ভালো নয়, বড়জোর আর কয়েকদিনের অতিথি আমি এই পৃথবীর। আমি বললাম, কদিন বলেছিল না কয়েকঘন্টা বলেছিলো, মনে আছে।

– না তা মনে নেই তবে তুই এরকম গোয়েন্দার মতো প্রশ্ন করছিস কেন বুঝতে পারছি না।
আমি বললাম তুই আগে জল-টল খা।তারপর বলব। বন্ধু জল খেলো।
তারপর বলল বল কি খবর আছে আপডেট।আমি বললাম আশীষ আজ ভোর পাঁচটায় মরে গেছে। আমার কাকু মরে গেছেন বলে শ্মশানে যেতে পারিনি। আমার অশৌচ চলছে।
বন্ধু বলল তাহলে আমি কার সঙ্গে এলাম ট্রেনে চেপে ছিলাম আমি আটটার সময় এখন দুপুর 12:00 টা। তাহলে এই সময়টা আমি বন্ধুর আশীষের সঙ্গে আসিনি।আমি বললাম চল তো তোকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই তোর মানসিক অবস্থা কেমন উনি বলে দেবেন। বন্ধু এলো। ডাক্তারের মুখের উপর প্রথমেই মিলু বললো আমি কি পাগল হয়ে গেছি ডাক্তারবাবু? ডাক্তার বাবু বললেন, পাগল রা সকলকে পাগল ভাবে নিজেকে ছাড়া। তুমি পাগল হলে এই প্রশ্নটা করতে পারতেনা। ডাক্তারবাবু আরো বললেন, ‘আমি কি আমি কি পাগল হয়ে গেছি’ এ প্রশ্ন যিনি নিজেই নিজেকে করতে পারেন মনোবিদদের মতে তিনি ততক্ষণ পাগল নন। বন্ধু বলল পুরো ঘটনাটা ডাক্তারবাবুকে।তিনি পুরো ঘটনাটা শুনে বললেন পৃথিবীতে এমন কিছু বিষয় এখনো আছে যার কোনো ব্যাখ্যা নেই। তর্ক পরে হবে। সব রহস্যের সমাধান হয় না। ভগবানের অস্তিত্ব থাকলে ভূতের অস্তিত্ব থাকা অসম্ভব কিছু নয়। আলোকে তো অন্ধকারে চিনতে পারি বেশি বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের কুলকিনারা করতে পেরেছে বিজ্ঞান? মহাকাশের কতটুকু জানতে পেরেছে মানুষ? মিলুকে নিয়ে আমরা চলে আমি চলে গেলাম গ্রামে । আমার কাকুর শ্রাদ্ধ আগামীকাল। সারাদিন বাড়িতে।আত্মা প্রকট হয় তার পরের রাতে। বললেন জেঠু,তোমার কাকু মরে গেছে। তাই বাড়ির দোষ হয়েছে। কাটাতে হবে। তান্ত্রিকের ফর্দমত কিছু কিনে আমরা পরের দিন চলে গেলাম শ্মশানের কালী তলায়।
সেখানে তান্ত্রিক জেঠু সাধনা শুরু করলেন। এখন রাত দশটা বাজতে চলেছে আগের দিন থেকে একটা মড়ার মাথা আর্জেন্ট রাখা ছিল। মড়ার মাথার খুলি খেতে শুরু করল। কাটারি দিয়ে সেই জিওল মাছের টুকরো। তান্ত্রিক কাটারি করে কাটছেন মাছ। আর মড়ার মাথাকে দিচ্ছেন যেন মানুষের মতো খাচ্ছে। সেইমড়ার মাথা কাঁচা মাছ কচকচ করে খাচ্ছে। আমরা বড় ভয় পেলাম।

তান্ত্রিক জেঠু বললেন ভয় নেই আমি আছি। তবে আত্মা যখন বাড়ি ছাড়বে তোমাদের ছোটখাটো একটা অনিষ্ট হবে। বাড়ি এসে শুনলাম কথা ঠিক, আমাদের বড় আম গাছের ডাল ভেঙে টালির চাল ভেঙে পড়েছে।আমার বাবা বললেন, যখন ভয়ের অনুভূতি প্রথম টের পাচ্ছি, মনে হচ্ছে বুক ধড়ফড় বেড়ে গেছে, অস্থির লাগছে, বমি বমি ভাব হচ্ছে, মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে।
জেঠু বললেন, দেরি না করে দ্রুত ব্রিদিং রিলাক্সেশন করুন। নাক দিয়ে ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নিন, বুকের ভেতর সমস্ত খালি জায়গা বাতাসে ভরে ফেলুন, দমটা অল্পক্ষণ আটকে রাখুন, তারপর মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। এভাবে পর পর তিনবার করুন।ভূতের ভয় থেকে বেড়িয়ে আসতে ভূত এবং ভয় নিয়ে চিন্তা করা বন্ধ করুন। নিজেকে প্রশ্ন করুন, সত্যি ভূত বলে কিছু রয়েছে কি না? না কি আপনি অজানা কোনো কারণে ভয় পাচ্ছেন? আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ কখনো ভূত দেখেছে কি না? ক্ষতি হলে তার কী ধরনের ক্ষতি হয়েছে? উত্তরগুলো খুঁজে নিয়ে ভাবুন আদৌ ভয় পাওয়ার কোনো কারণ রয়েছে কি না।এসব নিয়ে চিন্তা করব আমরা।

বাবা বললেন আপনি তো ডাক্তারের মত কথা বলছেন। ভূত, আত্মা এই বিষয়গুলোকে অতিরঞ্জিত করে উপস্থাপন করা হয়। ভয়ের সিনেমা, নাটক আমাদের মধ্যে ভূত ও আত্মা সম্পর্কে ভয় তৈরির সাহায্য করে।

জেঠু বললেন, আমরাও প্রথামত চিকিৎসা করি।তারপর যেখানে এর শেষ তখন তন্ত্র শুরু। তাই যদি এ ধরনের সিনেমা, নাটক দেখে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন তবে এই ধরনের নাটক, সিনেমা, গল্পের বই এড়িয়ে চলুন।ভয়কে জয় করতে ভয়ের বিষয়টি সরাসরি মোকাবিলা করতে হয়। আপনি হয়তো ভূতের ভয়ে রাতে একা থাকতে ভয় পান, ঘরে আলো জ্বালিয়ে রাখেন- এ পরিস্থিতি থেকে বের হতে রাতে একা থাকা শুরু করুন। ভাবুন, পৃথিবীতে কত মানুষ একা থাকে। ভূত তাদের আক্রমণ না করলে আপনাকে করবে কেন? আপনার সঙ্গে তো ভূতের বিশেষ কোনো শত্রুতা নেই। প্রথমে আলো জ্বালিয়ে একা ঘরে থাকার অভ্যাস করুন। প্রথমে কষ্ট হবে তারপরও চেষ্টা করুন। প্রথমদিন পারলে নিজেকে নিজে ধন্যবাদ দিন, ছোট পুরস্কার দিন। এভাবে একা থাকায় অভ্যস্ত হলে একা ঘরে আলো নিভিয়ে থাকার পদক্ষেপ নিন। এভাবে ধীরে ধীরে ভয় কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করুন ভয় থেকে মনটাকে অন্য দিকে সরিয়ে দিতে গান শোনা, টিভি দেখা, গল্পের বই পড়ার মতো নিজের ভালোলাগার কাজগুলো করুন। জানালার দিকে তাকালে ভয় হলে জানালা খুলে রাখুন। জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বাইরে দেখুন। জানালার দিকে চোখ পড়লে চোখ বন্ধ না করে তাকান। কিন্তু বার বার তাকিয়ে কিছু রয়েছে কি না সেটি চেক করা থেকে বিরত থাকুন।নিজেকে বলুন যতবার শব্দ শুনে বা আওয়াজে ভয় পেয়েছি, বা বাইরে যা দেখেছি তাকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেছি।ভূত নিয়ে নানা আশঙ্কার কথা মনে হলে ভাবুন যা ভাবছেন তা যদি সত্যি হয় তবে কি হবে? সবচেয়ে খারাপ কী হতে পারে? এমন হবার আশঙ্কা কতটুকু?যখন ভয় পাচ্ছেন তখন যা ভেবে ভয় পাচ্ছেন তা কাগজে লিখে ফেলুন, লেখা শেষে কাগজ কুটিকুটি করে ছিঁড়ে ফেলুন বা পুড়িয়ে ফেলুন।ভাবুন ভূত বা আত্মা আপনার মতোই। তাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কোনো প্রমাণ নেই যে ভূত কারো কখনো ক্ষতি করেছে।অনেক সময় ছোটবেলা থেকে ভূত সম্পর্কে শোনা গল্প আমাদের মনে ভূত সম্পর্কে একটি ভয়ঙ্কর ছবি তৈরি করে। এতে আমাদের মাঝে ভয় তৈরি হয়। অনেক সময় বড় হওয়ার পরও তা থেকে যায়। তাই বাচ্চাদের সঙ্গে এ ধরনের গল্প না করার চেষ্টা করুন।ভয় থেকে বেড়িয়ে আসার জন্য নিজেকে যথেষ্ট সময় দিন।নিজের আগের সফলতার কথা চিন্তা করুন। মনে করুন আগে কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার পর কী কী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, কীভাবে বের হয়ে এসেছিলেন। এটা আপনার মনোবল বাড়াতে সাহায্য করবে।নিজেকে বলুন, ‘ভয়ের কাছে পরাজিত হবো না। ভয় আসতেই পারে। এটা স্বাভাবিক। আমি জানি ভয়টা অমূলক। তাই ভয় পাবার কিছু নেই। বরং ভয় দূর করতে যা যা করা দরকার করব।ভূত নিয়ে যেসব কমেডি সিনেমা রয়েছে সেগুলো দেখুন। ভয়ের সময় মনে করার চেষ্টা করুন ভয়ের সিনেমাগুলোতে ভূত কী কী করার চেষ্টা করে এবং প্রাণ খুলে হাসুন।কোনো বিষয় নিয়ে মজা করলে সে বিষয়ে ভয় দূর করা সম্ভব। ভূত বিষয়ে অন্যের সঙ্গে বেশি বেশি গল্প বলুন, মজা করুন।অনেক সময় ভূতের ভয়ের সঙ্গে মানসিক অসুস্থতাও যুক্ত থাকতে পারে। সেখানে ছোটখাট পরামর্শ মেনে চললেই তা দূর করা সম্ভব হবে না। তাই নিজে নিজে ভূতের ভয় দূর করতে না পারলে মনো-চিকিৎসক, চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানীর সাহায্য নিন।ভূতের ভয়টা যেহেতু রাতেই হয়, তাই ঘুমাতে যাওয়ার আগে শিথিল থাকতে পারেন এমন কিছু করুন। ঘুমের সময় অল্প আলো জ্বালিয়ে ঘুমান। সিলিং বা জানালায় ঝুলন্ত কিছু থাকলে তা সরিয়ে ফেলুন, যাতে রাতের বেলা এগুলো থেকে ভয় না তৈরি হয়।ভূত আসলে কী হবে?আমি এভাবেই ভয় কাটিয়েছি।এখন ভয় আমাকে ভয় পায়।

বাবা বললেন, এই ভয় থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য আপনার শরণাপন্ন হলাম আমরা।

জেঠু বললেন,ভাল করেছেন। প্রয়োজনে পাবেন। আমি সিদ্ধ তান্ত্রিক। আমার কাছে পেঁচো কানাভুলো র মত পিশাচরা পাত্তা পায় না।

মিলু বললো বাপরে বাপ। কি কুক্ষণে বেরিয়েছিলাম কলকাতা থেকে। বেরিয়ে দু দুটো ভূতের পাল্লায় পড়ে জীবন একেবারে নাজেহাল।

মিলুর মেসবাড়িতে একমাস পরে বেড়াতে গেলাম মেনু আরো অনেকে সেখানে থাকে আসিস এখানে থাকতো পরে অন্য জায়গায় দোকান করেছে ঝুলু বলল জানিস কয়েকদিন ধরেই আমাদের এখানে একটা উপদ্রব শুরু হয়েছে কেউ একজন মশারী টাঙ্গানো পরে গভীর রাতে মশারী ছেড়ে দিচ্ছে আবার দড়ি বেঁধে সকলে পাহারা দিচ্ছি কিন্তু ঘুমিয়ে পড়লে আবার দড়ির খুলে দিচ্ছে তো মহা মুস্কিল হলেও গতকাল আমাদের রান্না করা খাবার উল্টে পড়েছিল তাহলে মেম্বাররা কেউ নিশ্চয়ই করবে না কারণ খাবার তো সবাই সবার খাবার খেতে পাবে না তাহলে কেউ নিজের খাবার ফেলে দেবে না আমি বললাম তাহলে আবার সেই আমাদের পুরুষতান্ত্রিক জেঠুকে ডাকা হোক তিনি নিশ্চয় কিছু একটা ব্যবস্থা করবেন তাকে খবর দেওয়া হল তিনি আসছেন ট্যাক্সি ভাড়া করে খরচ আমরাই দেব

কিন্তু তিনি যখন মেসবাড়িতে এলেন তখন বিকেল চারটে বেজে গেছে আমি বললাম যে তুই এত দেরি হল কেন যেতে বলছে না রে বাবা আর বোলো না ভৌতিক কোন কাজের সমাধান করতে গেলেই আমাকে সমস্যায় পড়তে হয় মাঝপথে টায়ার পাংচার হয়ে গেল তারপর আবার ড্রাইভার এর শরীর খারাপ তাই বলছে আমি তো ভালোই ছিলাম কিন্তু রাস্তায় এরকম হচ্ছে কেন তারপর ড্রাইভারকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো দেরি হয়ে গেল এই জন্যই আমি দেখলাম তান্ত্রিক মন্ত্র বলেছেন কথার ফাঁকে ফাঁকে সারারাত্রি নিমন্ত্রণ বাড়িতে ঢুকেই তিনি বললেন এই বাড়িতে ভৌতিক একটা ব্যাপার আছে

তিনি বললেন দেখো তো তোমাদের ঘরের অন্য তাকে কোনরকম গহনা আছে কিনা খুঁজে খুঁজে পাওয়া গেল একটা পিতলের আংটি মিনু বলল এটা তো আসি শান্তি ও যখন ইমেজ বাড়িতে থাকত তখন বেকার ছিল পিতলের আংটি টা ওর খুব প্রিয় ছিল হয়তো খুঁজে বেড়ায় সে যুবক ছিল তার কোনো ইচ্ছে পূরণ করতে পারেনি এই আংটি তার খুব প্রিয় ছিল আর সে ভালোবাসতো যে মেয়েটিকে তাকে সবাই আমরা চিনি

ঝুনু বলল সমরে বোন সুধা। সুদা তো আশিস মরার কয়েকদিন পরেই বিয়ে করে কানপুর চলে গেল পুরুষ বললেন তোমরা শোনোনি সুদা গতকাল কানপুরে রোগে ভুগে ভুগে মরে গেছে তান্ত্রিক বলল এই সুযোগে আমি এখানে একটা হোম যজ্ঞ করব তাহলে আসিস আত্মা এই আংটি নিয়ে উধাও হবে হয়তো মিলিত হবে শুধু আত্মার সঙ্গে সেখানে তো দেহের কোন ব্যাপার নেই শুধু আত্মার মিলন

তারপর তান্ত্রিক শুরু করলেন যোগ্য সবাইকে বললেন তোমরা সবাই বস এখানে কেউ নড়াচড়া করবে না তাহলে সাধনার ব্যাঘাত ঘটবে প্রায় একঘন্টা আমরা সবাই শান্তি প্রার্থনা করছিলাম আশিসের আত্মার জন্য তবে তার পরের দিন থেকে মেসবাড়িতে আর কোন উপদ্রব হয়নি আমাদের বন্ধুদের গ্রুপ এখনো আছে আমরা সময় পেলে একসঙ্গে বেড়াতে যাই খাওয়া-দাওয়াও করি রাতে মেসবাড়িতে। ভূতের গল্প শোনেনি বা ভয় পায়নি এমন মানুষের সংখ্যা কমই আছে। আমার নিজের জীবনে দেখা একটা গল্প তোমাদের বলতে ইচ্ছে করছে। আমি তখন বিল্বেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। আমার বন্ধু ছিল অনেক। তার মধ্যে সর্দার ছিলো বিশু। এখন যার কথা বলবো তার নাম অলক।বাড়ি তার কোমডাঙ্গা। স্কুলে যত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো তার প্রধান দায়ীত্বে থাকত আমাদের দলের প্রধান বিশু। আর কান টানলেই মাথা আসে। হাত বাড়ালেই বন্ধুদল হাজির। বিশু মানেই আমরা সবাই। আমাদের বন্ধুরা এই পরোপকারী নির্ভিক নেতার ভক্ত।

স্কুলে ঠিক হলো এবার রবীন্দ্র জয়ন্তী অনুষ্ঠান হবে সন্ধ্যাবেলায়। নাটক,আবৃত্তি,গান সব হবে। হষ্টেলের ছেলেরা বললো,বিশুদা তোমাকে থাকতে হবেই।বিশু বন্ধুদের কথা ভেবে বললো,আমাদের বাড়ি অমেকদূর।প্রায় চার ক্রোশ দূরে।হেঁটে আমরা যাওয়া আসা করি
দিনেরবেলা বলে সম্ভব।
মাষ্টারমশাই বললেন,বিশু তুমি আর তোমার দলবল থাকবে। তোমাদের ছাড়া অনুষ্ঠান অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। প্রয়োজনে রাতটা হষ্টেলে কাটাবে।
বিশু বললো,তাই হবে স্যর। অসুবিধা হবে না। তবে রাতে থাকা যাবে না।
—-কেন? কি এমন রাজকাজ আছে তোমার?

