প্রক্সি
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
মীর হোসেন পরিবারের সাথে বসে সকালের নাস্তা করছে। ভাতের সাথে সেচি শাঁক। খুব আরাম করে খাচ্ছে তার তিন বছরের মেয়ে সালমা আর বউ হালিমাকে নিয়ে। আবার কখন ভাত রান্না হবে আপাতত জানা নাই মীর হোসেনের! শেষ চালটুকু দিয়েই রান্না হয়েছে সকালের ভাত। খেতে গিয়ে মীর হোসেন কিছু ভাত উঠিয়ে রাখে মেয়ের জন্য- অন্তত সন্ধ্যায় যেন কিছু একটা খেয়ে শুয়ে যেতে পারে। চরের এই দিকটায় দুয়েকটা সবজি ছাড়া কিছুই হয় না। চর পেরিয়ে প্রতিদিন তাকে কাজ খুঁজতে যেতে হয় মাইল চারেক দূরের বাজারটায়। ভাদ্র মাসের এই সময়টা কাজের খুব আকাল তাই বিগত সপ্তাহ দুই ধরে বদলি কাজেরও কোন সন্ধান পায়নি মীর হোসেন। বাজার পৌঁছুতে আরও মাইলখানেক। তৃষ্ণায় জীবন যায় যায়- একটা স্কুলের ভেতর ঢুকে টিউবওয়েল খুঁজতে থাকে মীর হোসেন। স্কুলের ভেতর এই অচেনা লোকটিকে দেখে বেরিয়ে আসে স্কুলের প্রিন্সিপাল। জানতে চায় হেতু। কাজের সন্ধানে সে রোজ বাজারে যায় শুনে প্রিন্সিপাল ঐদিন কাজ না পেলে পরেরদিন তার সাথে দেখা করতে বলে। বাজারে আজ একদম মানুষ কম। আজও হয়তো কাজ পাওয়া যাবে না, বেলা প্রায় দ্বিপ্রহর। আযান হচ্ছে। মসজিদে ঢুকে ওযু শেষে ঢকঢক করে পানি গিলে মীর হোসেন। নামাজ শেষে মুনাজাত ধরে- কান্না জড়ানো চোখে কি যেন এক অভিযোগ! মসজিদের গেটের বাইরে বসে বিশ্রাম নেয় মীর। এমন সময় প্রিন্সিপাল মসজিদ থেকে বের হয়ে দেখতে পায় তাকে-জিজ্ঞেস করে কাজ পেয়েছে কিনা। না আজও কাজ মিললো না কপালে। কি খাবে আজ জানতে চাইলে মীর জানায় জানে না সে।
হালিমা উঠানের মাঝটায় সালমাকে কোলে নিয়ে গান গাইছে। জোছনায় ধবধবে করছে চর। হালিমার চোখ সেই উঠানের বাইরের রাস্তা ধরে পৌঁছে যায় চরে। আটকে থাকে কারও ফিরবার প্রত্যাশায়। উৎকণ্ঠায় ঘুম পাড়ানি গানের সুরেও করুণ রস লেগে থাকে। সালমা ঘুমিয়ে আছে। এশার আযান বাজতে চললো- সালমাকে ঘরে শুইয়ে দিয়ে যেই উঠবে তখন দুয়ারে শব্দ শুনতে পায় হালিমা। হালিমার স্বপ্ন আজও অধরাই রয়ে যায়- খালি হাতে ফিরেছে মীর হোসেন। এশার নামাজ পড়ে এক গ্লাস পানি খেয়ে শুয়ে পড়ে মীর হোসেন। আজ হালিমার সাথে কোন কথা হয় না তার- হালিমাও কোন কিছু জিজ্ঞেস করবার সাহস পায় না।
প্রিন্সিপাল মীর হোসেনকে জানায় এক মাসের জন্য সে একটা কাজ দিতে পারবে তাকে। স্কুলের সীমানা ঘেঁষে ৪০ টা গাছ আছে ঐগুলার যত্ন নিতে হবে- এমপি সাহেব দিয়েছেন, তিনি চান পরেরবার এসে যেন দেখেন গাছগুলা ঠিকমতন বেড়ে উঠেছে। কাজটা খুব মনে ধরে তার। সে রাজি হয়ে যায় টাকার কথা জিজ্ঞেস না করেই। প্রিন্সিপাল তাকে ৫০০ টাকার একটা নোট দিয়ে বলেন এই নাও এডভান্স। প্রতি সপ্তাহে ৫০০ টাকা করে পাবে।
