ঝরা শিউলি
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
চকলেটটা হাতে নিয়েই মিতুল কথা বলা পুতুলের মতো বলে উঠল, “থ্যাঙ্ক ইউ আঙ্কেল।” দীপ একটু হাসলো সোমার দিকে তাকিয়ে। ” খুব মিষ্টি মেয়ে হয়েছে তোমার। স্মার্টও। তোমার মতোই। আমরা এত ছোটবেলায় এত তাড়াতাড়ি কাউকে থ্যাঙ্ক ইউ বলতে পারতাম না।”
সোমার কাজল চোখে বেদনার একটা ছায়া পড়ল। দীপ ওর বন্ধু। ওর প্রাক্তন প্রেমিক। ওর পরিত্যক্ত প্রেমিক। যার জন্যে আজও সোমা মনের গহনে কাঁদে। খবরটা শুধু জানা নেই দীপের।
মিতুল খুব আদুরে। পাঁচ বছর বয়স। দীপের কাছে ঘেঁষে এসে বলল, “আমি তোমাকে থ্যাঙ্ক ইউ বললাম, তুমি ওয়েলকাম বললে না?” এবার দীপ ওকে কোলে তুলে নিলো। “সবসময়ই ওয়েলকাম তুই। থ্যাঙ্ক ইউ বললেও না বললেও।”
সোমার দশ বছর আগের একটা দিন মনে পড়ে গেল। পার্কের চির পরিচিত পরিবেশটাকে অচেনা করে দিয়ে সোমা হঠাৎ দীপকে বলেছিলো।”আমাকে আজকের পর থেকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করো প্লিজ। বাবা যেভাবে আমার বিয়ের জন্যে ব্যস্ত হচ্ছেন আমি ঐ আসামের ইঞ্জিনিয়ারকে হ্যাঁ করে দিলাম। প্লিজ তুমি সামলে নিও নিজেকে,,,,প্লিজ। আমার মনে হয় তুমি খুব ভালো ভাবে এস্টাবলিসড হবে। আই প্রে ফর ইউ।” চোখে সামান্য জল এল কথা গুলো বলতে গিয়ে সোমার।
আর বিনা মেঘে বাজ পড়ার অনুভূতি নিয়ে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো দীপ কিছুক্ষণ। তারপর বলল,” ভুলে যাও বললেই তো আর সেভাবে ভুলে যাওয়া সম্ভব হয় না। তুমি আমাকে ভুলে গেলেও আমি মনে রাখবো। না ভুলে গেলেও মনে রাখবো, ভুলে গেলেও। আজকের দিনটা, আজকের কথা গুলো তো বটেই।”
সেদিন। তারপর এই আজ এতদিন পরে দেখা। দীপ সোমার বিয়ের দু’বছর পরেই চাকরি পায়। সোমার বরের পোস্টিং এখন দিল্লীতে। সপরিবারে ওরা এখন দিল্লীতে। দীপকে অফিস থেকে সপ্তাহ খানেকের একটা ট্রেনিংএ দিল্লী পাঠিয়েছে।
দীপকে মাঝে মাঝে মেইল করেছে সোমা এই দশ বছরে অকেশানালি। জন্মদিনে। শুভ বিজয়ায়। নববর্ষে । আর নিউ ইয়ারে। শুধু শুভেচ্ছা নয়, দেড়পাতার চিঠিও হয়েছে সেটা মাঝে মধ্যে। নিজের খবর জানিয়ে, দীপের খবর জানতে চেয়ে। প্রত্যুত্তরে শুভেচ্ছা জানানো আর ধন্যবাদ দেওয়া ছাড়া তেমন কিছুই লেখেনি দীপ যা থেকে সোমা ওর হৃদয়ের আঁচ পায়।
এত বছর পরে দিল্লীতে এসে অনেকবার দীপের মনে হয়েছে এই শহরের কোথাও একটা সোমা আছে। একবার দেখা করে যাবে কিনা। বছরের ঐ চারটে দিনের প্রতীক্ষায় থাকে দীপ। সোমা কোনদিন মেইল পাঠাতে ভোলে না। আর,,,,,অতি সাধারণ কথাবার্তার প্রতি কোনায় লুকিয়ে থাকে নীরব কান্না। যার উত্তরে দীপ ফিরিয়ে দেয় শীতলতা। কঠোরতা।ট্রেনিং এর শেষ দিনে এসে মনে হল একবার দেখা করেই ফিরবে কলকাতা। মেইল করল সোমাকে।
