ঘৃণা (পর্ব – ৩)

শাহীদ লোটাস
উপন্যাস, ধারাবাহিক
Bengali
ঘৃণা (পর্ব – ৩)

: আমাদের দেশের রাজনৈতিক আদর্শ হচ্ছে দলের কেউ আইনের চিপায় পড়লে তাকে বাঁচানোর জন্য দলের মাঝে হইচই শুরু করে দেওয়া, মিছিল, মিটিং, হরতাল। দলের সমর্থকরা এমন ভাবে উঠে পড়ে লাগেন যেন যে করেই হোক আইনের কাছে যিনি ফেঁসে গেছেন তাকে বাঁচাতেই হবে। আইনের কাছে বন্দি সেই নেতা বা কর্মী যে অপরাধই করুক, কোন ব্যাপার না, যদি সে কাউকে হত্যা অথবা এই দেশকে বিক্রি করার ফন্দিও করেন তবুও তাকে বাঁচাতেই হবে, কারণ সে দলের লোক।

সাজ্জাদ কি একটা পেপার পড়ছিল পেপারটি পাশের টেবিলের উপর রাখতে রাখতে বলল, এমন হওয়া ইতো স্বাভাবিক। একজন দলের হয়ে কাজ করবে, আর তার বিপদে দল পাশে থাকবে না ? এ কেমন কথা ?

রুমী বিদ্রূপের হাসি হেসে বলল, তার মানে দাঁড়ালো, দেশ থেকে এখন দল বড়, মুখ্য ?

: তা হবে কেন, দেশ থাকবে দেশের জায়গা, দল থাকবে দলের জায়গায়।

রুমী ক্রুদ্ধ ভাবে অন্য দিকে তাকিয়ে উত্তরে বলল, এই জন্যই আমাদের রাজনীতি এত জঘন্য। ব্যক্তির জন্য দেশ গোল্লায় গেলেও আমরা কিছু বলি না ।

: তুই কেন বুঝতে চাইছিস না। কেউ কিছু করলে তার কিছুটা স্বার্থ অবশ্যই থাকবে। দলের হয়ে সারা জীবন কাজ করলে দলের প্রতি তার কিছুটা দাবি অবশ্যই থাকে। স্বার্থ ছাড়া কেউ কিছু করে ?

রুমী আরও একটু রেগে গিয়ে উত্তর দিলো, স্বার্থ রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি হতে পারে না। রাজনীতিতে যখন স্বার্থ থাকবে না, তখনই দেখবি রাজনীতি দেশের কল্যাণ নিয়ে আসছে। কাউকে ভালোবাসার মাঝে যেমন স্বার্থ থাকে না রাজনীতিও তেমন, নিঃস্বার্থ।

: তোর কথা মেনে নিলাম। কিন্তু এই দেশে রাজনীতির মৌলিক ধারা এখনি আশা করা ঠিক নয়, আমরা একটা যৌগিক রাজনৈতিক ধারার ভেতর দিয়ে যাচ্ছি, আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।

: উনিশশ একাত্তর থেকে আজ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে প্রত্যাশা ক্রিয়াশীল আছে তার বিপরীতে লড়ে যাচ্ছে দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক ধারা, এই রাজনৈতিক ধারায় দেশের সার্বিক উন্নয়ন, নতুন মতাদর্শ আর গণতন্ত্রর মুক্তধারা ম্লান করে গোলক ধাঁধাঁয় নিয়ে যাচ্ছে সরল জনতাকে। কখনো কখনো এই ধারার বিপরীতে কোন কোন শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাচ্ছে, কিন্তু জনবলের অভাবে অবশেষে এই শক্তি টিকতে পারছে না, এর মানে, আমাদের আরেকবার জাগতে হবে। জনতাকে বুঝাতে হবে, তাদের অধিকার ও সুযোগের বদলে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে রাজনীতির নামে কতিপয় লুণ্ঠনকারীর অধিকার, এই লুণ্ঠনকারীরাই এই দেশের সহজ সরল জনতাকে মায়ার জালে বন্দি করে ফেলেছে, আমরা একটি মায়ার ধারায় বহমান, এই মায়া কোন দেশের উন্নয়নের ধারা নয়, এমন শাসনব্যবস্থা চলতে থাকলে আমরা কখনই সরকার পাব না, পাব স্বৈরাচারী ক্ষমতাসীন দলের লুণ্ঠনকারীদের।

