ক্ষুধার্ত

বকুল বৈরাগী
Uncategorized
Bengali
ক্ষুধার্ত

উলঙ্গ কবি

আমি ঠান্ডা ঘরের কবি,
দুনিয়ায়টা দেখি অন‍্যের চোখে
মৃত‍্যুতে কাঁদি অহরহ শোকে
বিপ্লব শুধু কলমে খাতায়
যন্ত্রণা ঝরে পাতায় পাতায়
আঁকি সমাজের ছবি
আমি ঠান্ডা ঘরের কবি।

আমি এক প্রতিবাদী,
মিছিলে হাঁটার সময়টা কই
মিডিয়া তে আমি তাই জেগে রই
কিছুটা খবর ভোরের কাগজে
চায়ের সাথে ঢোকাই মগজে
সাজি মানবতাবাদী
আমি এক প্রতিবাদী।

আমি যে বুদ্ধিজীবী,
যা কিছু বলি পাবলিক খায়
চ‍্যানেল গুলো টি.আর.পি. পায়
পাল্টি আমি খেতে পারি ভাই
আমার জুড়ি এ জগতে নাই
আমি আজ পরজীবী
আমি যে বুদ্ধিজীবী।

আমি নই রাজ নেতা,
যদিও নেতার তল্পিবাহক
তোষামোদে রোজ বাড়ছে গ্ৰাহক
উলঙ্গ কবি তাই প্রাণে ভয়
মহারাজ আজ হোক তবে জয়
কাব‍্যে কত না কেতা
আমি নই রাজ নেতা।

ক্ষুধার্ত

ক্ষুধার্ত শরীরে আজ শত শত ক্রোশ পথ
অতিক্রম করে এখানে আশা,
অতৃপ্ত মন খুঁজে বেড়ায় প্রতিরাতে,
শৈশব হারিয়েছে কবে, শুকনো ঝরা পাতায় মর্মর ধ্বনি গুঞ্জরিত হয় অহর্নিশি,
একটু একটু করে শীর্ণহয় বাকল,
মেদহীন শরীর প্রতিনিয়ত উদ্ধত আস্ফালনে মত্ত, সবুজ উপত্যকায় উঁকি মারে ম্যনগ্রোভ,
নিশ্বাস- প্রশ্বাসে জীবন্মৃত শ্বাপদ শ্বাসমূল,
অর্ধেক পথ অতিক্রম করেই ক্লান্ত শরীর
নুইয়ে পড়েছে অবসন্নতায়।
থলি ভরা সঞ্চিত আবেগ আর একরাশ
পুঞ্জীভূত ক্ষোভে নির্গত হয় অবিরত গরল।
আর মাত্র ক্রোশ দুই বাকি! এটুকু পথ পেরোলেই
পৌঁছে যাবো অভিষ্ট লক্ষ্যে,
গন্তব্য হোক না যতই দূর্গম।
অনন্ত অপেক্ষায় কাটে কাল,
কিছুটা জিরিয়ে নিয়ে আবার
হাঁটতে হবে অনেকটা পথ,
ক্ষুধার্ত মন আজ বড্ড বেশি অভিমানী।

তৃষ্ণার্ত প্রাচেতষ

প্রতিমুহূর্তে ধেয়ে আসে কালবৈশাখী ঝড়,
প্রতিহত করতে করতে ক্লান্ত শরীর,
বিদীর্ণ হৃদয় বারবার বাধাপ্রাপ্ত প্রবল পরাক্রান্ত কালবৈশাখীর কাছে।
তাসের ঘর থেকে খসে পড়ে
একটি একটি পলেস্তার,
একা একা রং তুলি হাতে এঁকে চলি স্বপ্নের জাল।
মায়াবী আলোয় প্রতিরাতে খুঁজি
এক টুকরো খুশির ঝলক,
ভুলে যাই নিজস্বতা, হারিয়ে ফেলি আপন অস্থিত্ব, বারবার পরাভূত হয় পরাক্রান্ত কালবৈশাখীর কাছে।
আরেকটু শক্তি সঞ্চয় করে
লড়াই করতে চাই বেঁচে থাকার জন্য,
আসুক টর্নেডো কিংবা আর একটা সাইক্লোন
দেখি আজ প্রতিরোধ করতে পারি কিনা,
হয়তো নামবে এবারে অঝোরে বৃষ্টি, সমস্ত আবর্জনা ধুয়ে যাবে অজস্র বারিধারায়, অবিশ্রান্ত ঝর্ণার জলে মিটিয়ে নেব তৃষ্ণা আমি পিপাসিত পরদারিক,
তৃষ্ণার্ত প্রাচেতষ।

ভাইরাস

আজকাল বড্ড বেশি অবাধ্য হয়ে যাচ্ছো,

হয়তো আমার অতিরিক্ত প্রশ্রয়ে কিংবা দুর্বলতার কিছু মুহূর্তে। প্রতিদিন উষ্ণতার পারদ মাপছি ফারেনহাইট কিংবা সেন্টিগ্রেডে, সমস্ত উপসর্গগুলো আজ প্রকটভাবে বিদ্যমান প্রতিক্ষণ, এত কাল বুঝিনি অসুখটা বড্ড ছোঁয়াচে। তুমি তো সেদিন আমাকে স্পর্শ করো নি, তোমার থেকে ছিলাম বহু যোজন দূরে, তবুও কিভাবে আক্রান্ত হলাম এই প্রবল পরাক্রান্ত ভাইরাসে, জ্বরটা প্রতিরাতেই বেড়ে যায়, মাঝে মাঝে ভুল বলি নিজের অজান্তে, প্রবল কাঁপুনির মধ্যেও খুঁজে চলি একটা অবয়ব। অ্যান্টিবায়োটিকের কড়া ডোজেও সারারবে না এ অসুখ, শুধু আমি নই তুমিও তো আক্রান্ত হলে একই
ভাইরাসে, নাইবা নিলাম প্রতিষেধক ছড়িয়ে পড়ুক

সর্বাঙ্গে, প্রতি প্রাতেঃ ধুয়ে ফেলি মুখ, প্রতিরাতে ধুয়ে ফেলি হাত ‘ডেটল’ কিংবা ‘স্যাভলন’ ব্র্যান্ডে। মারণ ব্যাধি কে করেছি স্বেচ্ছায় আলিঙ্গন, নাইবা নিলাম হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ওটা তো এখন ভীষণ মহার্ঘ।

বকুল বৈরাগী। কবি ও ছড়াকার। জন্ম ও বাস ভারতের পশ্চিমবঙ্গরাজ্যের কলকাতায়।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