—-স্যর,আমার গ্রামের ডোম পাড়ার তিন বুড়ির কাছে আমি রাতে থাকি। তাদের সুবিধার জন্য রাতে আমি কোথাও থাকি না।

মাষ্টারমশাই বিশুকে চেনেন, জানেন।চোখের জল আড়াল করে বললেন,বেশ তাই হবে।

তারপর চলে এলো ২৫শে বৈশাখ। দিনের বেলা বলা হলো সকলের বাড়িতে। দুপুরে ঘুমিয়ে নিলাম সবাই।তারপর সকলকে সঙ্গে করে বিশু চললো স্কুলে।কোমডাঙ্গার অলক চলে এলো আমাদের সঙ্গে। আলপথে হেঁটে চলে এলাম কাঙরা গাবা। সেখানে একটা কাঁদর।তার পাশে একটা ঝুড়ি নামা বটগাছ।দিনের বেলাতেই জায়গাটা অন্ধকার। বিশু বললো আমি রাতে ফিরবো। তোরা হষ্টেলে থেকে যেতে পারিস। আমি বললাম,না আমরা সবাই বাড়ি ফিরবো। বিশু বললো,তাই হবে।

তারপর কাঁদর পেরিয়ে চলে এলাম হেঁটে স্কুলে। তারপর কাজ শুরু হলো। বিশু ঘোষকের ভূমিকায়।বড় সুন্দর অনুষ্ঠান পরিচালনা করে বিশু। প্রথমে লীলা উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করলো,আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে”। তার পর সভাপতি নির্বাচন।প্রদীপ প্রজ্জ্বলন,প্রধান অতিথি বরণ হলো।সকলে কবিগুরুর গলায় মালা দিলেন। তাঁর সম্বন্ধে দু চার কথা বললেন।
আমি বললাম,সভাপতি নির্বাচন আগে করলে হত না। বিশু বললো,জানি সব জানি। তবে কি জানিস,আমার প্রিয় কবির জন্মদিনে গঙ্গাজলে গঙ্গাপুজো করার মত তাঁকে আগে বরণ করলাম। বাংলার মাষ্টারমশাই বললেন,তুই বিশু যাই করিস আমাদের ভালো লাগে। চালিয়ে যা।তারপর নাটক হতে হতে রাত দশটা বেজে গেলো।বিশু তাড়াতাড়ি স্যারের হাতে দায়ীত্ব দিয়ে আমাদের কাছে চলে এলো। হষ্টেলে খাওয়া হলো। তারপর বেড়িয়ে পড়লাম বাড়ির উদ্দেশ্য।

আমরা দুটো হ্যারিকেন এনেছিলাম।রতন বললো,বিশু হ্যারিকেন দুটো জ্বালিয়ে নি। বিশু বললো,অনেকটা পথ। দুটো হ্যারিকেন একসাথে জ্বালাস না। একটা হলেই হবে। আমি সামনে থাকবো। আর সাপ খোপ আছে। সবাই পা ফেলবি পরিষ্কার জায়গায়।
তারপর বিশু সামনে আর আমরা পিছনে। বেশ দ্রুত হাঁটছি আমরা। খিড়কি পুকুর,বটতলার মাঠ,তেমাথার মাঠ পেরিয়ে আমরা চলে এলাম কাঙরা গাবায়। এখানে একটা কাঁদর আছে। ছোটো নদীর মত। এবার পার হতে হবে। আমরা গামছা পড়ছি এমন সময় দেখলাম অলক প্যান্ট জামা পরেই জলে নামছে। বিশু বললো,অলক তুই সাঁতার জানিস না। পাকামি করিস না।
বিশু ছুটে গিয়ে অলককে ধরতে গেলো আর সঙ্গে সঙ্গেই এক বিকট হাসি অলকের মুখে। যে অলক সাত চরে রা কাড়ে না সেই অলক ভূতুড়ে হাসি হাসতে হাসতে কাঁদরের জলের উপর দিয়ে হেঁটে পার হয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলো। আমি বললাম,বিশু অলক কই? বিশু বললো,এই কাঙরা গাবায় ভূত আছে। এসব তার কাসাজি। শুনে রতন ও আমি বু বু করতে লাগলাম ভয়ে। বিশু বললো,চল ওপাড়ে গিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি যাই। আমরা কাঁপতে কাঁপতে জল পার হয়ে ছুটে চলে গেলাম অনেক দূরে। বিশু বললো,হ্যারিকেন দুটো ফেলে এসেছি। চল নিয়ে আসি। আমরা বললাম,বিশু তোর পায়ে পড়ি বাড়ি চল। হ্যারিকেন চুলোয় যাক।

তারপর বিশু ও আমরা অলকের বাড়ি গেলাম। বাড়ি যেতেই ওর বাবা বাইরে এলেন। বিশু বললো,কাকু অলক ফিরেছে। কাকু বললেন,না তো।সে কোথায় গেলো। বিশু সব ঘটনা খুলে বললো।কাকু বললেন,চলো আমরা সবাই থানায় যাই। সেখানে একটা খবর দেওয়া দরকার। আমি জানি কাঙরা গাবায় তেনারা থাকেন। রাতে তোমাদের যাওয়া ঠিক হয় নাই গো।

থানায় মেজবাবু সব শুনে বললেন,কাল সকাল অবধি অপেক্ষা করুন। দেখা যাক লাশ পেলেই সব বোঝা যাবে।
বিশু বললো,ও মরে নি। হাওয়ায় উড়ে গেছে। মেজবাবু বললেন,ঠিক আছে। সব কথাই শুনে রাখলাম। দেখা যাক এটা নিশি ভূতের কাজ কি না?
থানা থেকে বেড়িয়ে আমরা সবাই অলকের বাড়িতে থাকলাম আর বিশু চলে গেলো তার নিজের কাজে।

ও বললো,সকালবেলা আমি তান্ত্রিক জেঠুকে সঙ্গে নিয়ে আসব। ভয় পাবেন না। পরের দিন সকালবেলা বিশু জেঠুকে সাইকেলে চাপিয়ে নিয়ে হাজির।
অলোকের বাবা বললেন, একটু জল খান।
জেঠু গ্লাসের জলে মেশালেন মন্ত্রপোড়া জল। তারপর পাঞ্জাবির পকেটে ছোট শিশি রেখে দিলেন। গলায় রুদ্রাক্ষমালা। হাতের বাহুতে রুদ্রাক্ষ। কপালে লাল তিলক আর লাল পাঞ্জাবি।জল খেয়ে হাত ধুলেন, বললেন, নিশিভূত হরণ করেছে তোর ছেলেকে। অলোকের বাবা বললেন, বাবারে মেরে ফেলবে না তো আমার ছেলেকে।

আপনার বাড়ি রাতে চলে আসবো কাকু। আপনি চিন্তা করবেন না। জেঠুকে প্রণাম করে বিশু চলে গেল। আমরা থাকলাম।

জেঠু বললেন, নিশি ভূত কাউকে প্রাণে মারে না।
এই বলে জেঠু চলে গেলেন ঠাকুর ঘরে।

অলোকের বাবা আমাদের কাকু বললেন,বিশু ঠিক বলেছে। আমার অলক ঠিক ফিরে আসবে।
তখন কোনো মোবাইল ছিলো না। ল্যান্ড ফোন দু একটা বাড়িতে ছিলো। বিশু সকলের বাড়ি গিয়ে বলেছিলো,ওরা সবাই অলকের বাড়িতে আছে।কাল দুপুরের খাবারের নিমন্ত্রণ করেছেন কাকু।কাল সকালে সবাই চলে আসবে।

কাকু বললেন, শিবের অনুচর দেবযোনিবিশেষ (ভূতনাথ)। অশরীরী প্রেত বা পিশাচ জীব, প্রাণী (সর্বভূতে দয়া)। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তুসমূহের মূল উপাদান পঞ্চভূত।পরিণত দ্রবীভূত, বাষ্পীভূত বিদ্যমান, রয়েছে এমন ̃ .কাল বি. অতীত কাল ̃ ভূতপ্রেতের দ্বারা আক্রান্ত বা আবিষ্ট। ̃ .চতুর্দশী. কার্তিক মাসের কৃষ্ণাচতুর্দশী তিথি।

জেঠু বললেন, ঠিক বলেছেন আপনি।তবে ভূত হলো অশরীরি পুরুষ আত্মা, আর পেত্নী অশরীরি মেয়ে আত্মা। অপঘাত, আত্মহত্যা প্রভৃতি কারণে মৃত্যুর পর মানুষের অতৃপ্ত আত্মা ভূত-পেত্নী হয়ে পৃথিবীতে বিচরণ করতে পারে। অন্যান্য জীবজন্তু বা প্রানীও তাদের মৃত্যুর পরে ভূতে পরিণত হতে পারে। বাংলায় ভূতকে মাঝে মাঝে প্রেতাত্মা হিসেবেও উল্লেখ করা হয়। প্রেতাত্মার নারীবাচক শব্দকে পেত্নী হিসেবে এবং পুরুষবাচক শব্দকে প্রেত বলা হয়ে থাকে।
আমি বললাম বাংলার সংস্কৃতিতে অনেক ধরনের ভূতের বিশ্বাস রয়েছে; তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো নারী ভূত যারা বেঁচে থাকতে কিছু অতৃপ্ত আশা ছিল এবং অবিবাহিতভাবে মৃত্যুবরণ করেছে।
জেঠুনবললেন, পেত্নী শব্দটি সংস্কৃত প্রেত্নী শব্দ থেকে এসেছে এসব ভূত সাধারনত যে কোন আকৃতি ধারন করতে পারে, এমনকি পুরুষের আকারও ধারণ করতে পারে। এসব ভূত সাধারনত বেঁচে থাকতে কোন অপরাধ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকে এবং মৃত্যুর পর অভিশিপ্ত হয়ে পৃথিবীতে বিচরণ করে। পেত্নীরা সাধারনত ভীষণ বদমেজাজী হয়ে থাকে এবং কাউকে আক্রমনের পূর্ব পর্যন্ত স্পষ্টতই মানুষের আকৃতিতে থাকে। পেত্নীদের আকৃতিতে একটিই সমস্যা রয়েছে, তা হলো তাদের পাগুলো পিছনের দিকে ঘোরানো। সংস্কৃত শব্দ শাকচুন্নি থেকে এসেছে। এটা হলো অল্পবয়সী, বিবাহিত মহিলাদের ভূত যারা বিশেষভাবে তৈরি বাঙ্গালি শুভ্র পোষাক পরিধান করে এবং হাতে শঙ্খ বা শাঁখা পরিধান করে। শাঁখা হলো বাঙ্গালি বিবাহিত মহিলাদের প্রতীক। শাকচুন্নিরা সাধারনত ধনী বিবাহিত মহিলাদের ভেতর ভর করে বা আক্রমন করে যাতে করে তারা নিজেরা সেই মহিলার মত জীবন যাপন করতে পারে ও বিবাহিত জীবন উপভোগ করতে পারে। লোকগাঁথা অনুসারে জলাভূমির ধারে আম গাছে বাস করে এবং সুন্দর তরুণ দেখলে তাকে আকৃষ্ট করে ফাঁদে ফেলে। কখনো কখনো সে তরুণকে জলাভূমি থেকে মাছ ধরে দিতে বলে। কিন্তু সাবধান, শাকচুন্নিকে মাছ দেয়া মানে নিজের আত্মা তার হাতে সমর্পণ করা!

মিলু বললো, কোনো চোর মারা গেলে চোরাচুন্নি হতে পারে। পূর্ণিমা রাতে এরা বের হয় এবং মানুষের বাড়িতে ঢুকে পড়ে অনিষ্ট সাধন করে। বাড়িতে এদের অনুপ্রবেশ ঠেকানোর জন্য গঙ্গাজলের ব্যবস্থা আছে। এ ধরনের ভূতেরা মাছ খেতে পছন্দ করে। মেছো শব্দটি বাংলা মাছ থেকে এসেছে। মেছো ভূত সাধারনত গ্রামের কোন পুকুর পাড়ে বা লেকের ধারে যেখানে বেশি মাছ পাওয়া যায় সেখানে বসবাস করে। মাঝে মাঝে তারা রান্নাঘর বা জেলেদের নৌকা থেকেও মাছ চুরি করে খায়। বাজার থেকে কেউ মাছ কিনে গাঁয়ের রাস্তা দিয়ে ফিরলে এটি তার পিছু নেয় এবং নির্জন বাঁশঝাঁড়ে বা বিলের ধারে ভয় দেখিয়ে আক্রমণ করে মাছ ছিনিয়ে নেয়।এ ধরনের ভূত সচরাচর দেখা যায় না শুনেছি।

জেঠু বললেন, তোরা তো অনেক কিছু জানিস। আমার সঙ্পেঁগে থাকলে আরও শিখবি। তাছাড়া পেচাপেঁচি ভূত ধারনাটি পেঁচা থেকে এসছে এর স্ত্রী বাচক হলো পেঁচি। এরা জোড়া ধরে শিকার করে থাকে। বাংলার বিভিন্ন জঙ্গলে এদের দেখা যায় বলে বিশ্বাস করা হয়। এরা সাধারনত জঙ্গলে দুর্ভাগা ভ্রমণকারীদের পিছু নেয় এবং সম্পূর্ণ একাকী অবস্থায় ভ্রমণকারীকে আক্রমন করে মেরে ফেলে ও এরা শিকারের দেহ ভ্যাম্পায়ার স্টাইলে ছিড়ে ছিড়ে খায়। মনে করে মুসলমান ভূত হল এই মামদো। ব্রাহ্মণের আত্মা, সাদা ধুতি পরিহিত অবস্থায় দেখা যায়। এরা সাধারণত পবিত্র ভূত হিসেবে বিবেচিত। বলা হয়ে থাকে, কোনো ব্রাহ্মণ অপঘাতে মারা গেলে সে ব্রহ্মদৈত্য হয়। এছাড়া পৈতাবিহীন অবস্থায় কোনো ব্রাহ্মণ মারা গেলেও ব্রহ্মদৈত্য হতে পারে। এরা কারো প্রতি খুশি হয়ে আশির্বাদ করলে তার অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জিত হয়, কিন্তু কারো প্রতি বিরাগ হলে তার সমূহ বিপদ। দেবদারু গাছ , বেল গাছ কিংবা বাড়ির খোলা চত্বরে বাস করে। মাথাবিহীন ভূত। অত্যন্ত ভয়ংকর এই ভূত মানুষের উপস্থিতি টের পেলে তাকে মেরে ফেলে। কোনো দুর্ঘটনায়, যেমন রেলে কারো মাথা কাটা গেলে, সে স্কন্ধকাটা হতে পারে। ভয়ংকর হলেও, মাথা না থাকার কারণে স্কন্ধকাটাকে সহজেই বিভ্রান্ত করা যায়। গ্যাসীয় ভূত। এরা জেলেদেরকে বিভ্রান্ত করে, জাল চুরি করে তাদের ডুবিয়ে মারে। কখনো কখনো অবশ্য এরা জেলেদেরকে সমূহ বিপদের ব্যাপারে সতর্ক করে থাকে।খুব ভয়ংকর ভূত। অন্যান্য ভূত সাধারণত নির্জন এলাকায় মানুষকে একা পেলে আক্রমণ করে, কিন্তু নিশি গভীর রাতে মানুষের নাম ধরে ডাকে। নিশির ডাকে সারা দিয়ে মানুষ সম্মোহিত হয়ে ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে পড়ে, আর কখনো ফিরে না। কিছু কিছু তান্ত্রিক অন্যের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য নিশি পুষে থাকে।গভীর নির্জন চরাচরে মানুষকে পেলে তার গন্তব্য ভুলিয়ে দিয়ে ঘোরের মধ্যে ফেলে দেয় এই ভূত। মানুষটি তখন পথ হারিয়ে বার বার একই জায়গায় ফিরে আসে, এবং এক সময় ক্লান্ত হয়ে মারা যেতে পারে। অনেকটা নিশির মত এই ভূত গ্রামের পাশে জঙ্গলে বসে করুণ সুরে বিলাপ করতে থাকে। কান্নার সুর শুনে কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে গেলে তাকে ইনিয়ে বিনিয়ে গল্প বানিয়ে জঙ্গলের আরো গভীরে নিয়ে মেরে ফেলে। ছোট বাচ্চারা এর কান্নায় বেশি আকৃষ্ট হয়। হলো সেইসব মানুষের আত্মা যারা বাঘের আক্রমনে মৃত্যুবরণ করেছে বলে বিশ্বাস করা হয়। সাধারনত সুন্দরবন এলাকায় এধরনের ভূতের কথা বেশি প্রচলিত কারণ বাঘের অভাশ্রম হলো সুন্দরবন। এসব ভুতেরা জঙ্গলে মুধ আহোরনে আগত গ্রামবাসীদের ভয় দেখায় এবং বাঘের সন্নিকটে নিয়ে যেতে চেষ্ঠা করে। মাঝে মাঝে এরা গ্রামবাসীদের ভয় দেখানোর জন্য বাঘের স্বরে কেঁদে উঠে।এ শ্রেণীর ভূতেরা পথিকের গন্তব্য ভুলিয়ে দিয়ে ঘোরের মধ্যে ফেলে দেয় এবং অচেনা স্থানে নিয়ে আসে। মাঝে মাঝে মানুষ একই রাস্তায় বারবার ঘোরপাক খেতে থাকে। ভূতরা কোন নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌচ্ছার পর তার শিকারকে মেরে ফেলে। এক্ষেতে শিকার তার জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এধরনের ভূতদের রাতে গ্রামের মাঠের ধারে পথের মধ্যে দেখা যায়। শিকার সবসময় একাকী থাকে বা দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।ডাইনি মূলত কোন আত্মা নয়, এরা জীবিত নারী। বাংলা লোকসাহিত্যে সাধারনত বৃদ্ধ মহিলা যারা কালো জাদু বা ডাকিনী বিদ্যাতে পারদর্শী তাদেরকেই ডাইনী বলা হয়ে থাকে। এটা বিশ্বাস করা হয় যে, ডাইনীরা গ্রামের ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের ধরে নিয়ে তাদের হত্যা করে এবং তাদের রক্ত খেয়ে ১০০ বছর বেঁচে থাকে। হাঁড়ি গড়গড়া —- রাতে নির্জন পথে, হাঁড়িকে পিছু ধাওয়া করতে দেখা যায়। শুঁয়োরা ভুত —- মাঠে যারা মল ত্যাগ করতে যান তারা দেখতে পান।

রমেন জানতে চাইলোন,ভূত কোথায় থাকতে ভালবাসে?