সাজ্জাদ তুই কি বুঝতে পারছিস, এই কথগুলো দেশের সাধারণ জনতাকে বোঝানো খুবেই দরকার, ব্যক্তি কেন্দ্রিক রাজনীতি স্বৈর তান্ত্রিক ক্ষমতারই আরেক রূপ।

সাজ্জাদ গা ছাড়া ভাব নিয়ে রুমীর কথা উড়িয়ে নিজের মত প্রকাশ করার জন্য বলল, গণতন্ত্র বলিস আর রাজতন্ত্রই বলিস, দেশটা তো কোন এক গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে ।

রুমী উপড়ের চলন্ত ফ্যানের দিকে তাকিয়ে বলল, হ্যাঁ এগিয়ে যাচ্ছে, একটা জলাতঙ্ক ধারা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা এমন একটা রাজনৈতিক ধারায় চলছি যে ধারায় আমাদের সামনে গণতন্ত্রের বাহকদের নীরব থাকতে হচ্ছে, কেউ জনগণের মতামতের অধিকার নিয়ে কথা বললে তাকে মাশুল দিতে হচ্ছে মৃত্যু অথবা প্রশাসনের মিথ্যে মামলায়, আমরা এমন একটি সময় অতিবাহিত করছি যে সময়ের বাতাসে ভাসে গণতন্ত্রের ক্ষুধা ।

সাজ্জাদ একটু বিস্ময়াপন্ন হয়ে রুমীর দিকে তাকিয়ে বলল, তুই কি মনে করিস এই দেশে গণতন্ত্র নেই ?

রুমী চলন্ত ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছে, সেই দিকে তাকিয়েই রুমী বলল, আমাদের বৃহৎ দলগুলোর ভেতরে ইতো গণতন্ত্র নেই। দলের উপর মহলের নেতাদের করুণায় নির্বাচিত হয় দলের কমিটির নেতৃবৃন্দ, তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় সব সদস্য, পদ-পদবী পান উপর মহলের করুণায়, রাজার দয়ায় রাজ সভায় স্থান পাওয়ার মতো। এই দেশে অঘোষিত রাজতন্ত্র চলছে এখনও আমরা বুঝতে পারছি না, আর আমাদের এই রাজতন্ত্রের রাজা-রানী তেমনি নেতা বা নেতৃ নির্বাচন করেন যাদের টাকার জোর, অস্ত্রের জোর, প্রভাবের জোর আছে, রাজনীতিতে এই আদর্শ না থাকলে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য প্রয়োজন হতো না অস্রধারীদের, আমাদের নেতাদের ক্ষমতায় আসতে টাকার অঘোষিত খেলা চলে, চলে তোষামোদের প্রতিযোগিতা । দলের মনোনয়ন পেতে টাকা চাই, যোগ্য প্রার্থীকে বসাতে টাকা চাই, নির্বাচনে জয়ী হতে টাকা চাই, মন্ত্রী হতে টাকা চাই, চাই কোন বিশেষ পরিবারের তোষামোদকারী।

সাজ্জাদ হাই তুলতে তুলতে বলল, ধৈর্য ধর, সামনের দিনগুলোতে সব ঠিক হয়ে যাবে, আমাদের সন্তানরা সব ঠিক করে ফেলবে।

