ঘৃণা (পর্ব – ১)

শাহীদ লোটাস
উপন্যাস, ধারাবাহিক
ঘৃণা (পর্ব – ১)

রাষ্ট্র!

রাষ্ট্র বলতে আমরা কি বুঝি?

এক শাসনাধীন দেশ?

দেশের অংশ?

রাজ্য?

স্টেট?

না, প্রদেশ?

যাই বলি না কেন ১৯৭১ সালে রাষ্ট্রবিপ্লবের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের যে মৌলিক পরিবর্তন আসে তার নাম বাংলাদেশ। আমরা পাই স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। লাখো বাঙালির স্বপ্নের স্বদেশ! হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম খ্রিস্টান সকল ধর্মের সমান অধিকার নিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ একটি দেশ। আতপর দেশের মানুষ যখন শিকল ছেড়া আনন্দে নিজেদের স্বপ্ন মিশিয়ে নিজেদের মনের মতো নবগঠিত এই দেশ গড়ার কাজে নিয়োজিত ঠিক তখনই  রাষ্ট্র নায়ককে  সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে শুরু হয় স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা।

কি জঘন্য! যে বিপ্লবী নেতা একটি স্বৈরাচারী রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তন ঘটাল তাকেই তাঁর স্বাধীন দেশে নির্মমভাবে হত্যা করা হল! অবাক হওয়ার মতো বিষয়। যেমন স্বাধীনতার পঁয়তাল্লিশ বছর পরও আমরা গণতন্ত্রকে ঠিকঠাক বুঝে উঠতে পারছি না। আমাদের মুখস্থ বিদ্যায় আমার জেনেছি, জনসাধারণ কর্তৃক রাজ্য বা দেশ পরিচালনার আদর্শকে বলে গণতন্ত্র। জনসাধারণ! স্বাধীনতার পর আমরা যে জনসাধারণ আজ পেয়েছি সে জনসাধারণের সিংহভাগ মাতৃভূমি থেকে ভালোবাসে তাদের সমর্থিত রাজনৈতিক দলকে, এই জনসাধারণই আজ বাংলার গণতন্ত্রের মহানায়কের ভূমিকায় দিন-রাত অভিনয় করে যাচ্ছে! এই মহানায়কেরা বিশেষ কোন দলের প্রেমে এতটাই মাতোয়ারা যে তাদের সমর্থিত দল এই দেশ এই জাতিকে গোল্লায় নিয়ে গেলেও তারা প্রিয় দলের আশিক হয়ে সব দেখেও না দেখার ভান করে থাকবে নীরব আর প্রিয় দলের নেতা-নেত্রী মহল তাদের অদৃষ্টে কলঙ্কিত নিষ্ঠুর দারিদ্র্যতার মানচিত্র  এঁকে দিলেও তারা প্রেমিক হয়ে  প্রিয় দলের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে সামান্যতম দ্বিধা বোধ করবে না। একবার তারা বুঝার সামান্যতম চেষ্টা  করবে না যে, তাদের ভালোবাসার নেতা-নেত্রী  মসনদে বসে তাদের নিয়ে যাচ্ছে এক ইন্দ্রজালের জগত তে, যে জগতে জনতা শুধু ক্রীতদাসই রয়ে যাবে অনন্তকাল, তাই হয়তো গণতন্ত্র আজ প্রতিবন্ধী অবুঝ প্রাণীর মতো বসে আছে তার অদেখা নিজের শক্তি থেকে, যে শক্তির খোঁজ খবর আমরা কখনো পাইনি। তাই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করার প্রথম শর্ত জনতার মাঝে চেতনা সৃষ্টি করা, জনতার বোধ শক্তি জাগ্রত করা, তাদের চোখের সামনের কালো অথবা অন্য পর্দা সরিয়ে স্বচ্ছ পৃথিবীকে তুলে ধরা। জনসাধারণ সেদিনেই গণতন্ত্রকে ঠিকঠাক বুঝবে, যেদিন কোন দল কোন ব্যক্তি আর কোন প্রতীক থেকে তাদের কাছে প্রিয় হবে মাতৃভূমি, যেদিন ধ্যান দিয়ে অনুভব করার চেষ্টা করবে জনতা, ভালো মানুষের মুখোস পরে যে নেতা তাদের ভাগ্য গড়ার দায়িত্ব নিচ্ছেন সেই নেতার আড়ালে কে লুকিয়ে আছে, অঘোষিত ব্রিটিশ? নাকি স্বৈরাচারী পাকিস্তানের কোন রক্ত পিয়াসু জল্লাদ? সেদিনেই এই দেশের জনতা হবে গণতন্ত্রের বাহক, যেদিন তারা কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী না হয়ে হবে দেশ গড়ার শ্রমিক। সেদিন তারা স্পষ্ট দেখতে পাবে তাদেরে সামনে দাঁড়িয়ে আছেন নেতা নামের এক ঈশ্বর।

লেখা থামিয়ে বাইরে তাকাল রুমী।

দীর্ঘশ্বাস  ছেড়ে উদাস দৃষ্টিতে তাকাল  জানালার দিকে. জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে বাইরের ঘুরন্ত প্রকৃতি। দ্রুত গতিতে চলছে ট্রেন, বড় শহর থেকে ছোট শহর, ছোট শহর থেকে অচেনা গ্রামের বুক চিড়ে, কখনো পাড়া গায়ের গা ঘেঁষে। লোহার ঝনঝন শব্দে দ্রুত চলছে ট্রেন।

২০০২ সালে ‘ ক্লিন হার্ট অপারেশনের সময় এক বার এভাবেই পালাতে হয়েছিলো তাকে, পালিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। সেনাসদস্যরা তার সন্ধান জেনে যায়, রাতের গভীরে তার আশ্রয়স্থল ঘেরাও হয়। এরেস্ট করে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে ক্যান্টনমেন্টে। তার আগে বেশ কয়েকবার রুমীর রুম ব্যাপক তল্লাশি হয়, যদি কিছু পাওয়া যায়, এই সেই তন্নতন্ন করেও কিছু পাওয়া যায়নি। যে ছেলের বাসায় পিস্তল নেই, বোমা নেই, জঙ্গিবাদের কোন বই-পুস্তকও নেই সেই ছেলে কেন ক্যাডার হবে, এমন তথ্য বের করতে আর্মিরা বহু চেষ্টাই করেছিলো, গরম ডিম থেকে সুই-সুতা, অন্ধকারে হাত পা বেধে আলো-বাতাস হীন ছোট্ট খুপরির মতো জায়গা দিনের পর দিন বেধে রাখা, কিছুই বের করতে পারেনি সেনা বাহিনী। জেল হাজতে পাঠানোর তিন মাস পর এক পড়ন্ত বিকেলে জেল থেকে  মুক্তি পায় রুমী।

এর কিছু কারণও আছে, রুমী একটি সংবাদপত্রের সম্পাদনা করে। পত্রিকাটি স্থানীয়, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে প্রকাশ করা হয় সেটি। পত্রিকায় যারা সাংবাদিকতা করেন তারা কেউ পেশাদার সংবাদকর্মী নন, ইশকুলের শিক্ষক, কলেজের শিক্ষক, উঠতি বয়সের ছেলে মেয়েরা, ব্যবসায়ী থেকে বিভিন্ন মহলের লোকজন স্বনামে ছদ্মনামে সংবাদ সংগ্রহ করেন, সেই সব খবররা-খবর নিয়ে প্রকাশিত হয় রুমীর সাময়িকপত্র। এই কারণে সরকার দলীয় নেতা মহল, এলাকার মাস্তান, মহল্লার বড় ভাই, প্রশাসন, অনেকেই রুমীর উপর নাখোশ। রাস্তা-ঘাট, মহল্লার সালিশের অন্যায় বিচার, ছাত্র-ছাত্রীদের উপর রাজনৈতিক ছেলে-ছোকরাদের উৎপীড়ন, যেখানে সেখানে চাঁদাবাজি, প্রশাসনের নীরবতা, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বের হয় পত্রিকাটি। এই কারণেই রাজনৈতিকদলের লোকজন রুমীকে সতীনের চোখে দেখে। মনে করে রুমী তাদের পথের কাঁটা।

