গোনাহগারের ডাকবাক্স

মায়িশা তাসনিম ইসলাম
কবিতা
Bengali
গোনাহগারের ডাকবাক্স

দ্যা অ্যাগনস্টিক ২- গোনাহগারের ডাকবাক্স

কিছুটা নাস্তিক হলেও বিশ্বাস করে ফেলি চাঁদের দ্বিখণ্ডিত হওয়ার ইতিহাস
চাঁদের মতো নির্দোষ বিশ্বাসও দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায় মাঝে মাঝে
আঙুলের ডগায় ভীতু অক্ষরগুলো গোনাহগারের ডাকবাক্সে উঁকি মারে!
আবার আস্তিক হলে চাঁদের রূপ আমাকে কবি বানাতে পারে না।

ঈশ্বর না পাওয়া অসুখের উচ্ছিষ্ট নীলে শহীদের ঠোঁটে বাজে শানাই
মুনকিরনাকিরের আগেই জীবিতরা হাজির হয় হাবিয়ার পয়গামে
সাতরকম আগুনে ঝলসে যায় একরোখা বিধর্মী মাংস
দোজখের সাত দরজার তদারকি করতে গেলে মুমিনদের হাতে ফোসকা পড়ে না।

পূর্ণিমার আটচোখা রাতগুলোতে বেহেশত কল্পনা করতে করতে যখন ঘুম চলে আসে
কিছু নেড়িকুকুর ঈশ্বরহীন মানুষদের হাড় মুখে নিয়ে ছুটে আসে উঠানে
একজন নাস্তিকের শরীর কয় টুকরো করলে ধর্ম অক্ষত থাকে জানা নেই
আমার আস্তিক হাতগুলো দিয়ে নিজের শরীরের টুকরো গোনার অপেক্ষায় আছি।

 

দ্যা অ্যাগনস্টিক ৩- কবির সিন্দুক

কোনো এক ধার্মিক সমুদ্রের উপর বলপ্রয়োগে হয়ে যাচ্ছে শব্দসাধক
ইন্দ্রিয়ের বেপর্দায় সে যখন উত্তরাধুনিক দেবতা–
তার মুসলিম প্রেমিকাকে সে সাহসের সাথে জানালো
“আমার সিন্দুক থেকে উড়ে গেছে আখিরাতের শহর এবং অলিগলি
তুমি কি চাও? তোমার চোখের জান্নাতুল ফেরদৌসে বিশ্বাসী বিধর্মী প্রেমিক?
নাকি মৃত হুরের মাংসল বিশ্বাসের কামুকতায় ডুবে থাকা কাগুজে অর্ধাঙ্গ?”

সে কবি কারো কাছে আজ নাস্তিক
আর নাস্তিকদের জন্য মানবিক ঈশ্বর
তার প্রেমিকা মা হওয়ার পরেও জরায়ুতে প্রশ্ন থেকে যায়
কারণ কবির সিন্দুকে অবশিষ্ট আয়াত-অক্ষরে মানুষ তৈরি হয় মাতৃহীন।

 

দ্যা অ্যাগনস্টিক ৪ – বলয়ত্যাগের পরিণাম

কেউই আমরা কাউকে ছাড়া নিঃসঙ্গ নই
তবু পৃথিবীকে জেনে রাখা বলয়ত্যাগী বুকে মাথা ঠেকলেই বারংবার নিঃস্ব হয় পৃথিবীও

চোখ থেকে চিবুকে অশ্রু হেঁটে যাওয়ার সময় এসেছে, শুনো হে
ওরকম বিলুপ্তপ্রায় প্রবাহ পাইনি কখনো প্রার্থনার পরিসংখ্যানে

জননীর আঙুল তার সন্তানের চামড়ার চেয়ে তসবীহতে বেশি পবিত্র ছিলো
এমন বেদনায় নিজেকে পাঁচ ওয়াক্তের গণনায় নিয়ে গেছি নিঃসন্তান দেবীর দরবারে

পৃথিবীকে জেনে ফেলার পরিণামে কুরুক্ষেত্র বুকের ব্যান্ডেজ করে যেও দান
যুদ্ধের আগের নরম স্নানে, কপাল ভেজাবো না এমনই অঙ্গীকার

আমাদের বায়োগ্রাফি ঠিক ঠিক জিকির করবে তরবারি তলে স্বর্গের অন্ধত্ব
বলয়ের ঝিলকানি আলোয় যে মরণ ঢলে পড়ে অভিলাষ ও শিল্পের চৌকাঠে

জিকির করবে…
জিকির করবে…

চোখ থেকে চিবুকে অশ্রু হেঁটে যাওয়ার সময় এসেছে, শুনো হে
অপেক্ষা করছি এখন, রক্তে আমাদের ভেসে যাবে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ জাহান্নাম

 

বলয়গ্রাস ৭

প্রিয়তমা অন্ধকার
দেহতত্ত্ব আমাদের শেখায়নি চামড়ার নীচে দীর্ঘশ্বাস কেমন ঘোড়ার মত দৌড়ায়
হৃদয়ের বাহুতে রক্তঝরায় যে উল্কি, জীবন থেকে নিয়ে যায় পুরাকীর্তির বিন্যাস।

সিঁথির সিঁদুর যেনো অধিকারের কাছে নিয়ে যাওয়া রেড কার্পেট!
হাঁটার আগে কপালের বুকে কপাল ঘেঁষে কয়জনে?

