প্রক্সি
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
আধিকার সম্পর্ককে টেনে নিয়ে যায় … বাধ্যবাধকতা পারে না সম্পর্ক বয়ে নিতে। আসলে এভাবেও ভাবতে গেলে মিলে না। বাধ্যবাধকতা? কিছুটা? হাহ! কি জানি। সম্পর্ক মানে দু’টো মানুষের মধ্যেকার অবস্থা। ইংরেজিতে একটা কথা আছে- relation is better when both side works good.যদি চুলচেরা হিসেবে যাই তাহলে দুনিয়ার সব সম্পর্কেই কম্প্রোমাইজ পাওয়া যাবে। একটা সম্পর্ক টিকে থাকার জন্য নূন্যতম যে তৃপ্তি দরকার ততটুকু থাকে বলেই এত এত সম্পর্ক চারপাশে আমরা দেখতে পাই। পশ্চিমা দেশগুলো তে মানুষ বলে-compromise is bulshit , because it leaves both sides unsatisfied. ওরা একটু বেশিই স্বাধীনচেতা। আমাদের সমাজে মেয়েদের বুঝানো হয় যে কম্প্রোমাইজ করে চলাই মেয়েদের জীবন। এমন টাই চলে আসছে বহু বহু কাল আমাদের সমাজে। আবার আমাদের নিজেদের পরিবারের ভিতরেই এখন দেখতে পাই অনেক ছেলেরাও কম্প্রোমাইজ করে যাচ্ছে সামাজিক একটা পরিচিতি কে ধরে রাখতে। অথবা অনেক অসঙ্গতির অনেক না-মেলা হিসেবের চাপে পরেও এই কম্প্রোমাইজ করে চলার গল্পগুলো দেখা যায়। বিচিত্র এই জীবন। কত ভাবে বয়ে যাচ্ছে! প্রতিটা স্রোতের গল্পই আলাদা।
এই যে আমারা তিন বন্ধু। আমাদের জীবনকে দেখা এক রকম না। তিসু কখনই জীবন কে এত জটিল করে দেখতে চায় না। ওর মতে জীবন একটা ছকে চালায়ে নেয়ার নাম। খুব পরিচ্ছন্ন চলা। এর ভিতর কোন জটিলতা এলে পথ টাকে একটু পরিবর্তন করে নেয়া, ব্যস! এ জন্যই ও একা থেকে গেলো। বিয়ে করল না সারা জীবন। শিরিন বলে ওর তো জীবনের কঠিন আর অচেনা পার্ট টাই নাই। ওর জীবনের সবটুকু ই চেনা জানা, পরিচিত বৃত্ত। তিসুর জীবন মানে শুধু একান্ত মৌসুমের উদযাপন। ভালই বলে শিরিন। তাও কি সহজ? মানুষ তো বদলায়। পরিচিত থাকে কই।
সিক্তা একাই এসেছে। আজ তিসু আসে নি ওর সাথে। অফিস এ একটা মিটিং শেষ করে আসবে। শিরিনের বাসায় তিন বন্ধু মিলে আড্ডা দিতে একত্র হয় ওরা সপ্তাহান্তে একবার। এদিকে শিরিন আজ একটু ব্যস্ত। আজ শিরিনের বাবার বাড়ি থেকে কিছু আত্মিয়-স্বজন ওদের বাসায় এসেছিল।সব এলোমেলো হয়ে আছে সেসব ঠিকঠাক করছে কাজের মেয়েটাকে সাথে নিয়ে। সিক্তা অবশ্য বোর হচ্ছে না। শিরিন খুব ভাল লিখে । লিভিং রুমে বসে তাই শিরিনের নতুন লেখা পড়ছিল। একটা ছোট গল্প – দু-টো চরিত্র। একি ছাদ। একই ছাদ পাখার নিচে একই বিছানার ঘুম। অথচ দু-টো সম্পূর্ণ ভিন্ন ভাবনার জগত নিয়ে দু-টো হৃদয়। একে অন্যের ভাবনাকে সম্মান আর সেই ভাবনার জন্য একটু আলাদা সময় ভাগাভাগি করে রেখে প্রতিদিনের নিয়ম করে চলা জীবন। আহা কি সুন্দর লিখেছে শিরিন। এমন ও হয়! হয় হয়তো কোথাও! রূপকথার গল্প মনে হয় এসব। মাহবুব ভাই আর শিরিন এর আন্ডারস্ট্যান্ডিং খরাগ্রস্থ আবর্তে একপশলা বৃষ্টি যেন। শিরিন এর গল্পেও ওদেরই সুখ ঘেঁষা তুস্টির ঝলক তাই স্পষ্ট। আমারা অনেক এগিয়েছি। আমাদের সমাজে এখন মেয়েরা -মায়েরা অনেক কাজ করছে। সব ক্ষেত্রে মেয়েরা ছেলেদের পাশাপাশি চলছে। ভাল লাগে। তবে যদি দেয়ালের এর সংসারের কথা বলি তাহলে এখনো ছেলেরা ভাবতেই চায় না যে মেয়েদের নিজেদের জন্য একটু আলাদা সময় দরকার। অন্তত আমার পর্যবেক্ষণ এটাই।