: আসবে নারে, আসবে না সেদিন, কারণ আজ যারা শিশু, যারা ছাত্র, তাদের লেখা-পড়ার গোলক ধাঁধাঁয় রাজনীতি থেকে গণতন্ত্র থেকে তাদেরকে অযোগ্য করা হচ্ছে, ছাত্ররাজনীতি নামে রাজনৈতিকদলগুলো ছাত্রদের বানাচ্ছে অস্রধারী, সন্ত্রাসী, ক্যাডার, আমরা বুজতে পারছি না। আগামী দিনে যারা দেশের ভার নিতে যাচ্ছে তাদের কে অর্থনৈতিক অভাবের নেশায় বানানো হচ্ছে আমলা-কামলা। এই সূত্র হল সব সময়ের জন্য বিশেষ পরিবারে জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তিদের ক্ষমতায় যাওয়ার সবচেয়ে সহজ পথ । আমরা কথিত গণতন্ত্রের আড়ালে পরিবারতন্ত্রের ঘোরে পড়ে গেছি। আমরা সহজেই বুঝতে পারছি এসব, তবুও আমাদের কিছু করার নেই, আমরা সবাই এক নই বলে।

সাজ্জাদ খাটের এক পাশে হেলান দিয়ে বসতে বসতে বলল, তোর মুল বক্তব্য কি ? বুঝিয়ে বলতো শুনি ?

রুমী বলল, আমার মুল কোন বক্তব্য নেই, আমি যা বলতে চাই তা আগে মনোযোগ দিয়ে বোঝার চেষ্টা কর, তাহলেই আমার মুল বক্তব্য বুঝতে পারবি, আমি যা বলতে চাই তা হল, একটা সার্কেলের মতো এই দেশের বর্তমান গণতন্ত্র, এখন যিনি ক্ষমতায় আছেন পরবর্তীতে আসবে তার পরিবারের পরবর্তী মানুষ, সেই মানুষ হবে আমাদের এই দেশের প্রধান, তাকে আসতে হবে না কোন গণতন্ত্র উপায়ে, তার মেধা বা যোগ্যতা যেমনি হোক, তাকে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের স্বপ্নের চেয়ারে বসিয়ে দেওয়া হবে, তার অভিভাবক তার জন্য সেই পথই রেখে যাচ্ছেন, আর তাকে সংবর্ধনা জানাতে দাঁড়িয়ে যাবেন এই দেশের হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ নাম ধারী নেতা-নেত্রী। আমরা সাধারণ জনগণ নপুংসকের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবো তাদের বিজয় মিছিল। এই কি রাজতন্ত্র নয় ? গণতন্ত্রের মুল বক্তব্য কোন জাতি গোষ্ঠী বা দলের মাঝে তিনিই প্রধান হবেন যার প্রতি সবার আস্থা থাকবে সবার সমর্থন থাকবে।

: তুই কি মনে করিস, যারা বর্তমানে রাজনৈতিক দলের প্রধান তাদের প্রতি সেই দলের নেতা-নেতৃদের প্রতি এই দেশের জনগণের সমর্থন নেই ? আস্থা নেই ?