স্কুল ছুটি ২ টায়। মীর হোসেন সকাল সকাল এসে পানি দেয়, পানি দিতে দিতে প্রায় ১১ টার মতন বেজে যায়। এরপর মাঠের কোনায় একটা ফুলের বাগান সেইটার যত্ন নেয় সে। কয়েকটা পেঁপে গাছ লাগিয়েছে সে। বাগানটা এতদিন খুব অবহেলায় চোখে পড়েনি। যত্ন পেয়ে যেন বাগানটা জেগে উঠেছে। প্রিন্সিপাল মীর হোসেনের কাজে খুব খুশি।মীর হোসেনের স্বপ্ন বাগানটাকে বাড়ানো যায় কিনা; প্রিন্সিপাল তার এই উৎসাহের কথা জানতে পেরে ম্যানেজিং কমিটির কাছে সুপারিশ করে বাগানের মালির একটা পোস্ট তৈরি করা যায় কিনা। মীর হোসেন প্রিন্সিপালের এই চেষ্টায় খুবই আশান্বিত হয়। সীমানার গাছগুলা কয়েকসপ্তাহের মধ্যেই যেন প্রাণের আমেজ ফিরে পায়। ম্যানেজিং কমিটি রাজি হয়না স্কুলের এই অতিরিক্ত খরচের যোগান দিতে যদিও তারা খুশি মীর হোসেনের কাজে। গাছগুলার সাথে এক অপার্থিব সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে মীর হোসেন। তার খুব কষ্ট হয় এদের ছেড়ে চলে যেতে হবে ভেবে। প্রিন্সিপাল যখন কমিটির সিদ্ধান্ত মীর হোসেনকে জানায়- মীর হোসেনের চোখ এক অজানা উৎকণ্ঠায় আবার ছলছল করতে থাকে।
আর মাত্র দুদিন পরেই মীর হোসেনের কাজ নাই- আবার অজানায় ভর করে কোথায় ছুটে চলবে জানা নাই। স্কুলে ঢুকতেই এক সর্বনাশের ছাপ আঁচ করতে পায় সে আজ। গাছগুলাকে কে যেন উপড়ে দিয়েছে- মীর হোসেন বুঝতে পারে না কি করবে। দৌড়ে সে প্রিন্সিপালের রুমে যায়। প্রিন্সিপাল খুব চিন্তায় আছে- সকাল থেকে এমপি সাহেবের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে এখনও পায় নি। এমপি সাহেব সব শুনতে পেয়ে বললেন তিনি আরও গাছ পাঠিয়ে দিচ্ছেন আর একটা লোক ঠিক করতে বললেন যেন রাতের পাহারাটা মজবুত হয়। এখন প্রিন্সিপালের মুখে এক অদ্ভুত হাসি। বললো মীর হোসেন তোমার তো চাকরি পার্মানেন্ট হয়ে গেলো- এমপি সাহেব নতুন গাছ পাঠাচ্ছেন, এখন থেকে ওগুলার যত্ন নিতে হবে। বউ বাচ্চাকে নিয়ে এদিকে চলে এসো, রাতে তো এখন থেকে স্কুল পাহারার দায়িত্ব পড়ে গেলো তোমার ওপর। মীর হোসেনের খুশি হবার কথা ছিল, কিন্তু সে খুশি হতে পারে না। সে বুঝতে পারে- তার অসহায়ত্বের কারণেই আজ গাছগুলাকে বলি হতে হয়েছে। তার দারিদ্রতা গাছগুলাকে বাঁচতে দেয়নি। নিজের জীবনের প্রতি তার এই করুণা আগে কখনও হয়নি। গাছগুলা বেঁচে নাই- ভাবতেই রাজ্যের সমস্ত ভার এসে তাকে ভাসিয়ে নিচ্ছে স্বজনহারা আর্তনাদের। প্রিন্সিপাল সাহেব তার এই কান্নাভরা চোখ দেখে খানিকটা ভয় পেয়ে গেলেন- বললেন আজ যাও, কাল এসে সব আবার নতুন করে শুরু করতে হবে।
মীর হোসেন ফিরে আসে। উপড়ে যাওয়া গাছের মতন কেউ একজন তার জীবনটাকে উপড়ে দিয়েছে। চরের রুপালি হাওয়ায় তার মন উড়ে যায় কাল থেকে মহাকালে। সেই কালান্তরের ভেতর দিয়ে সে আর আগামীকাল দেখতে পায় না তার জীবনে।
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..