ইমন কল্যাণ
পরিচ্ছেদ ৬ অনেক রাতে ফিরেছিল কল্যাণ ওরফে শহীদুল।গাড়িটা শেডে রাখার পর দু’বার হালকা করে মা…..
ছবি ০১
ভোর তখনো ‘সা’ শুরু করেনি। কালকা স্টেশনে রাতের শেষ নিঃশ্বাসের দীর্ঘ ‘তা’ও তখনো শুরু হয়নি। আমরা নেমে এলাম, সবাই চা চা করছে, শেষ রাতের ডাক এত অসহায়! কোথায় চা? এদিক ওদিক খুঁজে অবশেষে স্টেশনের বাইরে পাওয়া গেল। সেপ্টেম্বরের ঠান্ডা বেশ মনোরম, চা ও রাতজাগার উপাসনায় একটু কেতরে পড়েছে, তাতে কী? রঞ্জন বলল, তোফা! ধীমান ফিকি চায়ের(চিনি ছাড়া চা) স্বাদ নিতে নিতে দাড়ি গোঁফের ফাঁক দিয়ে গেয়ে উঠলো,
আমার পরাণ যাহা চায়
ফিকি চায় ফিকি চায়…
বালক বয়স আর নেই, সৌমিত্রকে দেখে বোঝা যাচ্ছে, সিরিয়াসলি চা খাচ্ছে ও। সক্রেটিস (ওর বিস্তৃত কপালে সক্রেটেসিয় একটা ব্যাপার আছে) থাকলে এ ভাবেই হয়ত! প্রণব দা ফোন লাগাচ্ছে অরুণ নামের সেই ছেলেটিকে যে আগামী বেশ কিছু দিন আমাদের সারথী হবে। আর বারীন দা বলছে, রঞ্জন একটা ভৈরোঁ ধর, রাত শালা যে যাচ্ছেই না।
আমি বললাম, বারীন দা রাত শালার চেয়ে রাত্রি শালী বলো, স্ত্রী লিঙ্গ ব’লে কথা!
কালকা স্টেশনের বাইরে ভোররাত তার প্রথম কুলকুল’টি রাখতেই অরুণ হাজির কোয়ালিস নিয়ে। পাঁচ কবিতাপ্রেমী আর একজন পাহাড়পিপাসু চ’ড়ে বসলাম শাদা মিলনসার রথটিতে, আপাততঃ শিমলা হয়ে সারাহান…
ভোর কিন্তু এল! কুয়াশায় আলোর চিরুনী চালিয়ে, আর আমরা দেখলাম প্রথম পাইনের আভাস, কুয়াশা যার গোড়ায় ময়াল হয়ে আছে! একঘণ্টা পার ইতিমধ্যে। এই জায়গারটার নাম কী জানি না, তবে একটা বাঁক নিঃসঙ্গতাকে হারিয়ে দিয়ে উধাও হয়ে গেছে! আমরা নেমে এলাম, ঠান্ডায়!
আবার চা! এই অবসরে শ্রীলাকে ফোন করলাম!
– আমি বলছি!
– পৌঁছে গেলে?
– আরে না…শিমলাই আসেনি এখনো…একটা অদ্ভুত জায়গায় চা খাচ্ছি আমরা… চারদিকে গাছ আর গাছ…
– মাছ… ওখানেও মাছ পেয়ে গেলে… আচ্ছা মেছো তো তুমি!
– আরে মাছ না… গাছ গাছ… হ্যালো হ্যালো…
সিগন্যাল অফ। গাছ আর মাছের কুহক পেরিয়ে আমরা আবার উঠে বসি কোয়ালিসে, এবার শিমলা!
ছবি ০২
আমি আবার আমার ‘আকা’ স্বপন রায়ের সঙ্গে, এই কবিসঙ্গের একটাই লাভ আমার মত অলোকলোকের সিটিজেনের যে আমায় কোন অনৈতিক কাজ করতে হয়না, কবিরা আমার প্রিভেসিতে উঁকিঝুঁকি তো মারেই না বরং আমার ভাবনাকে প্রশ্রয় দেয়।স্বপন আমায় এবার লেখার দায়িত্ব দিয়েছে!আমি জিগগেস করেছিলাম, কি লিখবো, কবিতা?