জেঠু বললেন, শেওড়া, তাল, দেবদারু, বেল, অশ্বত্থ প্রভৃতি গাছে একটি দুটি ভূতের দেখা পেতে পারেন। কিন্তু বেশি সংখ্যায় ভূত দর্শনের অভিলাষ থাকলে, আপনাকে যেতে হবে বিজন বনে, তেপান্তরে, কিংবা ভূষণ্ডির মাঠে।

সারারাত জেঠু কিছু না খেয়ে অলোককে ফেরাবার উপায় বের করলেন তন্ত্র সাধনার দ্বারা। দরজা বন্ধ।আমরা জানলা দিয়ে দেখছি জেঠ একটা মরার খুলি করে জল খাচ্ছেন আর মন্ত্র বলছেন, “যং যং জঙ্ঘে যাব করাঙ্গে…. যোগিনী সঙ্গে… “। ইত্যাদি। জেঠু বলেন, এসব মন্ত্র উচ্চারণ করা যারতার নিষিদ্ধ। কারণ, বারণ আছে।

আমরা সবাই রাত জেগে গল্প করে কাটিয়ে দিলাম। অলকের বাবা লিকার চা করে খাওয়ালেন। ধীরে ধীরে পূব আকাশে সূর্য উঠলো।সব ভয় সরে গিয়ে আলো ফুটে উঠলো। জেঠু বললেন, আর কিছুকাল পরেই সে ফিরবে। কোন চিন্তা নাই। আমি সফল।।

সবাই আমরা উৎকন্ঠা নিয়ে বসে আছি। কখন আসবে বিশু। ঠিক সকাল দশটায় পুলিশের গাড়ি চলে এলো গ্রামে। আমরা সবাই অবাক হয়ে দেখলাম পুলিশের গাড়ি থেকে নামছে অলক। এর মধ্যে বিশুও হন্ত দন্ত হয়ে আমাদের কাছে এসে বললো,যাক কাকু, অলক এসে গেছে। মেজবাবু কাকুকে বললেন,এটাই আপনার ছেলে অলক তো?
—- হ্যাঁ স্যার।
—-আমাদের থানার আশেপাশে ঘুরতে দেখে ওকে নিয়ে এলাম। আমাদের স্থির বিশ্বাস ছিলো এটা অলক। ওর মুখে সব কিছু শুনলে বুঝতে পারবেন ওর সমস্যা। যাই হোক, আমরা আসি।
পুলিশের গাড়ি চলে গেলো। প্রায় দুঘন্টা হলো অলক ঘুমিয়ে আছে। দুপুর একটায় ওর ঘুম ভাঙ্গলো।বিশু জিজ্ঞাসা করলো,তোর কি হয়েছিলো বল তো অলক?
অলক বলতে শুরু করলো তার অলৌকিক কাহিনী।

সে বললো,আমরা সবাই যখন কাঙরা গাবায় কাঁদর পার হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি তখনই আমাকে খনা গলায় নিশি ভূতটা বললো,কি রে তোর বাড়ি গিয়ে ডাকলাম। সাড়া পেলুম না। তাই গন্ধ পেয়ে এখানে এলাম। চল আমার সঙ্গে তোকে হাওড়া ব্রীজ দেখিয়ে আনি। আমি বললাম,এই রাতে বন্ধুদের ছেড়ে আমি হাওড়া যাবো না। নিশিটা বললো,যা বলবো শুনবি।তা না হলে উঁচু থেকে ফেলে দেবো।আমি আর ভয়ে কথা বলিনি। নিশি আমাকে উড়িয়ে নিয়ে গেলো হাওড়া ব্রীজে। আমি ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম। তারপর যখন নিশিটা আমাকে নিচে নামালো তখন জ্ঞান এলো। নিশি বললো,কেমন লাগছে। কি খাবি বল। তারপর আবার বললো,গঙ্গার জলে সাঁতা র কাটবি নাকি?
আমি বললাম,আমি সাঁতার জানি না।
নিশি বললো,আমি থাকলে ওসব কিছু দরকার হয় না। এই বলে আমাকে ওপর থেকে গঙ্গার বুকে ঝুপ করে ফেলে দিলো।তারপর জামাটা মুঠো করে পুুতুলের মত তুলে নিয়ে ওপরে এলো।আমি ভাবলাম, আমার জীবনের শেষ দিন আজকে। নিশি মনের কথা জানতে পেরে বললো,আমরা প্রাণে মারি না কাউকে। শুধু ঘুরে বেড়াই।কাজ করি। তারপর দিনের আলো ফুটতেই নিশিটা পালিয়ে গেলো।

আমি দেখলাম একজন ভদ্রলোক আমার হাতে একশো টাকা দিলেন। তিনি বললেন,তোমাকে দেখে তো ভালো ছেলে মনল হচ্চে।তা তুমি এখানে কেন?
আমি বললাম, আপনি বিশ্বাস করবেন না আমার কথা। আমাকে নিশি ভূতে এখানে এনেছে।
ভদ্রলোক বললেন,আমি বিশ্বাস করি। তুমি সাবধানে যাবে।
আমি বললাম,আমাকে কাটোয়ার ট্রেনে চাপিয়ে দেবেন।
ভদ্রলোক বললেন,নিশ্চয়। ভোর চারটে পাঁচের ট্রেনটা পাবে চলো।
আমি তার সাথে চলে গেলাম। তিনি বললেন,মর্নিং ওয়াকে এই পথেই আমার আসা যাওয়া। তাই তোমার সঙ্গে দেখা হলো। যাও আর কোথাও নাববে না। সোজা বাড়ি চলে যাও।
অলক বললো,বুঝলাম অনেক ভালো লোক কলকাতায় আছেন। তারপর ট্রেন থামলো থানার কাছের স্টেশনে। সেখান থেকেই পুলিশ আমাকে ধরে আর এখানে নিয়ে আসে। জেঠু বললেন, সাধনায় আমিই অই লোক সেজে পোষা ভূত পাঠিয়েছিলাম।
মিলু বলল,পোষা ভূত কাউকে মারতে পারে।

তান্ত্রিক জেঠু বললেন, কারও ক্ষতি করলে নিজেকে মরতে হবে। ওর কাজ শুধু ভালো কাজ করা।
আমি বললাম, আপনার সঙ্গেই থাকে। কাউকে বলা বারণ। তবু তোরা আমার সাঙ্গপাঙ্গ, জ্যান্ত ভূত। তাই তোদের বলছি, ভূতের এঁটো আমাকে খেতে হয়। এই বলে দরাজ গলায় জেঠু হেসে উঠলেন অট্টহাসি। এই হাসিতে আমরা তো ছার ভূত পর্যন্ত ভয় পাবে।

অলক আবার বললো,আমি আরও একটু ঘুমোবো। জেঠু বললেন,ভাত খেয়ে নে। অলক বললো,পরে খাবো।
অলক খেলো না বলে জেঠু ও আমরা সকলে না খেয়ে চলে এলাম।

কাকু আর জোর করেন নি। এই পাড়ার এক ছেলে, নাম তার মদন।মদনের মাথা ঠিক ছিল না সে পাগল ছিল কিন্তু বাড়িতেই থাকতো তাকে পাগলা গারদে যায়নি তার মা আর ছেলে থাকে আর কেউ নেই যার সংসার একদিন কি হলো ওই পাগল ছেলে একটা লাঠি নিয়ে মায়ের মাথায় মেরে দিল একবার জোরে ঘা। তখন রাত্রিবেলা কেউ কোথাও নেই আর মা তখন নিজেই পড়ে ছটফট করছে মাকে নিয়ে আমরা চারজন গেলাম হাসপাতালে সেখানে ভর্তি থাকলে দুদিন তারপরে মারা গেল।মারা যাওয়ার পর যেহেতু মার্ডার কেস এজন্য পোস্টমর্টেম হল। পোস্টমর্টেম হওয়ার পর থেকে লাশ বের করার কেউ নেই সবাই চলে গেছে যে যার নিজের জায়গায় আমি আর আমার পিসির ছেলে ছিলাম দুজনে বের করলাম বের করে কোন রকমে ভ্যানে চাপিয়ে শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হল।শ্মশানে গিয়ে একটা পুরোহিত ডেকে তার পিন্ডি দান করে একদম করতে নিতে দুটো বেজে গেল।রাত দুটো তাওবা অমাবস্যার রাত্রি এবার ফিরতে হবে একটা ছোট নদী পার দিয়ে ছোট নদী গুলোকে আমরা গ্রামে বলি কদর এই কাদোরে পারে বোন আছে বনে থাকে সাপ বেজি শেয়াল এইসব ছোট ছোট প্রাণী তার পাশ দিয়ে আমাদের লন্ঠন নিয়ে যেতে হবে । পিসির বাড়ি আগে তাই পিসির ছেলে চলে গেল বাড়ি আমাকে একটা লন্ঠন ধরিয়ে দিল বললো তুমি চলে যাও এখানে সাবধানে যাবে আর পারলে আমাদের বাড়িতে থাকতে পারো কিন্তু আমি থাকতে পারলাম না কারণ বাড়িতে বলে আসা হয়নি মা হতে চিন্তা করবে তার লন্ঠন হাতে নিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলাম। কান ধরে ধরে যেতে যেতে গা ছমছম করছে ভয় ভয় লাগছে কিন্তু কিছু করার নেই যেতেই হবে রাত আড়াইটা হয়ে গেল এখনও পারে কেউ নেই হঠাৎ দেখা গেল দূরে সাদা ঘুম থেকে একজন দাঁড়িয়ে আছে এবং আমাকে ডাকছে।কোন আওয়াজ নাই শুধু ইশারায় হাত দেখিয়ে ডাকছে আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম এই রাত্রিবেলা এখানে সাদা কাপড় পড়ে মেয়েদের সাজেকে দাঁড়িয়ে আছে নিশ্চয়ই ভয় দেখাবে উদ্দেশ্যে।কিন্তু যখন কাছে গেলাম তখন দেখলাম না এটা ভয় দেখানো নয় সে হঠাত উঠে গেল একটা গাছের উপরে গাছের উপরের দিকে তাকিয়ে দেখি সে হি হি করে হাসছে আবার লাভ মেরে জলে পড়লে বলল ঝাপাং করে।ঝপাং করে জলে পড়ে হাতে একটা সাদা মাছ নিয়ে উঠে পড়ল গাছে যে কর্ম করে কাঁচা মাছ দিয়ে খেতে লাগলো আমার খুব ভয় পেয়ে গেলাম আমি আমি সঙ্গে সঙ্গে লন্ঠন নিয়ে আস্তে আস্তে এগোতে লাগলাম যখন লাগলাম তখন সেই সাদা কাপড় ওয়ালা বলল কিনে খুব ভয় পেয়েছিস মনে হচ্ছে বাড়ি যেতে পারবি তো।আমিওখুব ভয় পেয়ে গেলাম ঠকঠক করে কাঁপছি তখন পাঠাও মাটিতে থাকছে না কোন রকমে ট্রেনে ট্রেনে চলতে চলতে চলতে চলতে অনেক দূর আসার পর হঠাৎ একজন বলল কি গো কোথায় যাচ্ছ ।মানুষের গলার আওয়াজ পেয়ে আমার একটু সাহস হলো আমি বললাম তুমি কে বলছো আমি ভোলা আমাকে চিনতে পারছ না অন্ধকারে আমি তোমার মুখ দেখতে পাইনি জানো এই বটগাছে কাদের ধরে একটা বুড়ি মাছ খেতে লাগল কাকা বলল ওই গাছের পেত্নী থাকে তুমি খুব জোর বেঁচে গিয়েছে ওই গাছের তলা দিয়ে রাত্রিবেলায় টেনে নেয় জলে।কেউ বাঁচেনা। চলো তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসি। আমি বললাম, জেঠুর শেখানো মন্ত্র পড়ে পার পেয়ে গেলাম। ভোলা বলল, বলোনা মন্ত্রটা একবার।
আমি বললাম ” খটাং খটাং খটাং
সাত ভুবনের জাহাজ খটাং
আসতে কাটে যেতে কাটে
আমার অঙ্গে যে করে হান
তার বুকে মারি শ্রীরামচন্দ্রের জল পড়া বাণ। ” ভোলা বারবার আওড়াতে লাগল মন্ত্রটা।

আমি বললাম এত রাতে তুমি কাঁদো ধরে কি করছিলে ভোলা বলল আমরা তো গরিব মানুষ বাড়িতে পায়খানা বাথরুম কিছু নাই এই কান ধরে দাঁড়িয়ে কম মোটা শাড়ি তাই রাত দুপুরে উঠে এখানে এসেছি বট গাছের কাছে ভুলেও যায় না আমরা।

ভোলা বলল তা তোমার এত রাত হল কেন আমি তখন সবিস্তারে আমার ঘটনা বললাম যে শ্মশান থেকে ফিরছিল শ্মশান থেকে পেয়েছো তাহলে এখনো গঙ্গা চান করো না ভোদায় আমি বললাম না গঙ্গা চান করা হয়নি বাড়িতে গিয়ে স্নান করে পরিষ্কার হয়ে গেছে তারপর ঢুকবো

মানুষ আমি ভাবলাম মানুষের বিশ্বাস মানুষের কাছেই থাক হয়তো তাই মানুষের বিশ্বাসে আঘাত দেওয়া যায় না কিন্তু আমি ওসব বিশ্বাস করিনা আজকে অন্তত বিশ্বাস করতাম না কিন্তু নিজের চোখে দেখার পর আর আমার কিছু বলার থাকল না। ভূতের ব্যাপারে অবহেলা করে কারও সাথে কোনোদিন তর্ক করতে নেই। ট্যাক্সি চালায় টোটন। সেই হিসাবে ট্যাক্সি ইউনিয়নের সদস্য। প্রচুর বন্ধুবান্ধব। ফেসবুকের বন্ধুও অনেক। ভয় বলে শব্দটা ওর ডিকশনারীতে নেই।
একদিন বন্ধুরা সবাই আড্ডা মারছে। এমন সময় অমল বলে উঠলো, জানিস ন্যাশানাল পাড়ার বনের ধারে যে তিনতলা লাল বাড়িটা আছে সেখানে নাকি ভূত দেখা গেছে।
মিহির বললো, তাহলে তোএকদিন সবাই মিলে গিয়ে দেখে আসতে হবে।

টোটোন বলে উঠলো, তোরা খুব আজগুবি কথা বলিস। আরে টোটোন থাকতে ভূতের বাপও বাড়ি ছেড়ে পালাবে। চল তাহলে একদিন দেখাই যাক। আমরা সামনের অমাবস্যায় ওই বাড়িতে যাবো। ফিষ্ট করবো। মাংস আর লাল জল। বুঝলি কিনা। জমবে ভালো।

অমল বললো, শোন আসল কথাটা বলি। আমার মামুদপুরের মেশো একদিন আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলো। বিকালে ওই বাড়ির দিকে বেড়াতে গেছিলো। একট বাচ্চা ছেলে কাঁদতে কাঁদতে মেশোকে বললো, আমার খিদে পেয়েছে। মামা জিলাপি কিনে ছেলেটাকে বললো, যাও খেয়ে নাও।

ছেলেটি নাছোড়বান্দা। বললো, আমার বাবাকে দেখবে এসো। কতদিন খেতে পায়নি। এসো দেখে যাও।
মেশো সরল লোক। মায়া হলো। ভিতরে গিয়ে দেখলো বাবা নয়। এক ভয়ংকর স্কন্ধকাটা ভূত। বললো, আমার গলা কেটে সবাইকে মেরে আমার সংসার শেষ করেছে তোর মতো একটা পাষন্ড। আমি কাউকে ছড়বো না। কাটা মুন্ডুটা হাতে। সেই মুন্ডুই কথা বলছে।
মেশো ভয়ে কাঁপতে শুরু করেছে। এবার ভবলীলা সাঙ্গ ভাবছে মেশো। এমন সময় ছেলে্টি সামনে এসে বললো, বাবা এই লোকটি ভালো। জিলাপি কিনে দিয়েছে। এই বলে ছেলেটি উড়তে উড়তে জিলাপি খেতে লাগলো। উড়ন্ত অবস্থায় ছেলেটির মা বললো, এঁকে ছেঁড়ে দাঁও। যাঁও যাঁও। জিঁলাপি খাঁও।
তখন সুযোগ বুঝে মেশো পালিয়ে এসে বাঁচে।

টোটোন ভয় লুকিয়ে বাতেলা দিলো অনেক। বললো, ঠিক আছে আমরা কুড়িজন একসাথে যাবো ওই বাড়িতে। দেখা যাবে। কত ধানে কত চাল।
চালাক টোটোন। তাই দল বাড়াচ্ছে। ঠিক হলো কুড়িজন বন্ধু একসাথে যাবে। অনেক ছেলের মাঝে নিশ্চয় ভূত আসবে না।

মাঝের কয়েকদিন যে যার কাজ নিয়ে থাকলো। তারপর এসে গেলো সেই অপেক্ষার অমাবস্যা। দিনের বেলায় সবকিছু কেনাকাটা সেরে সবাই দুরু দুরু বুকে রাতের প্রতিক্ষায়। কিন্তু কেউ ভয় প্রকাশ করছে না। বাড়িতে কেউ বলে নি। সবাই বলেছে, আজ একজন বন্ধুর জন্মদিন। রাতে বাড়ি আসবো না। ওখানেই সব ব্যবস্থা।

রাতের বেলা ন্যাশানাল সিনেমা হলের কাছে সবাই একত্র হলো। সবাই চললো এবার সেই অভিশপ্ত বাড়িতে। টোটন চুপ। কোনো কথা নেই। অমল বললো, কি রে টোটোন, চুপ মেরে গেলি কেন? কথা বল।

টোটোন বললো, এই দেখ আমার অস্ত্র। একটা মস্ত নেপালা বের করে দেখালো। তারপর বললো, ভূতের দফা রফা করবো আজই।

কথায় কথায় বাড়িটা চলে এসেছে কাছে। অমল বললো, চল ভিতরে ঢুকি।
দুজন লোক পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো। বললো, মরতে যেচো কেনে ওই বাড়িতে? খবরদার ওই দিকে মাড়িয়ো না। গেলেই মজা টের পাবে।
এখন আর ফেরার কোনো ব্যাপার নেই। হুড়মুড় করে সবাই ঢুকে পড়লো বাড়ির ভিতরে। তারপর মাকড়সার জাল, ধুলো পরিষ্কার করে রান্না শুরু করলো। এখনও অবধি কোনো ভৌতিক কান্ড ঘটে নি। ভয়টা সকলের কমে গেছে।
টেটোন বললো, অমল তোর মেশোর গাঁজার অভ্যাস আছে নাকি?
সকলের সামনে অমল একটু লজ্জা পেলো। তারপর ভাবলো, বন্ধুরা একটু ইয়ারকি মারে। ওতে ইজ্জত যায় না।
টোটোন এক পিস কষা মাংস নিয়ে লাল জলে মন দিয়েছে। সে এই দলের নেতা। সবাই অলিখিত ভাবে তাকে মেনে নিয়েছে নেতা হিসাবে। নেতা কষা মাংসতে কামড় মারার সঙ্গে সঙ্গে কষ বেয়ে লাল রক্ত। বোতলে রক্ত ভরতি। সবাই দেখতে পাচ্ছে কিন্তু নেতা দেখতে পাচ্ছে না। নেতাকে রক্ত মাংস খাওয়া ভূতের মতো লাগছে।
অমল কায়দা করে তাকে আয়নার সামনে নিয়ে দাঁড় করালো। নেতা নিজের রূপ দেখে ভয়ে বু বু করতে লাগলো। সবার প্রশ্ন এত রক্ত কোথা থেকে এলো?নেতা অজ্ঞান হয়ে গেলো।