ট্রেন চলছে বেশ উগ্র গতিতে। রুমী জানালা দিয়ে তাকিয়ে বাইরের ঘূর্ণায়মান ফসলের মাঠ, দুরের গাছ, বাঁশবন, ঝাঁক বেধে পাখি উড়া দেখছে, এই সব কিছুর ভেতরে থেকে অনিচ্ছাকৃত ভাবেই ছায়াছবির মতো ভেসে আসছে বাবার কথাগুলো, মাঝ বয়সী হতাশ এক পুরুষের ক্ষুব্ধ মুখ, বিচলিত চোখ, গভীর ঘৃণা নিয়ে তিনি অন্য দিকে তাকিয়ে বলছেন, ছেলে আমার বড় রাজনীতিবিদ হবেন, মাওলানা ভাসানী হবেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হবেন, আহ! তিনি দেশ উদ্ধার করবেন, দেশ এখনো স্বাধীন হয়নি, দেশের স্বাধীনতার জন্য আমার মহান পুত্র আবার সংগ্রামে নেমেছেন, আর চিন্তা নেই, বাঙ্গালি জাতি এখন নাকে তেল দিয়ে ঘুমবে আর পুত্র আমার প্রহরী হয়ে পাহারা দিবেন দেশ, নো টেনশন। রুমী চোখ দু-টো কুচকে বাবাকে ভুলে তাকিয়ে থাকতে চাইছে দুরের বৃক্ষরাজির দিকে, তাকাতে গিয়েও কেন যেন পারছে না সে। ট্রেনের ঝকঝক শব্দ কাছের বন বাড়ি প্রকৃতির গায়ে প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসছে কাছে।

সামনের সিটে দুই ভদ্রলোক হেলে-দুলে ঘুমচ্ছেন, পাশে একজন চশমা ওয়ালা খবরের কাগজে চোখ ডুবিয়ে আছেন। রুমী পাশ ফিরে তাকাতেই বুঝল খুবেই ইন্টারেস্টিং খবর, কোন এক মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে, ভদ্রলোক সম্ভবত বিষটা খুব মনোযোগ দিয়েই পড়ছেন, রুমীর ইচ্ছে হচ্ছে ভদ্রলোককে বলে, আপনি কি জানেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী হানাদার কৃতক বাঙ্গালী নারী ধর্ষণের যে অতিমাত্রা সূচনা ঘটে, স্বাধীনতার পর এ যাবত কাল পর্যন্ত সেই ধর্ষণের ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে স্বাধীন-বাংলাদেশের নাগরিকদের মাধ্যমেই? বিভিন্ন নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সংস্থা বা অন্যান্য পরিসংখ্যানে জানা যায় আমাদের দেশে ধর্ষণসহ যত নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে, তার ৬০ শতাংশের ক্ষেত্রে মামলাই হয় না, আর যারা আইনের শরণাপন্ন হয়ে অপরাধীর শাস্তির আশায় বুক বাধেন তারাও এক সময় হতাশ হয়ে আত্মহত্যা বা সমস্ত জীবনের তরে মানসিক যন্ত্রণার মাধ্যমে জীবন যাপন করে যান নীরবে, কারণ বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি রাজনৈতিক নেতা নেত্র বা সরকারী আমলা কামলাদের ক্ষমতা বলে সঠিক বিচারের হার হয় এক বা দুই শতাংশেরও কম।

আন্তঃনগর ট্রেনে ক্যান্টিন আছে, চা বিস্কিট নিয়ে ছুটা-ছুটি করছে ক্যান্টিনের লোকেরা। চায়ের নেশা বেশ চাপ দিচ্ছে রুমীকে। এক কাপ চা খেতে হবে। রুমী উঠে দাঁড়ালো, সামনের বগিতেই ক্যান্টিন।

রুমী চা হাতে  দাঁড়িয়ে আছে, ক্যান্টিনের বগিতে বেশ কোলাহল, বেশ তর্কবিতর্ক। আওয়ামী লীগ আর বিএনপির বাকযুদ্ধ চলছে। এরশাদের দল জামায়েতী ভাব ধরে ফেলেছে, তারা কোথাও কোন তর্ক-বিতর্ক নেই, চুপিচুপি শক্তি বৃদ্ধিতে মনোযোগী তাদের নেতা-নেত্র মহল। এই বার খালেদা জিয়ার বিএনপিকে টেক্কা মেরে তারা প্রধান বিরোধী দল হয়েও বসে আছে। শুধু তাই নয় তাদের দলের কয়েকজন মন্ত্রী হয়েও দেশের বেশ মাতবরিও শুরু করে দিয়েছেন। ধরতে গেলে তারাই সরকারী দল, আবার তারাই বিরোধীদল। রুমী চায়ে চুমুক দিলো, চা ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ভাব থাকায় ভালো লাগছে না। তর্কবিতর্কে উত্তেজিত যাত্রীদের দিকে তাকিয়ে আছে সে। তর্ক বিতর্ক কারীর একজন মুখ বিকৃত করে বলল, হাসিনা কাজটি মোটেই ভালো করেনি, খালি মাঠে জিতে যাওয়া মানে জয় না, আওয়ামীলীগ পেশি শক্তির বলে ক্ষমতায় থাকতে চায়। ওরা গণতন্ত্র বোঝে না, বাকশাল কায়েম ছাড়া এ কি অন্য কিছু হতে পারে? জনগণ এর পাল্টা জবাব দিচ্ছে।

তার পাশ থেকে একজন এই কথায় তীব্র প্রতিবাদ করে বললেন, খালেদা দুধে ধোওয়া তুলসী পাতা! যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য মরিয়া হয়ে গেছে। নানা উছিলায় মানবতা বিরোধী বিচার বানচালের চেষ্টা করছে কে, আমরা কি জানি না। শেখ হাসিনা কি নির্বাচনের জন্য তাকে ডাকেননি? খালেদাতো ৯৬ এ একা একাই সব করে ফেললো, কয়দিন থাকতে পেরেছিল! হ্যাঁ?

পাশ থেকে একজন শান্ত ভাবে সংশয় প্রকাশ করে বললেন, ভাই আপনাদের হাসিনাকেও দেখবো কয়দিন থাকতে পারে?

এই কথায় কাউন্টার দিয়ে এক তরুণ আত্মবিশ্বাস দেখিয়ে বলল, পাঁচ বছরের এক সেকেন্ড আগেও ক্ষমতা থেকে নামবে না, ইনশাল্লাহ।

একজন আবার হাসতে হাসতে বলে উঠলো, আওয়ামীলীগের মুখে ইনশাল্লাহ মানায় না। নাস্তিক তো নাস্তিকই, হা হা হা …

একজন মুরুব্বি গোছের ভদ্রলোক গম্ভীর হয়ে এই যুক্তিহীন বাজে কথার পরিপ্রেক্ষিতে বললেন, এই কথাটি ঠিক বললেন না, আওয়ামীলীগ হলেই যে সে নাস্তিক এমন কথা ঠিক না।

এই কথার পাল্টা যুক্তি দেখিয়ে উপহাস কারে আরেকজন মুখ খোললেন, তিনি বললেন, তবে বিএনপি হলেই কি সে রাজাকার? তারা কি পাকিস্তানের গুপ্তচর?

এই তর্কের ফাঁদ থেকে মুক্তি পেতে আরেক ব্যক্তি বললেন, এমন কথা কে বলল? জিয়া যুদ্ধ করেছে, স্বাধীনতার যুদ্ধে তার যথেষ্ট অবদান আছে, সে একজন মুক্তি যোদ্ধা।

: আপনি তাকে মুক্তিযোদ্ধা বললেন, কিন্তু স্বাধীনতার ঘোষক বললেন না। এই হল আপনাদের রাজনীতি। ইতিহাস সব নিজের করে নেন।

চা হাতে এক তরুণ এবার ক্ষেপে গেলো, সে চোখ-মুখ বিকৃত করে বলতে লাগলো, ইতিহাস বিকৃতি করে বিএনপি, আওয়ামীলীগ না। যে দলের জন্ম ক্যান্টনমেন্টে সে দলের আবার ইতিহাস কি?  বলতে বলতে ছেলেটি সামান্য থামল, তার কথা শেষ হয়নি, তার সমর্থনকারীরা তাকিয়ে আছে তার দিকে, সে তর্ক নিপুণ কতোটুকু সবাই দেখতে চায়, তার্কিক সবার দিকে তাকিয়ে আবার বলতে লাগলো, খালেদা জিয়া কি কাজগুলো ভালো করছে? দেশে এত সব হুর হাঙ্গামা হওয়ার পরেও সে জামায়েতের সঙ্গ ছাড়ছেই না! একের পর এক যোগসাজশ করেই যাচ্ছে! সভা, সমাবেশ, ইফতার পার্টি, আলোচনা, এই সব কি কাজের কাজ?  তুই না হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী না, তোর স্বামী তো অস্ত্র হাতে যুদ্ধের ময়দানে যুদ্ধ করেছিলো! তুই কি সেই কথাও ভাববি না? জিয়া জীবিত থাকা অবস্থায় কখনই নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষণ বলেননি, এমন আজগবি বিষয় তিনি ভাবতেনও না, আর তার মৃত্যুর পর তুই তাকে বানিয়ে ফেললি স্বাধীনতার ঘোষক? আশ্চর্য! স্বাধীনতা কি তোর কাছে ছেলের হাতের মোয়া? দুই টাকা, চার টাকায়  কিনে ফেললি? রোদে বসে বসে খেলি?