– না গদ্য
– গদ্য? কবির মুখে গদ্য! তোমার কবিতা কেউ পড়েনা আমি জানি, কিন্তু মেরে আকা, হতাশ হলে তো চলবে না।
– আরে না, আমি চাই আলাদীনের প্রদীপ দিয়ে তুমি এমন গদ্য লেখো যা কেবল দৈত্যরাই লিখতে পারে, তবে সাইজটা যেন তোমার মত না হয়!
আমি, প্রদীপকুমার। আলাদীনের নাম নিয়ে লেখা শুরু করে দেবো আজ থেকে, এই হিমাচলপ্রদেশ হল লোককথা, রূপকথা, লোকগান আর মিথের স্বর্গরাজ্য। আর যেখানে কবিদের দল যাচ্ছে কিছুদিন আগে অব্দি সে জায়গা প্রায় নিষিদ্ধই ছিল, কিন্নর, কিন্নরীদের দেশে তো হরেক কিসিমের কাহানি এ বাঁকে সে বাঁকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি বেশ উত্তেজনায় আছি এখন, দেখা যাক কতটা লেখা যায় এই ভ্রমণকল্পকে!
তবে আমার আকা স্বপন রায়কে এবার কয়েকটা টুকরো করতে হবে, আক্ষরিক টুকরো নয়, মানসিক…আমিই বানাবো সে সব….আমি নিজে যেমন বায়বীয় আমার কয়েকটুকরো ‘আকা’ও হবে সেরকমই কিছু, অবাস্তব কিন্তু মিথ্যে নয়…
শিমলার কিছুটা আগে পেঁয়াজখসা রোদ উঠলো। ছবি তোলার তাড়াহুড়ো। আর তুলতে তুলতেই আচমকা মেঘের ব্রাশে মুছে গেলো সেই রোদাঞ্জলি, আমরা হাসছি। এ এক আশ্চর্য যুগলসন্ধি, মেঘাব্রজে রোদ অবশ হয়ে গেলো ,শ্যামের এই ওয়ান টাচ প্লের সামনে রাধার রোদ-রং অসহায়, শ্যামের হাতে পাইনপাতার বাঁশি না হোক ট্র্যাম্পেট তো আছেই, বাজালো গুরু গুরু। বৃষ্টি শুরু হলো এরপর, তুমুল! আমাদের গাড়ি চড়াই ভাঙতে থাকে, ঢুকে যেতে থাকে সম্প্রসারণবাদী মেঘের সাম্রাজ্যে…
আমরা আসার কিছুদিন আগেই রামপুরের আগে ভয়াবহ মেঘ-বিস্ফোরণে সাঙ্ঘাতিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিলো ওই অঞ্চলের, মৃত্যু হয়েছিলো বহু মানুষের, স্বভাবতই আমাদের মনের চাপা আশঙ্কা এবার বেরিয়ে আসছে। এই কবিতার ট্রেকিং এর পথপ্রদর্শক পাহাড়ু প্রণবদাও চিন্তিত। এই চিন্তার সঙ্গে রয়েছে বারীনদাকে নিয়ে আমাদের উৎকণ্ঠা, প্রায় একবছর আগে বারীন দা কোমায় চলে গিয়েছিল। হিমালয়ের যে উচ্চতায় আমরা যাবো, ১৫০০০ ফুট, সেখানে বারীনদা মানিয়ে নিতে পারবে তো?
