রজকিনী রামি
শেষ থেকে শুরু। আমি রজকিনী রামী,ধোপার বংশে জন্ম আমার।ঘাটে সখিদের সঙ্গে কাপড় কাচি। একাজটা আমি…..
“নিরালা” বৃদ্ধাশ্রমের দোতলার একদম শেষ ঘরটা বিদিশা আন্টির। ঘরের কোণে একটা বই ভর্তি আলমারি। তার ভিতরে রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে গীতা বাইবেল এমনকি টেনিদা ফেলুদা টিনটিনও উঁকি দিচ্ছে। আন্টির চৌকির সামনে একটা চেয়ারে মাথা নিচু করে বসে আছে দেবাংশু। মায়ের খবরটা শুনে চৌকির ওপর বসে নীরবে চোখের জল মুছে চলেছে আন্টি। কিছুক্ষণ পরে একটু ধাতস্থ হয়ে বলল,
“ওরা যে এরকম একটা কাণ্ড বাধাবে আমরা কেউ বুঝতেই পারিনি রে।”
“ওরা মানে?”
অবাক হয়ে জানতে চাইলো দেবাংশু।
“কিছু না রে বাবু, দেখিস ভগবান যখন পিয়ালিকে বাঁচিয়েছেন তখন নিশ্চয়ই ও ভালো হয়ে যাবে। আমি কাল থেকে হাসপাতালে থাকবো। আর হ্যাঁ, কিছু দরকার হলে অবশ্যই জানাস। আমার যতোটা সামর্থ্য করবো।”
“হ্যাঁ, বলবো। মা তো এখন আই সি ইউ তে, তুমি থাকলে তো খুব ভালো হয়। ঠিক আছে, আমি এখন আসি গো আন্টি।”
“একটু বোস, বোস।”
এই কথা বলে আন্টি ঘরের বাইরে গেল। মিনিট খানেকের মধ্যেই একটা বাটিতে কলা মুড়ি চিনি আর দুটো প্যাঁড়া সন্দেশ নিয়ে এসে দেবাংশুর হাতে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“খাওয়া দাওয়া ঠিক করে করিস বাবু, তোকে তো সুস্থ থাকতে হবে।”
দেবাংশু মাথা নিচু করে চোখের জল আটকালো তারপর কোন উত্তর না দিয়ে খাওয়া শুরু করলো। সত্যিই সকাল থেকে তার পেটে কিছু পড়েনি।
আন্টির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে প্রয়োজনীয় কিছু কাজ সেরে যখন হাসপাতালে ফিরে এলো তখন বিকেলের ভিজিটিং আওয়ার্স শুরু হয়ে গেছে। আই সি ইউ রুমের সামনে অনুপমা আন্টি আর সঙ্গীতা আন্টি দেবাংশুর আসার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিদিনের মতো প্রানের বান্ধবীর সাথে ফোনে কথা বলতে গিয়েই দেবাংশুর কাছে গতকালের ঘটনাটা সবাই জানতে পেরেছে। বেডে শুয়ে থাকা মায়ের নিস্তেজ শরীরটা কাঁচের জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে। দুজনেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চোখ মুছছিলো। দেবাংশুকে দেখে বললেন,
“ধৈর্য ধর বাবু, পিয়ালি নিশ্চই ভালো হয়ে যাবে, কিছু দরকার হলে বলিস।”
দেবাংশু ঘাড় নেড়ে হ্যাঁ বললো। রাতে হাসপাতাল থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে একটা জলের বোতল নিয়ে দেবাংশু নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করলো। তারপর ফ্যান চালিয়ে ক্লান্ত বিধ্বস্ত শরীরে বিছানায় এলিয়ে পড়লো। হোম ডেলিভারির দেওয়া খাবার খেয়ে যথারীতি লাইট অফ করে নিজের রুমে শুয়ে পড়েছে বাবা। কাঁটায় কাঁটায় সকাল ছটায় ওঠা আর রাত নটায় ডিনার খাওয়া বাবার বহু পুরোনো অভ্যাস। মা হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে জেনেও লোকটার ঘড়ি ধরে খাওয়া দাওয়া বদলালো না! শুধু দু’বার ফোনে মায়ের কথা জানতে চেয়েছে! দেবাংশুর খেতে ইচ্ছে করছেনা এখন। মা কেন এমন কাজ করলো তা কিছুতেই বুঝতে পারছিলো না সে। রোজ ছ’ঘণ্টা ডেলি প্যাসেঞ্জারির হাত থেকে বাঁচতে বছর তিনেক হলো অফিসের সামনে বাসা ভাড়া নিয়েছে সে। গতকাল সকালেও ফোনে মা স্বাভাবিকভাবেই কথা বলেছিলো। তারপর দুপুরে কী এমন হলো যে এরকম একটা সিদ্ধান্ত নিতে হলো মাকে। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে মায়ের আলমারির দিকে চোখ পড়লো। ধীরে ধীরে উঠে গিয়ে আলমারিটা খুললো। কালো কভারের একটা খাতায় মাঝে মাঝে মা কিছু লিখে রাখতো। দেবাংশু জানতে চাইলে মা হেসে উত্তর দিত,