তাকে জল দিয়ে জোরে হাতপাখা দিয়ে হাওয়া করতে লাগলো বন্ধুরা। তারপর জ্ঞান ফেরার পরে আবার ভয়ের পালা। রাত তখন দশটা। দরজাগুলো বন্ধ হয়ে গেলো। আর চার দেওয়ালের গা বেয়ে নেমে আসছে রক্তের ধারা। এত রক্ত যে মেঝে দিয়ে গড়িয়ে সকলের পা ভিজে যাচ্ছে। নেতা এবার জোড় হাত করে বলছে, আমাদের ছেড়ে দাও, এই কান মুলছি, নাক মুলছি আর কোনোদিন এই বাড়িতে ঢুকবো না। দয়া করো আমাদের দয়া করো।

তখন আড়াল থেকে কথা শোনা গেলো, তুই তো নেপালা এনেছিস। সবাই দেখলো নেপালা নিজে থেকেই শূণ্যে ভাসছে। তারপর ভূত হাজির। নেপালা একবার ভূতের মাথা কাটছে আর জোড়া লেগে যাচ্ছে। বলছে, আমাকে কাটবি। মাথা কাটবি। তোর মাথা কাটি। নেতা ভয়ে কাঁপতে শুরু করেছে।

তখন অমল বললো, আমরা তোমার সাহায্য করবো। কে তোমাকে মেরেছে বলো। আমরা পুলিশকে জানাবো। সে শাস্তি পেলে নিশ্চয় তোমার আত্মার শান্তি পাবে। কথায় কাজ হলো সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে গেলো। রক্ত মুছে গেলো। আর একটা ছবি হাওয়ায় উড়ে এলো।

টোটোন ছবি দেখে বললো, একে আমি চিনি। নিশ্চয় একে পুলিশে দেবো। আমরা কুড়িজন সাক্ষী দেবো। তারপরে পুলিশ সব দায়িত্ব পালন করেছিলো। সেই বাড়ি এখন পুলিশ থানা। চাকরি পেয়েছে কুড়িজন সাহসী ছেলে। যাদের চেষ্টায় খুনী ধরা গেছে। আর অতৃপ্ত তিনটি আত্মা মুক্তি পেয়েছে।

পাড়ায় একটা সুন্দরী মেয়ে ঘুরে বেড়ায় কয়েকদিন ধরেই। এত সুন্দরী মেয়ে এপাড়ায় আছে বলে তো মনে হয় না। রমেন বলল, চায়ের দোকানে চা পান করতে করতে। তার বন্ধু বিমান একটু নারীঘেঁষা পুরুষ। সে বলল, আহা মেয়েটাকে বিছানায় কেমন মানাবে বল তো? মেয়েটি ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, আমি রাজি। যাব তোমার সঙ্গে। রমেন বলল, এত দূর থেকে আপনি কি করে কথা শুনলেন।মেয়েটি বলল, আমি শুনতে পেলাম। তাই বললাম।

বিমান বলল, আমিও রাজি। চল আমার সঙ্গে।
রমেন বলল, যাস না। জানি না শুনি না। মেয়েটাকে নিয়ে তুই চললি বিছানায়?

বিমান একা। অকৃতদার সে। বাড়ি ফাঁকা। বেশ আয়েস করে বলল, চল সুন্দরী তোমার কোন অভাব রাখব না।

রমেন পরের দিন রাতে বিমানের বাড়ি গেল। বিমান চায়ের দোকানে আসে নি। হয়ত সুন্দরীর পাল্লায় পরে সব ভুলে গেছে।

রমেন বিমানের বাড়ি ঢোকার আগেই একটা বাদুড় ডানা ঝটপট করে বেরিয়ে গেল বিমানের বাড়ি থেকে। সে দেখল, বিছানায় বিমানের রক্তাক্ত দেহটা পড়ে। পুলিশকে ফোন করল সে। পুলিশ এসে দেখল, বিমানের ঘাড়ের কাছে দুটো দাঁতের দাগ। গলার নলিতে কামড়ে কে যেন নলি ছিঁড়ে নিয়েছে।

সুন্দরী মেয়েটা গুরুগুরু করে আজও বেড়াচ্ছে। রমেন দেখল চায়ের দোকানে পাশে এসে বসে দশবার দাঁত বের করে হাসছে।

রমেনেরর সন্দেহ হলো এই মেয়েটাকে বিমান নিয়ে গিয়েছিলো। অথচ বিমানের রক্তাক্ত দেহ বিছানায় পড়ার সময় তাকে তো দেখা যায়নি।

সুন্দরী মেয়েটি সোম কে বলল, যাবে নাকি তুমি বিমানের মত?

রমেন ছুটে পালাতে চাইলো। কিন্তু ছুটতে পারল না। পা দুটো যেন আঠার মত আটকে গেছে।

রমেনের বিরক্তিকর মুখ দেখে মেয়েটি আর কিছু বলল না। সে আরেক জনকে বললো যাবে আমার সঙ্গে। সোম ভাবল, মেয়েরা এত নির্লজ্জ হতে পারে? কেউ ভাবতে পারিনি। তবু সেই ছেলেটি বলল,হ্যাঁ যাব। সুন্দরী বলল, আমি রাতে দেহ ব্যবসা করি। লজ্জা করলে হবে বলো নাগর?
সোম আহ্লাদিত হল। সে বলল, আমার গাড়ি আছে পার্কিং জোনে। চল গাড়ির ভিতরে যাই।

আবার সকাল হলে সোমের রক্তমাখা দেহ পরে থাকতে দেখল সবাই। রমেন থানায় ফোন করে বলল, সোম একটা মেয়ের সঙ্গে রাতে ছিল। মেয়েটিই খুনী মনে হয়।

আজ রাতে পুলিশ সদলবলে চায়ের দোকানে বসল সিভিল ড্রেসে। রমেনের কাছে মেয়েটি এল। সে রমেনকে বলল,এবার তোমার পালা। চল আমার সঙ্গে।

রমেন কাঁপতে শুরু করল। পুলিশ সক্রিয় হল। মেয়েটিকে ধরে নিয়ে চলে গেল থানায়। রাতে বন্দি হল সে।
পরের দিন সকালে আই সি দেখলেন, গারদের মেঝেয় পড়ে আছে একটা মরা বাদুড়।জেঠু গল্পটা বলার পরে আমি জানতে চাইলাম, জেঠু ইহকাল মানে যেখানে আছে।আর পরকাল মানে কি?

জেঠু বললেন,এটি হল একটি জগতের ধারণা, যে ধারণা অনুসারে ব্যক্তির শরীরের মৃত্যু হয়ে গেলেও তার চেতনার অস্তিত্ব থেকে যায়। পরকালের বিভিন্ন ধারণা অনুযায়ী মৃত্যুর পরেও থেকে যাওয়া ব্যক্তির এসেন্স কোন আংশিক উপাদান অথবা পূর্ণাঙ্গ আত্মা হতে পারে। এই এসেন্স কোন ব্যক্তিগত পরিচয় বহন করতেও পারে আবার নাও পারে যেমন ভারতীয় দর্শনের কথা। পরকালের উপর বিশ্বাস দর্শন থেকে আসতে পারে অথবা অতিপ্ররাকৃত বিশ্বাস থেকে আসতে পারে।
কিছু লোকায়ত মতবাদ অনুসারে, মৃত্যুর পরও অস্তিত্ববহন করা এই সত্তা কোন অতিপ্রাকৃত জগতে অবস্থান করে, আবার অন্যান্য লোকায়ত মতবাদ অনুসারে এই সত্তার নবজন্ম ঘটে এবং পুনরায় জীবনচক্র শুরু হয়। এক্ষেত্রে পূর্বের জীবন সম্পর্কে কোন স্মৃতি থাকে না। এই মতবাদ অনুসারে সত্তার একটি অন্য জগতে প্রবেশের আগ পর্যন্ত বারবার জন্ম ও মৃত্যুর প্রক্রিয়া চলতেই থাকে। পরকাল সংক্রান্ত বেশিরভাগ বিশ্বাসেরই উৎপত্তি মন থেকে।

কিছু বিশ্বাস ব্যবস্থা বিশেষ করেপ্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী মৃত্যুর পর সত্তা জীবিতাবস্থায় পৃথিবীতে তার নিয়ম অনুযায়ী বা কোন নির্ধারিত বিশেষ স্থানে গমন করে। অন্যদিকে পুনর্জন্ম বিশ্বাস অনুযায়ী মৃত্যুর পর কৃতকার্য অনুসারে সত্তার প্রকৃতি সরাসরি নির্ধারিত হয়ে যায়, এতে ভিন্ন কোন সত্তার সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয় না।

আমরা গল্প ককরছিলাম।হঠাৎ খবর এলো ভবদেব কে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।পূর্ব বর্ধমান জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে বাড়ি। সেখানে একটা ছোট্ট নদী আছে তার নাম ঈশানি। একটা বড় ভাঙ্গা বাড়ি। সেই বাড়ির বয়স অনেকে বলে হাজার বছরের উপর। ভাঙাচোরা বাড়িটার ভেতরে একটা গলি ছিল। অন্ধকার গলি। পূর্ব বর্ধমানের ভাষায় যাকে বলতো ‘আদিরে গলি।।আমাদের এ কথাটা আঁধার থেকে এসেছে। সবাই মুখে মুখে বলতো আদিরে গলিতে যাবিনা আদিরে গলিতে ভূত আছে। কিন্তু আমাদের ছোট থেকেই গলির প্রতি আকর্ষণ ছিল বেশি।

জেঠু বললেন, কেউ তারা অই আদিরে গলিতে যাবি না। এখানে তন্ত্র সাধনার জন্য লাশ চাই। দে আমাকে লাশ। তুই মরবি। মিলুকে বলল তুই।মিলু বছরে ছয়মাস গ্রামে থাকে আর প্রয়োজনে মেস বাড়িতে যায়। আমরা জেঠুর কথা শুনে ভয় পেলাম। জেঠু বললেন, আমি তান্ত্রিক। কিন্তু খুনি নই। লাশের বুকে বসে সাধনা করবে যেই লাশও মাংস খাবে গবাগব। আমার পোষা ভূতের অত ক্ষমতা নেই। আদিরে গেলে আমার নাগালের বাইরে। তখন ডাকবি না আমাকে।

আমরা জানতাম, ভবদেব বরাবরই আঁধারে গিয়ে বসে থাকতো। আর তার সময় কাটাতো গরু ছাগল চরাতে। বাকি সময়টা ওই আদিরে গলিতে গিয়ে বসে থাকতো। তাকে খুঁজে না পাওয়া গেলে আমরা সবাই ওখানে চলে যেতাম। ওখানে ঠিক দেখতাম ভবদেব শুয়ে আছি আদিরের গলিতে।কিন্তু এবার আর পাওয়া যাচ্ছেনা আদির এর গলিতে গিয়ে। ভবদেব কে আর পাওয়া যাচ্ছেনা ভবদেব কোথায় গেল চিন্তিত বাড়ির সবাই কোথায় গেল। কোথায় যেতে পারে। সে তো আর কোথাও যায় না।সে কথা কম বলে নিজের মধ্যে গুটিয়ে থাকে গরু ছাগল চরায় আর বাকি সময় তো ওখানেই থাকে। বিড়ি খায় গাঁজা খায় মদও খায়। কিন্তু আর তো কোথাও যায় না।ছোটবেলায় আমরা সবাই দল মিলে এই আদিরে গলিতে লুকোচুরি খেলা করতাম। লুকোচুরি খেলতে খেলতে হঠাৎ দেখলাম এক বিরাট লম্বা লোক। তাদের লম্বা হাত। তারা আমাদের ধরতে চাইছে। বস্তা ছুঁড়ে দিচ্ছে আমরা ভয়ে পালিয়ে এসেছিলাম। এই কথাটা বলা মাত্রই বাড়িতে বড়রা সবাই বলতো, অই গলিতে যাবিনা।অনেকে ভয় পায়। অনেকে মরে গেছে। আজ পর্যন্ত তার খোঁজ পাওয়া যায়নি।কিন্তু আমরা শুনতাম না। বারবার সেই আঁধারে গলিতে গিয়ে বসে থাকতাম। কি ঠান্ডা শীতল হাওয়া আর এয়ারকন্ডিশনড ঘরের মত।
গরম সেখানে পৌঁছাতে পারতো না। কি সুন্দর ঠাণ্ডা হাওয়ায় এখানে বসে থাকতাম স্যাঁতসেতে গলি।
হাজার বছরের পুরনো সেই গলি। এখানে নাকি কারাগার ছিল। এই কারাগারে বন্দীদের বন্দি করে রাখা হতো।
তাদের ওপর অত্যাচার করা হতো। কত মানুষের প্রাণ যে এখানে বলি হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই।
ইতিহাস তাই বলে।
ইতিহাস এখানে ফিসফিস করে কথা বলে। কারাগারগুলোর দরজা ভেঙে গেছে সব। অন্ধকারের আকর্ষণে আমরা বারবার ছুটে আসতাম। আমরা ভয় পেতাম না।

ভবদেবকে খুঁজতে খুঁজতে আমরা ঠিক আঁধারে পেয়ে যেতাম।
সেই পুজো বাড়ির আঁধারের গলিতে। সেখানে সে কালো ছাগল, কালো কুকুর নিয়ে বসে খেলা করতো। পাগলের মত বলত, এবার কালোদা আসবে। আমাকে মদ দেবে মাংস দেবে। আমি খাব। আমরা বলতাম, কালোদা কে? ভবদেব কিছু না বলে মুচকি হেসে বলত, ও এক অপদেবতা। উড়িয়ে নিয়ে যায় অন্ধকার জগতে। কি ভালো লোক। ভাষায় বর্ণনা করা যাবে না।

আমরা বলতাম, পাগলে কিনা বলে, ছাগলে….

ভবদেব বলতো, অন্ধকারকে কেন কালো বলে? অন্ধকারে এলেই এলইডি র মত আমার মন আলোয় আলোয় উদ্ভাসিত হয়। আলোয় আলোয় ভরে যায় আমার অন্তর। আমার অন্ধকার ভালো লাগে। আমি অন্ধকার কে পছন্দ করি। আমি অন্ধকারের সন্তান। গভীর জলধি কালো। গর্ভ কালো। কালোয় ভুবন ভরা।

আমরা বলতাম, ভবদা এখানে অনেক সাপখোপ আছেরে। আসিস না দাদা। ভবদেব বলত, তোদের কোনদিন দেবে কামড়ে। দেখবি বিষাক্ত সাপ। কয়েক হাজার বছরের পুরনো বাড়ি। গলিতে এলে ঠান্ডা লেগে শুরু হয়ে যেতে পারে সর্দি-কাশি।জ্বরে আক্রান্ত হতে পারিস খবর্দার এখানে আসিস না।
ভবদা চাইত না, আমরা এখানে আসি।

তবুও বলতো আমার এখানে এলে ভালো লাগে এখানে এসে বসে থাকলে আমার মন খারাপ গুলো ভালো হয়ে যায়। আমি এখানে বারবার ছুটে ছুটে আসবো। আমার কথা আলাদা। তোরা আসিস না। কালোদা কালো জোব্বা পরে আসে। দেখলে উড়িয়ে নিয়ে যাবে। দেখবি তখন মজা। ভয়ে মরবি তোরা।

সে আমাদের বারণ শুনত না। কোন খেয়াল হলেই সে চলে আসত এই অন্ধকারে গলিতে। অন্ধকার গলিতে ভেতরে এসে শুয়ে থাকতো গামছা পেতে। আর সবসময় সঙ্গে সঙ্গে থাকত কুকুরটা আর কালো ছাগলটা।ছাগল গরু চলে যেত বনে। আর দুপুরবেলায় তো বাড়িতে। তারপর আবার সেই অন্ধকার গলিতে। অন্ধকার গলিতে তার 24 ঘন্টার মধ্যে 18 ঘন্টা কেটে যেত।কি এক অমোঘ আকর্ষণে চলে আসত এই আঁধারের গলিতে।
আমরা বুঝতে পারতাম না। আমরা বারবার তাকে বলতাম ভয়ের কথা। কিন্তু সে সব ভয় জয় করে বসে আছে।
অনেকে তাকে পাগল বলতো। কিন্তু সে বলতো যে যাই বলুক আমার এই অন্ধকার খুব ভালো লাগে। কালোদা আমার বন্ধু। আমি ওর কাছে একদিন চলে যাব। দেখবি আমাকে আর খুঁজেও পাবি না। আমরা শুনেছি, ওই বাড়ির যে দাদু আগে থাকতেন উপর ঘরে। রাতে ভয় পেতেন। তিনি এখন মারা গেছেন।তিনি বলতেন হাজার বছর এই বাড়িতে ওই অন্ধকার গলিতে কারাগার ছিল।ওখানে বন্দী করে রাখা হতো সরল সহজ মানুষকে। জোর করে তাদের জমি কেড়ে নিয়ে মা বোনদের অত্যাচার করত রাজা।কয়েক হাজার বন্দীকে বেঁধে মারধোর করত রাজা।রাজা তাদের শাসন করতোএবং কোন অপরাধ না হলেও সেই অন্ধকারে তাকে বন্দী করে দিত।এখনও তাদের কান্না শোনা যায়। এখানে মৃত্যু ঘটেছে অনেকের। ওখানে অনেক অতৃপ্ত আত্মা থাকে।
আত্মাগুলো ঘুরে ঘুরে বেড়ায়। তাদের অতৃপ্ত আত্মা গুলো এখনো সেখানে থাকে।আর নাকু দাদু অনেকবার নাকি দেখেছেন তাদের এবং আমরা আমাদের বললে আমরা বুঝতে পারতাম হয়তো ভয় দেখানোর জন্য বলছেন। হয়তো বাড়িতে না যাওয়ার জন্যই কথাগুলো বলছেন।আসলে তা নয়। সব সত্যি কথা, আজ বড় হয়ে বুঝেছি ।