কুফরি, নারকান্ডা পেরিয়ে আমরা রামপুরে পৌঁছলাম। বুশাহার রাজ্যের স্মৃতি লেগে আছে এই ছোট্ট শহরে। ১০০৫ মিটার উঁচু এই শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে শতদ্রু, বেশ লাগছে তার জলকাতার দেখতে। শীতকালীন রাজধানীতে এসে সে সময়ের বুশাহার রাজাদের নিশ্চয়ই খুব পুলক টুলক হতো, কারণ নদী আছে আর ধুয়ে ফেলার জন্য জলের বাহানা। যাইহোক আমরা এগোতে থাকি, সারাহান এখনো বহু দূর। আমরা এন.এইচ(ন্যাশনাল হাইওয়ে) ২২ দিয়ে যাচ্ছি। ৪০ কি.মি. সারাহান এখান থেকে, তবে আপাততঃ জেওরি, ওখান থেকে ডান দিকে বাঁক নিয়ে ১৭ কি.মি দূরে সারাহান, বুশাহার সম্রাটদের রাজধানী…
দ্রুত যাচ্ছে আমাদের সওয়ারি, এই যাওয়ায় কোন কিছু স্থির নয় সেভাবে, কাঁপা অস্থিরতায় বাইরের দৃশ্যগুলো সেভাবে ইম্প্রেস করার আগেই ফুরিয়ে যাচ্ছে, আসছে অন্যতর দৃশ্য, জলের, পাহাড়ের, মানুষের…আমার মনে হলো দীর্ঘ কবিতায় ভেসে যাচ্ছি, বিষয় অবান্তর, গপ্পো নেই, স্মরণযোগ্যতা অস্থির বলে নেই, শুধু গতির ধ্বনিতে গড়ে ওঠা এক পথের অনিঃশেষ চলমানতা…বাহ্!
ছবি ০৩
জেওরিতে হঠাৎই মনে পড়লো, রামপুর কা বাসী হুঁ ম্যায়/ লক্ষ্মণ মেরা নাম..এই গানটাই তখন থেকে গুনগুন করছি, স্থানমাহাত্ম্য! এখানেই আজকের লাঞ্চ। ভাত, ডাল, সব্জি। গানের মনে পড়াটুকু গলা দিয়ে নেমে গেল।
হাসছে! নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না, হাসছে…
রিয়া এখানেও!
চোখ মটকে বলল, কেমন দিলাম?
আমি বারীনদার দিকে তাকালাম, বারীনদা রঞ্জনকে বলছিলো, এই যে বলি না রবীন্দ্রনাথ থেকে বেরো, কেন বলি পরে বুঝবি…কবিতা নতুন করতে গেলে অত পিছুটান থাকলে চলবে না।
বারীনদা দেখেনি। সৌমিত্র, ধীমান, রঞ্জন, প্রণবদাও না।
রিয়া শুধু আমায় দেখা দেয়! আমি পিকলু, আমায় ওরা জানে, দেখতে পায়না সেভাবে।ওরা ভাবে আমি স্বপন রায়, ওরা যখন এ সব ভুলভাল ভাবে আমার ‘বাপ’ ওই আলাদীনের ল্যাম্প হাসে!যাইহোক রিয়া শুধু আমাকেই টার্গেট করে। পাহাড়ে এলে তো কথাই নেই। রিয়ার নিস্তল অপরিমেয়তা সেই প্রথম সিকিম থেকেই আমায় বিব্রত করে, বেয়াব্রু করে, যখন তখন।
– খাও ডার্লিং, খাচ্ছোনা কেন?
– খাচ্ছি তো, খাবি খাচ্ছি
– হি হি… আরো অনেক খেতে হবে, আমায় ওটা করার সময় মনে ছিল না?
– ওটা মানে?
রিয়ার ভ্রূয়ে বিনাশী তরঙ্গ ওঠে। বলে, ওটা মানে ওটা…
আমি তাকিয়ে থাকি। ‘জেওরি’র এই ছোট্ট দোকানে রেডিওতে গান ভাসছে, ‘তুহি রে, তুহি রে..’
রিয়া কেমন যেন বিলীয়মান হয়ে যায়। বলে, এখনো মনে পড়ছে না?