‘কবুল’-এ বৈধতা পেয়ে যায় ঘোমটামুখীর ‘গার্ড’
দেনমোহরে কেনা জরায়ুতে জন্ম নিলে ‘বাস্টার্ড’ শুনতে হয় না।

প্রিয়তমা অন্ধকার
‘প্রেমিক’ পদবী পাওয়ার পর থেকে কালো কালো দুপুরের অজগর ঢুকে পড়ছে আমার রাতমাতাল গর্তে!
‘লম্পট’ বলো, তোমার চোখের মতো পোড়া তোষকে যেনো ঘুমোতে পারি নিশ্চিন্তে।

 

বলয়গ্রাস ১২

প্রিয়তমা অন্ধকার
বিপ্লব মরে যায় জন্মঋণের নির্দোষ অভিশাপে
আমি বড়শি ভেঙে ফেলে ঝাপ দেই বাবার রিং পরা হৃদপিণ্ডে
কারাবন্দী হৃদয় ধর্মান্ধের চোখের মত ফুটো হয়ে গেছে শতবর্ষ হলো
অথচ মা গালে চুমু দিয়ে বলছে, এনজিওগ্রামে কোনো ব্লক ধরা পড়েনি।

প্রতিজ্ঞা যখন ব্যথাক্লিষ্ট স্পাইনের মত পরাজিত দেখায় কষ্টের এক্সরে রিপোর্টে
চোখ বন্ধ করে মাথাটা ফের ঢুকিয়ে দেই– এম.আর.আই মেশিনের আধুনিক বোতলে।
আর প্রতিটি বোতল পরীক্ষার বিশদ অক্ষরগুলো কীটনাশক জলে ঢালতে গেলেই-
ইন্দ্রিয়ের বুদবুদ ফেটে বেরোয় আরো শত শত ইন্দ্রিয়চোষা কীট।

প্রিয়তমা অন্ধকার
আমার সাতাশটা দরজায় যে ছায়া তাকে আমি ভালোবাসতে পারিনি
ওসব ছায়া আমার শৈশবের মতো কুৎসিত, আমার কালো চামড়ার মতো কুৎসিত
সাতাশটা দরজা খুলে ফেলে তুমি ছায়া
এবং কালো চামড়ার মাঝে রেখে যেও প্রতিজ্ঞা

যে প্রতিজ্ঞায় জন্মঋণের চাবুক চিনবে না কোনো বিপ্লবী পিঠের রক্ত-ঘূর্ণি।

 

মোমবাতি-বিয়োগ

সরে গেলে প্রখর বিলবোর্ড
সন্ধ্যার মুখাপেক্ষী এ ঘরে
জোনাকিপোকার নামতা মনে পড়ে না

অট্টালিকা ও ডায়েরির লজিকে
বিয়োগ হয়ে যাচ্ছে মোমবাতি

নখ কাটতে গেলে দেখা যায়
ভালোবাসার বিপরীতের স্লোগান ও জীবাণুর যোগফল

এয়ার কন্ডিশনার
কিংবা সস্তা সিলিং ফ্যান
দুটোর নীচেই অভিন্ন তাপমাত্রার চোখ

সোডিয়াম ছায়ার আস্তিনে
লুকোনো থাকে মারিজুয়ানার চলন্ত ব্রীজ

আজকের চাঁদের মতো এ শহর
দুই-তৃতীয়াংশ ডুবে গেছে
স্ট্যাটাস এবং ভুতুড়ে ডিপ্রেশনে

মায়িশা তাসনিম ইসলাম। কবি ও শিক্ষার্থী। জন্ম ও বাস ঢাকা শহরে। অনেকের মতো ছোটবেলা থেকে লেখালিখি শুরু করেননি, তবে দেরিতে হলেও তিনি বিশ্বাস করা শুরু করেছেন কবিতাই প্রথম উপাসনা এবং শব্দের পাঁপড়িতে ফোটা বোধের ফুল। তিনি এটাও বিশ্বাস করেন কলমের...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..

ফ্রেম

ফ্রেম

দেবী না পরিণীতা রাতটা একা থাকে এবং নিঃসঙ্গ অন্ধকার মানে রাত; তাহলে অন্ধকার নিজেও একা…..