জেঠু বলতেন, গলায় ফাঁসি দিয়ে লোকগুলোকে মারত আর মেয়েছেলেদের ধর্ষণ করার পরে গেঁথে রাখত দেওয়ালে। লন্ডনের টুকুসাহেব একবার মেটাল ডিটেক্টর নিয়ে শব্দ পেয়েছিলেন দেওয়ালে। মনে করলেন হয়ত গুপ্তধন আছে। বড্ড লোভি সাহেব। রাজাদের বংশধর।অই সাহেব লন্ডনে যাওয়ার সময় আমাকে দায়ীত্ব দিয়েছিল এই বাড়ির দেখাশোনা করার জন্য। আমি অবিবাহিত বেকার লোক। তাই গ্রামের সবাই বলল, নে দায়ীত্ব নে। পুজো করবি আর খাবি প্রসাদ। কোনদিন রাতে আমি শুতে পারতাম না ছাদের ঘরে। রাত হলেই গান বাজনা আর মদের আসর বসাত মৃত রাজার পারিষদবর্গ। মৃত রাজা এক আলখাল্লা পরে সিংহাসনে বসতেন। সকাল হলেই পরিষ্কার ঘর সব। সেইরাতে আমার ঘুম হয় নি। তারপর থেকে আর কোনো রাতে আমি পুরোনো বাড়িতে থাকতাম না। তারপর সাহেব বললেন,দেওয়াল ভাঙ শালা। নিশ্চয় গুপ্তধন আছে। দেওয়াল ভেঙ্গে দেখা গেল চুড়ি পরা একটা কঙ্কাল। এই কঙ্কালটা সাহেব অই বাড়িতে রেখেছিলেন। সাহেবের সাহস খুব। তিনি অই বাড়িতেই রাতে শুতেন কঙ্কাল ঘরের পাশে। সেই কঙ্কাল প্রতিরাতে সুন্দরী মেয়ে সেজে সাহেবের সামনে আসত। মাতাল সাহেব রমণ করত তাকে সারারাত। সুন্দরীও কম যেত না। এক প্রতিশোধ স্পৃহায় সে সারারাত উলঙ্গ হয়ে নাচত। গ্রামের অনেকে জানালা দিয়ে সাহেবের ঘরে নোংরামি দেখত। সাহেব চরিত্রহীন লম্পট মাতাল ছিলেন। ভয়ডর তার ছিল না।মদ মাংস আর মেয়ে এই তিনে তার সংসার সাজিয়ে রাখতেন। সাহেব বলতেন, আমার স্ত্রী, মেয়ে সব মরে গেছে। ভালোই হয়েছে। এখন শুধু মদ আর মাগি নিয়ে থাকি। ভোর হলেই কঙ্কাল চলে যেত নিজের জায়গায়। এইভাবে বছরখানেক পরে সাহেব দেখল এক রাতে, সুন্দরীর হাতের চুড়িটা লাল। সাহেব বলল, এই চুড়ি তো কঙ্কালের হাতে আছে। সুন্দরী বলল, আমিই সেই কঙ্কাল। তুই অই রাজার বংশধর। আমি তোকে আজ খুন করব।পরের দিন সকালে কেউ আর সাহেবের খোঁজ পায় নি। লাশও গায়েব হয়েছিল। লোকে একথাই বলে।

আমরা বললাম, ভবদা তো এখানে অন্ধকারে আনন্দ করে। মজা পায়। কালো জোব্বা পরা লোকটা ওর বন্ধু। জেঠু বলতেন অন্ধকারে প্রতি আকর্ষণ মানুষের চিরন্তন। মানুষ যতদিন থাকবে অন্ধকারে প্রতি আকর্ষণ কোনমতেই কমবে না।নাকু দাদুর কথা শুনে আমরা বুঝতাম দাদু নিশ্চয়ই কিছু জানেন আমরা বলতাম দাদু বল না কি দেখেছো। তিনি বলতেন , তোরা তো মনে করবি আমি ভয় দেখাবার জন্য বলেছি। বলছি আসলে ওখানে ভূতেদের বাস।ভূত পেত্নীরা এখনও বাস করে।ওখানে গেলেই দেখবি হাত নিয়ে এগিয়ে আসছে কালো জোব্বা। এই নাকু দাদু হলেন জেঠুর বাবা। মানে আমরা নিজের দাদুর মতই ভালোবাসতাম। বংশসূত্রে জেঠুও থাকেন নাকু দাদুর সঙ্গে।জেঠু পণ করেছেন, বিয়ে করবেন না।

জেঠু আবার বলেন। তোরা কোনদিন ওখানে যাস না। তবু আমরা লুকিয়ে যেতাম
জেঠু বলতেন, ওদের খপ্পরে পরে পরিণতি একদিন খারাপ হবে দেখবি। ভবদেব তো কালো জোব্বার বন্ধু। ওর কথা আলাদা। তবে দেখবি ভবদেবও সাহেবের মত ভ্যানিস হয়ে যাবে একদিন। ভবদেব সেদিন আমাদের সঙ্গেই ছিল।

তারপর পুজো দাদু মরে গেলেন বয়সের ভারে।

প্রায় একশ পাঁচ বছর বেঁচেছিলেন দাদু। ইনি ছিলেন নাকুদাদুর কাকার ছেলে।

ঠিক তাই ভবদেবের পরিণতি খারাপ হয়েছিল। পুজোদাদু মরার তিনবছর পরে ভবদেবও লা পাত্তা।

আমরা জানি, ভবদেবকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় নি। ওই অন্ধকার গলিতে। তার লাশও গায়েব হয়েছিলো একদিন।
আমার এক শহুরে বন্ধু বলল, চল তো দেখি তোদের গ্রামের বাড়িটা। ও দেখেছিল।বন্ধু বলল,আমি অন্ধকারে যাই দেখি। আমি টেনে ধরেছিলাম। অভিশপ্ত অন্ধকার গলিটা আজও আছে। কোনদিন কেউ বেড়াতে এলে আমাকে বলবেন। আমি দেখাতে পারি বাড়িটা। বাকি দায়ীত্ব আপনার। একদম সত্য। কে বা কারা তাদের খুন করেছে বা কেন ভবদেব মারা গেছে আজ পর্যন্ত কেউ জানতে পারে নি। কোন অজানা অসুখে কিনা তা আজ পর্যন্ত কূলকিনারা খুঁজে পায়নি পুলিশ।তাহলে তো লাশটা পাওয়া যেত।

পুলিশ এসেছিল তারা লাশ পায় নি। একরাশ ভয় নিয়ে চলে গেছিল।কিন্তু কোনো কারণ এখনো পর্যন্ত খুঁজে পায়নি।পাবে বলে মনে হয় না।

জেঠুর আসল নাম কেউ জানত না। সকলে বলত,ক্যাপটেন।শ্যাম ক্যাপটেন বলে ডাকত জেঠুর বন্ধুরা। জেঠু বলতেন, আমি দশবছর জাহজে ক্যাপটেন ছিলাম। তারপর আমার শারীরিক অসুবিধার জন্য চলে আসতে হয়। জেঠু বললেন, শোন আমার তান্ত্রিক হওয়ার গল্প। রামশংকর বাবু অচিনপুরের বাসিন্দা। তিনি গাছ চালাতে পারেন। বাড়ির স্থান পরিবর্তন করতে পারেন। একদিন তিনি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন যেতে যেতে অনেক দূরে তার গ্রাম থেকে প্রায় 10 মাইল দূরে একটা বাড়ি থেকে তার পছন্দ হলো। গাছবাড়ী চলাচল করতে পারে। এই মনে মনে ভাবলেন এই বাড়িটা আমার গ্রামে, আমার জায়গায় নিয়ে গেলে বেশ হয়। যেই ভাবা, পরিকল্পনা শুরু করেন সঙ্গে সঙ্গে। তিনি রাত্রে বাড়ি ফিরে এসে মন্ত্রের সাহায্যে সেই বাড়ি নিয়ে চলে এলেন নিজের জায়গায়। রাতারাতি বিশাল বাড়ি, গজেন্দ্র ভবন গড়ে উঠলো গড়গড়ের মাঠে। এলাকায় সকলে, সকালে দেখে অবাক হয়ে সবাই প্রশ্ন করলেন তাকে, কি করে এই বাড়ি এখানে এলো? তিনি বললেন সব ঈশ্বরের খেলা, বাবা সব খেলা।গ্রামবাসীরা বেশ সম্ভ্রমের চোখে দেখতেন তারা বললেন তাহলে আমাদের প্রত্যেক কে একটা করে বাড়ি করে দিন আপনি।
আপনি তো দেবতার স্বরূপ। আপনি ইশ্বরের কাছে বলে আমাদের একটা করে বাড়ি করে দিন। তিনি বললেন তা বললে কি হয় বাবা। সবকিছুই সময়ের উপর নির্ভর করে হবে হবে নিশ্চয় হবে।

ধীরে ধীরে তিনি আশেপাশের গ্রামের কাছে প্রবাদপুরুষ হয়ে উঠলেন। সকলেই তাকে সম্মান করেন এবং এবং অনেকে তাকে বেশ সম্মানের চোখে দেখতেন এবং ভয় করতেন। আবার অনেকে এড়িয়ে যেতেন পাছে তার খপ্পরে পড়ে বাড়িঘর এদিক-ওদিক না হয়ে যায় । ধীরে ধীরে মানুষের সব আশা পূর্ণ হয়ে গেলে মনের পরিবর্তন হয় শেষ বয়সে।

তার মনেরও পরিবর্তন হলো তিনি নিজের বিদ্যাকে ভালো ভালো কাজে লাগালেন এবং সমাজের মঙ্গলজনক কাজে তার মন্ত্র বিদ্যাকে কাজে লাগালেন। তার ফলে সকলেই তার প্রিয় পাত্র হয়ে উঠলো।

অনেক গরীব মানুষের তিনি ঘরবাড়ি করে দিলেন। অনেক জায়গায় তিনি বাগান তৈরি করলেন।

এরপর এলো মৃত্যুদূত। তিনি মৃত্যুর কবলে পড়লেন। তিনি মরে গেলে গ্রামবাসীরা আনন্দ করে বিরাট মিছিল করে তার মরদেহ শ্মশানে নিয়ে গেল। শ্মশানে নিয়ে গিয়ে সেখানে শব দাহ করে গ্রামবাসীরা ফিরে এলো।

রাম শংকর বাবুর আত্মা দেহ ছেড়ে তার বাড়ির আশেপাশে ঘুরঘুর করতে লাগলো। গ্রামবাসীরা অনেকেই তাকে দেখতে পেল। অনেকে, বাবা গো মা গো’ বলে ছুটে পালালো।
দেখা গেল কয়েক মাসের মধ্যে তার বাড়ির এলাকায় আর কেউ যাচ্ছে না।

রামশংকর বাবুর আত্মার খুব সুবিধা হল। সাধারণত আত্মা বা ভূত নীরব নির্জন এলাকা পছন্দ করে। তিনি ঠিক করলেন, শখের বাড়িটা একটা ঘন জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে গিয়ে সেখানেই থাকবেন।

রামশংকর বাবু আত্মা তাই করলেন। এক ঘন নীরব নির্জন জঙ্গলের মধ্যে বাড়িটা নিয়ে গেলো।

আর বাড়িটার তিনি বেঁচে থাকতেই একটা দলিল তৈরি করেছিলেন। এই দলিলের তিনি নাম দিয়েছিলেন, দশ দুপুরের দলিল।

রামশংকর বাবুর বাড়িটা জঙ্গলে যেতেই গোয়েন্দা দল চলে এলেন। এদের কৌতূহল বেড়ে গেল কি করে একটা বাড়ি স্থান পরিবর্তন করে জঙ্গলে চলে যেতে পারে। গোয়েন্দা দলের ক্যাপ্টেন ছিলেন শ্যাম চন্দ্র বেরা তিনি অনুসন্ধান শুরু করলেন। ক্যাপ্টেন স্যাম প্রথমেই দলিল তার খোঁজে বাড়িতে যাওয়া মনস্থির করলেন। সেই ভুতুড়ে বাড়িতে তিনি একাই প্রবেশ করলেন প্রথমে দেখতে পেলেন মাকড়সার জালে ঝুলে আছে একটা মৃত কুকুর। এত সরু মাকড়সার জালে কি করে একটা বড় প্রাণী ঝুলে থাকতে পারে তিনি অবাক হলেন ।

ক্যাপ্টেন শ্যাম হাতে দুটো গাছের ডাল নিয়ে গিয়েছিলেন। সেই ডাল দিয়ে তিনি মাকড়সার জাল গুলোকে পরিষ্কার করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছেন আর তার পেছনে পেছনে চলল সমগ্র দল কিন্তু কোথাও কিছু নেই শুধু পুরনো কাগজপত্র পুরনো আসবাবপত্র আর পুরনো আলমারি ভর্তি বই। এই বই পত্র ঘাটতে ঘাটতে তিনি পেয়ে গেলেন একটা ফাইল ফাইলটা তিনি বগলে চেপে ধরে কোনরকমে বাইরে বেরিয়ে চলে এলেন।

বাড়ির ভিতরে বেশিক্ষণ থাকা খুব একটা নিরাপদ নয় মনে করে তিনি সমগ্র দল নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলেন তারপরে জঙ্গলে কিছুটা পরিষ্কার করে সেখানে টিফিন করে তার ফাইল নিয়ে বসে পড়লেন ফাইলে ভেতর কি আছে দেখার জন্য ।

রাম শংকর বাবু ছোটবেলা থেকেই জলে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসতেন আজীবন তিনি আবিষ্কারের নেশায় মত্ত ছিলেন। বন্ধুবান্ধবের দলে তাকে সবাই ক্যাপ্টেন বলে মনে করত তিনি রাত্রিবেলায় বনের ধারে গিয়ে বসে থাকতেন একা তার ভয় বলতে কিছু ছিল না।

ফাইল খুলে দেখলেন দলিল। লেখা আছে একটা কাগজে দশদিন দুপুরে প্ল্যাচেট করে নামিয়ে আনা আমিনের আত্মা লিখেছিল রামশংকরের এই দলিল। সেই আমিন দলিল লেখকও ছিলেন। তার এক বছর আগে মরেছিলো গলায় দড়ি দিয়ে এই দলিল লেখক।

ক্যাপটেন সহ সবাই দেখলেন, দলিল উড়তে শুরু করল। আগুন জ্বলে উঠল বাড়িটায়। এই দলিলে হাত দেওয়া মাত্র অতবড় বাড়িটাও উধাও হয়ে গেল।

এই যে দলিলটা আমি পেয়েছিলাম তার ভেতরে একটা কাগজে কিছু লেখা ছিল। পোষা ভূত থেকে শুরু করে তন্ত্রের কথা।সেই কাগজে লেখা ছিল তন্ত্র প্রাকৃতিক শক্তির নিয়ন্ত্রণ করতে চায় না। তার কারণ, তন্ত্র প্রাকৃতিক শক্তিকে চৈতন্যময়ী জেনেছে, মা বলে জেনেছে, মায়ের দেবীপ্রতিমা কল্পনা করেছে; দেবী মা (প্রাকৃতি কে) কে একজন তান্ত্রিক নিষ্ঠাভরে ভজনা করতে চায়, আরাধনা করতে চায়, পূজা করতে চায়। পাশাপাশি একজন তান্ত্রিক মনে করেন, একজন ভক্ত চৈতন্যময়ী শক্তির অনুগত থাকলে চৈতন্যময়ী শক্তির কৃপায় তার অশেষ কল্যাণ সাধিত হতে পারে।এই হল বিজ্ঞান এবং তন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য।চৈতন্যময়ী প্রকৃতিরূপী নারীবাদী তন্ত্রের দেবী দূর্গা- কালী- বাসুলী – তারা- শিবানী। কিন্তু তন্ত্রের কেন্দ্রে রয়েছেন (আমি আগেই একবার ইঙ্গিত দিয়েছি) অনার্য দেবতা শিব। তন্ত্রমতে শিব তাঁর শক্তি পেয়েছে কালীর কাছ থেকে। আবার শিব- এর রয়েছে পৃথক নিজস্ব শক্তি। তন্ত্রমতে পুরুষ শক্তিলাভ করে নারীশক্তি থেকে। শিব শক্তি লাভ করেছেন তাঁর নারীশক্তির প্রকাশ- গৌড়ীর শক্তি থেকে। তবে শিবের নিজস্ব শক্তিও স্বীকৃত। তন্ত্রসাধনার মূল উদ্দেশ্যই হল- (প্রাকৃতিক) শক্তি দেবীর সাধনা করে “শিবত্ব” লাভ তথা শক্তিমান হওয়া।
জেঠু বললেন, এখানেই বলে রাখি যে- প্রাচীন ও মধ্যযুগের বঙ্গবাসী পরবর্তীকালে নগর গড়ে তুললেও সে তার আদিম পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য কখনও পরিত্যাগ করেনি কিংবা বিস্মৃত হয়নি। এই বাঙালি মননের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। নগরেও পূজা হয়েছে। উপচার হল পূজার উপকরণ। এমন কী, পূজার উপচারেও দেখা যায় নিষাদ উপকরণ। আপত চাল, তিল, জল, দুধ, কুশাগ্র, দই, যব, শ্বেতসরিষা, চন্দন, বিল্বপত্র বা বেলপাতা, কচু, হরিদ্রা, জয়ন্তী, ডালিম, বেল, অশোক, মানকচু, ধান, কলাগাছ, গম, মাষকলাই, তিসি। এ সবই প্রাচীন বাংলার লোকজসমাজের কৃষিপণ্য।এখানেই বলে রাখি যে প্রাচীন বাংলার নিষাদসমাজের তান্ত্রিক বিশ্বাস ও বাহিরাগত (আর্যরা প্রাচীন বাংলার বাইরে থেকে এসেছিল বলে) আর্যবৈদিক মতের কিছু পার্থক্য রয়েছে। বহিরাগত আর্যদের বৈদিক ধর্মবিশ্বাসটি মূলত পুরুষতান্ত্রিক; পক্ষান্তরে বাংলার অনার্যদের তান্ত্রিক মত মাতৃতান্ত্রিক। তা ছাড়া আর্যদের বৈদিক মত হল ঋষিজ: তার মানে দার্শনিক বা ফিলোফফিক্যাল। এ কারণে মানবকল্যাণে এর ভূমিকা প্রত্যক্ষ নয়, পরোক্ষ। অন্যদিকে তান্ত্রিকমত মুণিজ বা বিজ্ঞান ভিত্তিক হওয়ায় জগৎসংসারে জীবজগতে এর প্রভাব প্রত্যক্ষ। সনাতনধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ সিধান্ত হল- দর্শনের সামগ্রিক দৃষ্টি এবং তন্ত্রমতের খন্ডিত বা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি একত্রিত হলেই জ্ঞান সম্পূর্ণ হয়। এ কারণেই বেদের যজ্ঞ এবং তন্ত্রের পূজা সম্মিলিত ভাবে সনাতনধর্মকে একটি দৃঢ় ভিত্তি দিয়েছে।

জেঠুর কথা আমরা গিলছি বাধ্যযসুরে।

আমি বললাম, ভূত আছে বলে কেউ বিশ্বাস করে না।
জেঠু বললেন, আমার বাবা মানে তোদের নাকু দাদুর আমলের ঘটনা। আমরা তখন তোদের বয়সি। কিন্তু কিছু কিছু ঘটনা ঘটে যায় তার কোন ব্যাখ্যা মেলে না।আকু ছোট থেকেই চাষবাসে এক্সপার্ট। সে চাষবাসের জমি দেখাশোনা করে। নিজেই চাষ করে নিজেই বীজ বোনে। আবার ধান কাটে ফসল হয়। এই ভাবেই তার দিন কেটে যায়। বাড়িতে অভাবের সংসারে থেকেও সে নিজের সাধ্যমত রোজগার করে চলে।

গ্রামে আকুকে ভালোবাসা সবাই। গ্রামে তার অনেক বন্ধু আছে। রমেন বিশু ও আরও অনেকে। আকু ভরা শ্রাবণে লাঙ্গল নিয়ে মাঠে যাচ্ছে।
সেই সময়ে রমেন বলল, কিরে আকু কোন মাঠে যাচ্ছিস?

