ঝরা শিউলি
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
পাশের বাড়ি শাহিদদের। ওদের বাড়ির ‘ঢেকিঘরে’র পেছনে নিম গাছ। বৃষ্টির পানি পড়ে নিম গাছের প্রায় সব পার্শ্ব শিকড় বেড়িয়ে গেছে। গাছটিও যেমন মোটা, শিকড়গুলোও তারচে’ কম যায় না, বেশ মোটা। দুপুর বেলা বাড়ির পেছনের মাঠের সকল কৃষক বাড়িতে খেতে গেছে। এই তো সুযোগ! নিম গাছের শিকড়ের উপর দাড়ালাম। প্রচন্ডবেগে জলত্যাগ করলাম। উহ্! কি আরাম !!
-‘ওই উঠ, উঠ। ‘কাথা’ পাল্টা। ‘মুইত্যে’ ভিজ্যেয়ে দিছে, পাজি। কত বড় অইছে, এহনো বিছেনে ‘মুতে’, ডাকদিলি ন্যা ক্যা ….. ’
দাদা আর দাদির ভালবাসার ‘ঠ্যেলাকথা’য় মাঝরাতে হঠাৎ ভেঙ্গে যাওয়া ঘুম! আহ্ সেকি আর সহজে ফিরে আসে???
গরমকাল যেমন-তেমন; শীতকাল! উহ্!! কোন কোন মাঝরাতে আর ঘুমই আসে নি …
দুই.
কাথা গায়ে দিয়ে ঘুমিয়েছি। মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার পরে বুঝলাম পিঠে খুব জ্বালাপোড়া করছে।বোধ হয় কোন পোকায় কামড় দিয়েছে।কাথা সরালাম।কিন্তু নিজের চোখ দিয়ে পিঠে কিছু হলে দেখা সম্ভব নয়।
দাদীকে ডেকে উঠালাম। দেখতো কি হইছে। দাদী উঠলেন। ‘চেরাগ’ ধরালেন। পিঠের কাছে চেরাগের আলো দিয়ে দেখে বললেন, ‘ছারপোকা’য় কামড়াইছে, শুয়ে থাক, কিছু অবি ন্যা। এর মধ্যেই দাদা বললেন, ‘সহালে একটা ওষুধ ধরিস, কল্যাণপুরথ্যে হেই বিটি আসপি, মঙ্গলবার’। দাদী বললেন, ‘অতদিন তাজা থাকপেন না, মইরা যাবেনে। দাদা বললেন, পরশুদিন মঙ্গলবার, কাইল না ধরলি পরে সময় নাই।’
পরের দিন সকালে দেখলাম দাদী বালিশের কোনা থেকে ছারপোকা ধরছেন। মঙ্গলবার দিন বিকেলে দেখলাম কল্যাণপুর থেকে একজন মহিলা ও একজন পুরুষ এসেছেন। দাদাকে কিছু জিজ্ঞাসা করার সাহস পেলাম না। দাদীকে জিজ্ঞাসা করলাম, উনাদেরকে কি ছারপোকা খাওয়াবা? উনারা যদি টের পায়, ইত্যাদি ইত্যাদি। দাদী আমাকে চুপ থাকতে বললেন। দেখলাম কলার অগ্রভাগে একটু ছিলে কায়দা করে তার মধ্যে তরতাজা ছারপোকা ঢুকিয়ে দিলেন।মহিলাকে কলাটি খেতে দিলেন। বললেন, অর্ধাংশ একবারে খেতে, পরের বার বাকি অংশ। মহিলা তাই করলেন। অনেক দিন পরে ওই মহিলা আর পুরুষ এসেছিলেন, তাদের রোগটা ভাল হয়েছে জানাতে।যাহোক তরতাজা ছারপোকা খাওয়া দেখে আমার কেমন লেগেছিল তা বলতে চাচ্ছি না।
তবে ওই ঘটনা প্রত্যেক্ষ করার পরে যত দিন ছারপোকার কামড়ে আমার ঘুম ভেঙ্গেছে…
ওই যে ঘুম ভেঙ্গেছে আর আসেনি…
সকাল অবধি…
তিন.