: না নেই, যদি থাকতো তাহলে রাজনৈতিক দলের প্রধান নেতা-নেত্র জনগণের উপর ভরসা করে, জনতার প্রতি আস্থা রেখে তারা তাদের রাজনৈতিকদলের প্রধান হতে চাইতেন, দেশের ক্ষমতায় আসতে চাইতেন। আর বর্তমানে আমাদের দেশে যে কয়টি রাজনৈতিক দল আছে, প্রতিটি দলের নেতা নেত্রী সবাই জানেন তাদের প্রধান নেতা কে হবেন, একটি ধারায় এই প্রধান ব্যক্তি আসবেন, যিনি আসবেন তার বিরোধিতা দলের মাঝে কেউ করলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে, প্রতিবাদী নেতার রাজনৈতিক ইতিহাস শেষ করে দেওয়া হবে, এমনকি তার মৃত্যুও হতে পারে, যে দলের সভাপতি নির্বাচনে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী থাকে না তা আবার কেমন গণতান্ত্রিক উপায়ে সভাপতি নির্বাচন ? আসলে ভয়ে দলের নেতা-নেত্রী মহল কিছু বলতে পারেন না, অঘোষিত রাজতন্ত্রের শিকলে তাদের চিন্তাধারা বেধে রাখা হয়েছে আজ, তাই আমাদের নেতার খুব অভাব, প্রতিবাদীর খুব অভাব, এই দেশে এমন কোন মানুষ নেই যে গণ মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলেন, এই দেশের সহজ সরল সাধারণ জনতার পক্ষ নিয়ে উত্তর দিতে বাধ্য করেন ক্ষমতাবানদের। আর জনগণ! তারা তো শুধু দর্শক আর মার্কা প্রিয় ! কে নেতা ! কে নেত্রী ! এসব তারা ভাবেন না ! দেখেনো না ! মুল কথা তারা রাজনীতি কত টুকো বুঝেন বা বুঝে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে আমার, আমাদের মাঝে যারা মোটামুটি রাজনীতির চর্চা করেন, তারাও কেন যেন বেশ নীরব, অথবা ভয়ে মুখ খোলেন না, ক্ষমতাবানদের ভয়ে আমারা কেউ গর্জে উঠি না, আমরা কেউ বলতে পারি না, তোমাদের জন্য আমরা কষ্টে আছি, তোমাদেরকে আর ভালো লাগে না, তোমরা আমাদের নিয়ে আর খেলো না। আমরা এতটাই ভিতু যে কোন ভণ্ড নেতার সামনেও মুখ ফুটে বলতে পারি না, তোমরা কোথাও চলে যাও, আমরা আমাদের সোনার দেশকে মনের মতো  করে সাজাবো, তোমরা আমাদের মাঝে আর থেকো না ।

সাজ্জাদ বিরক্তি নিয়ে রুমীর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, তোর কি ধারণা, এমন কেউ আসলে জনতা বের হয়ে আসবে দলে দলে, শ্লোগান দিয়ে প্রকম্পিত করে তুলবে পথ, ঘাট, বাজার, বন্দর ?

রুমীর চোখ মুখে বিশেষ এক মোহের ছায়া, সাজ্জাদের কথা শেষ হওয়ার আগেই সে বলে উঠলো, বাঙালি জাতি জ্বলে উঠার জাতি। এই জাতীর প্রতিটি মানুষের মনে তুষের চাপা আগুন আছে, প্রতিবাদের আগুন আছে, বাতাসটা দিতে হবে খুব জোড়াল ভাবে।

সাজ্জাদের চোখ মুখে বিস্বাদ ভাব কাটেনি, রুমীর চোখের দিকে তাকিয়েই আবার বলল, তোর কথায় যুক্তি আছে, আস্তে আস্তে রাজনীতির ধারার পরিবর্তন আসবে, তার জন্য এখনই আমাদের লম্ফ-ঝম্প করার কিছু নেই, সময় সব বলে দিবে।

রুমী আফসোস করে বলল, ভুল বললি,  সময় কিছুই বলে না, সময়কে বলাতে হয়। সময়ের ভেতর মনের কথা ভাসিয়ে দিতে হয়। তাহলে সময় সবাইকে বলে বেড়াবে সেই কথা।

বলতে বলতে রুমী সাজ্জাদের দিকে তাকাল। সাজ্জাদ বড় করে হাই তুলল। মনে হয় তার বেশ ঘুম পাচ্ছে। রুমী একটু বিরতি নিয়ে আবার বলতে লাগলো, গভীর ভাবে একটু ভেবে দেখ, এই দেশের সব জনগণ দুই ভাগে বিভক্ত, সবাই এক নয়। এক দলে বিভক্ত নয়, অথচ আমরা সবাই বাঙালি আমাদের সবার উচিত দেশকে ভালোবাসা, এক হয়ে থাকা।