—“দিল্লী এসেছি। তোমার শহরে। একবার দেখা করা যায় কি? তোমার কর্তা এবং কন্যার সাথেও পরিচয়টা হয়ে যেত। এখনও চারদিন আছি এই শহরে। দেখা করতে চাইলে জানিও।”
পরেরদিন দুপুরে মেইল চেক করল সোমা। সাথে সাথে উত্তর দিলো। “আজ বিকেলেই চলে এসো। সন্ধ্যের পর কর্তা ফিরবে। আমি আর মেয়ে সারাদিনই আছি বাড়িতে।” নীচে দিয়ে দিলো পুরো ঠিকানা। আর ওর ফোন নাম্বার।
দীপ সন্ধ্যের পরেই এলো। কাছাকাছি এসে ফোন করল। সোমার অদ্ভুত একটা আনন্দ হচ্ছিল। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলো মা আর মেয়ে। গেট দিয়ে ঢুকেই চকলেটটা ধরিয়ে ছিলো দীপ। তারপর ঐ কথোপকথন ।
সোমার মনের আনন্দ খুশি বেদনা কোনোটাই গোপন করার ক্ষমতা নেই। সেই মিশ্র অনুভূতি থেকেই বলল,”এসো। বসো। অমিত আর ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই এসে যাবে।”
ড্রয়িংরুমের সোফায় এসে বসল তিনজনে। গলার কাছে কিলবিল করছে সোমার অজস্র প্রশ্ন। যার মধ্যে প্রধান হল ‘আমাকে আজও ভালোবাসো? বিয়ে করেছো তুমি? ‘ কিন্তু সব টপকে জিজ্ঞেস করল ,”কেমন আছো? ভালো আছো?”
দীপ শুধু হাসলো। সোমা অনেক খাবার গুছিয়ে আনলো প্লেটে। দীপের সাথে মিতুল তখন বকবক করে যাচ্ছে। সোমার হাতের তৈরি খাবার বহুদিন পরে খেলো দীপ। সোমা চুপ করেই বসে আছে। কারণ মিতুলের কথা আর থামছে না। একটু পরে অমিত চলে এলো। সোমা পরিচয় করিয়ে দিলো,”দীপ খুব ভাল ছেলে। আমার ভীষণ ভালো বন্ধু ছিলো।” অমিত হেসে দীপের সঙ্গে করমর্দন করে সোমাকে জিজ্ঞেস করল, “এখন আর ভালো বন্ধু নেই?”
এবার হেসে উত্তর দিলো দীপ,” তাহলেই বুঝুন। এত কিলোমিটার ঠেঙিয়ে দেখা করতে এলাম, আর আমার বন্ধুত্বের ভালোত্বকে কেমন অতীত বানিয়ে দিলো।”
কিছুক্ষণ গল্প হল। তারপর অমিত চেঞ্জ করতে ভেতরে চলে গেল। মিতুলও লাফিয়ে লাফিয়ে বাবার পেছন পেছন চলল। ভগবান বোধহয় এতক্ষণে একটু নিভৃত বাক্যালাপের সুযোগ দিলো দুজনকে।
সোমা জিজ্ঞেস করলো,”বিয়ে করেছো?”
দীপ হেসে মোবাইল থেকে স্ত্রী পুত্র সহ ওর ছবি দেখালো। সোমার কেমন মাথা ঝিমঝিম করে উঠল। সোমার মুখের সবটুকু আলো নিভে যেতে দেখলো দীপ। একটু মায়া হল। সোমা শুকনো হেসে জিজ্ঞেস করল, “জানাও নি তো আগে?” দীপের চোখে দুষ্টুমির হাসি, ” এইটুকু চমক দেওয়ার ইচ্ছে ছিলো।”
সোমা একদম ফিউসড। তবু জিজ্ঞেস করল,” সুখী? “
দীপ এবার খোলা মনে বলল।”একদম।”
সোমার চোখে জল। “আমাকে এতদিন জানাও নি কেন?”