আমি মাথা নাড়ি।
রিয়া খুব নির্বিকার হয়ে বলে, বা! আমায় ঠান্ডা মাথায় খুন ক’রে ছুঁড়ে ফেলে দিলে, বাইরে তখন খুব বৃষ্টি…আমি নীরব যন্ত্রণা নিয়ে তাকিয়ে আছি সজল আকাশের দিকে। কি গভীর অবিশ্বাস…ফিরেও দেখলে না…তোমার কালো ওয়াটারপ্রুফ, তোমার রবারসোলের জুতো, তিলমায়ার ঘরের বাইরে, মনে পড়ছে?
আমি হাঁ!
বললাম, আমি তোমায় খুন করেছি, কি বলছ রিয়া?
– করেছ, খুন কত রকমের হয় জানো?
– না জানিনা, কিন্তু তোমায় খুন? হাউ কুড ইয়ু থিঙ্ক অফ ইট?
– আমি তোমায় ছাড়বো ভেবেছ?আমি বিচার চাই!
– এই তোমার নওটঙ্কি বন্ধ করো তো
– নাটক? আমি নাটক করছি? আমি তোমার মুখোস টেনে নামাবোই…
– কী করবে তুমি?
– আমি তোমার বন্ধুদের বলবো সবকিছু। ওরা খুঁজে দেখবে কেন আমায় খুন হতে হল, কেন তুমি এখনো গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছ?
– সবাইকে বলবে?
– না। বেছে নিতে হবে। বারীনদা নয়, বারীনদা একটু রাহুল সাঙ্ককৃত্যায়ন টাইপ, প্রণবদা ম্যাচো, অ্যাকশন ফিল্ম হলে ভাবা যেত। ধীমানদা রবি ঠাকুরের পরেই, পুরো কবি! তো রইলো রঞ্জনদা আর সৌমিত্রদা। এরা গোয়েন্দা হিসেবে মানিয়ে যাবে। সৌমিত্রদার ভুঁড়ি আমি কমিয়ে দেবো, আর রঞ্জনদাকে দেবো লাবণ্য!
– লাবণ্য! অফ অল থিংস লাবণ্য, বাট হোয়াই?
– আরে অমিত রায়ের লাবণ্য নয়। রঞ্জন দা বিয়ে টিয়ে করেনি তো… কেমন শুকনো শুকনো লাগে
– তুমি সৌমিত্রর ভুঁড়ি কমাবে, রঞ্জনকে লাবণ্য দেবে, ঢপ মারার জায়গা পেলেনা?
– পিকলু দা, তোমাদের মগজে অন্ধকার হলো ৯০%, আমার ক্ষেত্রে অতটাই আলো, তুমি জানো না?
কোয়ালিস পাকদন্ডী ভেঙে উঠে যাচ্ছে সারাহানের দিকে। ঠান্ডা বাড়ছে আবার। আমরা সবুজ পেরিয়ে সবুজেই যাচ্ছি। পাহাড়ে পাহাড়ে পেস্ট করা সবুজ আর রিয়া। কেউ ওকে দেখতে পাচ্ছে না। আমাদের গাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ওইতো রিয়া উড়ে যাচ্ছে সারস হয়ে। শুধু আমিই দেখতে পাচ্ছি ওর সারসিক হাসি… শুধু আমিই…
সারাহানের উচ্চতা ২১৬৫ মিটার। শিমলা থেকে ৬৫ কি.মি, আমরাও প্রায় এসে গিয়েছি! প্রণবদা ‘নতুন কবিতা” নিয়ে যে তথ্যচিত্র করবে তার শুটিং শুরু হবে সারাহান থেকে। খুব গম্ভীর প্রণবদা বোধহয় আমাদের প্রোফাইল নিয়ে ভাবছে। আর আমি আড় চোখে দেখছি এক সারসের ছদ্ম উড়ে যাওয়া…
আমরা থাকবো HPTDC‘র হোটেল “শ্রীখন্ডে”র ডরমিটরিতে। তার আগে এই পাইন, ওকের গন্ধে ডুবে যাওয়া সূর্যাস্ত দেখতে থাকি। একদিকে বশাল(BASHAL) পাহাড়, অন্যদিকে সুউচ্চ শ্রীখন্ডের চূড়া, তাদের গায়ে বসানো বার্চ আর দেওদার, হাওয়ায় যে মিষ্টি ঠান্ডা ফেরী হচ্ছে তাতে যেন মেশানো আচ্ছে প্রকৃতির লেগপুলিংও, আমাদের সোয়েটার বা জ্যাকেট বের করা দেখে হাসছেও মুচকে মুচকে!
