চতুর্মুখ

সুদীপ চট্টোপাধ্যায়
কবিতা
চতুর্মুখ

চতুর্মুখ

কষ্ট পাচ্ছি। কষ্ট পাচ্ছি। কষ্ট পাচ্ছি—তিন রকমের ফোঁটা গড়িয়ে দিলাম এই
গা ভর্তি গয়নার কাছে এসো, এসো উদ্‌বাহু শুভ্র সরবতের কাছে
ফ্যানা হোক, গা-ভর্তির গয়নার মতো ফ্যানা হোক তোমার

একএকটা সূর্যখেত কিনতে চাইছ তুমি, একএকটা ফণীমনসার ঝোপ
সাপ সরে গেলে, সাপ ঘুমিয়ে পড়লে—তুমি জলের কাছে এসো
দেখবে এক একটা গ্রাম কেমন নিটোল পুকুর। ভাঙা সিঁড়ি আর ফুরফুরে শ্যাওলা নিয়ে

আড়াই হাতের ম্যাজিক হচ্ছে চারিদিকে। কষ্ট পাচ্ছি। কষ্ট পাচ্ছি। কষ্ট পাচ্ছি
কষ্টের মুখ হোক, আর মুখে মুখে সংবাদ যাক দশদিকে
গা-ভর্তি গয়না খুলে, শুধু একবার, তোমার অনুষ্টুপ হোক

২.

ভালো লাগে না। রক্তের হাত আছে, আর হাতের ভেতর আছে তিন রকমের শহর
মাথায় বালিশ দাও, ও তো মৃত। মাথায় পশু দাও, ও তো ততটাই নৃশংস ছিল সারাজীবন
ভালো লাগে না। বিস্তৃত ঈশ্বরের ভেতর তোমার আর্তনাদ, বিস্তৃত একটা রমণ

খোলা আকাশ উড়ছে। শহরে শহরে পুঞ্জিভূত মেঘ, মেঘে মেঘে কবেকার দস্যু
আমি কিছুই পারি না আজকাল, আমাকে কিছুই পারে না কেউ
সোজা ও সমান্তরাল, তোমার কথা বল বৃক্ষ ও ময়দান নিয়ে

ধারাবাহিক স্পষ্টতা দিচ্ছ তুমি, আর গড়নে সূর্যের দাপাদাপি
রঙ খসে গেলে, ও রঙ, রঙ খসে গেলে, ও রঙ—আমাদের ছোট্ট ঈশ্বর হবে
মেছুনি আর আধটাক পুকুর নিয়ে তোমাদের দুর্দান্ত কাজিয়ার দিনে

হয়তো অবিকল প্যাস্টেল রঙের সূর্যাস্ত হবে

৩.

তোমাকে দেখে নৈর্ঋত হল খুব। তোমাকে দেখে ইস্কাপনের বিবি হল খুব
খুব তোমাকে দেখে আমি দশরকমের বানান শিখেছি রফলা যোগে
আমি নীলকান্তমণির নাম দিলাম সা রে গা, অমনি টান টান চামড়ার
রবীন্দ্রসংগীত বেরিয়ে এল তোমার দুহাতের বাঘনখ থেকে

ততক্ষণে আমরা খুঁজে পেয়েছি রোডসাইড ধাবা, গলার আলজিভ বের করে
বোঝাতে চাইছি একটুও নেশা হয়নি আমার, কখনো কোনোদিন
প্রথম কদমফুল হয়নি আমার—বিশ্বাস কর, হে বাঁ-হাতের দেবতা

খুব একটা দূরে যেতে পারিনি কখনো তোমার চোখ এড়িয়ে
যে কোনও রাস্তার হিস্‌ হিস্‌ শব্দে দেখেছি তোমার কালো বুট
ততোধিক কালো মেঘের মত ছেয়ে আছে পথে পথে

৪.

কেউ কি সদর দরজা দিয়ে নেমে গেল
গেল কি কেউ সদর দরজা দিয়ে
দিয়ে ও দ্বারা, আমাদের পশ্চিমাঞ্চলের তুষার দেখেনি কেউ

দেখেছে হীরামতী নাকছাবি, আর তার কচি ছেলের হাম্বা ডাক
তখন তো ভাদর মাস, যাকে বলে হুলুস্থুল কাণ্ড
আর সেই কাণ্ডের গোড়ায় জল দিতে গিয়ে তুমি দিলে মন

ওহ্‌, সে কী মন মন চাপ তোমার কাঁধে
যেন কাঁধের ওপরের গজিয়ে উঠল একটা উড়ালপুল
আমি স্পষ্ট দেখেছি, ঘোমটা টেনে ভাশুর এড়িয়ে

তিনি গলাজলে নেমেছেন, নেমেছেন তো নেমেইছেন
কলশি কলশি করে তোমাদের সে কী করুণ হাহাকার
আর সেই সদর দরজা, অবিকল তোমাদের হাহাকারের মতো খোলা থাকল আজীবন

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..