খালাসীটোলার গান

অভিজিৎ পালচৌধুরী
কবিতা
Bengali
খালাসীটোলার গান

কবিতা গুচ্ছ..

বাইরে বৃস্টি
ভিতরে বৃস্টি
বৃষ্টির ধারাপাত
বৃস্টি জল
কান্না জল
একাকার সব আজ

ভাঙছে দেওয়াল
উঠছে দেওয়াল
দেওয়াল চারিধার
বৃস্টি দেওয়াল
কান্না দেওয়াল
দেওয়ালে হাহাকার

একা মানুষ
ভিজছে খুব
ভেজা মানেই জীবন
ভিজতে ভিজতে
পেরোতে হবে
এই অঝোর শ্রাবণ ..

 

জিহাদ

এক আনন্দসন্ধ্যায়
হিজাব পরিনি বলে
কোরানের আয়াত বলতে পারিনি বলে
একদল বিশ-বাইশের তারুণ্য
যে বিশ্বাসের ক্রুরতায়
আমার গলায় পোচ দিল
আমাকে বিচ্ছিন্ন করল
এই ভালবাসার জন্নত থেকে
তার নাম কী দেবে
পয়গম্বর

আকাশে যখন একটি একটি
করে তারা ফুটে উঠছে
জোছনায় ভাসছে চারিধার
নদী বাতাস এক হয়ে
যখন গাইছে স্নিগ্ধতার গান
ঠিক তখনই
আমার কন্ঠে এঁকে দিল
এই রক্ত-অলংকার

আমি তো বেহেস্তের হুর
হতে চাইনি আল্লারসুল
আমার গুনাহ কী
ঐ বিশাল আকাশটাকে
দু’চোখ ভরে দেখতে চাওয়ায়
এই মাটি-জল-বাতাসের
পৃথিবীর স্পর্শ নিতে চাওয়ায়

আমি আয়াত জানিনা
আমি জানি
বেঁচে থাকার গান
রবি ঠাকুরের গান –
“আনন্দধারা বহিছে ভুবনে…”
যে গানে ভোরের আকাশ
ভরে যায় প্রেমে
সেই প্রেম সেই সুরটুকুই
আমার সম্বল

তোমার বেহেস্তেও তো
একই সুর পরওয়ারদেগার
শুধু তোমার ফেরেশতারা
সেই সুর শুনতে পায়না
তারা চায় আয়াত
তারা চায় হিজাব
তাই তাদের নিষ্কম্প হাতে
বন্দুক থাকলেও
একটাও গুলি খরচ করেনা
চাপাতির তীক্ষ্নতায়, নৃশংসতায়
ছিন্নভিন্ন করে আমার গলার নলি

তবু আল্লাতালাহ
গান কী থেমেছে
গলা বেয়ে নেমে আসা
রক্তস্রোতেও তো সেই সুর বইছে
শাশ্বত প্রেমের সুর
সেই সুর চুইয়ে চুইয়ে
এই মাটির জন্নতে মিশে যাচ্ছে
আর এই দোজখ্
কীরকম হয়ে যাচ্ছে বেহেস্ত্

না আল্লারহিম
আমার কোন গুনাহ কবুল
নেই তোমার কাছে
যে জোয়ান জিহাদী
আমাকে কুরবানি দিয়ে
আদায় করল নিজের কুরবানি
তোমার কাছে
তার নিথর লাশের রক্তস্রোতে
বিশ্বাসের বিষ দেখ
কেমন আমার ভালবাসার রুধিরস্রোতে
মিশে যাচ্ছে
এক হয়ে যাচ্ছে
জন্ম নিচ্ছে
এক অনন্ত প্রেমের জিহাদ..

 

খালাসীটোলার গান

(কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় স্মরণে)

বুকের দাওয়ায়
আগাছা সাফ করতেই
শেষ বিকেলে জেগে উঠল
একটা শীর্ণ তুলসীমঞ্চ
আর তার ওপর
জলভরা মাটির হাঁড়ি ফুটো করে
ভরা গ্রীষ্মে গেরস্থের ঝরানি

খালাসীটোলার টেবিলে
আধময়লা কাঁচের গেলাস
একটা বাঙলা পাঁইটের তলানি থেকে
টপ্ টপ্ ঝরে পড়া ফোঁটার তারল্য দেখে
উল্লসিত কবি বললেন-
‘ঝরানি .. ঝরানি দেখেছিস্ !’