সবগুলো-ই ছনের ঘর। এর মধ্যে একটি ‘বড়ঘর’, বাবা-মা থাকেন। একটি ‘ঢেঁকিঘর’, রান্না করা ও ‘খড়ি’ রাখা হয়। আর একটি ‘কাচারিঘর’, এখানে দাদা-দাদি আর আমি ঘুমাই।
শীতকাল শেষের দিকে; কোনকোন রাতে গরম কোন কোন রাতে আবার বেশ শীত পড়তে শুরু করেছে। দাদী একদিন সকালে মোটা ‘কাথা’ আর ‘লেপ’ গোল করে পেচিয়ে ‘সিকা’য় ঝুলিয়ে দিলেন। বললেন, ‘এহন তো গরমকাল আইছে, ল্যাপ আর মোটা ক্যাথা লাগবি ন্যে; তাই উঠেয় থুইলাম।’
রাত্রি গভীর-বেশ শীত; পরণের লুঙ্গি কোমর থেকে খুলে গায়ে পেচিয়েছি। হঠাৎ পুরো শরীর পানিতে ভিজে যাওয়ায় ঘুম ভেঙ্গে গেল। এমনিতেই শীত, তারপরে আবার রাত, এর মধ্যে ভেজা, তাও আবার ঘুমের মধ্যে? কি যে অবস্থা, অসহ্য! নিশ্চয়ই দাদী পানি ঢেলে দিয়েছে। কিন্তু দাদা আর দাদী আমাকে প্রচন্ড ভালবাসেন; তাই বলে এই গভীর রাতে গায়ে পানি ঢেলে দিবেন, তাও আবার ঘুমের মধ্যে? দাদীকে ‘ঠেলা দিয়ে’ উঠালাম; কি করছো? আমি ভিজলাম ক্যামায়? –‘হ, তাইতো, ক্যামায়ে ভিজলি?’ ‘উপ্যেরের পলিথিনির ব্যাগ পানির ভারে খুইল্যে পড়ছে, হেই পানিতে ভিজছে’- দাদা পাশ থেকে বললেন। মনে পড়ল বেশ কয়েকদিন আগে ‘ঢালা’র ‘ছন’ ‘আচমকা বাতাসে’ উড়ে গিয়েছিল, সেখানে পলিথিনের ব্যাগ পেতে ফাকা অংশ আটকানো হয়েছিল। এতদিন বৃষ্টির পানি ওই ফাকা দিয়ে নিচে না পড়ে পলিথিনের ব্যাগে পড়তো। ফলে আমাদের বিছানায় আর পানি পড়তো না। কিন্তু আজ ঘন্টা খানেকের বৃষ্টিতে পলিথিনে পানি জমে জমে এমন ভারী হয়েছে যে আর ঝুলে থাকতে পারেনি। সবটুকু আমার গায়ে।
ওই যে ঘুম ভেঙ্গেছে; সেদিন আর আসেনি…
সকাল অবধি…
চার.