এবার শুরু হল ব্যাপক কলহ, কয়েকজন দাঁড়িয়ে পড়লো, এক সঙ্গে দু-তিন জন বলতে লাগলেন, আপনি কিন্তু অতিরিক্ত বলে ফেলছেন।

দর্শক শ্রেণীর অনেকেই হি হি করে হাসছে।

উত্তেজিত ব্যক্তিদের একজন দাঁড়িয়েই অনুকূল ও প্রতিকূল যুক্তি দেখিয়ে বলতে লাগলেন, ছাত্রলীগ প্রতিটি কলেজ, প্রতিটি ভার্সিটিতে, সন্ত্রাস চালাচ্ছে, ছাত্রীদের ধরে ধরে রেপ করছে, এইসব কি ন্যায়? শেয়ার মার্কেটের লুটপাটের কথা কি আমরা ভুলে গেছি?

কথা শেষ না হতেই এই ব্যক্তির মুখের কথা কেড়ে নিয়ে সামনে থেকে একজন আরও উচ্চস্বরে বলতে লাগলেন, ছাত্রদল যখন পূর্ণিমাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করলো তখন বোধহয় খুব ন্যায় হয়েছিলো? বিএনপি আবার হিন্দুদের প্রতি আকৃষ্ট বেশি। ৯২-এ জামাতীদের সঙ্গে নিয়ে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা কাদের কাজ?  আমরা কি জানি না, তারা বার বার এই একই কাজ করে। হিন্দুরা কি এই দেশের নাগরিক নয়, তারা কি এই দেশের মানুষ নয়, ধরে ধরে রেপ করবি? বাড়ি ভাঙবি? মন্দির ভাঙবি? যখন যা ইচ্ছে তাই করবি? তোরা পেয়েছিস টা কি?

দাঁড়ানো ব্যক্তিদের কয়েকজন বসে পরেছেন, বসা অবস্থাই একজন আলোচিত এক বিষয় উপস্থাপন করে বললেন, বাহ! বাহ! পূর্ণিমার নাম ঠিকই মনে রেখেছেন দেখছি। সাথে মানিকের নাম মনে রাখেননি? আপনাদের মানিক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের মানিক, যে কিনা ধর্ষণের সেঞ্চুরি করে কেক কেটে বন্ধুদের খাইয়েছিলেন। আপনাদের দল নেত্রী তখন কোথায় ছিলেন? দেশের অনেকে ইতো আশা করেছিলো মানিকের কঠিন বিচার হবে। কোথায় বিচার হল? তাকে বিচারের বদলে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ কি প্রমাণ করলো?

এই সংলাপের প্রতিবাদে কেউ কথা বলল না, যুক্তিজাল আনেকেই বের করতে চেষ্টা করছেন, কাজ হচ্ছে না, বলতে বলতে কথক ব্যক্তি সবার মুখের দিকে তাকালেন, সবাই নীরব, কিন্তু সবারই চোখ ঝলমল করছে। কিছুক্ষণের জন্য নীরব হয়ে গেলো বগিতে থাকা মানুষ গুলো। শুধু ট্রেনের ঝিঁক ঝিঁক শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছে না।

একজন অফিসার ঘোচের লোক চা খাচ্ছিলেন, তিনি চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন, না না শেখ হাসিনার সব কাজ যেমন সমর্থনযোগ্য নয় তেমনি খালেদা জিয়ারও অনেক কাজ অসমর্থনযোগ্য, এই যে এখন তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু, একজন ক্ষমতা ছাড়বেন না আরেকজন তত্ত্বাবধায়ক তত্ত্বাবধায়ক করে দেশটাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিবেন। এর নাম কি রাজনীতি?  অদ্ভুত!

: আরে ভাই, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাইতো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি প্রথমবার প্রকাশ্যে এমনকি জনসভায় তুলছিলেন।

পাশ থেকে একজন তরুণ বয়সের ছেলে একটু উত্তেজিত হয়ে বলল, এই ইতিহাস আপনি কোথায় পেলেন?

একজন চশমাওয়ালা ভদ্রলোক যুবকের দিকে ফিরে তাকালেন, বললেন, বাবারা তোমরা ইতিহাস ভালো করে জানো, ইতিহাস না জানলে তো সামনের দিনগুলোতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। তোমরাই জাতির ভবিষ্যৎ। দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক ব্যক্তি সম্পর্কে তোমাদের ধারণা থাকতে হবে। কে কি রকম তা জানতে হলে প্রথমেই জানতে হবে তার অতীত ইতিহাস। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইতিহাসটি এরকম। ১৯৯৩ সালের ৬ ডিসেম্বর ’স্বৈরাচারের পতন ও গণতন্ত্র দিবস’ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় শেখ হাসিনা বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদে সংবিধান সংশোধনী বিল আনবে। বিএনপি যাতে এই বিল পাস করতে বাধ্য হয় এজন্য তিনি আন্দোলন গড়ে তোলারও আহবান জানান সবার প্রতি। ১৯৯৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনার আহবানে সংসদের সব বিরোধীদল ও গ্রুপের নেতৃবৃন্দের এক যৌথ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, ওই একই বছর ২৬ এপ্রিল থেকে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য কয়েকটি দল যৌথভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে হরতাল, অবরোধ, মশাল মিছিল, পদযাত্রাসহ নানা কর্মসূচি পালন করে। ৯৪ সালের ২৭ জুন আওয়ামী লীগ, জাপা এবং জামায়াতে ইসলামী  তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অভিন্ন রূপরেখা ঘোষণা করেন। এবং ১৯৯৪ সালে ২৮ ডিসেম্বর পঞ্চম জাতীয় সংসদের ১৪৭ জন বিরোধী দলের সদস্য একযোগে পদত্যাগ করেন সংসদ ভেঙে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে। ১৯৯১ সাল থেকে ৯৬ সাল পর্যন্ত তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অন্যান্য দলগুলো নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও অন্যান্য দাবিতে ১৭৩ দিন হরতাল-অবরোধ পালন করে। এর মধ্যে শুধু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে হরতাল পালিত হয় ৯৬ দিন। এই সব জানতে হলে তৎকালীন পত্রিকাগুলো পড়। সংবাদ পত্র হল একটি দেশের সময় ধরে রাখার বা সঠিক ইতিহাস জানার সব চেয়ে বিশ্বাসযোগ্য মধ্যম। আর সব চেয়ে বড় কথা আমাদের রাজনৈতিক দল একজন আরেকজনকে বিশ্বাস করতে পারেন না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার গণতন্ত্রের জন্য কখনই প্রয়োজন নেই, যদি সকল রাজনৈতিক দল একে অপরকে বিশ্বাস করে, শ্রদ্ধা করে, আর সকল রাজনৈতিক দল এই বিশ্বাস ধরে রাখার চেষ্টা করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার কোন রাজনৈতিক নেতার জন্য প্রয়োজন হবে না যদি তারা জনগণের স্বার্থে দেশের স্বার্থে  সততা নিয়ে রাজনীতি করেন। বলতে বলতে চশমা ওয়ালা ভদ্রলোক চায়ের অর্ডার দিলেন।

প্রথমে যে তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে অলোচনা শুরু করেছিলেন তিনি এবার চোখ গরম করে বললেন, শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে কথা বললে কোন দোষ নেই, তিনি তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে আন্দোলন করলে কোন দোষ হয় না, তিনি গণতন্ত্রের জন্য তত্ত্বাবধায়ক চান, আর খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে বললেই দোষ, তখন গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যায়, কি আশ্চর্য! সে নব্বই দশকের কথাগুলো  বিংশশতাব্দীর শেখ হাসিনা কেন মনে করতে পারেন না? ব্যাপারটি কি রহস্য জনক নয়?