“সংসারের জমা সব খরচের হিসেব রাখিরে, তুই ওসব বুঝবি না।”
সংসারের হিসেবের খাতা দেখার কোন ইচ্ছে কখনো হয়নি তার, তাই কোনদিন দেখতেও চায়নি। আলমারি খুলে ওপরের তাকেই দেখতে পেল খাতাটাকে। খাতার পাতা ওল্টাতেই দেবাংশু বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল। পাতার পর পাতা জুড়ে শুধু গান লিখে রাখা আছে। রবীন্দ্র সংগীত থেকে শুরু করে পুরনো-নতুন বাংলা-হিন্দি যাবতীয় আধুনিক গান মা লিখে রেখেছে। মাকে কখনো গান গাইতে শোনেনি সে, অথচ মা এতো গান ভালবাসে! হতভম্ব দেবাংশু ডায়রীর পাতা উল্টে চললো।
ভিজিটিং আওয়ার্সে মায়ের বেডের সামনে বসে মায়ের হাতটা ধরে নিঃশব্দে চোখের জল ফেলছিলো দেবাংশু। মা চোখ বন্ধ করে চুপ করে শুয়ে আছে। চোখের কোল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল। বিদিশা আন্টি মায়ের চোখ মোছাতে মোছাতে বললো,
“পাগলী একটা, এরকম কাজ কখনো কেউ করে রে?”
সঙ্গীতা আন্টি আর অনুপমা আন্টি বললো,
“ছেলেটার কথা একবারও ভাবলি না! এই কদিন বেচারার অবস্থা চোখে দেখা যাচ্ছিল না।”
পুরো চারদিন পর চোখ মেলেছিল মা। একটু একটু বুঝতেও পারছিল। যদিও ঘুমের ওষুধ দিয়ে রাখা হয়েছিল। আজ অবস্থা স্থিতিশীল হতে জেনারেল বেডে দেওয়া হয়েছে। এই কদিন মায়ের তিন বান্ধবী মিলে পালা করে হাসপাতালে থেকেছে, রান্না করে এনে পরম মমতায় দেবাংশুর হাতে খাবারের বাটি ধরিয়ে দিয়েছে, দেবাংশু যে একা তা আন্টিরা বুঝতেই দেয়নি। বাবা নিয়ম করে দিনে দু’বার ফোন করে ডাক্তার কি বললো জানতে চেয়েছে আর আরো বেশি বেশি করে সকাল সন্ধ্যায় চণ্ডীপাঠ সহ ধূপ ধুনো দিয়ে ঘন্টা বাজিয়ে পুজো করেছে। মাঝে একদিন রাতে একটু তাড়াতাড়ি বাড়িতে এসে দেবাংশু দেখলো, পাড়ার মন্দিরের ঠাকুরমশায় বসে আছেন। অবাক হয়ে এতো রাতে ঠাকুর মশায়ের বসে থাকার কারণ জানতে চাইলো সে, বাবা বললো,
“তোমার মা তো আর পুজাপাঠ কিছু করেনা, গৃহস্থ বাড়িতে এত অনাচার কি সহ্য হয়? গ্রহদোষ লেগেছে বুঝলে গ্রহদোষ লেগেছে, ঠাকুর মশাইকে দিয়ে একটা গ্রহদোষ কাটানোর যজ্ঞ করবো বুঝলে।”
অসুস্থ মানুষের পাশে বসে তার মনের জোর বাড়ানোর থেকে মাটির পুতুলের পুজোপাঠকে যে বেশি গুরুত্ব দেয় তার সাথে কথা বলার কোন ইচ্ছে হয়নি দেবাংশুর তাই পাশ কাটিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলো। এই কদিনে পাড়া প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজন যারা খোঁজ খবর নিতে এসেছে তারা মায়ের শারীরিক সুস্থতার চেয়েও বেশি কৌতুহল দেখিয়েছে মায়ের মানসিক সুস্থতা নিয়ে। অনেকে আবার ইনিয়ে বিনিয়ে পরকীয়ার গন্ধও শুঁকতে চেয়েছে। দেবাংশু সবকিছুকেই পাশ কাটিয়ে গেছে। কোন কিছুর উত্তর দিতে তার ইচ্ছে হয়নি।