রিয়া আর প্রকৃতি, কি সুন্দর দাঁত ওই মুচকির ফাঁক দিয়ে…
তো পাহাড়ের গায়ে বসানো হোটেলে নেমে সৌমিত্র আর রঞ্জন আমার দিকে এগিয়ে আসে। গাড়ির ওপর থেকে মাল নামাবার পালা চলছে তখন। রিয়া কি এর মধ্যেই ওদের নিয়োগ করে দিয়েছে? ওরা কবি না গোয়েন্দা?
– কী কেমন লাগছে? রঞ্জন বলল
– সব ঠিক আছে তো? সৌমিত্র বলল
আমি বললাম, ওয়াশরুমটা কোনদিকে ?
কোন ক্লান্তি আর নেই, হোটেলের লনে পা দিয়ে দু’দিকে তাকালাম। সবুজ আর গেরস্থ পাহাড়, পাহাড়ের থাকে থাকে বসতির উঁকি, রাস্তা বেড় দিয়ে ঘিরে রেখেছে পাহাড়ের বুক, সামান্য হিম মাখানো তাতে। প্রণবদা তাড়া দিল, আজ কবিতার আড্ডার প্রথম দিন, ফ্রেশ হয়ে ডর্মিতে বসতে হবে, আমি খুব একটা তাড়া দেখালাম না। কবিতার আড্ডা তো হবেই, কিন্তু এই বিশাল কবিতার কাছে আগে তো স্তব্ধ আর মুগ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি কিছুক্ষণ। হোটেলের লাউঞ্জ পেরিয়ে কাফেটেরিয়া, চলে এলাম, বিদ্ধ হতে থাকলাম দৃশ্যের পুনর্গঠনে….
ডর্মি থেকে বেরিয়ে সাম্নের লনে রঙিন ছাতার নিচে আবার রিয়া। নাকি অন্য কেউ? ওর পোষাক এমন পৌরাণিক কেন? কাঁচুলি ফাঁচুলি পরা? চোখ কচলাই, রিয়া যেমন হাসে, হাসছে। ওর সঙ্গে ওরকমই রাজকন্যা টাইপের পোশাকে আর একটি মেয়ে। আমার চোখ না আটকে যাবে কোথায়?
সামনে যেতেই রিয়া বললো, এসো অনি
অনি! অনি আবার কে? এতো আচ্ছা ঝামেলা!
– অনি কে?
– তুমি!
– আমি? তোমার ভুল হচ্ছে রিয়া। অনি মানে অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় আমি নই। অনি দারুণ ছেলে, বস্তির বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করে, অসাধারন কবিতা লেখে। তাছাড়া ,ও আমার চেয়ে অনেকটাই ছোট….ইয়ং ম্যান..
– অনি, অনিরুদ্ধ আমায় চিনতে পারছো না, আমি ঊষা!
– মানে? দেখো এ সব ফাজলামো আমার ভালো লাগছে না, রিয়া আমি তোমাকে মারিনি, কে মেরেছে জানিনা, এ সব কেন করছো তুমি?
– রিয়া? রিয়া আবার কে? আমি ঊষা,তুমি অনিরুদ্ধ…আর এ হলো চন্দ্রলেখা যে তোমায় বিছানাশুদ্ধ তুলে এনেছিল…মনে নেই?
চন্দ্রলেখা হাসলো!
বিভ্রান্ত আমি বললাম, তুলে এনেছিল…মাই গুডনেস…আর হাউ কাম বিছানা…তুলে এনেছিলই বা কোত্থেকে?