চায়ে চুমু করত ছেলেটি রেগে চোখের তারা ঘুরাতে ঘুরাতে বলল, কিসের রহস্যজনক? সেই দিন শেখ হাসিনা আন্দোলন করে ছিলেন গণ মানুষের দাবি নিয়ে, গণতন্ত্রের দাবি নিয়ে, যার কারণে একটি মানুষের প্রাণহানি পর্যন্ত হয়নি, গাড়ি ভাঙচুর হয়নি, আর এখন আন্দোলন নেই, আছে সন্ত্রাস, রাজপথে নেতা-কর্মী নেই, আছে পেট্রোল বোমা, জ্বালাও পোড়াও। নব্বইয়ের দশকে কি দেশের জনগণকে পেট্রোল বোমা মেরে মারা হতো? গাড়ি ভাংচুর হতো? সে সময়ের আন্দোলন মানে জনগণের স্বার্থ, এখন আন্দোলনের মূল লক্ষ্য, নিজের ক্ষমতার লোভ।

একজন মোটা তাজা মধ্যম বয়সের লোক রেগে গিয়ে কথক ছেলেটিকে বললেন, এই তুমি ছোট মানুষ, রাজনীতির কি বোঝ?

ছেলেটি বিদ্রূপ করে উত্তরে বলল, আমি যা বুঝি, ততটুকুও আপনাদের বোঝতে দেখছি না।

বসে থাকা লোকটি দাঁড়িয়ে গিয়ে বললেন, আসলে তুমি একটা ফাজিল।

ছাত্র ছেলেটিও রেগে আগুন হয়ে গেলো, বলল, আমাকে আপনি ফাজিল বললেন কোন রাইটে?

বসা থেকে সেই মধ্যম বয়সের লোক দাঁড়িয়ে পড়লো, রেগে মেগে অস্থির হয়ে  বলল, তোমার কথা বার্তা প্রমাণ করে তুমি একটা ফাজিল।

তরুণ ছেলেটি চায়ের কাঁপ রেখে লোকটির দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। তারা দুজনেই চটে গেছে, তৎক্ষণাৎ কয়েকজন তাদের ধরে ফেললেন, একপ্রকার টেনে হেঁচড়ে দু-জনকেই তাদের নিজের যায়গায় বসিয়ে দিলেন। এখানে কিলা-কিলি শুরু হয়ে যেতে পারে।

চশমা ওয়ালা ভদ্রলোক খুব বিরক্তি নিয়ে বললেন, রাজনীতি মানে তো হাতাহাতি নয়, এসব কি?

প্রফেসার গোচের একজন চশমা মুছতে মুছতে প্রবন্ধ পাঠ করার মতো বলতে লাগলেন, ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ, আব্দুস সাত্তারকে অপসারণ করে বাংলার ক্ষমতা গ্রহণ করেন তৎকালীন সেনাবাহিনীর প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এরশাদের এই অবৈধ ক্ষমতা গ্রহণ কোন গণতান্ত্রিক উপায়ে ছিল না বরং দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করার এক নীল নকশাই ছিল, এসব জানা সত্ত্বেও স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ কোন রাজনৈতিক দলের নেতা বা সভাপতিত্ব হীন এরশাদকে স্বাগত জানিয়েছিল সেদিন। এই সব তো ভুলে গেলে চলবে না, আরও কিছু ইতিহাস ঘাটাঘাটি করলে স্পষ্টই বোঝা যায়, গণতন্ত্রের মানসকন্যা হিসেবে নিজেকে জাহির করলেই শুধু হবে না, কিছুটা গণতন্ত্র নিয়েও কাজ করতে হবে, শেখ হাসিনা গণতন্ত্র আসলে কতোটুকু বিশ্বাস করেন বা কতোটুকু গণতন্ত্রের সেবক হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন বা করবেন তা অতীত দেখলেই কিছুটা আচ করা যায়।

পাশ থেকে আরেকজন বিচক্ষণ সাইজের ভদ্রলোক শান্তভাবে বললেন, আসলে আমরা বাংলাদেশের যতগুলো সরকার প্রধান পেয়েছি অধিকাংশই দেশের অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে একটি গণতান্ত্রিক দেশ গড়ার চেয়ে নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে ছিলেন সদা সচেষ্ট এমন ক্ষমতাসীন দলই পেয়েছিলাম বার বার, সেই কারণেই হয়তো ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জাতীয় পার্টি নামের একটি রাজনৈতিকদল আবিষ্কার করে ফেলেন, এবং সেই নবাগত রাজনৈতিক দল সৃষ্টির কয়েক মাস পরেই হয়ে যায় সরকার প্রধান। কি আশ্চর্য! যে দেশে  প্রচার বা প্রসার মাধ্যম কোন ভাবেই ব্যাপক নয়, যে দেশের মানুষ জাতীয় পার্টি কি? কাদের নিয়ে গঠিত? তেমন ভাবে বুঝলই না, জাতীয় পার্টিতে কয়জন দেশ প্রেমিক বা দেশদ্রোহী আছেন তাও জানলো না, তার পরও কি করে যেন ক্ষমতায় এসে গেলো  হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, কোন দল সেই সংসদ নির্বাচন কে স্বাগত  জানায়নি, এমন কি সেই সংসদ নির্বাচনকে বৈধ বলে স্বীকারও করেনি, তার পরেও শক্তির বলে জোর করে ক্ষমতায় নিজের আধিপত্য দেখিয়ে ছিল এরশাদ, আমরা সবাই জানি সেই সংসদ নির্বাচন কে সকল রাজনৈতিক দল বয়কট করেছিলো, শুধু বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ছাড়া, আওয়ামীলীগ সেবার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিরোধী দল হিসেবে সংসদে যায়। শেখ হাসিনার সেই সিদ্ধান্ত অনেকের কাছে পছন্দ হয়নি।

পাশ থেকে আরেকজন ভদ্রলোক কতক ব্যক্তিকে সমর্থন দিয়ে বললেন, কি লাভ হল? বাংলার তরুণ, বাংলার জনগণ যখন জেগে উঠে তখন কোন শক্তিই যে তাদের রোধ করতে পারে না, এই কথা তারা ভুলে গিয়েছিলেন, বাংলার বাঙালির শক্তির কাছে  বাংলার গণতন্ত্র প্রেমী মানুষের কাছে নতি স্বীকার করে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, এরশাদ ভূষিত হল স্বৈরশাসক হিসেবে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ হয়ে গেলেন স্বৈরাচার এরশাদ।এই সব ইতিহাস সবাইকে জানতে হবে, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচন গুলোতে কিছুটা গণতন্ত্র চর্চা হয়েছিলো এ দেশে, এর মাঝে আবার ম্যাডাম খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালে একটি গণতন্ত্র হীন কালো ইতিহাস রচিত করতে গিয়েও রচনা করতে পারেননি, যেই ইতিহাসের প্রেক্ষা পট বা বয়সকাল ছিল মাত্র বারো দিন। বাংলার ইতিহাসে গণতন্ত্র এক সোনার হরিণের মতো উড়ে বেড়িয়েছে সব সময়, আমরা কখনো গণতন্ত্র নামক সেই সোনার হরিণকে ধরতে পারিনি, আমরা কখনো তাকে পোষ মানাতে পারিনি, আমাদের স্বপ্নের সোনার হরিণ হারিয়ে যায় সোনার বাংলার অদৃশ্য পরিতাপে।  আবার প্রশ্নবিদ্ধ সংসদ নির্বাচন, ২০১৪, ৫ জানুয়ারি। জাতীয় পার্টি পোষ্য বিরোধীদল, যে সংসদের শাসক শ্রেণি হিসেবে অধিষ্ঠিত হয়ে আছে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। এই ভাবে দেশ চললে দেশের বারোটা না বেজে তো উপায় নেই!

একজন কম বয়সের চশমা ওয়ালা ছেলে বগির এক পাশে বসে বসে তর্ক-বিতর্ক শোন ছিল, ফাঁক পেয়ে সে প্রশ্ন করে বসলো, বলল, বাকশাল আসলে কি?