আপু বলল গরগরে মাঠে।

গরগরের মাঠে আজকে লাঙ্গল দিয়ে শেষ করতে হবে। দূরের দিকে জমিটা পড়ে আছে। জল দিয়ে এসেছি আজকে গিয়ে লাঙ্গল দেব।

রমেন বলল আমিও যাচ্ছি।
আমি যাচ্ছি কাতলার মাঠে। মাঠে সেখানে অনেক দিন ধরেই আমার জমিটা শুখা পড়ে আছে। দেখি গা, ঘাস হয়েছে বড় বড়। আজকে জল বেঁধে দেব।

আকু লাঙ্গল দেওয়ার পর প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়ছে। এমন সময় দেখল পাশে একটা তালগাছ। তালগাছ তো সে আগে কোনদিন দেখেনি।
কি করে এলো। এইভেবে সে ভিজে গাছে উঠে পড়ল। খচাম করে তারপর একটা তাল গাছে র বাগরা কেটে এনে জমিতে লাগলো সকালে দেখার জন্য।
তাল গাছের পাতাসহ ডালকে বাগরা বলে।

বিশু আকুকে দেখতে পেয়ে বলল কিরে এত সন্দে করলি কেন? মাঠে চন্দ্রবোড়া সাপের অত্যাচার। একবার ছোবল দিলে জীবনে ছবি হয়ে থাকবি। খবরদার এত সন্দে করবি না আপু বলল শোন শোন তোর সঙ্গে একটা কথা আছে।

বিশু বলল কি বল তাড়াতাড়ি বল সন্ধ্যা হয়ে গেছে। এই মাঠে দাঁড়িয়ে গল্প না করাই ভালো যেতে যেতে গল্প করি।পূর্ববর্ধমানের এই গ্রামগুলি ভরা শাওনে মায়াময় হয়ে ওঠে।

আকু বলল, বুঝলি আমার মাঠের কাছে তো কোন তাল গাছ ছিল না।
আজ একটা তালগাছ দেখলাম। বিশু বললো কি পাগলের মতো বকছিস। গরগরে মাঠে আমি কালকে গেছিলাম। আমার দরকার ছিল। না তালগাছ ছিল না। মাঝমাঠে তালগাছ কোথা থেকে আসবে। তু তো বাপু মদ খাস না।

আকু বলল, আমি তাল গাছে উঠলাম। আকু বলল আমি একটা বাগড়া কেটে পুঁতে দিলাম জমিতে। কাল সকালে আমরা যাব দুজনে কি রে বুঝলি।
বিশু বলল, তাই হবে।

গ্রামে গিয়ে যে যার বাড়ি চলে গেল তার পর হাত মুখ ধুয়ে, জল খেয়ে, সন্ধ্যেবেলার খাবার খেয়ে তারা বেরোল যাত্রার রিহার্সালে।

এই রিয়ার্সালে হেমন্ত কাকা খুব ভালো পরিচালক ছিলেন।
তিনি যাত্রার অভিনয় সব দেখিয়ে দিতেন সকলকে। তাকে গ্রামের সকলেই খুব মান সম্মান করতো।
আকু বলল দেখেছো কোনদিন গরগরে মাঠে তালগাছ।
এভাবে বলোনা ঘরে তোর কোন কাজ নাই।শুধু ভূত দেখিস। একজন অভিনেতা বলল।
আকু বলল আজকে আমি দেখেছি। কালকে সকালে কি দেখব গাছটা আছে নাকি।

দাদু বলল যে, চ একবার গিয়ে দেখে আসি। তোর তালগাছ কেমন?
একজন বলল,রাতের বেলা যাবিনা। ভূতে বিশ্বাস না করিস সে কথা আলাদা। কিন্তু না বুঝে তেনাদের অপমান করিস না।
তালগাছ কি করে এলো, সে কথা তো ভালো করে বলতে পারবি।

গোঁয়ার গোবিন্দ মধু নাপিত বলল, না না একবার দিয়ে দেখে নিতে হবে সবাই মিলে। সবাইকে কি ভুতে ধরবে নাকি?

এমন সময়ে কাকা বলল বুঝিস না একবার আমরা দশজন মিলে গোমাই গ্রামে বরযাত্রী গিয়ে কি বিপদে পড়েছিলাম। যে ঘরে রাতে ছিলাম সেটা ভূতের ঘর। সেই ঘরে থাকতে দিয়েছিল আমাদের, পোড়ো বাড়িতে।

রাতে দেখি দেয়াল থেকে রক্তধারা পড়ছে। সেই রক্তপাত হয়েছে অনবরত। আমরা একটা টেবিলের উপর বসে ছিলাম। তার জন্য রক্ত কোথা থেকে এলো, এতো রক্ত।
পরদিন আমরা বললাম ওদের, ওই বাড়িতে ভূত থাকে বলেছিলেন বটে। তবে আমরা মনে বুঝেছিলাম যে আমরা 10 জন আছি, হয়তো কিছু হবে না। আমরা হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলাম আপনাদের কথা। চরম শিক্ষা হয়েছে আমাদের।

হেমন্ত কাকা বলল গোঁয়ার গোবিন্দ গিরি করলে হবে না। বুঝতে হবে সবাইকে। ভূত না মানলেও ভৌতিক ঘটনা কিন্তু কিছু আছে।
যেটা আমরা অনেক প্রমান পেয়েছি।

কথায় কথায় কথা বাড়ে। ভুতের কথা শুনে সাধন বর্গী বলল হ্যাঁ আমিও একবার দেখেছিলাম বটে সেই কি ভীষণ দর্শন। বুঝলে বাবুদের পুজো বাড়ি আদিরের ভেতর। দিনের বেলায় গিয়েছি।তাও অন্ধকারে আর দুটো হাত বাড়িয়ে ধরতে এসেছিল আমাকে। আজ পর্যন্ত বুঝতে পারেনি কি ছিল সেটা। বাপ রে…

বুড়ো নাকু দাদু চুপ করে বসে রিহার্সাল দেখতেন তিনি এতক্ষণে কথা বললেন। তিনি বললেন আমার বয়স 100 পেরিয়ে গেছে। তবু তোদের এখনো ভালোবাসি। তোদেরকে ভালোবাসি বলে আমি রিহার্সাল দেখতাছি। আমার কাছে ভূতের গল্প শোনা গল্প নয়। সত্যি কথা। একবার আমাকে মাঠে নিয়ে গিয়েছিল নিশিতে। যদি সারারাত দুনিতে জল করেছি মাঠে। সারারাত জমিতে সেই জল করার সময় জলে জলময় ছিল মাঠ। কি করে হলো। খরার সময়। আমার নিজের দেখা ঘটনা। তাহলে বলছিস ভূত বুঝি নাই। আকুর কথাই সত্যি হবে দেখবি কাল সকালে গিয়ে বুঝতে পারবি।

নাকু দাদু বলল আমি কি বলছি শোন সবাই সবাই মিলে একসঙ্গে যাই হ্যাজাক জ্বেলে।
হ্যাজাকের আলোতে আমরা তালগাছটা কে দেখে আসি চ…

চারটে হ্যাজাক জ্বেলে 30 জনা মিলে মাঠে গিয়ে দেখল সত্যিই তালগাছটা দাঁড়িয়ে আছে। আর তার পাশে একটা তাল বাগড়া পোঁতা। তাহলে ডাল পাতা আছে। সবাই মিলে দেখে বলল আচ্ছা আমরা তো আশ্চর্য হয়ে গেলাম এখানে তো কোন তালগাছ ছিল না।
কাল সকালে এসে একবার দেখব এই গাছ আছে নাকি। চ চ পালাই…

তারপর রাতে ফিরে এসে যে যার বাড়ি চলে গেল ভয়ে।
ভয়ে কাটল সে রাত। কোনোরকমে বাড়ির লোকদের না বলে সবাই জেগে রইল ঘুম আর এলো না চোখে।

কোন রকমে রাত কাটিয়ে সবাই হাজির হল সেই রায় পুকুরের মাঠে। রায় পুকুরে মাঠ থেকে এইবার সবাই একসাথে গরগরে মাঠ যাবে। সকলের ভয় করছে তবু তারা এগিয়ে গেল। যা হোক দিনের আলোতো বটে। যেতে যেতে গরগরে মাঠে এসে গেল। গরগরে মাঠে গিয়ে দেখল সব ফাঁকা।

সেই তালগাছ নাই সেই তাল বাগরাও নাই…
ফাঁকা মাঠ।নাকু দাদু বললেন, রাম রাম…

সতন ভূতের গল্প জানে অনেক। তাদের গ্রামের জিতেন দাদুর কথা সতন বলে চয়নকে। জিতেন দাদু বলতেন, আরে বাবা ভূত পেত্নীর একটু ভালোবাসাবাসি করার জায়গাটুকু পর্যন্ত নেই। একটু নিরালা একটু আড়াল নেই। শুধু বসন্তকাল জুড়ে হরিনাম সংকীর্তনের পালা। আর এই বসন্ত কালেই তো একটু পেত্নীর মাথায় সোহাগের হাত দিয়ে উকুন বাছতে ইচ্ছে হয়। তারও জো নেই। মানুষগুলোর হরিভক্তি যেন উছলে উঠেছে।
তিরানব্বই বছরের ভূত বিশেষজ্ঞ জিতেন দাদু এই বসন্তকালেই ভূতপেত্নী নিয়ে গবেষণায় মাতেন। কারণ এই বসন্তে গত বছর লাইনে বুক পেতে দিলো রমা সুন্দরী চলন্ত ট্রেনের সামনে। দেহের একভাগ এপারে আর এক ভাগ ওপারে পড়লো। রমার আত্মা ভাবলো মুন্ডু থাকা অংশেই প্রবেশ করে শয়তান মানুষকে ভয় দেখাবো। সঙ্গে সঙ্গে জিতেন দাদুর সামনেই রমার মৃত মুন্ডুযুক্ত অংশের দেহটা সোঁ সোঁ করে উড়ে গিয়ে অজানা অঞ্চলে মিশে গেলো। এই রমার আত্মা জিতেন দাদুর বিছানার পাশে রাতে কাঁদত।দাদু বলতেন, বেঁচে থাকতে দাদুকে কিছু বললিন না।একই পাড়ায় আমাদের বাড়ি। একদিন যদি আমাকে এসে তোর স্বামীর অত্যাচারের কথা আমাকে বলতিস তো দেখা যেত। তবে এখনও উপায় আছে। তুই কি জানিস তোর স্বামী তোর মৃত্যুতে খুশি না অখুশি। হাসছে না কাঁদছে? রমার মুন্ডু উত্তর দিল, না দাদু সে খুশি নয়। বরং কাঁদতে কাঁদতে বলছে, রমা, আমি ভুল করেছি। ফিরে এস। দাদু বললেন, বাঃ তাহলে ফিরে যা। আর ঘুমন্ত স্বামীর বুকে আধখানা দেহ নিয়ে আদর কর। তোকে দেখেই ভিরমি খেয়ে মরবে আর তোর সাথে মিলিত হবে কাল ভূত চতুর্দশীর রাতে। রমা দাদুর কথামত চলে গেলো হাওয়ায় উড়তে উড়তে প্রথম প্রেমিকার মত। শ্বশুরবাড়ির দরজা খুলে স্বামীর ঘরে ঢুকে রমা দেখলো, স্বামী তার ছবি বুকে নিয়ে বসে কাঁদছে হাপুস নয়নে। আহা কি ভালোবাসা। রমা বুকে শুয়ে বললো, এই তো আমি এসে গেছি। চলো যাই একসাথে। স্বামী তাকে দেখামাত্রই পগার পাড়। পপাত মেঝেতলে। আর সঙ্গে সঙ্গে হার্টফেল। রাতেই উড়ে চলে গেলো প্রাণপাখি। আর আগামীকাল ভূত চতুর্দশীর রাতে মিলিত হবে তাদের আত্মা। অপঘাতে মৃত দুইজনে ঘুরে বেড়াবে অনন্তকাল। আর একবার, জিতেন দাদু এই বসন্তে প্রেমিক যুগলের দেহে দুটি আত্মার সন্ধান পেয়েছিলেন। তারা দেহে প্রবেশ করে অতৃপ্ত শখ পূরণ করেছিলো। এইসব ঘটনা বসন্তকালেই ঘটেছে। অন্য ঋতুর সময় তারা ব্যস্ত থাকে বিভিন্ন কাজে। কিন্তু বসন্তকালে হৃদয়ে জেগে ওঠে মানুষের প্রেমজীবনের প্রতি হিংসার ভয়াল রূপ। এই প্রেমে পরাজিত বা প্রত্যাখ্যাত হয়ে প্রাণ যায় হাজার হাজার প্রেমিক প্রেমিকার। শুধু ভ্যালেনটাইনস ডে তে নতুন ভূত পেত্নীর তালিকায় যুক্ত হয় শত শত ব্যর্থ হৃদয়। এই তো গত বছর চোদ্দ তারিখে ফেব্রুয়ারী মাসে জিতেন দাদুর নাতনী পাড়ার জগা গুন্ডার সঙ্গে একসাথে পাহাড় থেকে ঝাঁপ দিলো।
তারপর থেকে গবেষক ও পুরোহিত দাদু নাতনির খোঁজে দুস্তর গবেষণা করে তার আত্মাকে বন্দী করতে পেরেছেন।ভালোবাসার জন্য ভ্যালেনটাইন্সের মত দাদুও অনেক আত্মত্যাগ করছেন। মৃত প্রেমিক যুগলের মিলন ঘটানোই তার প্রধান উদ্দেশ্য। তার জন্যে দিনরাত তিনি না খেয়ে গবেষণা করেন নিরন্তর। মৃত নাতনি শুধু বলে, দাদু, আমার জগাকে ও এনে দাও।দাদু বললেন শুনবি জগা গুন্ডার কথা। নাতনি বললো শুনবো। দাদু বললেন, ওর আসল নাম গদাই। ওরা সময়মত নাম পরিবর্তন করে। শোন তাহলে তার কথাই বলি,
সব ছেলেমেয়েদের সঙ্গে একসাথেই বেড়ে উঠেছিল গদাই। তবু এক অন্য ছাঁচে গড়ে উঠেছিল তার জীবন যৌবন। যখন কোনো ছেলে লুকোচুরি খেলায় খুঁজে পেত আনন্দ ঠিক তখনই গদাই কারও পকেট থেকে তুলে নিত টাকা পয়সা বা কোনো খাবার। কি করে বোকা বানিয়ে অন্যকে ঠকাতে হয় তা ঠিক সে জানত। আর এই কাজেই সে আনন্দ পেত সর্বাধিক। বিধির লেখা প্রতিটি মানুষের জন্য আলাদাভাবে লেখা হয়।
যখন গদাই চোদ্দ বছরের কিশোর তখন অন্য কিশোরদের মত সে স্কুলের গন্ডিতে পা রাখে নি। একটা বাড়িতে ঢুকে সাইকেল নিয়ে পালিয়ে গেলো পিসির বাড়ি।

একদিন সবকিছু জানাজানি হলে গদাই বললো, আমাকে খাওয়ালে সাইকেল পেয়ে যাবি। সাইকেলের মালিক তাকে পেট ভরে খাওয়ানোর পরেও সে সাইকেল দেয় নি। শেষে মার খেয়ে শোধ করলো সাইকেলের ঋণ।

সেই শুরু চুরিবিদ্যার। তারপর থেকে সে হাত পাকিয়ে নিয়েছিলো ডাকাতির দলে। তার নাম শুনলেই এলাকার লোক ভয় করত তাকে। পুলিশ ধরেছে বহুবার। সে বলত, পুলিশের মার খাওয়ার আগে গাঁজা টেনে নিয়ে বুঁদ হয়ে পড়ে থাকতাম। লাঠির আঘাত কাবু করতে পারে নি আমাকে। এইসব শুনিয়ে সে সকলের কাছে বাহাদুরি কুড়োত।