দীপ একটু উদাস থাকলো। তারপর বলল,” ইচ্ছে করে। সামনে এসে বলব বলে।”
সব আগল ভেঙে এবার সোমা জিজ্ঞেস করল, “আমাকে তো তাহলে ভুলেই গেছো?”
স্নিগ্ধ হাসি দীপের চোখে। ” তাই মনে হচ্ছে?”
সোমা একটু চুপ করে থেকে বলল, “আর মেইল করব না তোমাকে।”
এবার চুপ করে থাকলো দীপ। অল্পক্ষণ। তারপর বলল,” বেশ। যা ভালো বুঝবে। বাস্তব। তুমি বরাবরই ফোকাসড। তাই কখন কি করতে হবে, আর কখন নয় সেটা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। আগামীর শুভেচ্ছা থাকলো।”
অমিতের সাথে মিতুল কিসব কলর বলর করতে করতে ঘরে ঢুকলো। দীপ একবার ঘড়ির দিকে তাকালো। অমিত বলল,”ওদিকে কি তাকাচ্ছেন। ডিনার করে যাবেন।” দীপ হেসে বলল,”সোমা স্যানক্সেই সে পাট চুকিয়ে দিয়েছে, ডিনারের জায়গা যাতে খালি না থাকে।” সোমা এতক্ষণে একটু ঝগড়া করার অবসর পেয়ে সহজ হল। “তাইতো সব দোষ তো সোমারই। বাকি সবাই ভালো মানুষ।”
দীপও এবার সহজ হাসি হেসে অমিতের দিকে তাকিয়ে বলল, “কলকাতায় চলে আসুন এবার বেড়াতে। একসাথে ঘুরে দেখিয়ে দেবো সোমার শহর। দেখেছেন কলকাতা? “
অমিত বলল,”দেখেছি কিছু। আবার যেতে অসুবিধে নেই।”
সোমার মনের তরঙ্গে অনেকখানি পালা বদল ঘটিয়ে দীপ চলে গেল আজ। দশ বছর আগে এভাবেই একদিন সোমা চলে গেছিলো। নিস্তব্ধ মাঝরাতে ঘড়ির কাঁটা যখন টিকটিক করে সরে সরে যাচ্ছে তখন সোমা অনুভব করল দশটা বছর অনেক অনেক দীর্ঘ। যতটা সোমা ভাবে তার চেয়েও বেশি। মানুষ বদলে যায় কি যায় না পরের কথা। দিন বদলে যায়। হৃদয়ে স্থান কার কতটা কে কবে মাপতে পেরেছে। তবু জায়গা তো কারোর থেকেই যায়। চোখ ভিজে এল সোমার।
পরের নিউ ইয়ারে সোমার নিজের থেকে মেইল করতে কেমন একটা লজ্জা করল। বিকেলের দিকে একটা সুন্দর ইকার্ড পাঠালো দীপ। এক লাইনের চিঠিও। “তুমি মেইল করলেও আমি মনে রাখবো। না করলেও।”
আরেকবার ভিজলো সোমার চোখ।
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
শেষ থেকে শুরু। আমি রজকিনী রামী,ধোপার বংশে জন্ম আমার।ঘাটে সখিদের সঙ্গে কাপড় কাচি। একাজটা আমি…..
মালঞ্চার পথে ভোরবেলা। সূর্য সবে উঠছিল। বৈশালী দূর থেকে দেখতে পেল,বুনিয়াদপুর বাসস্ট্যান্ডে বালুরঘাটের দিকে মুখ…..
আমার বাবা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন লড়াকু মনের মানুষ।শত অভাব অভিযোগেও তাকে কোনোদিন ভেঙ্গে…..