ছেলেটির সামনেই বসে থাকা বৃদ্ধ বয়সের একজন লোক চা হাতে, তিনি মুচকি মুচকি হাসছেন, ট্রেন চলছে।  ঝকঝক শব্দও যে এক ধরনের নীরবতা সৃষ্টি করতে পারে, এখানে না থাকলে বুঝার উপায় নেই। কেউ কিছু বলছে না দেখে চা হাতে বৃদ্ধ লোকটি মুখ খুললেন, বললেন, শেখ মুজিবর রহমান বাকশাল ব্যবস্থা চালু করেছিলেন, এই নীতিতে মাত্র একটি দল বলবৎ রেখে বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো তখন, বলবৎ দলটির নাম বাকশাল, মানে, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশের এক মাত্র রাজনৈতিক দল বলি আর অন্য ভাবে যে দল বলি এই বাকশালের নীতিতে বাকশাল প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবর রহমান স্বয়ং হবেন দলের আজীবন প্রেসিডেন্ট। বাকশালের পুরো কেন্দ্রীয় কমিটি, কমিটির সদস্য, একমাত্র তার দ্বারাই মনোনীত হবে, তিনি ইচ্ছে করলে কাউকে সদস্য বানাবেন, ইচ্ছে না হলে বানাবেন না, এমন ছিল বাকশাল নীতি, গণভোট কিন্তু বলবৎ রেখেছিলেন আবার, প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় ভোটাররা তাদের পছন্দ মতো ব্যক্তিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচন করতে পারবেন, এখানে আবার একটু কথা আছে, জাতীয় সংসদের প্রতি নির্বাচনী এলাকায় মাত্র চারজন ব্যক্তি নির্বাচন করার সুযোগ পাবেন এবং এই চারজনকে বাকশাল প্রধান শেখ মুজিবর রহমানের পূর্ব অনুমতি নিতে হবে, শেখ মুজিবর রহমান কাউকে অনুমতি না দিলে সে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। আর চারটি সরকারী পত্রিকা বাদে সকল পত্র-পত্রিকা প্রকাশনা নিষিদ্ধ থাকবে। মোটামুটি বাকশাল নীতি এই রকমেই আমরা জানি, তার পরেও অন্য কিছু থাকতে পারে, তার জন্য তোমাদের ইতিহাস ঘাটাঘাটি করতে হবে।

ছাত্র গোছের ছেলেটি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখে বলল, বাকশালের অন্য অর্থ বা উদ্দেশ্যও তো থাকতে পারে।

বৃদ্ধ লোক চশমা নাড়াতে নাড়াতে বললেন, যেমন?

: বঙ্গবন্ধু তখন হয়তো ভেবে ছিলেন, সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশটি রাজনীতিতে পরিপক্ব নয়, বা দেশের মাঝে বহুদল প্রতিষ্ঠিত থাকলে যে কোন সময় জনগণের ভুলের কারণে দেশের ক্ষমতা আবার পাকিস্তান পন্থিদের হাতে চলে যেতে পারে, দেশে সেই সময় যেহেতু পাকিস্তান পন্থি লোক একেবারে বিলুপ্ত করা যায়নি সুতরাং কোন কলে বলে জনগণকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে তারা আবার বাংলাদেশের ক্ষমতায় এসে দেশের স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করে দিতে যেন না পারে সেই কারণেই বহুদল বিলুপ্ত করে একদল কায়েম করতে তখন আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান।

: আপনার কথায় যুক্তি আছে, পাকিস্তান সরকার বা পাকিস্তানী মিলিটারি যখন তাদের পরাজয় নিশ্চয় বুঝতে পারে তখন কিন্তু তারা সাধারণ বাঙালিদের হত্যা করা থেকে দেশের নাম করা বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, লেখক, সাহিত্যিক, বা প্রথম শ্রেণির বাঙালিদের হত্যা করতে থাকে একর পর এক, তার মানে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও যেন বাঙালিরা তাদের স্বাধীনতা ধরে রাখতে না পারে তেমনি উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানি হায়েনাদের। আর বাকশাল? ধরলাম আপনার কথাই ঠিক, তার পরেও কিন্তু প্রশ্ন থেকে যা, স্বাধীনতার মহানায়ক এম,এ,জি ওসমানীকে মন্ত্রিত থেকে সরিয়ে বা সেই সময় অনেক বাঙালি রাজনীতিবিদদের অবহেলা করে শেখ মুজিবর রহমান কোন দিকে যাচ্ছিলেন? এমন প্রশ্ন আসা কিন্তু স্বাভাবিক। যাই হোক, মানুষ মাত্রই ভুল করে, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনে একমাত্র বাকশাল ছাড়া আর সব কাজেই ছিল ভালো এটা সবাইকে স্বীকার করতে হবে, বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি ছিল দেশের মানুষের জন্য, দেশের জন্য তিঁনি অ জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। শুধু এই বাকশালেই কিছুটা ফাঁক রেখে গেছেন তাঁকে নিয়ে সমালোচনা করার।

যে লোকটি বিএনপির পক্ষে তর্ক করে রেগে মেগে এতক্ষণ বসে ছিলেন তিনি এবার অসহায় হয়ে সবার উদ্দেশ্যে বললেন, শেখ মুজিবর রহমান যাই করুন না কেন সেই সব আমলে আনা যাবে না, তার কোন সমালোচনা করা যাবে না, কিন্তু শহীদ জিয়া একটু ভুল করলেই তাকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। কেউ তার ভালো দিক গুলো ক্ষতিয়ে দেখে না, এর নাম কি রাজনীতি? একজন ভালো মানুষের সব কাজেই কি ভালো হয়? মানুষতো দোষ-ক্রুটির ঊর্ধ্বে না! মানুষ ভালো কাজ যেমন করবে তেমনি তার জীবনে মন্দ কাজেরও নজির থাকবে, দোষ-গুন মিলে ইতো মানুষের জীবন!

একজন কালো মোটা তাজা তরুণ বয়সের ছেলে চোখ বাঁকা করে বলল, শোনান আপনাদের শহীদ জিয়া কি কি ভালো কাজ করেছেন?

কালো মোটা তাজা তরুণ বয়সের ছেলেটির তাচ্ছিল্য প্রশ্ন শোনে কথক ব্যক্তি চোখ বড় বড় করে বললেন, তিনি কি করেননি, বলতে গেলে দু চার দিনেও শেষ করা সম্ভব হবে না।

প্রশ্ন কারী আরও একটু তাচ্ছিল্য দেখিয়ে বলল, আপাতত যে টুকু সময় পান সেসময়টুকুতে যা যা বলা সম্ভব হয় তাই বলুন, শুনি।

: তোমরা দেশের ভবিষ্যৎ, কোন কিছু না জেনে কাউকে নিয়ে কটূক্তি কখনো করো না, শেখ মুজিবর রহমানকে যেমন শ্রদ্ধা করা উচিৎ তেমনি শহীদ জিযাকেও সবার শ্রদ্ধা করা উচিত, তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা, সেনাশাসক, গণতন্ত্র পুনঃ প্রতিষ্ঠাকারী।

: গণতন্ত্র পুনঃ প্রতিষ্ঠাকারী? মানে?

: তুমি কি ইতিহাস জানো না, জিয়াউর রহমান আসার আগে কে বাংলার মসনদে বসে ছিলেন, তিনি কি গণতান্ত্রিক কোন সরকারপ্রধান ছিলেন? কোন সেনা শাসকের হাত থেকে ক্ষমতা নিয়ে গণতন্ত্র কায়েম করা কি গণতন্ত্র পুনঃ প্রতিষ্ঠাকারী নয়? তিনি শুধু তাই করেননি তিনি বুঝতে পেরেছিলেন দেশের খাদ্য সংকট দুর করতে না পারলে দেশের মানুষ শান্তি পাবে না, দেশে ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে অন্য দিতে তিনি স্বেচ্ছাশ্রমে খাল সংস্কার ও পুনঃ খনন, পাম্পের সাহায্যে নদী, বিল, হাওর থেকে সেচের পানি সংগ্রহ করার জন্য দেশ জুড়ে কর্মসূচি নেন। জিয়াউর রহমান শুধু শহরে বসে বসে আরাম আয়েশ করেননি তিনি শহরের ঘাড়ি-ঘোরা সীমাবদ্ধ রাখেননি তার জীবন, দেশের মানুষের স্বনির্ভরতা অর্জনের জন্য গ্রামাঞ্চলে পদযাত্রা করেন কয়েকবার। তিনিই প্রথম প্রতি থানা খাদ্য গুদাম নির্মাণের কাজ শুরু করেন।

: আমি যদি কথাটি একটু অন্যভাবে ব্যাখ্যা করি তাহলে কি হবে?

: কি হবে? বল শুনি?

