গোলাম কবিরের ৫টি কবিতা

গোলাম কবির
কবিতা
Bengali
গোলাম কবিরের ৫টি কবিতা
নির্মল ভালোবাসার চাষ হোক

জল-বন্যায় ভাসে জনপদ

ধ্বসে পাহাড় মৃত্যু শতাধিক

শংকিত সভ্যতা মানবতা দরিদ্র মেহনতি জনতা!

ধর্ষণ-বন্যায় ধর্ষিত শিশু মাদ্রাসায় মসজিদে

নয়তো বিত্তবান গৃহে ধর্ষিতা অসহায় রমণী,

ঘুষের কিংবা  যৌতুকের টাকা দিতে না পেরে

রিক্সা শ্রমিক শামিমের নয়তো হতভাগ্য কোনো বধুর

কেরোসিনের আগুনে আত্মাহুতি,

ধর্ষিত কন্যার যন্ত্রণায়

চলন্ত ট্রেনের নিচে পিতা-কন্যার মর্মান্তিক মৃত্যু–

মৃত্যু–মৃত্যু–মৃত্যু!

পিচ পথে যানবাহনের সংঘর্ষে মৃত্যু শুভ বর-যাত্রায়,

জলপথে স্টিমার ডুবে মানবমৃত্যু-

আল্লার বাড়িতে কখনো পদপিষ্ট কখনো ক্রেন ধ্বসে

শত শত মেহমানের মৃত্যু কিংবা আল্লার পুরস্কার

জান্নাত-গামী বান্দার শরীরে বাঁধা বোমার আত্মঘাতি বিস্ফোরণে

অগুনতি মানুষের মৃত্যু,

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় অগনিত মৃত্যু,

দেশে দেশে যুদ্ধে মৃত্যু,

উন্নত দেশে লন্ডনে বহুতল ভবনে

আগুনের দুর্ঘটনায় নির্মম মৃত্যু:

মৃত্যু–মৃত্যু—মৃত্যু!

তরতাজা মানুষের মৃত্যু

নিষ্পাপ শিশুর মৃত্যু——–!

না,

না না না—–

মানুষের মৃত্যু এসব নয়-

এসবই হত্যা হন্তারক দু:সময়ের হাতে!

এসবই হত্যা হন্তারক সমাজের হাতে!

এসবই হত্যা হন্তারক রাষ্ট্রের হাতে!

এমন সময়কে এসো বদলাই-

এমন সমাজকে এসো বদলাই-

এমন রাষ্ট্রকে এসো বদলাই।

মৃত্যু নয় আর ভালোবাসা চাই,

হিংসা নয় আর মানবতা চাই,

রক্ত নয় আর ফুলেল বসন্ত চাই,

ঈদ বড়দিন পুজা পূর্ণিমা নয় আর

মানবতার মহামিলন চাই,

মানুষের মানবতা হোক জোছনার মতো সর্বত্র পরিব্যাপ্ত,

ভালোবাসা হোক শরতের মুক্ত মেঘরাশির মতো,

ইর্ষা ঘৃণা অহংবোধের হোক বিনাশ,

অকালমৃত্যু না হোক আর মানুষের হাতে মানুষের।

যুদ্ধাস্ত্র নয় আর

বন্দুক বিষ্ফোরক নয় আর

নয় আর কামান গোলার উৎপাদন;

চাষ হোক পুষ্পকাননে ফুলের

চাষ হোক লোকালয়ে সঙ্গীতের-

চাষ হোক জনপদে মানবতার-

মানুষের এই গ্রহে

চাষ হোক নির্মল ভালোবাসার।


কবিতা

তবেই তা ভাস্বর

যেমন রবি।কবিতার পালা শেষ

আমি নি:শেষ

যা কিছু লিখেছি তাতে

নেই সুবিশেষ!

করিনা দু:খ তবু

তোমরাতো আছো

লিখে যাও কবিতা

কবিতায় বাঁচো।

একটি কবিতা যদি

বাঁচায় মানব

মানবতা হবে চাষ

রবেনা দানব।

কবি মেরে কবিতার

দমেনিতো চাষ

কালে কালে কবি আনে

শান্তি প্রয়াস।

কবিতায় আছে সুখ

জেনো নিশ্চয়

কবিতাই নাশ করে

আঁধার আর ভয়।

নিস্বর্গ থেকে আসে

কবিতার ভাষা

কবিতা নাজেল হয়

নিয়ে শত আশা।

কবি আর কবিতা

কালের ছবি

বায়রন কিটস আর

সেলি নজরুল

লালন করিম শাহ

ছিল মশগুল।

তাহাদের কাব্যের

মানবিক ধারা

জগতকে করেছে

পাগল পারা!

কবিতা ও গানে কবি

দু:খ নাশে

পৃথিবী সুখের হয়

কবিতার চাষে।


ঈদ পুজা বড়দিন

হারানো ঐতিহ্যের ঝরা পালক  ঝরতে দেই কতো আর

স্মৃতির রঙিন পটে ভেসে ওঠে:

সেই সোনালী কৈশরে

ক্লান্ত মধ্যাহ্নে গ্রামের ডোবায় হাতিয়েছি স্বপ্ন রুপালী মাছের আঁশে

আমরা সবাই

আলম, বকুল, সেলিম, সম্ভু, সুপর্ণা, রহিম, দিপালী

সন্ধ্যায় পশ্চিম মাঠে গিয়ে জোড়ায় জোড়ায় চোখ রেখেছি সবাই,

হ্যা, সেবার দিপালীইতো দেখেছিলো প্রথম শাওয়ালের চাঁদ!