সাজ্জাদ বালিশে আরাম করে মাথা রেখে বলল, এই দেশে এখন গিভ এন্ড টেক রাজনীতি চলে,  যাকে আমরা নেতৃত্ব দেই সেও আমাদের কিছু সুযোগ সুবিধা দেয় ।

: হ্যাঁ দেয়, একটা সার্কেলের মতো, এই দেশে আছে দুইটি সার্কেল, গণতান্ত্রিক নিয়ম হচ্ছে বহুমত প্রকাশ করার ক্ষমতা জনগণের থাকতে হবে। কিন্তু যে নেতা নেতৃত্ব পান তিনি শুধু তার অনুগতেরেই সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকেন আর বিরোধী সমর্থকদের নিঃশেষ করার পরিকল্পনা করেন ক্ষমতায় থাকায় সমস্ত সময়টুকু, কারণ বিরোধীদল সমর্থনকারীরা তাকে সমর্থন দেয়নি। আরও পরিষ্কার করে বললে এমন হয়, এই দেশের নেতা-নেতৃ থেকে সাধারণ আমজনতা এখন বৃহৎ দুই ভাগে বিভক্ত, একদল ক্ষমতায় থাকেন অন্য দল থাকেন ক্ষমতাহীন অর্থাৎ বিরোধীদল, যে দল ক্ষমতায় থাকেন তারা স্বাধীন, সরকারী বেসরকারি সকল ক্ষেত্রে তাদের থাকে সুবিধা, তারা আইন শৃঙ্খলা, চাকরী বাকরই এমন কি বিচার শালিসও পরিচালনা করেন নিজের ইচ্ছে মতো, আর বিরোধী দল ?  সেই দলের নেতা-নেতৃ থেকে আমজনতা সবাই থাকে কোণঠাসা, তাদের তেমন স্বাধীনতা থাকে না । তারা তাদের স্বাধীন রাষ্ট্রে হয় অঘোষিত পরাধীন, কারণ তারা ক্ষমতাসীন দলকে নির্বাচনে সমর্থন দেয়নি, নির্বচনের সময় তারা বিরোধিতা করেছিলো। রাজনীতি তো এমন না, রাজনীতিতে প্রতিহিংসা কেন ? গণতন্ত্রের নিয়মে জনগণের মাঝে ভিন্নমত থাকবেই। রাজনীতি হবে উন্নয়নের প্রতিশব্দ। আমিও চাই এই দেশের মানুষ দু-টি দলে বিভক্ত থাকবে, কিন্তু এই দুই দলে বিভক্ত থাকাটায় কিছু পার্থক্য আনতে হবে, সাধারণ নাগরিক যারা ক্ষমতায় যাওয়ার আশা পোষণ করেন না তাঁরা সবাই থাকবে এক দলে আর অন্য দলটি হবে যারা প্রধান হতে চান তাদের, যারা নেতৃত্ব দিতে চায়, যারা পরিচালনা করতে চায় এই দেশের সবকিছু। আমরা সাধারণ আমজনতা সবাই থাকবো এক, আমরা নিজেদের মাঝে কখনো সংঘাত করবোনা, আমাদের প্রিয় দল আওয়ামীলীগ হোক আর বিএনপি হোক তাতে সমস্যা নেই. সমস্যা এই প্রিয় দলের জন্য যেন আমরা দেশ আর দেশের নাগরিকের জীবন বিপন্ন না করি, প্রয়োজন হলে যেন আমাদের প্রিয় দলের বিপক্ষে গর্জে উঠতেও সামান্যতম দ্বিধা না করি আমরা । শেখ হাসিনা হোক আর খালেদা জিয়াই হোক তাঁরা অন্যায় করলে দুর্নীতি করলে আমরা সাধারণ জনগণ সবাই যেন এক সঙ্গে প্রতিবাদ করি, এক সঙ্গে ঘৃণা করি অপরাধীকে, দেশের স্বার্থে কখনো কারো সঙ্গে এই জনতা আমরা আপোষ করবো না। আমরা কোন প্রতীককে মুখ্য না ভেবে মুখ্য ভাববো আমাদের মাতৃভূমিকে, কোন দলের কোন নেতা-নেতৃ যেন আর আশ্বস্ত হতে না পারেন, তার কৃত কোন অন্যায়ের পরেও তাকে বাঁচানোর জন্য এই দেশের আমজনতার একটি অংশ, লাঠি-সোটা নিয়ে বেড়িয়ে পড়বো, গাড়ি ভাঙ্গবো, বাড়ি ভাঙ্গবো, নিরীহ মানুষ মারবো, এক সময় এই উশৃঙ্খল জনতার চাপে আইনের কাছ থেকে অপরাধী  মুক্তি পেয়ে যাবে । আমরা জনগণ সবাই এক হলে এই দেশে আর কেউ লুটপাট করবে না, করার সাহসও পাবে না । বলতে বলতে রুমী সাজ্জাদের দিকে তাকাল, সাজ্জাদ ঘুমে ঢলে যাচ্ছে। মনে হয় রুমীর কথাগুলো তার তেমন ভালো লাগছে না। সাজ্জাদের ঘুম জড়ানো চোখের দিকে না তাকিয়ে রুমী বলল, তুই কি বুঝতে পারিস? স্বাধীন এই দেশটির গণতন্ত্র আজো সুখের স্বপ্নের মতো অলৌকিক আড়ালে লুকিয়ে আছে । আমরা কেউ তা বুঝতে পারি না, আর যারা বুঝেন তারাও না বুঝার ভান করে জীবন অথবা নিরাপত্তার ভয়ে রয়ে যাচ্ছে নীরব।

