ঝরা শিউলি
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
বেশ একটা মাংস রান্না করার গন্ধ আসছিল। শ্বেতা হলে বলত বাস। ও গন্ধকে বাস বলত। বলত রান্না করাটা একটা কেমিস্ট্রি। শ্বেতা কেমিস্ট্রি অনার্স পড়ত কিনা, তাই ওর কথায় কথায় কেমিস্ট্রি মিলে মিশে থাকত। আমি কখনো ওদের বাড়িতে গেলে ও কত গল্প করত। এক সময় বকে বকে ক্লান্ত হয়ে আমার মুখের পানে চেয়ে থাকত। বাইরে থেকে হাসনুহানার গন্ধ আসত। অনেক পরে ও আলগোছে বলত, আজ হেনাফুলের বাস পেয়েছিলে?
অনেকদিন মাংস রান্না করি না। মাংস এড়িয়ে চলতে অভ্যাস করছিলাম। ভাগাড়ের মাংস খাবারের সাথে মিশানো হয়েছে সেই সব কথা মাথায় সেঁধিয়ে গিয়েছে। মাংস পারতপক্ষে রাঁধি না বলেই কি মাংস রান্নার গন্ধ আমায় এত টানছে?
আমি এখন যে বাড়িতে থাকি, তার আশেপাশে কোথাও একটা হেনাফুলের ঝোপ আছে। নইলে কখনো কখনো গন্ধ পাই কি করে? আমি দোতলার বারান্দা থেকে ঠিক ঠাহর করতে পারি নি, কোথায় রয়েছে সেই হেনাফুলের গাছ। কাউকে জিজ্ঞেস করতেও পারি নি। হেনাফুলের গন্ধ মনে এলে নিজেকে বোঝাই, শ্বেতা এখন অতি সাদামাটা একটা মেয়ে। অস্থিরমতি ধৈর্যহারা একটা মেয়ে। না জেনে বুঝে দুম করে একটা বিয়ে করে দু দুটি সন্তানের জননী হবার পর তার মনে হয়েছে স্বামীর ঘর আর করা চলে না।
তবু কেন অনেকদিন আগের কলেজপড়ুয়া শ্বেতাকে আমি ভুলতে পারি না। ইচ্ছে করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি, এমন সময় সদ্যোতরুণী শ্বেতা একটা হলুদ রঙা শাড়ি পরে হেঁটে আসছে। সাথে করে আনছে হেনাফুলের বাস। তারপর চোখ কচলে নিজেকে স্তোক দিচ্ছি যে শ্বেতাকে ভেবে সময় নষ্টের কোনো মানে নেই। শ্বেতা কোনোদিন আমার হয় নি। কোনো কেমিস্ট্রিই সত্যি সত্যি ছিল না আমাদের মধ্যে। হাসনুহানার বাস ভুলতে চেষ্টা করি। নিজেকে বোঝাই, গন্ধ জিনিসটা খুব রহস্যময়। গন্ধের মধ্যে থাকতে থাকতে তার তীব্রতার বোধ মরে যায়। তখন মগজ আর গন্ধ টের পায় না। শ্বেতার সাথে আমার সত্যিকারের কোনো সম্পর্কই কোনোদিন দানা বাঁধে নি। যা যেটুকু ছিল, তাকে আমরা দুজনের কেউই ভরসা করি নি। আজ এতদিন পরে এখন সব অলীক। রেলিংটা চেপে ধরি।
বেশ টের পাচ্ছি হলুদ রঙের শাড়ি পরা বউটা মাংস রান্না করতে করতে ঘামছে। ঘামতে ঘামতে হাতের তালুর উলটো পিঠে মুখ মুছছে। ঘামে তেলে হলুদে বিধ্বস্ত হয়ে ও মাংস রাঁধছে।
এই তো কদিন আগেই বাগানের পাঁচিল টপকে পাশের ডোবাতে এঁটোকাঁটা ছুঁড়ে ফেলার সময় আমাকে দেখে একটু হাসল। আজ কাজে যান নি?