তারপর সেকি চিৎকার তার-

দেখেছি, চাঁদ দেখেছি– আমি দেখেছি–

গোধুলির রক্তিম আবিরে ঢেকে যেতো যখন সেই একফালি চাঁদ

তবেই আমরা ফিরতাম অন্দর বাড়িতে

আমাদের ধরা মাছের সুবাসিত ভাজা, চচ্চড়ি দিয়ে সবাই খেতাম গরম ধুঁয়া উড়ানো ভাত– মা পরম স্নেহে এগিয়ে দিতেন-

মা বলতেন-জলদি খেয়ে ঘুমাতে যাও, উঠতে হবে ভোরে

সম্ভু সুপর্ণা দিপালী তোমরাও যাও তোমাদের বাড়িতে

সাত সকালে আসতে হবেনা!

আহা ইদের দিনের সকালে

সোনাঝরা রোদেলা পথে মুলকির দিঘির পাড়ে বসতো ইদের মেলা

সবাই যেতাম বাবার সাথে জড়ো হতাম

আমাদের হাতে কাঁধে জায়নামাজ, গায়ে নতুন পাঞ্জাবী

হিন্দু খৃস্টান বন্ধুরাও পরে যেতো চকচকে নতুন পোশাক

অদূরে দাঁড়িয়ে দেখতো ওরা রঙিন সামিয়ানার নিচে ইদের জামাত!

দূর্গা পুজায় আমরা যেতাম পুজা মন্ডপে বিচিত্র আরতির নৃত্য দেখে হতাম পুলকিত

ওরা আমাদের হাতে তুলে দিতো কলাপাতা মোড়ানো প্রসাদের মোড়ক

ঢোল করতাল বাঁশির সুরে মুর্ছিত হতো পুজার উৎসব!

আহা, হারানো সেই বাঙালি দিনগুলো কি আবার যায়না ফেরানো!

বড়দিনে দিপালীদের বাড়িতে কতোইনা মজা হতো আমাদের সকলের

রসগোল্লা কেক আর পায়েসের সেই সাদ আবার কি আনা যায়না ফিরিয়ে!

বাংলা আর বাঙালির সেই ঐতিহ্য আবার আসিবে ফিরে

বাংলার মাঠ নদি ঘাট ঘিরে

জেগেছে প্রজন্ম বাঙালি

উঠেছে সূর্য আবার সকলেরেই দিতে আলো সমান শক্তিশালি।

আর নয় ভেদাভেদ

নয় কোনো মুর্তির অপমান

এবারের ইদে যেনো আনন্দ হয়

সকলের সমান সমান

হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খৃস্টান

আমরা বাঙালি, আমরা মানুষ

বাংলা আমাদের প্রাণ।

সকল ধর্মই হোক

আমাদের কাছে সমান মহিয়ান।


অসুর পুরের শিলাদিত্য!

এমন খবর শুনেও যদি

না লিখি কিছু

রাজাকারের ভুতগুলো সব

নিবে আমার পিছু।

আসাম থেকে শিলাদিত্য

বলছে বাংলাদেশ

একাত্তরেই দখল নিলে

হতো ভালোই বেশ!

মুসলমানে ভরে গেছে

রাজ্য নাকি তার

ওদের ঠেলে দিতে হবে

ওপার থেকে এপার!

বিজেপি যে ধর্ম কানা

জানা হলো আবার

ভবিষ্যতে আর গদিতে

নয়তো তাদের যাবার!


রূপার জন্য

ধর্ষণ নিয়ে আর

কতো পথ চলবে

বাংলার নারীদের

কপালটা জ্বলবে!

নারীদের জন্ম যে

আজন্ম পাপ তাই

তারাও মানুষ যে

নরের সে বোধ নাই!

নর সব বদ নয়

হয় কেউ কেউ বদ

পশুরও অধম সে

হোক যত বড় পদ!

হায়রে রূপা তুমি

নির্মম যাতনায়

ছেড়ে গেলে দুনিয়াটা

পশুদের বাসনায়!

আরো কত রূপা গেছে

কিছুইতো হলোনা

সরকার পুঁজিপতি

করে শুধু ছলনা!

মায়েদের বোনেদের

পারছিনা বাঁচাতে

আমরা সবাই যেন

বাঁধা আজ খাঁচাতে!

সমাজটা পঁচা গলা

দেহে তার যক্ষা

এ সমাজ পাল্টাও

নয় নেই রক্ষা।

পাল্টাতে সমাজটা

হতে হবে এক জোট

আর নয় লুটেরার

বাক্সতে দেয়া ভোট।

গোলাম কবির। কবি, সংবাদকর্মী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। ২৫ আগস্ট, ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ লক্ষীপুর জেলার দত্তপাড়া উত্তর মাগুরী গ্রামে জন্ম। বর্তমানে পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস বরোতে বসবাস। পিতা- মরহুম মোবারক আলী, মাতা- মরহুমা জয়গুণ ভানু। ৭ ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। বোন সবার বড়।...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..