সাজ্জাদ চোখ বন্ধ রেখেই বলল, রাত অনেক হয়েছে ঘুমিয়ে পর, কাল ভোরের ট্রেনে আমি ঢাকায় যাচ্ছি।

রুমী সাজ্জাদের কথা শুনে সামান্য হাসল, বলল, ঢাকায় যাচ্ছিস মানে?

ঘুমের আচ্ছন্নভাব নিয়ে সাজ্জাদ বলল, সাতদিন থাকতেও হবে । তোর সমস্যা হবে জানি, তবুও কিছু করার নেই। কয়েকটা দিন কষ্ট কর।

: ঢাকায় কি কাজ ?

: লোকাল পত্রিকার রিপোর্টারদের একটা ট্যানিং আছে।

সাজ্জাদের কথা শুনে রুমী বিস্মিত হল, প্রচণ্ড রাগ লাগছে ওর। মনে হচ্ছে এখনই ব্যাগ-ট্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পরে।

সাজ্জাদের জোড়া চোখ এবার মেলে দেখল রুমী ওর দিকে তাকিয়ে আছে। কি বলবে যেন বুঝতে পারছে না। সাজ্জাদ রুমীকে খোঁচা দিয়ে বলল, চেঙ্গিস খানের মতো তাকিয়ে আছিস কেন ?  আচ্ছা যা যাবো না, আর যদি যাই একদিন থেকে এসে পরবো, ঠিক হল তো ?  রুমী কোন কথা বলছে না। সাজ্জাদ রুমীকে জরিয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে  বিছানায় শুয়ে রইল অনেকক্ষণ ।

রাত বারোটা, বাসার সবাই ঘুমিয়ে আছে। পরিবেশ বেশ নির্জন ।

চলবে…

শাহীদ লোটাস। বাংলা ভাষার লেখক, বাংলাদেশ-এর নেত্রকোনা জেলায় মোহনগঞ্জ থানায় ৩০ মে ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ ও ভারতে শাহীদ লোটাস-এর বেশ কয়েকটি উপন্যাস, কাব্যগ্রন্থ ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি সমসাময়িক বিষয় নিয়ে লিখতে উৎসাহবোধ করেন।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