ছোট বেলা থেকেই পড়াশোনা ও কথাবার্তায় চৌখশ দেবাংশু, আই বি এম এ চাকরিটাও সহজেই পেয়ে গিয়েছিল। প্রতিদিন সেই সকাল সাতটায় বেরোত আর ফিরতে ফিরতে নটা বেজে যেত, সত্যিই বড় ক্লান্ত হয়ে পড়তো। মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে পড়তো। পিয়ালিই তখন বলেছিল,
“অফিসের কাছাকাছি কোন মেস টেস নেইরে বাবু, তাহলে তোর খানিকটা সুবিধা হতো, শনিবার বাড়ি চলে আসতি আবার সোমবার ফিরে যেতি।”
অবশেষে বছর তিনেক আগে সেরকমই একটা ব্যবস্থা করে দেবাংশু। যদিও সকাল সন্ধ্যা মা কে ভিডিও কল করতে কখনো ভুলতোনা। তাছাড়া যখন তখন টুকটাক ফোনে কথা তো বলতোই। কিন্তু কেমন যেন একটা নিঃসঙ্গতা পিয়ালীকে ঘিরে ধরতে শুরু করলো। স্বামী নামক মানুষটি প্রয়োজনের গণ্ডি ডিঙিয়ে প্রিয়জন হয়ে উঠতে চায়নি কোন দিন। অবসরের পর সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘড়ি ধরে নিয়ম মাফিক খাওয়া দাওয়া আর ঠাকুর সেবা নিয়েই ব্যস্ত থাকে। সময়ে বাধা জীবন যাপনের কারণে পিয়ালী কোন দিন বাইরে একটু ঘুরতে বা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে যেতেও পারেনি, বাইরে গেলে একটু দেরি তো হবেই। ছেলে চাকরি পাওয়ার পর অবশ্য ছেলের জেদেই হোম ডেলিভারি ঠিক করে দিয়ে মা বেটা মিলে কাছে পিঠে বেশ কিছু জায়গায় ঘুরে এসেছে। চার প্রাণের বান্ধবীর সাথে উইক এন্ডে আড্ডাও দিয়েছে। এবারও পুজোর ছুটিতে ঘুরতে যাওয়া হবে তা আগে থেকেই ঠিক হয়ে আছে। অবশ্যই এই সব নিয়ে ছেলের বাপের অসন্তোষের শেষ ছিল না, কিন্তু মা আর ছেলে এই ব্যাপারে “আমি কানে দিয়েছি তুলো আর পিঠে বেঁধেছি কুলো” মার্কা মানসিকতা নিয়ে থাকা অভ্যাস করে ফেলেছে। তবুও আজকাল কেমন যেন একা লাগে। ভীষন ইচ্ছে করে কেউ একটু জড়িয়ে পাশে বসুক। একটু আদরের ছোঁয়া একটু মমতার স্পর্শ পেতে ভারি ইচ্ছে করে। অথচ শৈবালের সেসব হুঁশ কোনদিনই ছিল না। এমনকি যৌনতাও কোন দিন শৈবালের চাহিদা আর মেজাজের গণ্ডী ডিঙোতে পারেনি। পিয়ালির খুব কান্না পায়। দলা পাকানো অসহায় চিৎকার ঠেলে বেরিয়ে আসতে চায়। শাওয়ারের তলায় ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে সে। অবসাদের চোরা বালিতে ডুবতে থাকে। বাথরুমের দরজায় টোকা পড়ে,
“একটা তো বেজে গেছে, তোমার হলো? বয়স হয়েছে, সময় মতো খাওয়া দাওয়া না করলে সবকটা মিলে অসুখে ভুগবো যে। কি যে করে আজকাল, অফিস নেই ইস্কুল নেই তাও সময়ে খেতে পাইনা।”
ডাইনিং টেবিলে বসে গজগজ করতে থাকে শৈবাল। পিয়ালি শুনতে চায় না। ধীরে সুস্থে বাথরুম থেকে বেরিয়ে খাবার সাজিয়ে দেয় টেবিলে। সামনে ভাতের হাঁড়িতে হাতা দেওয়া থাকে। ভাত লাগলে শৈবাল নিয়ে নেয় তাই খাবার দিয়ে পিয়ালি সরে আসে। সামনে বসে খাওয়ানোর ইচ্ছেটা শেষ হয়ে গেছে। সরে আসতে আসতে শুনতে পায়,
“রান্নাবান্নায় তো মন নেই আজকাল, কি যে রাঁধে, খেতে হয় তাই খাই।”