: জেনারেল জিয়া, যে সময়টুকু বাংলাদেশ শাসন করেছিলেন, সেই সময়টুকুতে এই দেশে বন্যা হয়নি, ঘূর্ণিঝড় হয়নি, জলোচ্ছ্বাস হয়নি, নদীতে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ মাছ ধরা পরে, ইলিশ মাছ ধরা পড়া মানে খাদ্য শস্যের দাম কমা, আর কাকতালীয় ভাবে সে সময় টুকুতে দেশে ভালো ফসলও ফলে যায়, যে কারণে বাংলাদেশের মানুষ ভাবতে লাগলো প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এমন একজন মানুষ যে দেশের মানুষের জন্য অনেক কিছু করে যাচ্ছেন, দেশের মানুষ তাই শান্তিতে ভাত পাচ্ছে, এমনি দেশের মানুষের জন্য জিয়াউর রহমান দরদী হয়ে খাল কাটাও শুরু করেছেন, কাল কেটে কেটে যখন তিনি ঘর্মাক্ত হন তখন তিনি গাছ তলায় জিরান, জেনারেল জিয়ার বিখ্যাত ফটোতে তেমনি এক চিত্র দেখা যায়। কিন্তু আমজনতা এক বারো জানলো না, জেনারেল জিয়া নিজের ক্ষমতার জন্য শতশত আর্মিকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয় হত্যা করছেন, যে তার সামান্য বিরোধিতা করছে তাকেই তিনি হত্যার মাধ্যমে শেষ করে দিচ্ছেন, তার হাত থেকে রেহায় পাচ্ছে না, স্বাধীনতার সংগ্রামে বীরত্বের জন্য সর্বোত্তম খেতাব প্রাপ্ত বীর উত্তমরাও। অপরদিকে ৭১ এর যুদ্ধাপরাধীদের পাকিস্তান থেকে দেশে ফিরিয়ে আনছেন একের পর এক, দেশের নাগরিকত্ব দিচ্ছেন, দেশের বিশেষ বিশেষ ক্ষমতায় স্বাধীনতা বিরোধীদের বসাচ্ছেন। দেশে আবার দেশ বিরোধীরা আসন গেরে বসছে, আর আজকের যে জামাত শিবির বাংলাদেশের বারোটা বাজাচ্ছে এক অর্থে এই দুষ্কর্মের প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াই। কি আফসোস।

: তুমি কিন্তু খুব বেশি ফাউল কথা বললে, এই সব তোমাদের বানানো ইতিহাস।

: নারে ভাই বানানো ইতিহাস নয়, সেই সময়ে আপনি যান, সময়কে ভালো ভাবে বিশ্লেষণ করুন, তাহলেই বুঝতে পারবেন, কোন কথা বানানো আর কোন কথা বানানো না, রাজনীতি করবেন আর নেতার চরিত্র জানবেন না? জানার চেষ্টাও করবেন না, এ কেমন কথা?

: আমি শহীদ জিয়া নিয়ে কোন তর্ক করতে চাই না, তিনি আজ জীবিত নেই, তাকে নিয়ে কোন আলোচনা আমি বরদাস্ত করবো না।

পাশের কথক ব্যক্তি চায়ে চুমুক দিয়ে এড়ো চোখে তাকিয়ে বলল, আমরাতো ইতিহাস ঘাটাঘাটি করছি, কারো সমালোচনা করছি না।

: আপনি ইতিহাসের কি জানেন?

এই কথা শুনে মোটামুটি চা খাওয়ারত ব্যক্তি ঘাবড়ে গেলো, তার কথার স্বর টেনে নিয়ে গেলো কালো মোটা তাজা যুবক সে বলল, তাহলে আপনি ইতিহাসের অনেক কিছু জানেন, আপনাদের শহীদ জিয়ার যে উন্নয়নের দারা বলছিলেন, তা তো শেষ করেন নি, না সেই পর্যন্তই শেষ?

: শেষ হবে কেন, তার চিন্তা ধারা সুদূর প্রসারী ছিল, যুগ উপযোগী ছিল, তিনি ভবিষ্যৎ বুঝতেন খুব ভালো ভাবেই, তাই তিনি  বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন মজবুত করার লক্ষ্যে পরিবার পরিকল্পনা ও জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি পল্লী অঞ্চলে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়ে ছিলেন সচেতন ভাবেই।

কালো মোটা তাজা তরুণ বয়সের ছেলেটি চোখ ট্যারা করে বলল, মায়া বড়ি-টায়া বড়ির কথা বলছেন তো?

হঠাৎ পরিবেশ বেশ থমথমে হয়ে গেলো, কথক ব্যক্তি এর উত্তরে কি বলবেন ভেবে পেলেন না, আশ-পাশের লোকজনও বিস্ময়ে আটকে গেলো, কেউ কোন কথাই খুঁজে পাচ্ছে না, কথক ব্যক্তি কালো মোটা তাজা তরুণ বয়সের ছেলেটির দিকে এমন ভাবে তাকালেন যেন তাকে গিলে ফেলবেন। কালো মোটা তাজা তরুণ বয়সের ছেলেটি মুচকি মুচকি হেসে বলল, শহীদ জিয়ার আরেকটি কর্মসূচির কথা বললেন না, দুই বছরে দেশের সকল মানুষের মধ্য থেকে নিরক্ষরতা দূর করার কর্মসূচি নিয়েছিলেন যে, সেই কথা? সেই পাগলামির কথা!

কথা শেষ হবার আগেই, কথক ব্যক্তি বলে বসলো, তুমিও যে একটা ফাজিল প্রমাণ হয়ে গেলো!

: ইল্লে!

: তোমাদের মতো ছেলেরা রাজনীতিতে আছে বলেই আজ রাজনীতি কলঙ্কিত!

: ইল্লে!

: তোমাদের মতো ছেলেদের প্রশ্রয় দেয় বলেই রাজনীতিবিদরা আজ ঘৃণার পাত্র।

: ইল্লে!

: ইল্লে?  ইল্লে আবার কি? এই বাইন চুদ ইল্লে আবার কি? এই মাদার চুদ ইল্লে কি? তোর গোয়া দিয়ে আজ ইল্লে ঢোকায়ে দিবো!

বলতে বলতে লোকটি দাঁড়িয়ে পড়লো, কালো মোটা তাজা তরুণ বয়সের ছেলেটিও দাঁড়িয়ে পড়লো।

বাকশাল নিয়ে আলোচনাকারী বৃদ্ধ লোক বিরক্ত হয়ে গেলেন, চোখ,মুখ কুচকে বড় বিরক্তি নিয়ে তিনি বললেন, নাহ! এসব ভালো না! আপনারা যার যার যায়গা বসুন। বলতে বলতে তীব্র  দুঃখ নিয়ে তিনি আবারো বললেন, দোষটা আসলে হাসিনা খালেদার নয়, আজ বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতি পরিস্থিতির জন্য সব চেয়ে বেশি দায়ী  যারা দেশটা চালাচ্ছে, দুই বড় দলকে চালাচ্ছে, খালেদা জিয়া তার শাসনামলে যে অপরাধ করেছিলেন তার ফল যেমন জনগণ ভোগ করেছে তেমনি ভোগ করতে হচ্ছে তাকেও, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে রাষ্ট্র নায়কেরা একের পর এক অপরাধ, একের পর এক ভুল করেই যাচ্ছেন, সেই সব অপরাধ আর ভুলের সব চেয়ে বেশি ফল ভোগ করতে হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষকে, সাধারণ জনতাকে। আজ যে হত্যা, গুম, রেব-পুলিশের দ্বারা নির্যাতন, এসবের সূচনাকারী কে?  খালেদা জিয়ার আমলেই সূচিত হয়ে ছিল এর নকশা, ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করেছে পুলিশ, র‌্যাব, সবসময় সরকার প্রধানদের ভাড়াটিয়া খুনিতে পরিণত হয়েছে। আজো হচ্ছে। যার ফলে তারা আজ খুনের স্বাধীনতায় মহীয়ান, কিন্তু এমন কেন হবে? একাত্তর সালে দেশ যখন স্বাধীন হল, অসংখ্য মানুষ, স্বজন হারানো বেদনা ভুলো, স্ত্রী, বোন, মা, হাজারো নারীর সম্ভ্রম হারানোর লজ্জা ভুলো, সন্তান হারানোর শূন্যতা ভুলে, অপরিসীম আবেগ উচ্ছ্বাস স্বপ্ন নিয়ে মেতে উঠেছিলো, সবার মনে একই কথা উচ্চারিত হয়েছিলো তখন, আমরা স্বাধীন হয়েছি, এর চেয়ে বড়, এর চেয়ে আনন্দের আর কিছুই হতে পারে না, সেই কারণেই সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশটির ভবিষ্যৎ কি, রাষ্ট্রীয় কাঠামো, অর্থনৈতিক দিক নির্দেশনা এসব কেউ ভেবে দেখেননি, গ্রাম, শহর, মহল্লা, সর্বত্রই একই জোয়ার, আমরা স্বাধীন হয়েছি, আমরা মুক্তি পেয়েছি, সত্যি বলতে সেই স্বাদ ছিল দুইশত চৌদ্দ বছর পর স্বাধীন হওয়ার স্বাদ, মুক্তির স্বাদ, ১৭৫৭ সালে ২৩শে জুনের পলাশী যুদ্ধে বাঙালির পরাজয়ের পর প্রথম জয়ের স্বাদ, কিন্তু হায়! আমরা কি প্রকৃতই স্বাধীন? দেশের একজন নাগরীর হওয়ার বদলোতে যে রকম সুযোগ সুবিধা ভোগ করার অধিকার আমাদের আছে আমরা কি আজ তা পাই? দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই ধনিকতন্ত্র নির্ভর, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট নির্ভর, ক্ষমতাবান রাষ্ট্রীয় কৃপা নির্ভর  রাজনীতিবিদ গড়ে উঠেছে এই দেশে, আজ সেই ধারা এতটাই প্রবল যেখানে জনগণের সকল অধিকার তাদের লালসার স্রোতে ভেসে যাচ্ছে একের পর এক, আর আপনারা বসে বসে হাসিনা খালেদা নিয়ে মারামারি করছেন, আপনাদের লজ্জা করে না?