পড়া শেষ করে পাশে তাকাতেই আরো একটা নোটবুকের উপর চোখ পড়লো সিক্তার। হাতে নিয়ে পাতা উল্টতেই প্রথম পাতায় একটা লাইন এ চোখ আটকে গেল। এক ঝটকায় ভু-তলে এসে গেল যেন সিক্তা।
“রাতভর গালাগালি শুনে আমার কবিতারা বড় হয়।”
লাইনটা কেমন খটখটে। উলটে পাল্টে দেখছে। সরল একটা লাইন। কি ভেবে লিখেছে শিরিন! নাহ! কেমন এক অস্বস্তি ছড়াচ্ছে মনে। সিক্তা পড়ছে-
‘হাজার গল্প সাথে নিয়ে আমাদের আসা- লক্ষ কোটি গল্প রেখে চলে যাওয়া’
পরের পৃষ্ঠা-
এই আঁধারে কেন আমি বাইরে তাকাই
আমার কেবল ঘুম এনে দাও হে বিধাতা
হাজার জোনাক জলুক না হয় অন্য চোখে
অন্য হাতে কলম থাকুক।
তেল-নুন-ঝাল আমায় বুঝুক, আমায় দিও সংসারি চোখ
শব্দ-শরীর পরে থাকুক চরাচরের বিষণ্ণতায়।
বন্ধ থাকুক একান্ত সব নিমঘ্নতা, বিষ-বাসনা,
ভাসিয়ে নেয়া শব্দ -জাদুর আনাগোনা!
কত কি ভাবছে সিক্তা। তবে কি মাহবুব ভাই আর শিরিনের মধ্যে কোন জটিলতা? না না এমন হতেই পারে না। এত দিন হয়ে গেলো, এমন হলে কোন না কোন ভাবে ওদের চোখে পড়তো।মাহবুব ভাই অনেক কেয়ারিং শিরিনের প্রতি। এমন তো হতে পারে শিরিন লাইন টা লিখেছে নিতুন কোন লেখার থিম হিসেবে। হতেই পারে। নিজেকে বুঝাচ্ছে নিজেই। কিন্তু একটা অজানা আশংকা কিছুতেই ছেড়ে যাচ্ছে না।
জীবন তো ওর নিজেকেও কম কিছু শিখায় নি।
সিক্তা ভাবতে ভাবতে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। কি সুন্দর গাছ চারপাশে সাজানো। মালিকপ্ল্যান্ট গ্রিল বেয়ে উঠে গেছে বেশ কিছু জায়গা ঘিরে। গোলাপ, গাদা,কামিনি ফুল গাছ আছে। একপাশে পুদিনা আর ধনে পাতার ঘন সবুজ কার্পেট আর কোণের দিকে কাগজি লেবুর কলমের চারা গাছ। খুব সবুজ। খুব পরিচ্ছন্ন। যত্নের ছোয়া চারপাশে। একটা আরাম করে বসার দোলনা চেয়ার। তার পাশে দুটো পুরু ফোম বসানো ভারি টুল। ফোমের উপর সুন্দর অ্যামবুশ করা প্রিন্টের সবুজ কাভার। এইটুকু জুড়ে যেন বিশুদ্ধ শ্বাসের অমায়িক এক পরিবেশ। বারান্দার ওপাশেই বিরুদ্ধ আভাস। একটা রিক্সার সাথে আরেক টা রিক্সার চাকা আটকে গেছে। দু’জন রিক্সা ওয়ালা চিল্লাচিল্লি করে চেস্টা করে যাচ্ছে ছাড়াতে। শব্দ শুনা যাচ্ছে। বারান্দার দোনলা চেয়ারে বসে দোল খাচ্ছে সিক্তা। শিরিন এসে দরজায় দাড়ালো। কথা বলছে। ওর গালে টোল পড়ে। রান্না ঘর থেকে বের হয়েছে বুঝাই যাচ্ছে। গালে আর চুলের এক পাশে হলুদ লেগে আছে।
– সিক্তা আমি খুব সরি রে । তোকে সময়ই দিতে পারছি না। আর এক্টু বয় আমি গোসল টা সেরে আসছি। বেশী সময় আর নেব না। এক্ষণই মাহবুব চলে আসবে তারপর এক সাথে চা খাব।
– ওকে যা তুই ,আমি ঠিক আছি। বলে সিক্তা।