পিয়ালি ঘরে ঢুকে দরজা ভেজিয়ে দেয়। ঢাকা চাপা ফুটন্ত ভাতের হাঁড়ির মতো ফোঁসফোঁস করে কান্না বেরিয়ে আসে। সেদিনও কান্না পেয়েছিলো তার। দরজা ভেজিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলো পিয়ালি, চুল আঁচড়ায়নি, সিঁদুর পরেনি, শুধুই ফোঁপাচ্ছিলো। কান্নায় ভিজে গিয়েছিলো নাইটি তবুও কান্না থামেনি। শৈবাল খাওয়া শেষ করে হাত ধুয়ে পাশের ঘরে ঘুমোতে গেলো, এঁটো থালা টেবিলে পড়ে রইলো, ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে চললো তবুও কান্না থামলো না। অনুশ্রী ফোন করলো, পিয়ালি কান্নাভেজা গলায় বলল,
“হ্যাঁ, বল রে।”
অনুশ্রী কিছু বললো না, তাকেও যেন কান্নায় ধরেছে, ফোন কানে ধরে সেও কেঁদে চললো। অনুশ্রীর দুই মেয়ে, বড়োটি চাকরি করে, ছোটটি এম বি এ পড়ে, হোস্টেলে থাকে। বড়ো মেয়ে বছর খানেকের জন্য হংকং গেছে, কোম্পানি থেকে ট্রেনিং এ পাঠিয়েছে। মেয়ে বলে গেছে,
“কষ্ট করে একটা বছর কাটিয়ে দাও মা, ট্রেনিং কমপ্লিট হলেই কোম্পানির কোয়ার্টার পাবো, তোমাকে নিয়ে যাবো। প্লিজ মা, মাত্র একটা বছর।”
বছরটা যেন শেষ হতে চায় না। সময় যেন প্রতিমুহূর্তে দাঁত নখ বিঁধিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে তাকে। অনুশ্রী বলে,
“বিদিশা সঙ্গীতা আর অনুপমা বেশ ভালোই আছে রে, তোর আর আমার বোধহয় মুক্তি নেই।”
“কি করবি বল সবার তো বাপের বাড়ি থাকে না, আর সবাই বিধবাও হয় না।”
“সত্যিই কি কোন উপায় নেই রে? বাচ্চাগুলোকে তো মানুষ করে দিয়েছি, আমাদের জীবনে তো কোন সাধ আহ্লাদ মিটলো না, ওরা ওদের মত আনন্দে বাঁচুক। নিজেদের বোঝা ওদের জীবনে চাপাতে ইচ্ছে করে না রে।”
পিয়ালি ভাবছিলো সত্যিই তো কোন উপায় নেই। সঙ্গীতার বরটা একটা অভদ্র ইতর ছিলো। মাঝে মাঝেই চড় চাপড় মারতো। একদিন মারধোর অতিরিক্ত পর্যায়ে পৌঁছলে সঙ্গীতা ছোট ছোট ছেলে মেয়ে দুটোকে নিয়ে বাপের বাড়িতে ফিরে এসেছিলো। পরে একটা ঘর ভাড়া নিয়ে সেখানে স্টেশনারি দোকান খুলেছিলো। এখন তো ছেলে মেয়ে দুজনেই স্বাবলম্বী। এদিকে বিদিশা বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। বাবা মা গত হওয়ার পর যাবতীয় সম্পত্তি বিক্রি করে বছর চারেক আগে স্বেচ্ছায় সংসার ছেড়ে “নিরালা” বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে উঠেছে। আর গত বছর অনুপমার স্বামী মারা যাওয়ার পর একটা ঝগড়াটে সন্দেহ বাতিক লোকের হাত থেকে অনু মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু পিয়ালি আর অনুশ্রীর কি উপায়? মাঝে মাঝে পাপবোধ গ্রাস করে। তারা কি কারোর মৃত্যু কামনা করছে! অন্যের মৃত্যু কামনা করার থেকে তো মরে যাওয়া ভালো।
প্রায় মাস খানেক পরে আজ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবে মা। জোর করেই একটা গাড়িতে আগেই বাবাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিলো দেবাংশু। বাবা বেরোনোর পরে মায়ের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র চারটে ব্যাগে ভরে অন্য একটা গাড়ি করে হাসপাতালে পৌঁছালো দেবাংশু। গাড়িটাকে অপেক্ষা করতে বলে হাসপাতালের হিসেবপত্র মিটিয়ে বাবা আর মা কে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এলো, তারপর বাবাকে অবাক করে দিয়ে বলে উঠলো,
“বাবা, তুমি ওই গাড়িটা করেই বাড়ি ফিরে যাও। রান্নার লোক তো ঠিক করে দিয়েছি, ওকে দিয়েই চালিয়ে নেবে। মা আমার সাথে যাবে।”
হতবাক বাবার কণ্ঠস্বর কানে এলো,
“মানে! কি বলতে চাইছো?”