– বাঃ! তুমি তো তখন ঘুমোচ্ছিলে!
– ঘুমোচ্ছিলাম? কোথায়?
– কৃষ্ণর ওখানে
– কৃষ্ণ? কোন কৃষ্ণ?
– শ্রী কৃষ্ণ
– অ্যাঁ… মানে ওই ভগবান… সেরেছে, তুমি কি নাটকের দল খুলেছো রিয়া?
– রিয়া কে প্রিয়তম?
– তুমি
– আমি তো ঊষা, দৈত্যরাজ বাণাসুরের মেয়ে।এই যে শোণিতপুরে তুমি এসেছো এতো আমার বাবার রাজ্য। আমি তোমায় স্বপ্নে দেখে প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম।চন্দ্রলেখাকে সে কথা বলি। চন্দ্রা দারুন ছবি আঁকে। ও আমার মুখে তোমার বর্ণনা শুনে তোমায় এঁকে ফেলল। আমি তোমার ছবি দেখে প্রেমজ্বরে কাতর হয়ে উঠলাম… সে কি জ্বর
– জ্বর? ক্রোসিন ছিলো না…নাহ ক্রোসিনে কি হবে? এতো ব্রেন ফিভার!
– সেটি কি বস্তু?
– কিছু না….আমি যাচ্ছি…
– শোণিতপুরে এসে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোথায় যাবে অনি? তার চে এসো আমরা দোলনায় ঝুলতে ঝুলতে প্রেম করি…
এই কথায় ওরা হাসতে থাকে… আমি পাহাড়ের মাথায় মশাল জ্বলতে দেখি… মশাল না আগুন লেগেছে পাহাড়ে?
রিয়া বা ঊষা কিন্তু বলে যাচ্ছে, তারপর চন্দ্রলেখা তোমায় খুঁজতে চলে গেল।ওর মত সখি অনেক তপস্যাতেও পাওয়া যায়না…আমার কষ্ট ওর সহ্য হচ্ছিলো না… খুঁজতে খুঁজতে শ্রীকৃষ্ণর রাজসভায় তোমায় পেয়ে যায়…তারপর তুমি যখন ঘুমোচ্ছ তোমায় বিছানা শুদ্ধ তুলে নিয়ে আসে আমার মায়াবিনী সখি… আমাদের বিবাহ হয়… শ্রীকৃষ্ণ খেপে গিয়ে শোণিতপুর আক্রমন করে… আমার বাবা হেরে যায়… বাবা বুঝতেই পারেনি কেন শ্রীকৃষ্ণ রেগে গিয়েছিল… কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ তো ভগবান..তাঁর দয়ার শরীর… তিনি পরে আমাদের ক্ষমা করে দেন আর যৌতুক হিসেবে এই শোণিতপুরের রাজপাট আমাদের দিয়ে দেন…মনে পড়ছে প্রিয়তম? আমি জানি তোমার সব মনে পড়ে গেছে… তাহলে এখন এসো আমারা দোলনায় বসি…আর একটু পরে চাঁদ উঠবে শ্রীখন্ডের মাথায়…আমি তোমার বুকে মাথা রেখে সুখসাগরে ভেসে যাবো…
চলবে…
পরিচ্ছেদ ৬ অনেক রাতে ফিরেছিল কল্যাণ ওরফে শহীদুল।গাড়িটা শেডে রাখার পর দু’বার হালকা করে মা…..
পরিচ্ছেদ ৫ আকাশে এখন আর মেঘ নেই। হাওয়া হচ্ছে।কদিন পরেই বর্ষা নামবে।একদিন হাসপাতাল থেকে ফিরতে…..
পরিচ্ছেদ ৪ ভোর হয়ে আসছে।রাতে ভালো ঘুম হয়নি।ঘুমের ঘোরে মনে হচ্ছিল দম বন্ধ হয়ে আসছে।এরকম…..
বাংলার চিত্তাকর্ষক ইতিহাস সম্পর্কে জানার সময়, গৌরের মতো আর কিছু গন্তব্য হতে পারে না।…..