আর তারপর পাশের নর্দমায়
পেচ্ছাব করতে করতে
উদাত্ত কন্ঠে সুর ঝরালেন –
‘ হৃদয় আমার প্রকাশ হল
অনন্ত আকাশে ..’

খালাসীটোলার অলৌকিক গানটি তখন
অনেক ওপরে
আকাশজোড়া শেষবিকেলের আলো মেখে
দিনরাত্রির সন্ধিক্ষণে
আরো অনন্তে ডানা মেলেছে

মূহ্যমান কবি
টলতে টলতে বাসে উঠে
অনন্ত আকাশের টিকিট চাইলেন

 

টু-বিএইচকে সম্পর্ক

একটা ভেজা দেওয়াল
জেগে উঠছে
এই টু-বিএইচকে সম্পর্কের
স্কোয়ারফিটে

অবিশ্রান্ত টেলিভিশনের
পরিশ্রান্ত চ্যানেল
নখ দিয়ে খোঁটে শরীর
শরীরের নীচে সম্পর্ক
এক মহাএপিসোডের
রুটি ছিঁড়ে খায়
ডাইনিং টেবিল
জাকুজির ঘেরাটোপে
উন্মুক্ত শরীর গান গায়
আমাকে আমার মত থাকতে দাও
ডাবলবেডে লুডো খেলে
দাম্পত্যের বালিশ
শরীর আসেনি বলে

এরপর ব্যালকনির রোদ্দুর
চায়ের কাপ
উড়ন্ত খবরের কাগজের গোলা
কাজের মেয়ের ডোরবেল
গ্যারেজের ভক্সওয়াগন
কখন জায়গা বদল করে ফ্যালে
টের পায়না
এ মহানগরের
প্রতিটি টু-বিএইচকে সম্পর্ক

দেওয়াল জেগে ওঠে খুব
ভেজা, ঠান্ডা
আর স্যাঁতস্যাঁতে

 

অতলান্তের ছবি

আকাশ চিরে সীগালের ডাক আর একটুকরো মেঘের চিঠি নিয়ে হিথরোর সবুজ বুক স্পর্শ করল অতিকায় ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের রুপোলি ঠোঁট। তখন বিকেলের রোদ তার শেষ কামড়ের চিহ্ন ফেলে রাখছে এয়ারপোর্টের ফেনসিং ওয়ালে ..
অক্লান্ত হোয়াটসঅ্যাপ কলে ক্লান্ত
পথভোলা এক পথিক হারিয়ে ফ্যালে নিজেকে সুন্দরী ফেল্টহ্যামের রাস্তায়।ঘড়িতে তখন স্থানীয় সময় সন্ধে সাড়ে সাতটা।
জিপিএসের রৈখিক ইশারায় ভাসে
আইলে অফ ওয়াইট
পোর্টসমাউথের জলপরীর
উল্কি আঁকা গোপনাঙ্গ
আর ঠিক তখনই আটলান্টিকের বাতাসে সুদূরের মেঘমেদুর বিষণ্ণতার গান।
পথিক আমি নিশ্চুপ এক অতলান্ত বিহ্বলতায়
লক লমন্ডের বৃষ্টি ভেজা ডানার গন্ধে একা একা
ফিরে আসি মন তোমার কাছে
আর বাতাসে ভাসে ..
but me and my true love will never meet again
On the Bonnie bonnie banks of Loch Lomond…

অভিজিৎ পালচৌধুরী। কবি। জন্ম ১৬ আগস্ট ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গরাজ্যের মফস্বলে। মফঃস্বল শহরে স্কুল ও কলেজজীবন কেটেছে। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে নকশাল আন্দোলনের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা। কলেজজীবনেই লেখালেখি ও লিটল্ ম্যাগজিনের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন। উচ্চতর শিক্ষার জন্য মফস্বল ছেড়ে কলকাতায় পাড়ি জমান...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..