উত্তর দিতে ইচ্ছে করলো না তার।
মাকে নিয়ে গাড়িতে বসে কালো কভারের খাতাটা মায়ের হাতে দিয়ে মাকে জড়িয়ে বললো,
“প্লিজ মা, আর এমন কাজ কখনো কোরোনা, প্লিজ।”
চোখ বন্ধ করে খাতাটা আঁকড়ে ধরে দেবাংশুর বুকে এলিয়ে পড়লো মা। ছেলেকে আঁকড়ে ধরে মা কাঁদলো, চোখের কোল বেয়ে ঝরে পড়লো ফোঁটা ফোঁটা মুক্ত আবেগ। বাইরে স্থবিরের মত দাঁড়িয়ে রইল শৈবাল। গাড়ি চলতে শুরু করলো। মায়ের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে দেবাংশুর মনে পড়লো সেদিনের কথা। খাতার পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে একদম শেষ পাতায় এসে চমকে উঠেছিলো সে। পরপর চারটে লাইন লেখা!
সঙ্গীতা মুক্তি পেলো আজ।
তার দুলাইন পরে লেখা, বিদিশা মুক্তি পেলো আজ।
আরোও চারলাইন পরে লেখা, অনুপমা মুক্তি পেলো আজ।
একেবারে পাতার শেষ লাইনে লেখা, আমি আর অনুশ্রী কাল মুক্তি পাবো।
শেষ লাইনটা পড়ে সেদিন চমকে উঠেছিলো দেবাংশু। স্মৃতিতে ঝাকুনি দিয়ে দেবাংশুর মনে করেছিলো, সঙ্গীতা আন্টির বাপের বাড়ি ফিরে আসার কথা, বিদিশা আন্টির বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে ওঠার কথা আর অনুপমা আন্টির স্বামী মারা যাওয়ার কথা। কিন্তু অনুশ্রী আন্টি? তাড়াতাড়ি মায়ের ফোন ঘেঁটে তখনি অনুশ্রী আন্টিকে ফোন করার পর স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলো দেবাংশু। আন্টিও মায়ের মত একগাদা কড়া ডোজের ঘুমের ওষুধ খেয়ে চির ঘুমের দেশে পাড়ি দিয়েছেন। দেবাংশুর ভাগ্য ভালো, সেদিন বীনা মাসি দুপুরে তাড়াতাড়ি কাজ করতে এসেছিলো। বাবা দরজা খুলে দেওয়ার পর ঘরে ঢুকে বারবার ডেকেও মায়ের কোন সাড়া না পেয়ে কাছে গিয়ে দেখে মায়ের মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরোচ্ছে। বীনা মাসির চিৎকার চেঁচামেচিতে ক্লাবের ছেলেদের সাহায্যে সাথে সাথেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো বলেই মায়ের প্রানটা এখনো ধুকধুক করে বেঁচে আছে।
শ্বেতা সরকার
শেষ থেকে শুরু। আমি রজকিনী রামী,ধোপার বংশে জন্ম আমার।ঘাটে সখিদের সঙ্গে কাপড় কাচি। একাজটা আমি…..
মালঞ্চার পথে ভোরবেলা। সূর্য সবে উঠছিল। বৈশালী দূর থেকে দেখতে পেল,বুনিয়াদপুর বাসস্ট্যান্ডে বালুরঘাটের দিকে মুখ…..
আমার বাবা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন লড়াকু মনের মানুষ।শত অভাব অভিযোগেও তাকে কোনোদিন ভেঙ্গে…..
ভার্সিটির বাস ধরতে হয় আমাকে খুব সকালে। বাড়ি থেকে একটু হেঁটেই রিকসা। তারপর বাস। হাঁটা…..