এই গদাই একদিন এক শহরের বউকে পটিয়ে তার কাছ থেকে টাকা আদায় করত। বউটির স্বামী চাকরির জায়গায় থাকত। এই সুযোগে গদাই তার বাড়িতে ঢুকে তার বউএর সঙ্গে ফষ্টিনষ্টি করত। বউটাও তাকে প্রশ্রয় দিত, টাকা পয়সাও দিত। একদিন পাড়ার লোকের কাছে ধরা পড়ার পরে গদাই মার খেয়ে শহর ছাড়লো। এখন সে রিক্সা চালায়। খেটে খায়। তারপর একদিন শোনা গেলো গদাই সবকিছু ছেড়ে সাধুর বেশে ঘুরছে। মটরসাইকেল, ট্যাক্সি -র ড্রাইভারদের কাছ থেকে ঠাকুরের নামে সিঁদূর পরিয়ে টাকা আদায় করত সারাদিন। তারপর একদিন শুনলাম সে প্রেমিক হয়েছে আমার নাতনীর। হয়ত পরশপাথরের ছোঁয়ায় সোনা হয়েছে। কিন্তু তুই আমাকে কিছু না জানিয়ে লাফ দিলি বাইরের এক অজানা প্রেমিকের সাথে। ছোটো থেকে তুই মা বাবা হারা একমাত্র এই বংশের প্রদীপের সলতে। তাও তুই চলে গেলি দাদুর কথা না ভেবে। কেন একবারও কি বলতে পারতিস না তোর ভালোবাসার কথা। নাতনির আত্মা বলে উঠলো, ক্ষমা করে দাও দাদু। আর আমার প্রেমিককে এনে দাও আমার কাছে। আমি আর তাকে ছেড়ে থাকতে পারছি না। নাতনি নাছোড়বান্দা। দাদু আবার বললেন, ওর আত্মা দুষ্টু আত্মা। ওকে পরিত্যাগ করাই শ্রেয়।
কিন্তু নাতনি সব শোনার পরও বললো, ওসব আমি জানি না। আমার ওকেই চাই। দাদু বললেন, ওর আত্মাটা নিম্নস্তরের। তোকে জ্বালাবে তার সঙ্গে সমাজটাকেও জ্বালাবে। ওইসব আত্মা মুক্তি পায় না সহজে। তবু তোর খুশির জন্য আমি ওকে তোর কাছে নিয়ে আসবো।

নাতনির কথা অনুযায়ী দাদু তাই করলেন। এক্ষেত্রে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি দাদুকে। কারণ জগা সত্যিই ভালোবাসত তার নাতনিকে। কিন্তু দাদু বুঝতে পারেন নি নাতনি বেঁচে থাকতে । তাই এখন তিনি দুই আত্মার মিলন ঘটাতে চান যে কোনো উপায়ে। তিনি দুই আত্মাকে ঘরে বন্দী করেছেন। এখন প্রয়োজন দুটি মৃতদেহের। নামকরা বিশেষজ্ঞ তিনি। মৃতদেহ পেতে খুব বেশি বেগ পেতে হলো না। হাসপাতাল থেকে পেয়ে গেলেন দুটি মৃতদেহ। তাদের কোনো অভিভাবক বা আত্মীয়স্বজন ছিলো না বা খোঁজ পাওয়া যায় নি। তাই দাদু সমস্ত আইন মান্য করে গবেষণার জন্য এই দুটি দেহ নিজের কাছে আনলেন। পরের দিন সকাল বেলা থেকে প্রায় সপ্তাহখানেক দাদুর দেখা পাওয়া গেলো না। ব্যস্ত দাদু তার গবেষণা নিয়ে।

তারপর এক সপ্তাহ পরে দাদু অন্য দেহে আত্মা প্রতিস্থাপনের কাজে সফল হলেন। নাতনি এখন সমস্ত শখ পূরণ করতে পারবে জেনে দাদুর খুব আনন্দ হলো। দুটি দেহ ঘুরেফিরে বেড়াতে লাগলো চোখের সামনে। একটা নর ও আর একটা নারীদেহ। জগা গুন্ডার আত্মা দেহ ফিরে পেয়ে শয়তানি শুরু করলো। নাতনি বোঝালো, বেশি বাড়াবাড়ি করো না। দাদু রেগে গেলো দেহ কেড়ে নেবে। সুন্দর মানুষ হও। তা না হলে কদিনের এই দেহের মায়া ছেড়ে আবার চলে যেতে হবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দেহ দুটি দেখে অবাক হয়েছিলেন। তাহলে মৃত মানুষকে বাঁচানো যাবে জিতেন দাদুর গবেষণার মাধ্যমে। কিন্তু জিতেন দাদুর খোঁজে এসে পুলিশ কমিশনারসহ বিজ্ঞানীরা এসে দেখতে পেলেন জগা গুন্ডা, দাদুর গলা টিপে ধরে খুন করলো। শেষ হয়ে গেলো এক বিশাল বিশেষজ্ঞের জীবন। কমিশনার গুলি ছুঁড়লেন। সামনে এসে দাঁড়ালো প্রেয়সী, প্রিয় দাদুর নাতনির দেহ। সে মরলো আর জগা গুন্ডা ছুটে চলে এলো কমিশনারকে খুন করতে। বিন্দুমাত্র কাল বিলম্ব না করে তিনি গুলি করলেন, ভয়ঙ্কর কালপুরুষ জগা গুন্ডার দেহে। লুটিয়ে পড়লো দেহ। আর শেষ হয়ে গেলো জিতেন দাদুর গবেষণার সফলতার প্রমাণ।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হায় হায় করে উঠলো এতবড় সফলতার করুণ পরিণতিতে।

তবে শোন, চয়ন ,সতন শুরু করলো কথা বলা আবার। সে সিরিয়াস হয়ে চয়নকে বলল, পমদের গ্রামে চাঁদু বায়েন বরাবরই নাস্তিক প্রকৃতির লোক। সে রাস্তা দিয়ে গেলে,বিড়াল যদি রাস্তা কাটে তিন পা পিছিয়ে গিয়ে থুতু ফেলে না। এক শালিক দেখলে মুখে চুক চুক শব্দও করে না। আবার জোড়া শালিক দেখলে পেন্নাম করে না। শক্ত পোক্ত মন ও দেহের মানুষ। পম বলে ছেলেটা তাকে খুব ছেদ্দা করে। জীবনে সে এত শক্ত লোক দেখে নাই। তাই চাঁদু দা, কে দেখলেই সে নমস্কার জানাতো।
একদিন চাঁদুকে রাস্তায় দেখতে পেয়ে গ্রামের প্রবীণ মোড়ল মশাই বললেন,হাড় আম হাগিয়ে দেবে। পরো নাই তো সত্যি ভূতের কবলে। নিশি ভূত দেখেচিস।

চাঁদু বললো, দেখা আচে সব দেখা আচে।

মোড়ল বললেন,ঠাকুর একদিন ওকে সত্যি ভূতের কবলে ফেলে দাও। পঙ্গু করে দাও শালাকে। কোনো কিচু মানা শোনে না গো।

মোড়োল আরও বললেন,জানিস আমাকে নিশি ভূতে ডেকে নিয়ে গেয়েচিলো। সারারাত দুনি করে জল হেঁচেছি।সকালে দেকচি জলে জলময় জমিগোলা শীতের সকালে জলে আমার জীবন চলে যেতো। এই গেরামের লোকেই তো বাঁচিয়েছে রে। তাই তোকে বলচি,তেনাদের নামে খারাপ কতা বলো না। সতন আর মধু পুরোনো দিনের কথা নিয়ে গল্পে মত্ত। বাইরে বেরোলেই নিজের গ্রামের মাটি সোনা হয়ে যায়। তারপর গল্পে ফিরলো আবার ওরা দুজনে।

চাঁদু বললো,ওসব পুরোনো গল্প অনেক শোনা আচে।
মোড়ল বললেন,তাহলে ভগমান মানিস তো?

চাঁদু বললো,ভগমান বলে কিছু লাই গো। সব ভেমরতি। ছেলেপিলে লেকাপড়া শিকচে। তোমাদের জেবন শেষ,তোমাদের ভুয়ো মুরুব্বিয়ানা আর চলবে না। এখন ফোর জি র যুগ। যুক্তির যুগ। আবেগের কতা রেকে দাও গা।

ছেলে মেয়েরা চাঁদুকে ভালোবাসে। কিন্তু ওর মতো হতে পারে না। পম বলে,ওসব আমরা পারবো না বাপু। অতো সাহস নাই।

পমের মা বলে,ভগমান মানে না।ওর সঙ্গে মিশবি না। নাস্তিক লোকগোলা ভালো হয়না। পাপে মরবে। হরি বলো,হরি বলো।

চাঁদুর বয়স কাল চক্রে বাড়লো। নদীর ধারে গভীর রাতে এখনও বসে থাকে। কখনও অমাবস্যার রাতে বটগাছে উঠে বসে থাকে। ভয় বলে কোনো শব্দ ওর জানা নেই। পম সব খবর রাখে। কিন্তু মানা শোনে না চাঁদু দা। ভীষণ একগুঁয়ে লোক। পম ভাবে,মানুষের এত সাহস ভালো নয় বাপু। তবু পম চাঁদুদার সঙ্গেই ঘোরাঘুরি করে। ওকে ভালোবাসে,শ্রদ্ধা করে।
কাউকে কিছু না বোলে,
একদিন চাঁদু জঙ্গলে গিয়ে দেখলো,চারদিকে সবুজ গাছ। আর মাঝখানে এক কালিমূর্তি। লাল রঙের একটা বেদী সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো। হঠাৎ এক জটাজুট ধারি সাধুবাবা এসে বললেন,কি রে কি দেখছিস।এটা পঞ্চমুন্ডির আসন। অমাবস্যার রাতে এখানে বসে আমি সাধনা করি। যা যা নিজের কাজে যা। আমি এখন বসবো।

চাঁদু আজল সেজে বললো,কি হয় বসে?

—- কেন,সিদ্ধিলাভ হয়। জন্মরহিত হয়।

—— যে কেউ বসতে পারে?

—–না,তার আগে অনেক সাধনার স্তর আছে বাবা। অনেক কৃচ্ছসাধনের পর এই স্তরে আসে সাধক।

চাঁদু বয়স্ক লোককে ভক্তি করে। তাই তর্ক না করে ভাবলো,আমি একদিন এই আসনে বসে দেখবো কি হয়?

তার বন্ধু পমকেও বললো কথাটা। পম বললো,ওসব ছেলেখেলার জিনিস নয়। সব কিছু নিয়ে অবজ্ঞা করতে নেই। ওসব দিকে পা বাড়িও না চাঁদু দা। তোমার বয়স বেড়েচে,মনে রেকো। যৌবনের তেজ আর তোমার নাই।

চাঁদুর বয়স এখন একষট্টি বছর। কিছু কিছু রোগ বাসা বেঁধেছে। তবু মনে তার অদম্য সাহস। বললো পম তারই বন্ধু সরোজিনীকে। সরোজিনী বললো,অত সাহস তো ভালো নয় বাপু। বয়স হয়েছে,এবার একটু বুঝে শুনে চলতে হবে। বলে দিস ওকে আমার নামটা করে।

পম জানে,অল্প বয়সে সরোজিনী চাঁদুকে ভালোবাসতো। তারপর সরোজিনীর বিয়ে হয়ে যায়। তিরিশ বছর পরে স্বামী মরে গেলে গ্রামে চলে আসে। কোনো ছেলেমেয়ে হয়নি। মাঝে মাঝে চাঁদু ও পম সরোজিনীর কাছে বসে সুখদুখের কথা শোনে। সতন সব জানতো।

চাঁদুর মাথায় বদবুদ্ধি ভর করেছে। একবার পঞ্চমুন্ডির আসনে বসবেই। পাঁচটা প্রাণীর মাথা পুঁতে এই আসন তৈরী করা হয়। সিদ্ধপুরুষ যারা তারাই এই আসনে বসেন। পম বার বার তাকে এসব কথা বলেছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা।

একদিন ভূতচতুর্দশীর রাতে চাঁদু মরাঘাটের জঙ্গলে গেলো। সেখানেই সে পঞ্চমুন্ডির আসন দেখেছে। ভীষণ সাহস তার। একটা শিয়াল বাঁ দিক দিয়ে চলে গেলো। বাঁয়ে শিয়াল।আবার একটা কালো বিড়াল রাস্তা কেটে একবার চাঁদুকে দেখে নিলো। বটগাছের একটা ডাল ভেঙ্গে পরলো তার সামনে। কি করে ভাঙলো। ওসব চাঁদুর মাথায় নেই। মনে মনে বলছে,শালা যতসব চালাকি। আসনে বসে দিনের বেলা লোক জড়ো করবো। দেখাবো আমিও বসতে পারি এই আসনে। কোনো চিন্তা ভাবনা না করে বসে পরলো আসনে। হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেলো কেনো? ভয়ে নাকি? কোনোদিন সে ভয় পায় নি। আজ কি হচ্ছে। তার মনে হচ্ছে না বসলেই হতো এই আসনে। আবার পরক্ষণেই মনে হলো তার, কিসব আজেবাজে ভাবছে সে। ঠিক আছে, সব ঠিক আছে।

তারপর শুরু হলো জঙ্গলের রাতকথা। একটা সাপ পাশ দিয়ে সর সর করে আসনের পাশের গর্তে ঢুকছে। বেশ বড়ো সাপ। ও মনে মনে ভাবছে জঙ্গলে সাপ তো থাকবেই। তারপর পোকামাকড়ের খেলা। মনের আনন্দে বিছে,নানারকমের পোকা তার দেহে খেলে বেড়াচ্ছে। চাঁদু নড়তে পারছে না। শুয়ে পরলো অনিচ্ছায়। তারপর কখন যে সকাল হলো বুঝতেই পারলো না। সকালে অনেক লোক তার খোঁজে এখানে এসেছে।এখানে আসার আগে সরোজিনীকে তার গোপন কথাটা বলে বাহাদুরি দেখিয়েছিলো। সেই কথা সরোজিনী সবাইকে বলেছে। তারপর খোঁজ শুরু হয়েছে।

পম বলছে,ও চাঁদু দা ওঠো। সকাল হয়েছে। আসনে শুয়ে ঘুমোতে গেলে কেনে?
মোড়ল বলছেন,বাহাদুর বটে ব্যাটা। দেখিয়ে দিলো বাপু। সাহস বটে। বলিহারি যাই।

সরোজিনী এসেছে। বলছে,কি দরকার বাপু। যেমন মানুষ তেমনটা থাকাই ভালো। হাতির লাদ দেখলে হবে? খরচা আছে।

নানাজনে নানাকথা বলছে। কিন্তু চাঁদু কোনো উত্তর দিচ্ছে না। ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে।

কেউ ওই আসনে হাত দিতে সাহস করছে না। গাঁয়ের বামুন হরি ঠাকুরকে পম বললো,দাও না গো একবার নামিয়ে আসন থেকে।

হরিঠাকুর বললো,পাগল নাকি আমি। ওতে হাত দোবো না। অত সাহস আমার নাই।

পম বললো,সাতটা বামুনে বকের ঠ্যাঙ ভাঙতে পারে না শুনেছিলাম। এখন দেকচি এক্কেরে সত্যি কতা।

বামুন বললো,তুমি দাও গা। একমাত্র ওই সাধুবাবা যদি পারে তো পারবে। দু মাইল দূরে খেঁড়োগাঁয়ে সাধু থাকে।

পম দুজনকে সঙ্গে নিয়ে চলে গেলো সাধুকে আনতে। সাধু যখন এলেন তখন দুপুর দুটো বেজে গেছে।

সাধু এসেই বললেন,এ কি পাগল নাকি? সংসারী লোকের এই শখ কেনে হলো। এই বলে তিনি নামিয়ে দিলেন আসন থেকে। তারপর জঙ্গলের ভেতরে চলে গেলেন।

সবাই শহরে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলো চাঁদুকে। তিনি বললেন,এর স্ট্রোকে এইরকম হয়েছে। ওষুধ দিলেন আর বললেন হাঁটতে। তিনি বললেন,হাঁটলে বেঁকে যাওয়া শরীরের অংশ ধীরে ধীরে ঠিক হবে। কথা বলতে, শুনতে পাবে না কোনোদিন। তবু ওষুধ দিলাম। ওপরওয়ালা দয়া করলে অনেক কিছু হতে পারে।

সবাই ওপরওয়ালাকে বিশ্বাস করে কিন্তু চাঁদু করে না। এখন বোবা কালা হয়ে বেঁচে থাকতে হবে তাকে। সরোজিনী দেখাশোনা করে তার সকাল সন্ধ্যা সবসময়েই। পম গ্রামের লোকদের বলে,দেখো একেই বলে ভালোবাসা।

পম ভাবে,চাঁদুর এরকম কেন হলো? আসনে বসার অভিশাপ না কোনো রোগ? একবার পঞ্চমুন্ডির আসনে বসে দেখলে হয় না। তাহলে ব্যাপারটা বোঝা যাবে। একবার সরোজিনীর সঙ্গে আলোচনা করে দেখবো। হাঁটতে হাঁটতে পম চাঁদুকে দেখতে যাচ্ছে চাঁদনি রাতে। চাঁদের দিকে তাকাতেই তার মায়াময় রূপে পম রহস্য আবরণে আবৃত হলো। পৃথিবীর কিছু রহস্য গোপন থাকাই ভালো।ভাবতে ভাবতে সে এগিয়ে চলেছে ধীরে ধীরে। সতন বললো,পম শালা তালেই ছিলো নাকি বল?