আচ্ছা, কাজে যাওয়া আর অফিস যাওয়া কি এক? ওর বর ছোটখাটো কনট্রাকটরি করে। নির্দিষ্ট অফিস নেই। তাই বউটা অফিস কথাটা জিভে এনে উঠতে পারে না।
আমি ওকে বলবো ভেবেছিলাম ডোবাতে এঁটোকাঁটা ফেলছেন কেন। কিন্তু তখনই ওর ননদ ওকে খুঁজতে এসে গিয়েছিল। ননদ ওকে সব সময় চোখে চোখে রাখে। বরও। পারতপক্ষে বাড়ি থেকে বেরোতে দেয় না। দোতলায় আমার ঘরের পাশ দিয়ে ছাতে ওঠার সিঁড়ি বলে ওরা বউটাকে ছাতেও যেতে দেয় না।
আমি একাটি থাকি। অফিস থেকে ফেরার পথে বাজার করে আনি। ফাঁকা উঠোনে একলা বসে থাকে বউটা। আমায় দেখে দ্রুত পায়ে ঘরে ঢুকে পরদা টেনে দেয়। বর নেশা করে ফিরলে চাপা গলায় ঝগড়া করে। কুচুটে ননদটা দাদার হয়ে সাফাই গায়, রোজগেরে মদ্দ জোয়ান ঘরে শান্তি না পেলে মদ খাবেই তো। আমি ঠিক জানতাম রাত নিশুতি হলে বালিশে মুখ গোঁজা মেয়ের কান্না শুনতে পাব। আমার ঘুম আসত না। সকালে উঠে দেখতাম যেমনকার মেয়ে তেমন। বারান্দায় ঝাঁট দিচ্ছে, কলতলায় এঁটো বাসন মাজছে। ননদটা একবার দেখে গেল আমি দাঁত ব্রাশ করার ছলে দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি কি না।
একদিন ওদের ঘরে পুজো হল। আমি দোকান থেকে কী একটা কিনে এনে ঘরে যাব । বউটা গলায় আঁচল জড়িয়ে পঞ্চপ্রদীপ নিয়ে আমার কাছে এসে করতলে প্রদীপের তাপ নিয়ে নিঃসঙ্কোচে আমার কপালে ছুঁইয়ে দিল। আমি নাস্তিক, তবু ওকে বারণ করতে বাধল। ঠিক চোখে পড়ে গেল ঝগড়াটে ননদটা এক ঝলক দেখেই সরে গেল।
মাংসের গন্ধটা পোড়া পোড়া ঠেকছে কেন? বউটা কি বেখেয়ালে রান্না পুড়িয়ে ফেলল? ইশশ, আজ যে বর ওর আর রক্ষে রাখবে না।
খানিক বাদে কটু তীব্র পোড়া গন্ধে বাড়ি ভরে উঠেছে। দাদা আর বোন কোথা থেকে বাড়ি ফিরে এসে চিল চিৎকার জুড়ে দিল। পাড়ার লোক ভেঙে পড়েছে বাড়িতে।
পুলিশের দারোগা নিজে তদন্তে এসে আমার ঘরে ঢুকে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, গতরাতে ওদের স্বামী স্ত্রীতে ঝগড়া হয়েছিল কি না। আমি স্খলিত গলায় বললাম, কই কিছু শুনি নি তো। দারোগা আবার বললেন, একটু স্মরণ করার চেষ্টা করুন। বিরক্তি দেখিয়ে বললাম, পরের ঘরে কান পাতা আমার অভ্যেস নেই। দারোগা আমার ঘর ছেড়ে চলে গেলেন।
বারান্দা থেকে দেখতে পেলাম বউটার সারা শরীর কালো অঙ্গার হয়ে গিয়েছে। চোখদুটো গলে গিয়েছে তাপে। কার সাথে যেন লড়াইয়ে চলল সে, দুই হাতের ভঙ্গি এমন। সহসা কপালে কার নরম করতলের স্পর্শ পেলাম। তাতে পঞ্চপ্রদীপের পবিত্র তাপ মাখা। কপাল মুছে নিলাম বার বার। কুচুটে ননদটা কি ভেবে সরে গেল।
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
শেষ থেকে শুরু। আমি রজকিনী রামী,ধোপার বংশে জন্ম আমার।ঘাটে সখিদের সঙ্গে কাপড় কাচি। একাজটা আমি…..
মালঞ্চার পথে ভোরবেলা। সূর্য সবে উঠছিল। বৈশালী দূর থেকে দেখতে পেল,বুনিয়াদপুর বাসস্ট্যান্ডে বালুরঘাটের দিকে মুখ…..
আমার বাবা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন লড়াকু মনের মানুষ।শত অভাব অভিযোগেও তাকে কোনোদিন ভেঙ্গে…..