‘টালে’র রাত; চারিদিকে গভীর নিস্তব্ধতা। কখন ঘুমিয়ে পড়েছি ‘টের’ পাইনি। অনেক রাত-ঠিক কতরাত জানি না। ‘তলপেট’ ভারী হয়ে গেছে, বোধহয় ‘মুতে’র প্রচন্ড চাপ। দাদিকে ডেকে উঠালাম, বিছানা হাতরিয়ে ‘ম্যাচ’ খুজে ‘চেরাগ’ ধরালাম, ঘরের ‘কপাটে’র ‘খিল’ খুললাম, তারপরে চেরাগ হাতে করে ‘কপাটের চৌকাঠে’ দাড়িয়ে ‘দুয়ারের’ দিকে মুখ করে মুতে দিলাম। কিন্তু তলপেট যেমন ছিল তেমনই রয়ে গেল। আরো একটু চেষ্টা করলাম; কিন্তু পেটে মুত আর নেই।‘এতথুন কি করস? তারতারি আয়, টালে ‘জান’ বাইরেয় যায়……’ ‘বিড়বিড় করে’ আরো কি কি যেন বলছিলেন দাদি।বিছানায় যেয়ে আরো বিরম্বনায় পড়লাম, পেটটা মনে হয় ক্রমেই বড় হচ্ছে।
মোটা দুটি কাথা, তার উপরে বহু দিনের পুরাতন ‘ফাসাফাসা’ হয়ে যাওয়া লেপ। অন্যান্য রাতে এতে ‘টাল’ না মানলেও আজ যেন টাল নাই বলেই মনে হচ্ছে। ‘মোচরা মুচরি’ শুরু হল। শরীর ঘেমে যাচ্ছে। দাদিকে বললাম লেপ কাথা সরাও। কি হইছে বলেই দাদি গায়ে হাত দিলেন। তারপর বিছানা ছেড়ে বাইরে গেলেন। এদিকে আমি ঘেমেই চলেছি, আর পেটটা বড় হচ্ছেই। ‘চান্দোরে’ ‘চুলোর পাড়ে’ মনে হল দাদি কি যেন করছেন।
কিছুক্ষণপর দাদি গ্লাসে করে গরম-তরল নিয়ে এলেন। বললেন, ‘খা’। একটু একটু করে খেতে থাকলাম। মিনিট দশেক পর থেকে শুরু হলো জোরে জোরে ‘পুতপুত’ শব্দে ‘পাতদেয়া’। দাদা গরম স্বরে বললেন, দিনভরে ‘ভাজাপুরা’ আর ‘হাবিজাবি’ খায়ে ‘বদহজম’ বানাইছে; এহন আবার ‘ভরভর করে’ পাততেছে। আস্তে আস্তে কমতে থাকলো আমার পেট। প্রকৃত বদহজম বা গ্যাসের কারনেই পেট ফুলেছিল। আদা, লবঙ্গসমেত গরম জল খেয়ে সে যাত্রায় রক্ষা
তবে ওই যে ঘুম ভেঙ্গেছে;
সেদিন আর ঘুম আসার সুযোগ হয়নি; কেননা পেট কমতে কমতে সূর্যের আলো উঠোনে চলে আসে …
পাঁচ.
গনিত পরীক্ষা, অংক কমন পড়া নিয়ে কোন টেনশন নাই। ইতঃমধ্যে বইয়ের সকল অংক তিন বার রিভিশন হয়েছে। জ্যামিতি এমনিতেই কম বুঝি। কমন পড়লে পড়ুক; না পড়লে না পড়ুক।
ঘুমটা ‘বিয়ানে’ই ভেঙ্গেছে। ‘নাওয়া-পোশাক পিন্দা-নাস্তা শেষ। রওনা হয়েছি পরীক্ষা দিতে কেন্দ্রের দিকে।
পরিচিত পথ; ‘হগল’দিনই এ পথে যাতায়াত; কিন্তু আজকে হাটছি তো হাটছিই; পথ আর শেষ হচ্ছে না। এদিকে সময়ও যায় যায়। প্রচন্ড টেনশন আর ভয়ে কেদে উঠলাম।
দাদী ঠেলা দিয়ে বললেন-‘এই তোরে ‘বোবে’ ধরছে। কি সপন দেখছা?’
তখনও আমার ভয় কাটেনি। তাকিয়ে দেখলাম আমি বিছানায় শোয়া।
স্বপ্ন বা বাস্তবতা;
যা-ই হোক; সে রাত্রে আর ঘুম আসেনি।
সকাল অবধি…
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
শেষ থেকে শুরু। আমি রজকিনী রামী,ধোপার বংশে জন্ম আমার।ঘাটে সখিদের সঙ্গে কাপড় কাচি। একাজটা আমি…..
মালঞ্চার পথে ভোরবেলা। সূর্য সবে উঠছিল। বৈশালী দূর থেকে দেখতে পেল,বুনিয়াদপুর বাসস্ট্যান্ডে বালুরঘাটের দিকে মুখ…..
আমার বাবা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন লড়াকু মনের মানুষ।শত অভাব অভিযোগেও তাকে কোনোদিন ভেঙ্গে…..