পরিবেশ আবার নীরব হয়ে গেলো, ট্রেনের ঝিকঝিক শব্দ ছাড়া কিছুই শোনা যাচ্ছে না।

বগির এক পাশে বসে থাকা একজন ট্রাই ওয়ালা লোক শান্তস্বরে প্রশ্ন করলেন, আপনি কি বলতে চান, আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা দেশের জন্য কিছুই করেননি? দেশের অবকাঠামোর কোন উন্নতিই হয়নি এতো দিন?

বৃদ্ধ ভদ্রলোক একটু রেগে গিয়ে বললেন, স্বাধীনতার পর এখন পর্যন্ত দেশের প্রাপ্তি হয়েছে, তা সবাই স্বীকার করবেন, কিন্তু প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির দূরত্ব অনেক বেশি। বলতে গেলে কোন সরকারেই জনগণের জীবন মান উন্নয়নের জন্য তেমন কোন চেষ্টাই করেননি, এর অর্থ এই নয় যে দেশের মানুষ, দেশ কিছুই পাইনি, স্বৈরাচার এরশাদ বাংলার রাজনীতি নিয়ে তামাশা করেছিলো, সে স্বাধীনতার প্রকৃত গণতন্ত্র ব্যবস্থাকে মনে করেছিলো ছেলের হাতের মোয়া, ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ সাল নাগাদ তার শাসনামলের সময়েও কিন্তু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে, পোশাক শিল্পের বিকাশ ঘটেছে, দেশের অবকাঠামোর উন্নতি হয়েছে । আমাদের দেশের রাজনীতির দিকে তাকালে দেখা যাবে, একটি অবহেলিত গণতন্ত্র, লুটেরা ক্ষমতাবান, ধনিক তান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা, আত্ম সেবী মনো ভাবাপন্ন রাজনীতিবিদ নিয়ে খুব ফালতু একটি সময় পার হয়েছে এতদিন, তার পরেও দারিদ্রের হার কমেছে, মা ও শিশুমৃত্যুর হার কমেছে, মানুষের অর্থনৈতিক আয় বেড়েছে, রপ্তানি বেড়েছে বহুগুণ, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প ধ্বংস হলেও ব্যক্তির উদ্যোগে গড়ে উঠেছে বহু শিল্পকারখানা, আমাদের সরকার প্রধানরা এখন বলছেন আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশ হয়ে উঠবে, কিন্তু স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী সময় পর বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশ হবে এর জন্যই কি যুদ্ধ করেছিলাম আমরা? ৭১ এ দেশপ্রেমিক বাঙালিরা কি এর জন্যই দেহের রক্ত অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছিলো? সম্ভ্রম হারানোর ত্যাগের বিনিময় কি স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পর মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার আশ্বাস?

