গোলাপসুন্দরী

পল্লববরন পাল
কবিতা
Bengali
গোলাপসুন্দরী

হতভাগা তেরো

প্রত্যেক বিদগ্ধ সঙ্গমাড্ডা শেষে আমার চোখও শিথিল হয়ে আসে
সুখবোধ বুঁদ বেগে ছড়িয়ে পড়ে এ শিরা থেকে হৃদমস্তিষ্ক কোষান্তরে
যেন দুরন্ত ট্রেন নিঃশব্দে পার হয়ে যায় একের পর এক ডিংডংসেতু
তারপর নিজেরই নাকগর্জন অকস্মাৎ ঝিম ধ্যানের কাঁচগেলাস ভাঙে
চোখ খুলে দেখি তোমার ঠায়দৃষ্টি লিখে যাচ্ছে হাড়হিম মৃত্যুর চতুর্দশপদ
মধ্যবর্তী এই হারানো সময়টাকেই ডাক্তারি পরিভাষায় বলে ‘ভেন্টিলেশন’

প্রতিটি সঙ্গমালোর পিছনে অন্ধকার ছায়া হয়ে কাঁপতে থাকে মৃদু পাপবোধ
যে পাপ আমাকে ফের উঠে দাঁড় করায় আর পৌঁছে দেয় লিফ্‌টের দরজায়
উন্মাদ নেশাগন্ধ – আমারই জন্য যেন অজান্তে ফেলে যাওয়া রমণীয় চিঠি
বদ্ধ ঘরে একা আমি ঈশ্বরচন্দ্রের মতো আলো কাচে সংখ্যাপাঠ সেরে নিই

এক দুই তিন চার … এগারো বারো চোদ্দ
তেরো বাদ – ভেন্টিলেশন – হারানো সময়

মুহুর্মুহু এতো বহুতল, কারো কিন্তু তেরোতলা নেই
তবুও পৃথিবী থেকে আজও দুর্ভাগ্য নিশ্চিহ্ন হলোনা

শুধু ক্যালেণ্ডার নয়, সাংখ্যপৃথিবী থেকে
হতভাগা এই ‘তেরো’ সংখ্যাটির অবিলম্বে বহিষ্কার চাই।

গোলাপসুন্দরী

বহুদিন আগে থেকে ঘোষিত বলেই কোনোদিন
গোলাপকে আমি আর যেচে গিয়ে বলিনি সুন্দর
বরং যখন পথে খেলাচ্ছলে পুরুষ অহং
স্কুলযাত্রী মেয়েটির মুখে ছুঁড়ে মারলো অ্যাসিড
সচ্চরিত্র জনগণ বিনা পয়সার বিনোদন
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে সুন্দরের বিনাশ নাটক
এবং অনন্তর নাটকের দ্বিতীয় অধ্যায়ে
মেয়েটি দাঁড়ালো উঠে – অ্যাসিড আগুনশিখা সহ
এবং আরম্ভ হলো প্রলয়নাচন সহযোগে
টান মেরে উপড়ে নেওয়া পথচারী মুখের মুখোশ
সে এক অপূর্ব দৃশ্য – সুন্দরতম অভিঘাত
বীভৎস তার সেই মুখ থেকে নিঃশ্বাস দূরে
আমি গিয়ে সসম্ভ্রমে বাম হাতে বাড়িয়ে দিয়েছি
টকটকে রক্তলাল প্রতিবাদী একটি গোলাপ

বিশ্বযুদ্ধ

শরীরের সব বোধ একে একে সার্জিক্যাল আঘাতে আঘাতে
আগুনের গোলা হয়ে নিমেষে ছড়িয়ে যাচ্ছে বোধের শরীরে

কে কার পরিপূরক –কী সম্পর্ক দুজনের? শরীর ও বোধ?
অথচ এ ওকে ছাড়া অস্তিত্বই নিরর্থক – দুজনেই জানে
চূড়ান্ত মোক্ষ ছাড়া আর কী চাহিদা আছে এ যুদ্ধ গণিতে?
সুখের সংজ্ঞা জেনে অনুভব করেছে কি কেউ কোনোদিন
শ্বাসের সীমান্ত জুড়ে একাধিক ঈশ্বরের ঠোঁটের উল্লাস?
আসঙ্গ রমণপ্রিয় শরীরে বা বোধে নেই কোনো মৌলবাদ
ধর্ম নেই, জাত নেই, নেই শ্রেণীসংগ্রামের আর্থরাজনীতি
বরং প্রতিটা যুদ্ধে প্রত্যেক সীমান্তদেশে জ্বলে ওঠে আলো
শরীরের বোধ থেকে বোধের শরীর তক রক্তঢেউ ফুঁড়ে
একে একে জেগে ওঠে নিরাকার আদরের একএকটি মুখ
প্রত্যেকের নাম এক – অথবা পৃথক –
.                                                      খোদা গড্‌ বা বিধাতা

কেন যে এ পথে কেউ পৃথিবীর ক্রমমুক্তিস্বপ্ন দেখি না…

স্মৃতির সাথে, মনের সাথে

স্মৃতির সাথে কুস্তিতে                      রোজ হচ্ছি কুপোকাৎ
ও মন,তুই অভুক্ত নাকি                  বাড়বো থালায় ভাত?

স্মৃতির হাতে বেইজ্জতি                   হচ্ছি প্রতিদিন
ও মন, তোর কি হাত নিশপিশ?      অসুখটা প্রাচীন

স্মৃতির সঙ্গে চুমোচুমি                     হাতের ওপর হাত
ও মন, একটু সাবধানে থাক            সময়টা বজ্জাত

স্মৃতি এখন নিরুদ্দেশে                    ডাকবাক্স ফাঁকা
ও মন রে – তোর একটাই কাজ      লড়াই জারি  রাখা

পল্লববরন পাল। কবি। জন্ম ১৯শে এপ্রিল ১৯৫৮। হাওড়া শিবপুরের স্থায়ী বাসিন্দা। পেশায় আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞ আর্কিটেক্ট, নেশায় আপাদমস্তক কবি, গদ্যকার, চিত্রশিল্পী - সঙ্গীত নাটকে নিবেদিত। তিনি দীর্ঘদিন ভারতীয় গণনাট্য সংঘের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। প্রকাশিত বই: এ পর্যন্ত লেখকের ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে। যথা:...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..