এই সময় ডোরবেল বেজে উঠে। শিরিন বলে– এই রে মাহবুব এসে গেলো মনে হয়। সিক্তা দেখছে শিরিন কে। কাজের মেয়ে টা দরোজা খুলে দিল। মাহবুব ভাই হাতে বেশ বড়সরো এক ফুলের তোড়া নিয়ে ঘরে ঢুকেই টেবিলের উপর কিছুটা বিরক্তি নিয়ে রাখলো। সিক্তা বারান্দা থেকে দেখছে। খুব তাড়াহুড়ো করে ভিতর ঘরে চলে গেল মাহবুব ভাই। শিরিন কিছুটা দূরত্বে দাঁড়িয়ে। সিক্তা খেয়াল করলো কোন কথা হোল না ওদের মধ্যে। শিরিন হঠাত যেন একটু গুটিয়ে গেলো। একটা নিষ্প্রভ মন্থরতা ওর দু’পায়ে। কিছু কী অন্য রকম লাগছে!? না হয় তো! অন্য সময় হলে এটা কে কিছুই মনে হতো না। ওই লাইন্ টাই আসলে একটা বিভ্রাট তৈরি করে দিয়েছে মনে, আর কিছু না।
টেবিলে তুমুল আড্ডা চলছে ওদের ৪ জনের। তিসুও এসেছে। মাহবুব ভাই আর তিসু ভীষণ উচ্ছাসে গল্প করে যাচ্ছে ওর অফিস এর এক নতুন কলিগ নিয়ে। সব কিছুই আগের মত। একটু আগের ভুল ধারনা টা উবে গেছে পুরোপুরি সিক্তার মন থেকে। আজ কাল কত ইস্যু কথা বলার। ফেসবুক নিয়ে মাহবুব ভাই এর খুব ফানি একটা মনোভাব। এসব বায়বীয় সম্পর্কের জগত নাকি একটা অলীক মোহ এনে দেয়। তাতে ভালোর চেয়ে খারাপ টাই বেশী। তিসু এই মন্তব্যের ঘোর আপত্তি তুলেছে। ও বলছে আমরা সবাই ফেসবুক ইউজ করি। আর অন্য কথা বাদ দিলাম, দেখেন শিরিন লিখছে নিজের মত সংসারের পাশাপাশি সময় করে এই ফেসবুকেই তো। সমকালে অনেক অনেক ভাল লেখক বেরিয়ে আসছে এই ফেসবুক থেকেই। তিসু , সিক্তা প্রচুর বই পড়ে। তাই শিরিন এর লেখা পড়ে, উৎসাহ ও দেয়। শিরিন সব সময় বলে তোদের জন্যই এখনও লিখি। সংসারের অনেক ঝামেলার পর ও বেলা শেষে লেখা নিয়ে বসতে ইচ্ছে করে এই তোদের জন্যই।
এমনি তে মাহবুব ভাই ভীষণ ফরমাল। একটু আগে যখন ওরা চায়ের টেবিলে বসছিল তখন চেয়ার টেনে দাড়িয়ে ছিল ওদের বসার জন্য। কখনো ওনার গাড়িতে পিক করতে হলে উনি নিজে গেট খুলে ধরে থাকেন। এসব বাড়তি খাতির যত্ন খুব উপভোগ করে ওরা।
শিরিন একটু পর পর হাঁচি দিচ্ছে। ওর ঠাণ্ডা এলার্জি আছে। তার উপর একটু অবেলা করে গোসল করেছে আজ। সিক্তা ওকে টিস্যু বক্স এগিয়ে দিল। বক্স টা কিন্তু মাহবুব ভাইয়ের হাতের কাছেই ছিল, অনায়াসেই উনি শিরিন কে দিতে পারতো। মাহবুব ভাই যে রকম ফর্মাল মানুষ তাতে এটাই স্বাভাবিক। কিন্ত উনি তা করলেন না। বরং উনি আরো গলা উচিয়ে একটু উন্নাসিক ভাবে যোগ করলেন- বায়বীয় একান্ত জগত সময় জ্ঞান কে একেবারেই ভুলায়ে দেয় তার অকাট্য প্রমাণ শিরিন নিজেই। মাহবুব ভাই বলছে তিসু কে- দেখুন আপনার বান্ধবী গোসল -খাওয়ার সময় ও এখন পাচ্ছে না- বলে হাহা করে হাসলেন। শিরিন কেমন অস্বস্তিতে কুঁকড়ে গেলো যেন। তিসু ও মাহবুব ভাই এর সাথে হাসছে। কিন্তু সিক্তার হাসি পাচ্ছে না। অজানা আশঙ্কার আচ্ছাদন যেন খুলে যাচ্ছে ওর কাছে একটু একটু করে। ভাল লাগছে না সিক্তার, বার বার ওই লাইন টার কথা মনে পড়ছে।
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..