পরিবেশ আবার নীরব হয়ে গেলো, দু-এক জন চা খাচ্ছে।

বৃদ্ধ ভদ্রলোক আবার বলতে লাগলেন, অনেক আগেই বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশ হতে পারতো খুব সহজ ভাবেই, যদি ক্ষমতায় থাকা লোকজন ন্যায়-অন্যায় কর্তব্য-অকর্তব্য ইত্যাদির বিচার করে দেশের জন্য কাজ করতেন। আমরা দেখেছি সরকার প্রধানরা, তাদের আত্মীয় স্বজন, এমনকি খাতিরে লোকজনও শূন্য থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে আজ, পক্ষান্তরে  জনগণ কিছুই হতে পারেনি, রাজনৈতিক সংঘটনগুলো কোন ভূমিকা পালন করেনি মেধাবী, সাধারণ বেকার, শিক্ষিত অশিক্ষিত যুবকদের জন্য, তারা এই সব ছেলেদের ভবিষ্যৎ নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে সব সময়, তাদের রাজনৈতিক শক্তিবৃদ্ধির জন্য এই সব যুবকদের বানিয়েছে রাজনৈতিক কর্মী, এই সকল কর্মীরা নেতার পেছনে ঘুরে ঘুরে নষ্ট করেছে তাদের স্বর্ণ সময়টুকু, অবশেষে তারা হয়েছে টেন্ডার বাজ, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, এসব ছেলেদের আজ পৃষ্ঠপোষক স্বয়ং কোন না কোন রাজনীতিবিদ। আমরা বরাবরেই দেখি যারা রাজনীতি তেমন বুঝেন না তারাই রাজনীতিতে গুরুতময় আসন গুলো নিজেদের করে নিচ্ছেন, বিত্তবান, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, অবসরপ্রাপ্ত আমলা, এলাকার প্রভাব শালী, এলাকার ভূস্বামী জীবনের শেষ বেলায় বা অতি দ্রুত বিত্তবান হওয়ার আশায় ডুকে যাচ্ছে রাজনীতিতে, ফলে দেশের উন্নয়নর চেয়ে রাজনীতিবিদদের উন্নয়নেই হচ্ছে বেশি, আর অপরিপক্ব এইসব রাজনীতিবিদ নিজেদের রাজনীতি টিকিয়ে রাখতে প্রশ্রয় দিচ্ছে দুর্বৃত্তদের, দুর্নীতিবাজদের। ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হয়েছে ঠিকই কিন্তু সেই প্রথার ধারা রয়ে গেছে এখনো, আমরা প্রশ্রয় দিচ্ছি বলে, উত্তরাধিকার সূত্রে রাজনীতিতে ক্ষমতা ধরে রাখার অপচেষ্টায় নতুন নেতৃত্ব তৈরি হয় না, লোকাল রাজনীতি বলি আর কেন্দ্রীয় রাজনীতি বলি সর্বত্রই স্ত্রী, পত্র, কন্যা, ভাই, নাতি-নাতনি উত্তরাধিকার সূত্রে ক্ষমতা আসছে সে বহুকাল থেকেই, আর আমরা সেই অপরিপক্ব অযোগ্য ব্যক্তিকে নেতার আসনে বসিয়ে বেস আরাম পাচ্ছি, আর অবহেলায় দুরে সরিয়ে দিচ্ছি যোগ্য প্রার্থী দের, প্রয়াত নেতার অযোগ্য উত্তরাধিকারীর কাছে ক্ষমতা তুলে দিয়ে আমরা দেশের যে বারোটা বাজাচ্ছি তা বুঝতেই পাচ্ছি না। সে কারণেই এখনো আমাদের লড়তে হচ্ছে মধ্যম আয়ের দেশ গড়ার জন্য। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে মানে বাহাত্তর থেকে বাংলাদেশ শাসন করেছেন মূলত পাঁচজন সরকার প্রধান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান, জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা, তারা সকলেই যেমন ভালো কাজ করেছেন তেমনি করেছেন মন্দ কাজ, তাদের অনেক ভুল আছে, আবার অনেক সঠিক কাজও আছে, কিন্তু তাদের প্রত্যেকের মনে প্রত্যেকের মধ্যে একটি অভিন্ন স্বপ্ন ছিল অভিন্ন লালসা ছিল, তারা হতে চেয়েছেন বাংলার চিরস্থায়ী শাসক, তারা তাদের শাসন অন্যের হাতে কখনই তুলে দিতে চাইতেন না। আমরা সকলেই জানি শুধু এরশাদ ছাড়া বাকী চারজনই বাংলাদেশের জনপ্রিয় নেতা-নেত্রী, জনগণও তাদের ক্ষমতায় দেখতে চাইতো, জনগণই চাইতো তারা ক্ষমতায় আসুক, কিন্তু এই জনপ্রিয় নেতাদের অতিরিক্ত ক্ষমতার মোহ বুঝদার জনগণ ভালোভাবে মেনে নেয়নি, জনগণ হতাশ হয়েছে বার বার, যার কারণে ক্ষমতা বদলের রীতি আপনা-আপনি চলে আসছে আমাদের রাজনীতিতে, আমাদের বাংলাদেশে। বিশ্বব্যাংকের ধারণায় ২০২০ সালে সব চেয়ে শক্তিশালী অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে দাঁড়াবে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ফ্রান্স ও তাইওয়ান। এই ১০টি রাষ্ট্রের ৭টিই আমাদের এশিয়ার। এদের দিকে লক্ষ্য করে অনেক কিছু শেখার আছে আমাদের, সব চেয়ে বেশি শেখার আছে আমাদের রাজনীতিবিদদের, অতীতকে নিয়ে বিতর্কের যে বাজে চিন্তা আমাদের তা পরিহার করতে হবে, কি আশ্চর্য, আজ সংসদে দেশের উন্নয়নর কথা না বলে, চলে অতীত নিয়ে তর্ক, সেই তর্কে কে কতটা তক্ক বাজ তা প্রমাণের জন্য মরিয়া হয়ে যায় লক্ষ লক্ষ জনতার সমর্থন পাওয়া দায়িত্ববান নেতা-নেত্র, এই সব দেখে বাংলাদেশের রাজনীতি যে অতীত মুখী তা বুঝতে কারো কষ্ট হয় না, আমাদের রাজনীতিবিদগণ এখনো বুঝতে পারছে না বোধহয়, অতীতকে  শুধু স্মরণ রাখাই যথেষ্ট, তা নিয়ে বেশি হইচই করা মোটেই ভালো নয়, অতীতকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বর্তমান, ভবিষ্যৎ ম্লান করলে দেশের মঙ্গল কখনই আসবে না, বর্তমানে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভবিষ্যতের কথা না ভাবলে, ভবিষ্যৎ কখনই ভালো হবে না বাংলাদেশের। শুধু শাসকেই নয়, আমরা জনতাও আজ সেই অতীত নিয়ে বড় বেশি মেতে আছি, কে জনপ্রিয়, কে জনপ্রিয় নয়, একজন মানসিক প্রতিবন্ধীও যদি অতীতের কোন কালে সরকার প্রধান হয়ে থাকেন তাকে সেই আগের দোহাই দিয়ে আবার তাকে ক্ষমতায় বসাতে চাই আমরা, কেন? যে লোকটি মানসিক ভাবে বর্তমানে রাজনীতির উপযুক্ত নয়, কেন আমরা রাজনীতি থেকে তাকে অবসর দিতে চাই না? অতীতের কিছু  ভালো কাজের জন্য এখনো তাকে সরকার প্রধান বানাতে হবে? তার একার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে গিয়ে যে সম্পূর্ণ দেশটির বারোটা বাজাচ্ছি তা বুঝতে চাই না কেন আমরা? আজ যদি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ক্ষমতায় বসানো হয়, সে কি সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে ? তা ছাড়া সেতো তেমন কোন জনপ্রিয় নেতাও নয়! এত জানা সত্ত্বেও কেন জাতীয় পার্টির নেতা-নেত্র তাকে অবসরে যেতে বলেন না, বলা কি উচিৎ নয়?

একজন লোক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলেন, তিনি বললেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জনপ্রিয় নেতা না, এটা আপনাকে কে বলল?

তার কথার জবাবে আরেকজন বললেন, না এরশাদ কখনই জনপ্রিয় নেতা ছিলেন না, জোর করে ক্ষমতায় থাকা মানে জনপ্রিয় নেতা না, এরশাদ রাজনীতিতে আজ জোকারের ভূমিকায় আছে।

: আপনি কিন্তু ফাউল কথা বললেন, জোকার আবার কি?

: আরে ভাই রাগ করেন কেন, এরশাদ তো নিজের কথার ওজন নিজেই রাখেন না, যার কথা আর কাজের মিল নেই, সে আবার নেতা নাকি?

: আপনি অন্য যাকে-তাকে নিয়ে বলুন, এরশাদকে নিয়ে কোন বাজে কথা বলবেন না, তার মতো বিশুদ্ধ নেতা এই বাংলায় নেই।

: হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন, যে ব্যক্তি স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় বাংলাদেশে স্বাধীনতার পক্ষে যুক্ত না হয়ে পাকিস্তানে বসে বসে ছুটি কাটায় সেতো বিশুদ্ধ নেতা হবেই।

: আপনি এই খবর কোথায় পেলেন?

: ইতিহাস, ভাইরে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়!

: কিসের ইতিহাস?

: আমরা অনেকেই হয়তো জানি না এরশাদ সাহেবের ১৯৭১১ সালের সময়ের ইতিহাস। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় এরশাদ ছুটিতে রংপুর ছিলেন, বাংলাদেশের মানুষকে যখন পাকিস্তানীরা নির্মম ভাবে পশুর মতো হত্যা করছে, বাংলার তরুণ, বৃদ্ধ, সামরিক বেসামরিক সকল মানুষ স্বাধীনতার নেশায় পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন,  ঠিক তখন ৭ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর কমান্ড্যান্ট হিসেবে কর্মরত হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদ মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়ে পাকিস্তান চলে গেলেন। এরশাদ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেন না! দেশে যুদ্ধ হল, দেশ স্বাধীন হল, রাষ্ট্রিয় ক্ষমতার পরিবর্তন হল, তিনি পাকিস্তানে বসে বসে সব অবলোকন করলেন। তারপর ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানে আটকা পড়া বাঙালিরা যখন দেশে ফিরে আসছে তখন এরশাদ সাহেব দেশে ফিরে আসলেন, যেহেতু তার নিজের বাড়ি বাংলাদেশে।

এ কথা শুনে অনেকে বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে আছে কথকের দিকে আবার কেউ কেউ মুচকি মুচকি হাসছে।

: বাংলাদেশে অনেকেই গণতন্ত্রকে নিজ হাতে বলি দিতে চেয়েছিল, তাদের মাঝে এরশাদ স্বঘোষিত জল্লাদ।

: এরশাদ জল্লাদ হলে হাসিনা কি? দু-চারজন রাজাকারের ফাঁসির বিনিময়ে উনি যে দেশের তেরোটা বাজিয়ে দিচ্ছেন তা কি আপনাদের চোখে পড়ে না?

: বিএনপি সমর্থনকারী মুচকি মুচকি হাসছে, তার হাসি দেখে এরশাদ ভক্ত একই স্বরে বলল, জিয়া হত্যার পর খালেদা জিয়াকে এরশাদ যদি ক্যান্টারমেন্টে জায়গা না দিতেন, থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা না করতেন, তাহলে আজ খালেদা জিয়ার অবস্থা কোথায় থাকতো?  কোথায় গিয়ে দাঁড়াত আজকের বিএনপির চেয়ারপার্সন?

বিএনপি ভক্ত তৎক্ষণাৎ লাফ মেরে দাঁড়িয়ে পড়লো, এরশাদ ভক্তের দিকে সজোরে আঙ্গুল উঁচিয়ে বলল, থাপড়ায়ে চাপার দাঁত ফেলে দিবো মাদারচুদ।

চলবে…

শাহীদ লোটাস। বাংলা ভাষার লেখক, বাংলাদেশ-এর নেত্রকোনা জেলায় মোহনগঞ্জ থানায় ৩০ মে ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ ও ভারতে শাহীদ লোটাস-এর বেশ কয়েকটি উপন্যাস, কাব্যগ্রন্থ ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি সমসাময়িক বিষয় নিয়ে লিখতে উৎসাহবোধ করেন।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