সতন এবার আর এক দাদুর ভূত দেখার কাহিনী বলল চয়নকে। দাদু বলতেন,বেশি কৌতূহল ভালো নয়। তেনাদের নিয়ে আলোচনা করলে হয়তো তাদের ভালো লাগে। তাই তারা দল ভারি করার জন্য দলে টেনে নেয়। অপদেবতাদের বিচরণভূমি কাঁদরের ধারে,পোড়ো বাড়ির ভিতরেকিংবা জনকোলাহলহীন যে কোনো জায়গা হতে পারে।।অশুভ শক্তি এক জায়গায় জড় হয়ে নাচ করে ভূত চতুর্দশীর রাতজুড়ে। এইসব কথা দাদুর মুখে শোনা।

তিনি বলতেন,অপমৃত্যু হওয়া আত্মাগুলো সহজে মুক্তি পায় না। সেইসব আত্মা ঘুরে বেড়ায় অতৃপ্ত মনে। দাদু বলতেন,বামুন পাড়ার বিমানদাদু গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। তিনি রাজা উজিরের মত থাকতেন। বিরাট আলখাল্লার আড়ালে তার দারিদ্র্য ঢাকা থাকতো।মন তার তৃপ্ত ছিলো না। প্রতিরাতে নেশা করতেন।আরও অনেক দোষ ছিলো।

কাঁদরের ধারে একটা বেলগাছ ছিলো। দাদু বলতেন, এই বেলগাছের পাশে একটা শিমূলগাছ। বহু বছর ধরে আছে। সেখানে একদিন পথকুড়ো ফুল কুড়োতে কুড়োতে যাচ্ছিলো।পথকুড়ো দেখলো,সেই শিমূল ফুল তার হাতে এসে হয়ে গেলো শিশুর মাথা। ভয় পেয়ে ছুটে এসে পড়লো ঘাটে। সেই ঘাট থেকেই একেবারে গঙ্গার ঘাটে।

পথকুড়ো মরার পরে আর কেউ ওদিকে তাকাতো না। প্রয়োজন হলেও ও পথে পা বাড়াতো না। সবাই বলতো,ওখানে অপদেবতাদের বাস। ওখানে গিয়ে ওস্তাদি করলেই সর্বনাশ হবে।

দাদু দেখেছেন একদিন সকালে ওই শিমূল গাছে বিমান পাঠক গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছিলো রাজার বেশে।

দাদু কাঁদরের এপাড় থেকে একরাতে দেখেছিলেন, যাত্রার আসরের মত জাঁকজমক। বিমান তার পোশাক পড়ে রাজার মেজাজে ঘুরতো। লাফিয়ে বেলগাছে উঠতো। দাদুর সঙ্গে আরও দুজন সাহসী লোক ছিলো। তারা দেখলো,জীবনে বিমান শখ আহ্লাদ পূরণ করতে না পারলেও অপদেবতাদের আসরে তার কোনো শখ অপূর্ণ থাকতো না।

ভূতের ভয় লাগে নি দাদুর।পালাগান শোনার মত অপদেবতাদের গান শুনেছেন। বললে,অনেকে বিশ্বাস করে না।

দাদু প্রায় প্রতি রাতে একবার করে কাঁদরের পাড়ে ঘুর ঘুর করতেন। এই দাদু পাড়ার সকলের প্রিয় ব্যাক্তি। গ্রামের লোকে বলতো,এত সাহস ভালো লয় গো। রাত বিরেতে কেনে ওখানে মরতে যাও। কোনোদিন দেখবা তোমার দশাও পথকুড়োর মত হবে।

দাদু শুনতো না। সাত কুলে তার কেউ নাই। তাই ভয়ও নাই। এর বাড়ি ওর বাড়ি খেয়ে দিন গুজরান হত দাদুর। কেউ বিপদে পড়লে জান দিয়ে তার সেবা করত।তাই তো গ্রামের সকলে তাকে মাথায় করে রাখতো। দাদু প্রায় চেঁচিয়ে একটা কথা বলতেন,পালাবার পথ নাই, যম আছে পিছে। মরণকে তার ভয় ছিলো না। তিনি বলতেন, বেঁচে থাকার চেয়ে মরণের পরে বেশি সুখ। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলতেন না বেশি কথা। তিনি বলতেন,অপদেবতাদের অনুভূতি অন্তরে হয়। প্রকাশ করা যায় না।

তিনি তার ছাত্রজীবনের কথা আমাদের বলেছিলেন।
একবার তার বন্ধু বিশু আর কয়েকজন রাতে কাঁদরের ধারে গেছিলো।বিশু ডুব সাঁতারে ওপাড়ে চলে গেলো। দাদু ছিলো এপাড়ে।তারপর অপদেবতা তাকে তুলে নিয়ে গেলো বোধহয়।বাড়ি থেকে পুলিশে খবর দিলো।

সবাই আমরা উৎকন্ঠা নিয়ে বসে আছি। কখন আসবে বিশু। ঠিক সকাল দশটায় পুলিশের গাড়ি চলে এলো গ্রামে। আমাকে সবাই অবাক হয়ে দেখলো পুলিশের গাড়ি থেকে নামছি আমি।

এর মধ্যে বিশুও হন্ত দন্ত হয়ে আমাদের কাছে এসে বললো,যাক কাকু, অলক এসে গেছে। মেজবাবু আমার বাবাকে বললেন,এটাই আপনার ছেলে অলক তো?

—- হ্যাঁ স্যার।

—-আমাদের থানার আশেপাশে ঘুরতে দেখে ওকে নিয়ে এলাম। আমাদের স্থির বিশ্বাস ছিলো এটা অলক। ওর মুখে সব কিছু শুনলে বুঝতে পারবেন ওর সমস্যা। যাই হোক, আমরা আসি।

পুলিশের গাড়ি চলে গেলো। প্রায় দুঘন্টা হলো দাদু ঘুমিয়ে আছে। দুপুর একটায় ওর ঘুম ভাঙ্গলো।বিশু জিজ্ঞাসা করলো,তোর কি হয়েছিলো বল তো অলক?

দাদু বলতে শুরু করলো তার অলৌকিক কাহিনী।

সে বললো,আমরা সবাই যখন কাঙরা কাঁদর পার হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি তখনই আমাকে খনা গলায় নিশি ভূতটা বললো,কি রে তোর বাড়ি গিয়ে ডাকলাম। সাড়া পেলুম না। তাই গন্ধ পেয়ে এখানে এলাম। চল আমার সঙ্গে তোকে হাওড়া ব্রীজ দেখিয়ে আনি। আমি বললাম,এই রাতে বন্ধুদের ছেড়ে আমি হাওড়া যাবো না। নিশিটা বললো,যা বলবো শুনবি।তা না হলে উঁচু থেকে ফেলে দেবো।আমি আর ভয়ে কথা বলিনি। নিশি আমাকে উড়িয়ে নিয়ে গেলো হাওড়া ব্রীজে। আমি ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম। তারপর যখন নিশিটা আমাকে নিচে নামালো তখন জ্ঞান এলো। নিশি বললো,কেমন লাগছে। কি খাবি বল। তারপর আবার বললো,গঙ্গার জলে সাঁতা কাটবি নাকি?

আমি বললাম,আমি সাঁতার জানি না।

নিশি বললো,আমি থাকলে ওসব কিছু দরকার হয় না। এই বলে আমাকে ওপর থেকে গঙ্গার বুকে ঝুপ করে ফেলে দিলো।তারপর জামাটা মুঠো করে পুতুলের মত তুলে নিয়ে ওপরে এলো।আমি ভাবলাম, আমার জীবনের শেষ দিন আজকে। নিশি মনের কথা জানতে পেরে বললো,আমরা প্রাণে মারি না কাউকে। শুধু ঘুরে বেড়াই।কাজ করি। তারপর দিনের আলো ফুটতেই নিশিটা পালিয়ে গেলো।

এতদিন দাদু বেঁচে ছিলো অপদেবতাদের গবেষকের মত। সবসময় তাদের নিয়েই ছিলো ভাবনা চিন্তা। আমাদেরও সময় কাটতো ভালোভাবে। এবার তার অপদেবতাদের দলে নাম লেখাবার শখ হলো। আমরা সকলে বললাম,দাদু এত ভয় দেখালে আমরা আর আসবো না তোমার কাছে।দাদু সত্যি কারের গবেষক ছিলেন। কারও কথা শোনেন নি। একরাতে তিনিও শিমূলগাছে ঝুলে পড়লেন।

এই প্রিয় দাদু সেইরাতে আমাদের ছেড়ে একদম পুরোপুরি আশ্রয় নিলেন তাদের ডেরায়.

আমাদের গ্রামে দোলের আগের দিন ন্যাড়াপোড়া হয়। হোলিকার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। মুখে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা বলে “আজ আমাদের ন্যাড়া পোড়া কাল আমাদের দোল পূর্ণিমাতে চাঁদ উঠেছে বল হরি বল।”
জমিদার আমল থেকেই এই প্রথা চলে আসছে এখনো। এই প্রথা আসছে আজও আমাদের গ্রামে।
তারপরের দিন দোল উৎসব। বাঁকে করে রং বহন করা হয়। সমস্ত গ্রামের লোক এক জায়গায় হয়ে জাতি দ্বেষ সব ভুলে গিয়ে ওই টিন থেকে রং নিয়ে সবাইকে রং দেওয়া হয়।

এই সব খরচ জমিদার বাড়ির লোকেদের। এখন জমিদার প্রথা নেই ঠিকই কিন্তু তাদের বংশধর আছে।
তাদের বংশধররা কিন্তু আজও এই প্রথা অব্যাহত রেখেছে।

রং মাখার পর মধ্যাহ্নভোজ। সেখানে সেখানে রকমারি খাবারের পরিবেশন করা হয়। বড় প্যান্ডেলে চেয়ার টেবিল বসিয়ে খাওয়া-দাওয়া হয়। একসাথে সমস্ত গ্রামের লোক খাওয়া-দাওয়ার আনন্দই আলাদা।

এই রং এর দুনিয়ায় বিশেষ করে ছোট ছেলে মেয়েদের আনন্দ অপরিসীম। বড় ভাইয়ের সঙ্গে আনন্দিত হয় রং মেখে আবির মেখে।

আমার বাবা দোল উৎসবের এই সকালেই রং মাখতে শুরু করতেন তিনি প্রথমে গরম জল করতেন তারপর দামী দামী রং মিশিয়ে পিচকারী’ দিয়ে আমরা রং খেলতাম। তখন ছিল পিতলের সেই পাম্প করার পিচকারী’ অনেকদূর চলে যেত রং।

আমার বাবা এই রং খেলার দিনে আলাদা আলাদা জামা কিনে রাখতেন। আমরা চার ভাই একই রঙের জামা পড়ে রং খেলতাম। বাবার অফিসের লোক সব বাবাকে রং দিতে আসতো। মা রান্না ঘরে থাকতেন। মাকে রং দিত সবাই এবং আমাদের রঙ মাখিয়ে ভূত করে দিত।

বাবা একটা ভূতের গল্প বলেছিলেন মনে আছে।
বাবা বললেন,ভূত বলে কিছু হয় না জানি। তবু ভূতের প্রতি আমার ছোট থেকেই দূর্বলতা আছে। বিশ্বাস করি। ভগবান আছেন ভূতও আছে। আমার এক বন্ধু মাঠে খেলতে গিয়ে আমাকে বললো, আমার দাদু এসেছিলেন এখনি। হয়ত তিনি মরে গেলেন। দুজনেই বন্ধুর বাড়ি গিয়ে দেখলাম কথাটা একদম সত্যি। দাদু বলেছিলেন মরার পরে তোকে একবার দেখা দেব। এই ঘটনাকে আপনি কি বলবেন বলুন? আর তাছাড়া
ভূত সমাজে ভাল, মন্দ সব রকমের ভূত আছে। আমার দাদু বলতেন, একবার চাষের জমিতে জল লাগবে। টাকা পয়সার অভাবে জল দিতে পারি নি। রাতে শুয়ে ভাবছি, আমি রোগী আবার সত্তর বছরের বুড়ো। এ ঘোড়া আর ঘুরে ঘাস খাবে না।চাঁদের আলোয় বসে আছি জেগে। কি সুন্দর পৃথিবীর রঙ। সকলের যদি আহারের ব্যবস্থা থাকত তাহল দুঃখ থাকত না। আর তারজন্য চাষের জমির পরিমাণ বাড়াতে হবে। জলের ব্যবস্থা করতে হবে। এইসব ভাবছি, এমন সময়ে দরজায় টোকা। আমি বললাম, কে?

বাইরে থেকে আওয়াজ এল, চলে আয় বাইরে।

মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে চলে গেলাম বাইরে, তারপর মাঠে। সে আমাকে বলল, তুই বসে থাক। এখানকার সব জমিতে জল দেব। একটু দূরে বড় পুকুর ছিল। ওই পুকুরে ভয়ে আমরা যেতাম না। দিনের বেলায় পর্যন্ত ওখানে হাসির শব্দ পেত সবাই। হি হি হি করে কারা যেন হাসত ব্যঙ্গ করে। শুনলাম ভয়ংকর হাসি। বার বার পাঁচবার। ভয় পেলাম প্রচন্ড।
তারপর আর কিছু মনে নেই।
পরের দিন মাঠে গিয়ে দেখি, ভালোই হয়েছে। জলে জলময় সব মাঠ। এই খরার সময় এত জল দেখে সবাই অবাক। লোকে বলল,এ তো একদম ম্যাজিক। চাষিরা বলল, এই ম্যাজিক যেন বার বার প্রতিবার হয়।

দাদু বললে, কি করে মাঠে এত জল এল আজ পর্যন্ত বুঝতে পারিনি। বাবার গল্প শোনার পরে, রঙ মাখার পরে খাওয়া-দাওয়ার পালা মাংস ভাত। আর সাথে তো মিষ্টি মেঠাই এসব তো আছেই।আমরা কোনদিন কুকুর বা বিড়াল কে রং দিতাম না এখন দেখি অনেকেই ঠাট্টা করে কুকুর বিড়াল কে রঙ মাখানোর প্রতিবাদ করছি আমরা।
এ পাড়া ওপাড়া সবাইকে রং মাখাতে মাখাতে বেলা কখন দ্বিপ্রহর হয়ে যায় বুঝতেই পারিনা।
শুধু দেহের নয় মনের, হৃদয়ের রং মাখিয়ে দেয় প্রকৃতির সঙ্গে অরূপরতন।

একবার হোলির সময় রং মাখতে মাখতে দুপুর গড়িয়ে গেল। তারপর আমরা রঙ মাখা অবস্থায় সবাই খেয়ে দেয়ে নিলাম।

বন্ধুবান্ধব সব রং মাখতে মাখতে গল্পচ্ছলে নদীর ধারে চলে এসছি। সেখানেই একটা পিকনিকের মত করলাম নিজেরাই রান্নাবান্না করে খেয়ে নিলাম।

খাওয়া-দাওয়া শেষ হতে আমাদের বিকেল হয়ে গেল।
শেষ বেলার দিকে সবাই নদীতে স্নান করতে নামলাম।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হল তবুও রঙ উঠছে না সাবান নিলাম তাও রং ওঠেনি। কাউকেই চেনা যাচ্ছে না। এত রং লেগেছে। মুখ লাল হয়ে আছে।কারও সবুজ কারও নীল রঙের মুখ।কাউকে চেনা যাচ্ছে না।

আমরা এসেছিলাম প্রায় 15 জন। মাঠে এসে আস্তে আস্তে বাড়ি আসতে গিয়ে দেখলাম একবার গুনে নিই। আমরা 15 জন ঠিক আছি নাকি। দেখা গেল আমরা 18 জন আছি ।
এইবার এই তিনজনকে আমরা বুঝতে পারলাম না।
সবারই রংমাখা অবস্থায় মুখ চেনা যাচ্ছে না। সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
হাতে কোন টর্চ নেই। তাহলে, তখন মোবাইল ছিল না।
কি করে তিনজন বেশি হতে পারে?
আমরা সবাই চিন্তায় পরে গেলাম। সবাই সবাইকে নাম ধরে রাখছি সবাই উত্তর দিচ্ছে কিন্তু এক্সট্রা তিনজনকে আমরা কিছুতেই বুঝতে পারছি না। জেঠু ছিলেন বলে আমাদের ভয় কম। তিনি বললেন শান্ত হ শোন আমার কথা। বিপদে ভয় করতে নেই। মাথা শীতল রাখতে হয়। ইন আর ইয়ান এক করতে হয়। আমাদের শাস্ত্র ও তাই বলে।

প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, মৃত ব্যক্তির যা জীবিত ব্যক্তিদের সামনে দৃশ্য, আকার গ্রহণ বা অন্য কোনো উপায়ে আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম। গল্প প্রায়শই শোনা যায়। এই সকল বিবরণীতে ভূতকে নানাভাবে বর্ণনা করা হয়েছে: কখন অদৃশ্য বা অস্বচ্ছ বায়বীয় সত্ত্বায়, কখনও বা বাস্তবসম্মত সপ্রাণ মানুষ বা জীবের আকারে। প্রেতাত্মার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে ভবিষ্যদ্বাণী করার বিদ্যাকে কালাজাদু বলা হয়ে থাকে।

প্রাক-শিক্ষিত সংস্কৃতিগুলোর মধ্যে ভূতের প্রথম বিবরণ পাওয়া যায়। সেযুগে কিছু নির্দিষ্ট ধর্মীয় প্রথা, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া, ভূত-তাড়ানো অনুষ্ঠান ও জাদু অনুষ্ঠান আয়োজিত হত মৃতের আত্মাকে তুষ্ট করার জন্য। প্রচলিত বর্ণনা অনুযায়ী, ভূতেরা একা থাকে, তারা নির্দিষ্ট কিছু ঘুরে বেড়ায়, জীবদ্দশায় যেসকল বস্তু বা ব্যক্তির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিল সেগুলিকে বা তাদের তাড়া করে ফেরে। তবে ভূত বাহিনী, এমনকি ভৌতিক জীবজন্তুর কথাও শোনা যায়।

মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আত্মা দেহত্যাগ করে। জীবাত্মা অবিনশ্বর। তবে কখনো কখনো জীবিত সামনে আকার ধারন করে। এটি পূরাণভিত্তিক একটি আধিভৌতিক বা অতিলৌকিক জনবিশ্বাস। প্রেতাত্মা বলতে মৃত ব্যক্তির প্রেরিত আত্মাকে বোঝায় ।

সাধারণের বিশ্বাস কোনো ব্যক্তির যদি খুন বা অপমৃত্যু(যেমন: সড়ক দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা ইত্যাদি) হয় তবে মৃত্যুর পরে তার হত্যার প্রতিশোধের জন্য প্রেতাত্মা প্রেরিত হয় । বিভিন্ন ধরনের রয়েছে এ সম্পর্কে ।

বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতিতে ভূতের অস্তিত্ব বিশ্বাস করা হয়। আবার কিছু ধর্মে করা হয় না, যেমন ইসলাম বা ইহুদী ধর্মে। এসব ধর্মাবলম্বীদের মতে মানুষের মৃত্যুর পর তার আত্মা চিরস্থায়ীভাবে পরলোকগমন করে আর ইহলোকে ফিরে আসে না।

সুদীপ ঘোষাল। গল্পকার। জন্ম ভারতের পশ্চিমব্ঙ্গরাজ্যের কেতুগ্রামের পুরুলিয়া গ্রামে। প্রকাশিত বই: 'মিলনের পথে' (উপন্যাস)। এছাড়াও কয়েকটি গল্প ও কবিতার বই আছে।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

বালির বেহালা

বালির বেহালা

বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..

তদন্ত

তদন্ত

  এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..